লাগাতার বিক্ষোভ কর্মসূচি উপাচার্যের ঘরের সামনে
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের এম.এ ভর্তি নিয়ে গত বুধবার উপাচার্য শঙ্করকুমার ঘোষের বিরুদ্ধে অবস্থান বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিল ছাত্র-গবেষকরা। আজ সোমবার আবার লাগাতার বিক্ষোভ প্রদর্শন করলো ছাত্র-ছাত্রী ও গবেষকরা। এম.এ ভর্তির ক্ষেত্রে সঠিকভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্মন্ন না হওয়ায় করোনাকালীন সময়ে দূরদূরান্তের ছাত্র-ছাত্রীরা ভর্তি সংক্রান্ত নানান বিষয়ে যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে তার দ্রুত সমাধান চেয়ে এই অবস্থান কর্মসূচি। আজকের এই আন্দোলন বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট। ছাত্র ও গবেষকদের এই আন্দোলনকে নৈতিকভাবে সমর্থন জানিয়ে শিক্ষরা তাঁদের নানা দাবি নিয়ে উপাচার্যের ঘরের সামনে বসে পড়েন। দুপুর ১২ টা থেকে ৪ টা পর্জন্ত আন্দোলন চলে। শিক্ষকদের পদোন্নতি, গবেষণার সামগ্রী মানোন্নয়ন, শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ সহ নানা দাবি নিয়ে ওয়েবকুপার শিক্ষকরা এই কর্মসূচি পালন করেন।
ছাত্রদের পক্ষ থেকে মামুন আল হাসান সহ ছাত্রদের দাবি, অনলাইন ভর্তির ক্ষেত্রে ফর্ম সাবমিটের পর তা সংশোধনের জন্য বা এডিট করার জন্য কোন অপশন রাখেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে সামান্য অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য অনেক পড়ুয়ার পড়াশোনার ক্যারিয়ার প্রশ্নের সম্মুখীন। এবিষয়ে তাঁদের পুনরায় সুযোগ দেওয়ার আবেদন করছি। সূত্রের খবর, একই বিভাগের একাধিক মেরিট লিষ্ট বিভিন্ন সময় এক এক রকম বের করে ছাত্র-ছাত্রীদের ধন্দের মধ্যে রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয়। ইতিহাস ও মলিকিউলার বায়োলজির মতো বিভাগের একাধিক পড়ুয়ার সমস্যার সম্মুখীন। ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী নেহা পারভীন ও মলিকিউলার বায়োলজি ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের সৌমিতা ঘোষ, ইন্দ্রাণী গাঙ্গুলি এবং বিএড কোর্সের
তৃপ্তি বাছার সহ এমন অনেক পড়ুয়ায় ভর্তি সংক্রান্ত সমস্যায় দূরদূরান্ত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে কোন সুরাহা পায়নি।
অভিযোগ, বিভাগ যখন মেরিট লিষ্ট প্রকাশ করলো, তখন সেই পড়ুয়াদের নাম মেধা তালিকায় ছিল। সেই মোতাবেক পড়ুয়ারা অনলাইন পেমেন্ট করে ভর্তিও হয়ে যায়। দ্বিতীয়বার যখন বিভাগ ও একই মেরিট লিষ্ট প্রকাশ করলো তখন দেখা গেল তাঁদের নাম নেই এবং বিশ্ববিদ্যালয় মৌখিকভাবে জানাচ্ছে তাঁদের ভর্তি ক্যান্সেল হবে। উল্লেখ্য সেই পড়ুয়ারা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও ছেড়ে দিয়েছে। কারোর কারোর এটাই হোম বিশ্ববিদ্যালয়। তাঁরা একদিকে যেমন অন্য জায়গায় ভর্তির সুযোগ হারাল, আবার এখানেও তাঁদের দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে।
কিছু কিছু বিভাগে রাজ্য সরকারের সংরক্ষণ বিধি না মেনে অত্যন্ত সুচতুরভাবে মেধা তালিকা বের করেছে। ফাইনাল মেরিট লিষ্টে UR-1, UR-2…SC-1, SC-2…., ST-1, ST-2 … এভাবে নাম প্রকাশ করে গুপ্ত অভিসন্ধিতে আবেদনকারীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তাও আবার বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত সময়ে মেধা তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি।
ছাত্র-গবেষকদের সবচেয়ে মারাত্বক আভিযোগ উপাচার্য শঙ্করকুমার ঘোষ এবারের এম.এ তে ভর্তির জন্য এমন এক নিয়ম বের করেছেন যা শিক্ষার অধিকার হরণকারী – তাতে এমন দাঁড়াচ্ছে একবার কেও এম.এ করলে সে আর দ্বিতীয়বার রেগুলারে এম.এ করতে পারবে না। অনেক নিয়োগ ক্ষেত্রে ডাবল এম.এ তে পৃথক নাম্বার দেওয়া হয়, বা বিশেষভাবে সুযোগ-সুবিধাও পাওয়া যায়। একবার এম.এ করে আর দ্বিতীয়বার করা যাবে না এমন কোন নিয়ম বিশ্ববিদ্যালয় বিধি বা ইউজিসি নিয়ম-বিধিতে কোথাও নেই। ইউজিসিতে বরং বলা হয়েছে করা যাবে। এমন সমস্যায় গত বছর থেকে বেশ কয়েকজন ছাত্র ভোগান্তি পোহাচ্ছে। তাদের ভর্তি নেওয়া হয়নি। ছাত্র-গবেষকরা কোন সুরাহা না পেয়ে আজ আবার পুনরায় কর্মসূচি গ্ৰহণ করেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রী-গবেষকদের যৌথমঞ্চ। এতে যোগদেন শিক্ষকরাও। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে ওয়েবকুপার যুগ্ম আহ্বায়ক ড. সুজয় কুমার মন্ডল জানান, আমরা বিষয়টি নিয়ে রেজিস্টার ও ফিন্যান্স অফিসারের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ভর্তির ক্ষেত্রে বেশ কিছু বেনিয়মের দৃষ্টান্ত নজরে এসেছে। আবেদন কারীরা ইতিমধ্যে তাদের অভিযোগপত্র ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল পিজির দফতরে জমা করেন। গবেষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে নানান দাবি সম্বলিত সনদপত্র কর্তৃপক্ষের কাছে জমা করেন। শিক্ষকদের নানান বকেয়া দাবি-দাওয়া নিয়েও সনদপত্র জমা করেন শিক্ষকরা।