শ্রীমদ্ ভাগবৎ গীতা নিয়ে দু-চার কথা
ড. রঘুপতি সারেঙ্গী, কোচবিহার :
প্রাজ্ঞজনে বলেন,” সর্বশাস্ত্রময়ী গীতা, অপূর্ব রহস্যময়ী”। সে ব্যাখ্যাতে যাওয়ার আগে একটি কথা বলে রাখা ভালো, ভারতীয় শাশ্বত সনাতন সংস্কৃতির ধারক ৪৫০০ খ্রীষ্ট-পূর্বাব্দের বেদ এবং ১৬০০ খ্রীষ্ট-পূর্বাব্দের উপনিষদ। প্রামান্য এই ১২শ উপনিষদ এর ঠিক পরেই ১৩শ উপনিষদ হিসাবে গীতা’র মর্যাদা।
বিবেকানন্দ চাইতেন, ভারতের প্রতিটি ঘরে কূল-দেবতার পূজার বেদিতেই বেদ এর ও নিত্য-পূজা হোক। সে বাসনা তাঁর পূরণ না হোলেও এ কথা হলফ করে বলাই যায়, এই দেশে এমন একটিও বাড়ি খুঁজে পাওয়া সত্যি মুশকিল যেখানে ছেঁড়া হোক আর মাকড়সার জালে ভর্তি থাক, লাল শালু’র বাঁধনে একটা গীতা খুঁজে পাওয়া যাবে না।
“সপ্ত-শতী” র সাথে আসলেই যে আমাদের নাড়ির সম্বন্ধ কিনা! সনাতন সংস্কৃতি’র যে দশবিধ সংস্কার আছে তার প্রতিটিতেই আছে গীতা’র ভূমিকা। এতো গেল একান্তই ভারতের ঘরের কথা। এর বাইরেও সারা সবুজ এই গ্রহটা জুড়ে রয়েছে গীতা’র স্বচ্ছন্দ্য যাতায়াত।
হবে নাই বা কেন ? জাতি-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে প্রকৃত বোদ্ধা মানুষ আগেও ছিলেন, এখনও আছেন, আগামীতেও থাকবেন…. যাঁদের কাছ গীতা’র শিক্ষা,গীতার তাৎপর্য উত্তরোত্তর বাড়বে বৈ কমবে না।
ভাবা যায়, সংস্কৃত বাদে পৃথিবী জুড়ে ভিন্ন-ভিন্ন ৩৬ টি ভাষাতে লিখা গীতা’র ২৫ শতাধিক সংস্করণ হোয়েছে! ২৭ টি ভাষাতে ১১ শত সংস্করণ তো আমাদের কোলকাতার বাঁশদ্রোণি’র গীতা লাইব্রেরিতেই রয়েছে। সম্রাট আকবরের মন্ত্রী আবুল ফজল ও তার ভাই ফৈজি মিলে ফার্সি ভাষায় এর অনুবাদ করে বিতরণ করেছিলেন। মুঘল আমলে ও আরবি ভাষাতে এর সংস্করণ হয়েছিল বলে জানা যায়।
এও এক তথ্য, ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস এর উৎসাহে তাঁরই অধস্তন কর্মচারী উইলকিন্স গীতার ইংরেজি অনুবাদ করেছিলেন। হেস্টিংস এবার শ্রদ্ধাভরে বইটির ওপর ভূমিকা লিখে ইংল্যান্ডে পাঠালে ওখানে ভূয়সী প্রসংশা পান। রুশরা ই বা পিছিয়ে থাকবে কেন? ১৭৮৭ সালে নভিকভ রাশিয়ান ভাষাতে এর অনুবাদ করেন। জার্মান ভাষায় অনুবাদ করলেন স্লেগেন। কিন্তু এডউইন আর্নল্ড এর “The Song Celestial” (পদ্যে গীতা) নাকি সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল সে সময়ে।
আর আমাদের অতি আপন শ্রদ্ধেয় ড. রাধাকৃষ্ণন এর Commentary বা শ্রী অরবিন্দ এর Essays on the Gita.. এসব তো বিশ্ববাসীর কাছে এক অপূর্ব সঞ্চয়।
গীতা মানেই যে বেদ-উপনিষদ এর সার; ষড়্-দর্শণ-যোগ ও মহাভারত এর এক অপূর্ব মেলবন্ধন, এক অনাবিল সুসম সমন্বয়। এ যে বিন্দুতেই একপ্রকার সিন্ধু দর্শণ।
শ্রীগীতা’র ধ্যান মন্ত্রে রয়েছেঃ “সর্বোপনিষদো গাবো দোগ্ধা গোপালনন্দনঃ।
পার্থো বৎসঃ সুধীর্ভোক্তা দুগ্ধং গীতামৃতং মহৎ।।”
কিন্তু বলতে দ্বিধা নেই, এহেন গূঢ়-দার্শনিক ‘রহস্যময়ী’ গীতাকে নিয়েও “গীতা-পাঠ” এর নামে কেউ কেউ ছেলেখেলা করে বসেন… যা
নিন্দনীয় কিনা জানি না, অপরাধ তো বটেই !
” বিনায়কং প্রকুর্বাণো রচয়ামাস বানরম্ “….. নিজের অজ্ঞানতার কারনে গনেশ গড়তে গিয়ে না বানর গড়া হয়ে যায ! ভয় হয়, ভুল বুঝে নিজের ভুল ব্যাখ্যা সরল-প্রান শ্রোতার হৃদয়ে না ভুল বার্তা পৌঁছে দেয়।
এ বিষয়ে মাননীয় পাঠককে আরও সচেতন হতে হবে… ‘পাত্রতাম্’ থাকা উচিৎ।
Dr. Raghupati Sarangi, a renowned homeopath and humanitarians who lives for the people’s cause. He is also a member of Editor panel of IBG NEWS. His multi-sector study and knowledge has shown lights on many fronts.