সাংবাদিকতার আড়ালে সুদে ব্যবসায় মাগুরার এক সাংবাদিক ?
স্টাফ রিপোটার,মাগুরা,বাংলাদেশ,৫ ডিসেম্বর ২০২০ : মাগুরার সবাই চিনতো তাকে নসিমন চাঁদ আলী হিসেবেই। হঠাৎ করেই নামের পাশে লাগিয়ে নেন সাংবাদিক। নাম পরিবর্তন করে লিখেন রাসেল আলী। তারপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন সে মস্ত বড় সাংবাদিক! এক সময় ভ্যানে চেপে গ্রাম গঞ্জে নসিমন গান করা রাসেল এখন ফেসবুকে হরহামেশাই ছবি দেন ইউএনও, ওসি বা ভিআইপিদের সাথে। আর এই ছবি দেখিয়েই সে করে যাচ্ছে সুদে ব্যবসাসহ নানা অপকর্ম।
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার মৌশা গ্রামের রাসেল মিয়া ওরফে চাঁদ আলী এক সময়ের গার্মেন্টস কর্মী। গ্রামে এসে কর্মচারী হিসাবে কাজ নেন মহম্মদপুর বাজারের একটি ইলেকট্রনিক শোরুমে। লেখাপড়া এসএসসি পাশ না হলে লাগিয়ে নেন সাংবাদিকের তকমা। পাশাপাশি শুরু করেন সুদে ব্যবসা। তারপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি এই মহা কাব্যের রচয়িতা রাসেল মিয়া ওরফে চাঁদ আলীকে। বৃদ্ধা ধর্ষণ চেষ্টা মামলার আসামি ও ছিলেন, সেই সময় কিছু টাকা দিয়ে মামলা মিটমাট করেন। মহম্মদপুর উপজেলার চেয়ারম্যানের সিএ জাকির হোসেনের আত্বীয়তার সুযোগে সরকারি ঘর দেবার কথা বলে জনপ্রতি বিশ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। মহম্মদপুর উপজেলার ধোয়াইল এবং বড়রিয়ার বিভিন্ন স্পটে দীর্ঘ দিন যাবত জুয়ার বোর্ড পরিচালিত হচ্ছে। অসাধু কিছু পুলিশ কর্মকর্তা এবং জুয়াড়িদের মধ্যস্থতাকারী হিসাবে এলাকার লোকের কাছে সমাদৃত। জুয়া বোর্ডে নিজস্ব ম্যানেজার রাখা আছে, কারো টাকা শেষ হলে সুদে টাকা দেওয়ার জন্য।
মহম্মদপুর থানা এলাকায় সাধারণ মানুষের কাছে জানা যায়, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মহম্মদপুর থানায় ঘুরাফেরা করেন এই তথাকথিত সংবাদিক রাসেল মিয়া। মহম্মদপুর বাজার, ধোয়াইল বাজার, বড়রিয়া নতুন বাজারসহ অনেক বাজারে প্রতিদিন কিস্তি হিসাবে টাকা সুদে লাগানো, হাজারে প্রতিদিন দশ টাকা করে সুদ তোলা হয়। ভুক্তভোগীরা বিপদে পড়ে এত চড়া সুদে টাকা নিয়ে পরে বুঝতে পারেন এটা তাদের জন্য মরন ফাঁদ। টাকা দেওয়ার সময় ভুক্তভুগীদের কাছ থেকে সাদা স্ট্যাম্প এবং ফাঁকা চেক নিয়ে টাকা দেন এই কথিত সংবাদিক রাসেল। তেমনি কয়েকজন ভুক্তভুগীর সাথে কথা বলে জানা যায়।
ঔষধ কোম্পানির একজন বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, বিপদের সময় সাংবাদিক রাসেলের কাছ থেকে সাদা চেক দিয়ে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে ১,০৫০,০০০ হাজার টাকা পরও সেই চেকে তিন লক্ষ টাকা লিখে আমার নামে কোর্টে কেস করেন যা চলমান।
আর এক বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, সাদা স্ট্যাম্প রেখে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছিলাম এক লক্ষ টাকা দেওয়ার পরও ৪০ হাজার টাকা দাবি করছে। টাকা না দিলে সাদা স্ট্যাম্পে মোটা অংকের টাকা লিখে মামলা করার হুমকি প্রদান করছে। তিনি আরো বলেন, বাবার রাখা অর্ধেক জমিই কব্জা রেখে সাংবাদিক রাসেলের সুদে টাকা দিয়েছি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ মহম্মদপুর থানার পুলিশের কর্মকর্তাদেরকে সাংবাদিক রাসেলে কাছের বন্ধু হিসাবে পরিচয় দেন এবং মহম্মদপুর উপজেলার চেয়ারম্যানের খুব কাছে লোক হিসাবে পরিচিত। বিভিন্ন বাজারে দোকানদার সাথে কথা বলে জানা যায় বিপদে পড়ে সাদা স্ট্যাম্প এবং ফাঁকা চেক দিয়ে টাকা নিয়ে তার ইচ্ছেমত সুদ দিতে হয় তা না হলে মামলা দেওয়ার ভয় দেখায়। কারোনাকালিন বেচাকেনা না থাকলেও তার সুদের টাকা আমাদের জমা রাখতে হয়। সাংবাদিক রাসেলের কাছে বিভিন্ন ভুক্তভোগীদের সাদা স্ট্যাম্প এবং চেক থাকার বিষয়ে কথা বলতে চাইলে সে রাজি হয়নি।
বাংলাদেশ সংবাদ দাতার সূত্রের মাধ্যমে প্রাপ্ত এই সংবাদের সত্যতা যাচাই করে প্রশাসন সাধারণ মানুষের মুক্তির পথ খুঁজবেন এই আশা রাখি । ঋণের জালে অসহায় মানুষের দমবন্ধ অবস্থা থেকে মুক্তির রাস্তা কোথায় ?