নির্বাচনের মুখে নীরবে ঘর গোছাচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টি?
হীরক মুখোপাধ্যায় (৮ জানুয়ারী ‘২১):- ‘পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন ২০২১’-এর প্রাক লগ্নে যেখানে রাজ্যের শাসকদল ‘তৃণমূল কংগ্রেস’ নিজেদের গোষ্ঠীকোন্দল, দলত্যাগের বেগ ঠেকাতে জেরবার; তখন অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে একরকম নীরবে নিভৃতে ঘর গোছাতে তৎপর হয়ে উঠেছে ভারতীয় জনতা পার্টি-র বিভিন্ন ‘স্লিপিং সেল’।
আজ টালিগঞ্জ বিধানসভা নির্বাচনী ক্ষেত্রে এমনই এক সভায় যেখানে বক্তব্য রাখছেন ভারতীয় জনতা পার্টি-র ‘স্টেট ইন্টেলেকচুয়াল কমিটি’-র অন্যতম সদস্য চন্দ্রচূড় গোস্বামী, সেখানে ‘সেভ বেঙ্গল’ নামের আড়ালে বেশ কিছুদিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন বিধানসভা নির্বাচনী ক্ষেত্রে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্মানের সাথে কর্মরত শিক্ষিত মানুষদের নিয়ে ‘সোনার বাংলা গঠনে শিক্ষিত সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক বৈঠক করে চলেছে গৈরিক মনোভাবাপন্ন আরেক বাহিনী। গত ৫ জানুয়ারী উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতে এরকমই এক অনুষ্ঠান করেন তরুণ স্থানীয় আইনজীবী সায়ন্তন চট্টোপাধ্যায়।
বলে রাখা ভালো, ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’-র সর্বভারতীয় সহ সংগঠন সম্পাদক শিবপ্রকাশ-এর মস্তিষ্ক প্রসূত পরিকল্পনা ‘সেভ বেঙ্গল’।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে যখন তৃণমূল কংগ্রেস ও অন্যান্য রাজনৈতিক শিবির থেকে বিজেপি-তে যোগ দেওয়া নেতানেত্রী বা বিজেপি-র নিজস্ব নেতানেত্রীরা পশ্চিমবঙ্গবাসীকে ভবিষ্যতের সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা পশ্চিমবঙ্গ বানানোর দিবাস্বপ্ন দেখিয়ে চলেছেন, সেখানে ‘সেভ বেঙ্গল’ নামের আড়ালে বিজেপির আরেক দল পশ্চিমবঙ্গবাসীকে ‘সোনার বাংলা’ বানিয়ে দেখাতে একরকম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
কিছুদিন আগে পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেস ‘সততার প্রতীক’ বলে রাজ্যবাসীর কাছে নিজেদের পরিচিত করতে গর্ববোধ করলেও বিগত ১০ বছরের ঘটনাক্রম সর্বোপরি আমফান-এর সময় ত্রাণচুরির ঘটনা তৃণমূলকে যেভাবে হতোদ্যম করেছে, ঠিক সেভাবেই ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’ যেখানে ‘পার্টি উইথ ডিফারেন্ট টেস্ট’ বলে নিজেদের পরিচিত করাতে গর্ববোধ করত, সেখানে বিগত কয়েক বছর ধরে তারাও যেভাবে তাদের পশ্চিমবঙ্গ শাখাকে চোরজোচ্চরদের হাতে তুলে দিয়ে নিজেদের আলজিভ নিজেরাই ছিঁড়ে রেখেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এমতাবস্থায় নিজেদের দলের অভ্যন্তরে থাকা শিক্ষিত সমাজকে উজ্জীবিত করতে ‘সেভ বেঙ্গল’-এর মতো রাজনৈতিক স্টেরয়েড’ আর কী হতে পারে।
রাময়ণ পড়লে জানা যায়, নরোত্তম রাম-এর মতো প্রবাদপ্রতিম শাসক একবার নিজেও ‘শম্বুক’ নামের এক অব্রাহ্মণ বালককে সম্পূর্ণ বিনা অপরাধে (দোষ ছিল তিনি ব্রাহ্মণদের মতো তপস্যা করছিলেন) হত্যা করেছিলেন।
রামরজত্বে যতগুলো কলঙ্কিত ঘটনা আছে, নিঃসেন্দহে এটা তার মধ্যে অন্যতম একটা ঘটনা।
মর্যাদা পুরুষোত্তম রাজা রাম শাসন ক্ষমতা হাতে পেয়ে যদি এইরকম এক অনৈতিক ঘটনা ঘটাতে পারেন, সেখানে রাশিকৃত নরাধম রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে সঞ্চালিত ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’-র পশ্চিমবঙ্গ শাখা ভবিষ্যতে কতখানি ‘সোনার বাংলা’ গড়তে পারবে সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন!
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি যখন দলের ভেতর নারদা-সারদা দুর্নীতিতে জড়িত গণ্ডাগণ্ডা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সামনে রেখে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার লক্ষ্যে অবিচল, তখন বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক শিবির মারাত্মক এক প্রশ্ন তুলে জানতে চাইছেন, “যে রাজার এক সেবক একসময় ‘সোনার লঙ্কা’ জ্বালিয়ে এসেছিল, সেই রাজার বর্তমান সেবকরা কী আদৌ ‘সোনার বাংলা’ গড়তে পারবেন ?