কোভিড-১৯ মহামারী সত্ত্বেও ভারতীয় কৃষি ক্ষেত্র ৩.৪ শতাংশ বৃদ্ধির হার দেশের অর্থনীতির বিকাশে সবুজ সংকেত
By PIB Kolkata
নয়াদিল্লী, ২৯ জানুয়ারি, ২০২১
কোভিড-১৯ মহামারীর জেরে লকডাউনের মতো প্রতিকূল পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও ভারতে কৃষিক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে। আর্থিক সমীক্ষায় ২০২০-২১ অর্থবর্ষে কৃষি এবং সহকারী কৃষি ক্ষেত্রে ৩.৪ শতাংশ বৃদ্ধির উল্লেখ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থ ও কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রী শ্রীমতি নির্মলা সীতারমন আজ সংসদে ২০২০-২১ অর্থবর্ষের আর্থিক সমীক্ষা পেশ করেছেন।
এই আর্থিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে গত বছর ২৯শে মে সিএসও প্রকাশিত জাতীয় আয়ের সম্ভাব্য অনুমান অনুযায়ী কৃষি ও সহকারী কৃষি সংক্রান্ত কাজকর্ম ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে দেশের মোট মূল্য সংযোজন (জিভিএ) ক্ষেত্রে ১৭.৮ শতাংশ অবদান রেখেছে। রেকর্ড পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদন ২০১৯-২০ কৃষি বর্ষে আর্থিক সমীক্ষা অনুযায়ী দেশে ২৯৬.৬৫ মিলিয়ন টন মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন হতে পারে বলে অনুমান করা হয়েছে, যা ২০১৮-২৯ অর্থবর্ষের তুলনায় ১১.৪৪ মিলিয়ন টন বেশি।
কৃষিপণ্য রপ্তানী ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে আর্থিক সমীক্ষায় প্রায় ২৫২ হাজার কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় কৃষি এবং সহকারী কৃষি পণ্য রপ্তানীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলির মধ্যে বেশিরভাগ আমেরিকা, সৌদি আরব, ইরান, নেপাল এবং বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। ভারত থেকে যে পণ্যগুলি রপ্তানী করা হয়েছে তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বাসমতি চাল, মশলা, তুলো, ক্যাস্টর অয়েল, চা, চিনি ইত্যাদি। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য আর্থিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের সাধারণ বাজেটে ঘোষিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য উৎপাদন ব্যয়ের দেড় গুণ রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এই নীতির ওপর ভিত্তিতে সরকার সম্প্রতি ২০২০-২১ মরশুমে খরিফ এবং রবি ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বৃদ্ধি করেছে।
কৃষি ক্ষেত্রে সংস্কার সম্প্রতি কৃষি ক্ষেত্রে সংস্কারের কথা উল্লেখ করে আর্থিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে ৩টি কৃষি সংক্রান্ত সংস্কার আইন তৈরি করা হয়েছে মূলত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের কল্যাণের জন্য। এই নতুন কৃষি আইন কৃষকদের যেকোন বাজারে ফসল বিক্রির ক্ষেত্রে স্বাধীনতা এনে দেবে। এই আইন দেশের কৃষকদের দীর্ঘমেয়াদী কল্যাণ সাধনে পথ দেখাবে।
আত্মনির্ভর ভারত অভিযান আর্থিক সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের আওতায় কৃষি এবং খাদ্য পরিচালন ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১ লক্ষ কোটি টাকার পরিকাঠামো তহবিল গঠন করা হয়েছে। মাইক্রো ফুড এন্টারপ্রাইসেস প্রকল্প গঠনে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনার আওতায় মৎস্য চাষিদের সাহায্যার্থে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়াও নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী আইন সংস্কার, কৃষি বাজার এবং কৃষি উৎপাদিত পণ্যের মূল্য ও গুণমান সুনিশ্চিতকরণ এবং এক দেশ এক রেশন কার্ড, পিএম গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা চালু করা হয়েছে।
কৃষি সংক্রান্ত ঋণ আর্থিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে দেশের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের উন্নতি সাধনে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সময়মতো কৃষকদের কৃষি ঋণ প্রদান করা হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ১৩,৫০,০০০ কোটি টাকা কৃষি ঋণ সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে ১৩,৯২,৪৬৯.৮১ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ১৫,০০,০০০ কোটা টাকা কৃষি ঋণ প্রদানে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এই সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের অঙ্গ হিসেবে কৃষি পরিকাঠামো তহবিলের কথা ঘোষণা করা হয়েছে, যাতে কৃষি ক্ষেত্রে ঋণ সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় গতি আসে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত মৎস্য চাষিদের ৪৪ হাজার ৬৭৩টি কিষাণ ক্রেডিট কার্ড প্রদান করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা আর্থিক সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা কৃষকদের সর্বনিম্ন প্রিমিয়াম প্রদানের মাধ্যমে নানান ঝুঁকি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য মাইল ফলক হিসেবে কাজ করেছে। এক বছরে এই যোজনায় ৫.৫ কোটি কৃষক আবেদন করেছেন। চলতি বছরের ১২ই জানুয়ারি পর্যন্ত এই প্রকল্পের আওতায় দাবিকৃত ৯০ হাজার কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। এমনকি কোভিড-১৯এর জেরে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে লকডাউনের সময় প্রায় ৭০ লক্ষ কৃষক এই প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন এবং সুবিধাভোগীদের ৮৭৪১.৩০ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে।
পিএম কিষাণ পিএম কিষাণ প্রকল্পের আওতায় আর্থিক সুবিধাভোগীদের সপ্তম দফায় গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ কোটি কৃষক পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৮ হাজার কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। প্রাণী সম্পদ ক্ষেত্র প্রাণী সম্পদ ক্ষেত্রের বিষয়ে এবারের অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে ২০১৪-১৫ অর্থ বর্ষের তুলনায় ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে সিএজিআর ৮.২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতীয় হিসেব পরিসংখ্যান ২০২০ অনুযায়ী কৃষি এবং সহকারী ক্ষেত্র সম্পর্কিত কাজে মোট মূল্য সংযোজনের ভিত্তিতে প্রাণী সম্পদের বিকাশ ঘটেছে।
মৎস্যচাষ এবারের আর্থিক সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে দেশে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ১৪.১৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়েছে যা সর্বকালীন রেকর্ড। প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা আর্থিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে ২০২০-২১ অর্থবর্ষে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন এবং প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা প্রকল্পের আওতায় খাদ্যশস্য বরাদ্দ করা হয়েছে। বর্তমানে ৩৬টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন কার্যকর হয়েছে। যারফলে সেইসব রাজ্যগুলি প্রতি মাসেই এই আইনের আওতায় তাদের জন্য বরাদ্দকৃত খাদ্যশস্য সংগ্রহ করছে।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আর্থিক সংস্কারের অঙ্গ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ প্যাকেজের আওতায় সরকার প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা প্রকল্পের সূচনা করেছে। এই যোজনার আওতায় ৮০.৯৬ কোটি সুবিধাভোগীকে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য সরবরাহ করা হয়েছে। এমনকি গত বছর নভেম্বর পর্যন্ত জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যক্তিকে মাস প্রতি ৫ কেজি করে খাদ্যশস্য বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প আর্থিক সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষ পর্যন্ত শেষ ৫ বছরে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে গড় বার্ষিক বৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পেয়েছে।