রঘুপতি সারেঙ্গী।
জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে সূর্যদেব ১২ মাসে ১২ টি রাশিতে নবরূপে গমন করেন। মেষ, বৃষ,মিথুন, কর্কট,সিংহ, কন্যা,তুলা,বৃশ্চিক এর পরে ধনুরাশি কে ছেড়ে তাঁর মকর রাশিতে প্রবেশের সেই পবিত্র মুহূর্তকেই মকর-সংক্রান্তি মানা হয়। এই সময় থেকেই ছয়-মাস জুড়ে দেবলোক এর জাগ্রত অবস্থা অর্থাৎ ‘উত্তরায়ণ’ শুরু হয়। সারা ভারতবর্ষের বিভিন্নস্থানে অল্পবিস্তর ভিন্ন আচারে এবং ধার্মিক বাতাবরণে আমোদ ও উদ্দীপনা’র সাথে এই তিথি পালিত হয়।
তামিলনাড়ুর ‘পোঙল’, অসম এর ‘ভোগালী-বিহু’, জম্মুতে ‘লোহ্রী’, মধ্যপ্রদেশের ‘সুকরাত’ বা বিহার ও ঝাড়খন্ড এর ‘খিচড়ি-উৎসব’ অঞ্চল ভেদে এরই বিভিন্ন নাম। ভারতের বাইরেও বহু অঞ্চলে এই সামাজিক অনুষ্ঠান পালিত হয়।
নেপালে ‘মাঘি’, থাইল্যান্ডের ‘সংক্রাণ’, মায়নামারে ‘থিং-ইয়ানা’ বা কম্বোডিয়াতে এই উৎসবেরই নাম ‘মহাসংক্রমন’।
সনাতন ধর্মের মানুষদের কাছে এটাই শ্রী শ্রী গঙ্গাদেবী’র মর্ত্যে আবির্ভাব এর মুহূর্ত। তাই ব্রহ্মমুহূর্তেই জেগে উঠে কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে লক্ষাধিক মানুষ সুদ্ধচিত্তে তিল-তর্পণ, গঙ্গা-সঙ্গমে স্নান-দানাদি এবং কপিলমুনি’র আশ্রম দর্শন ও প্রদক্ষিণ করে পরম তৃপ্তি লাভ করেন। আবার, মহাভারত এ পাওয়া যায়, অষ্টবসু’র অন্যতম মহাজন ভীষ্ম-পিতামহ সূর্যাস্তের ঠিক অগে অর্জুনের তীব্র বানে ক্ষতবিক্ষত হয়েও টানা আটারো দিন শর-শয্যাতেই অপেক্ষা করেছিলেন উত্তরায়নের প্রারম্ভে প্রাণত্যাগের বাসনাতে ঠিক এই দিনটির জন্য। গোস্বামীমতে এটি দধি-সংক্রান্তি ব্রত পালনের দিন। বীরভূম এর কেন্দূলী গ্রামে বৈষ্ণব-কবি জয়দেব এর জন্মস্থানে বাউল শিল্পীদের উজাড় করা উন্মাদনা আজ যে হাজারো মানুষের মন কাড়ে….. সে তো সবারই জানা।
এদিকে, নতুন চালের পিঠে-পুলী পায়েস আর তিল এর নাড়ু-পাটালি এসব নানান পদের গন্ধে রান্নাশাল মো-মো করে।
সাথে কচি-কাঁচাদের ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানকে এক অন্য মাত্রা দেয়। এ তো গেল এক দিক। অন্যদিকে, বৃহৎ কৃষ্ণলীলা সারাবলী জানাচ্ছে, ছোট্ট-গোপাল এত ঠান্ডাতেস্নান করতে না চাইতে মা যশোমতি তাকে আদর করে বলেনঃ
” রাণী বলে কল্য বাপু দি ভয়ন শুভক্ষণ,
ধনু ত্যাজি মকরেতে আসিবে তপন।
বলিয়া মকর যাত্রা তার নাম কয়।
করিলে মকরে স্নান আয়ুবৃদ্ধি হয়।”