নিজস্বতার খোঁজে
ফারুক আহমেদ
উনিশ শতকের গোড়ার দিকে পূর্ণতাপ্রাপ্ত বাংলার মধ্যবিত্ত ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণিতে মুসলমানদের কোন অংশীদারী ছিল না। বাংলাদেশে মুসলমানদের আগমন আর সুফি মনীষীদের (বুজর্গ) মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু হওয়ার ছ’শো (৬০০) বছরের মধ্যে এটাই ছিল বাংলার মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে দুঃসময়। মুসলমানদের হাত থেকে ‘হুকুমতি তখ্ত’ চলে যাওয়ার বছর অর্থাৎ ১৭৫৭ সাল থেকে শুরু করে বিশ শতকের শুরু পর্যন্ত প্রায় দেড়শ (১৫০) বছর পর্যন্ত সময়কালকে বাংলার মুসলমানদের জন্য অন্ধকার কাল হিসাবে চিহ্নিত করা যায়। এই প্রসঙ্গে আমাদের মনে রাখতে হবে, ১৮৫৭ সালে একটি অসফল সিপাহী বিদ্রোহ এরপরে হিন্দুস্তানে মুসলমানদের জন্য বর্ণনাতীত দুর্ভোগ ও অসার্থকতা নেমে আসে। বিশ্লেষণটি করেছেন এম. আর. আখতার মুকুল, কলকাতাকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবি নামক মর্যাদাপূর্ণ একটি গ্রন্থে পৃষ্ঠা -২৯।
১৯০৫-১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ এই সময়টিকে মধ্যবিত্ত বাঙালি মুসলমান শ্রেণির আত্মপ্রতিষ্ঠা ও প্রসারণের কাল হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। (নাজমা জেসমিন চৌধুরী,”বাংলা উপন্যাস ও রাজনীতি”, চিরায়ত প্রকাশন, কলকাতা)। অর্থাৎ বিশ শতকের শুরু থেকেই বাঙালি মুসলমান সমাজ স্বরূপ সন্ধানে প্রয়াসী হয়ে উঠে। বস্তুত ১৯২০ সাল থেকে ১৯৪৭ সালের মধ্যে একটি মর্যাদাশীল জাতিসত্তা হিসেবে উত্থিত হয়। জীবন-জিন্দেগীর প্রতিটি স্তরে সাড়া দেবার (Response to Change) মানসিকতা গড়ে ওঠে। এমন সময়ে দেশ-ভাগের মারফত এই উপমহাদেশে আজাদী এল। বাঙালি মুসলমানের আত্মবিকাশের পথটিও এপার বাংলার রুদ্ধ হয়ে গেল। নয়া উত্থিত বাঙালি মুসলমান বুদ্ধিজীবী সমাজের একটি বিরাট অংশ মান-ইজ্জত আর প্রতিষ্ঠার সওয়ালে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে ‘হিজরত’ করলেন। পশ্চিম বাংলার মুসলমানদের জীবনে রাজনৈতিক বিবর্তনের ফলে নেমে এল এক অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। দেশ-বিভাগের পর বাঙালি মুসলমান সমাজ অকস্মাৎ অভিভাবকহীন হয়ে পড়ল। স্বতন্ত্র জাতিসত্তা, আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার এই রাজনৈতিক আইডিয়া পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সময়ের গর্ভে বিলীন হয়ে গেল।
এহেন পরিস্থিতিতে বাঙালি মুসলমানদের বৌদ্ধিক ক্ষেত্রটি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে– সেটি স্বাভাবিক ছিল। বাঙালি মুসলমান সমাজের এই সংকট সন্ধিক্ষণে তাদের মেধা আর মননের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন হুমায়ুন কবির (১৯০৬-‘৬৯), কাজী আবদুল ওদুদ (১৮৯৪-১৯৭০), সৈয়দ মুজতবা আলী (১৯০৪-‘৭৪), আবু সয়ীদ আইয়ুব (১৯০৬-‘৮২) আর রেজাউল করিম (১৯০২-‘৯৩)। দেশ-বিভাগের আগেই উল্লিখিত ব্যক্তিরা সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিষয়ক ভাবানুষঙ্গগুলোকে এম. আবদুর রহমান কঠোর পরিশ্রমে বাঁচিয়ে রাখছিলেন।
দেশ-বিভাগের পর সাহিত্য আর সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল তা পশ্চিমবঙ্গীয় মুসলমানদের হতচকিত করলেও একেবারে হতোদ্যম হয়ে পড়ে নি। তার প্রকাশ কিয়ৎকাল পরে লক্ষ্যযোগ্য হয়ে উঠেছে। সেই সময় তরুণ মুসলমান সাহিত্যিকদের মধ্যে যে ক’জন উজ্জ্বল সম্ভাবনার পরিচয় রাখছিলেন তাঁদের মধ্যে সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ, আবদুল আজীজ আল্-আমান আর আবদুল জব্বারের নাম বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য।
দেশ-বিভাগের পর বাঙালি মুসলমান সমাজের সাংস্কৃতিক সত্তার যখন নাভিশ্বাস উঠেছে, এমন সময় সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ নানা দুর্যোগ আর সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে নিজের মর্যাদা আর আভিজাত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন, সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি মুসলমানরা আত্মমর্যাদার কেন্দ্রটি চিহ্নিত করতে প্রয়াসী হয়েছেন। জনাব সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ ছিলেন ‘কম্পোজিট কালচারের’ শীর্ষ প্রতিনিধি।
আবদুল আজীজ আল আমান (১৯৩২-‘৯৪) এপার বাংলার সাহিত্য জগতে এক শ্রদ্ধার যোগ্য ব্যক্তিত্ব। বিভাগ পরবর্তী পশ্চিম বাংলার মুসলমানদের সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তিনি প্রায় অভিভাবকতুল্য দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সৃষ্টিশীল সাহিত্য নির্মাণ মুসলমান জীবনের সহানুভূতি সিক্ত অন্তরঙ্গ পরিচয় তার কলমে প্রোজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। উপন্যাস, কবিতা, গল্প, ধর্মাশ্রয়ী ইসলাম বিষয়ক রচনা, কাজী নজরুল ইসলালকে নিয়ে গবেষণা আর ‘জাগরণ’ দু’পর্যায়ের ‘কাফেলা’ আর ‘গতি’ নামক সংবাদ সাহিত্য পত্রিকার মারফত এক তুখোড় লড়াই করেছিলেন। তাঁরই প্রতিষ্ঠিত ‘হরফ প্রকাশনী’ প্রকাশনার ক্ষেত্রেও যে উচ্চ গুণমানের নজির স্থাপন করেছিলেন সে ধারা আজও অনুকরণযোগ্য।
আবদুল জব্বার গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের জীবনের রূপকার। উপেক্ষিত এবং অবহেলিত মানুষের আঁতের খবর, নির্যাতিত মানবাত্মার মর্মন্তুদ আর্তনাদ তাঁর সৃজনশীল সাহিত্য নির্মাণে প্রাধান্য পেয়েছে। সমাজ অর্থ বিচারেও তিনি নিজেও ছিলেন নন-প্রিভিলেজ শ্রেণির প্রতিনিধি। কাজী আবদুল ওদুদ আর হুমায়ুন কবিরের অশেষ স্নেহ ধন্য আবদুল জব্বারের সাহিত্যকর্মের ভূয়সি প্রশংসা করেছেন আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং প্রেমেন্দ্র মিত্র। কাজী আবদুল ওদুদ ‘শরৎচন্দ্র ও তারপর’ (১৩৬৮) গ্রন্থের একটি অংশে শরৎচন্দ্র উত্তরকালের বাংলা কথাসাহিত্যের প্রধানত বাস্তববাদী অংশের পরিচয় প্রদান করতে গিয়ে অন্য আরো অনেকের সঙ্গে আবদুল জব্বারের আর গোলাম কুদ্দুসের (জন্ম -১৯২০) সাহিত্য সৃষ্টির মূল্যায়ন করেছেন।
[সূত্র: খন্দকার সিরাজুল হক, ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ : সমাজ চিন্তা ও সাহিত্যকর্ম’ (বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃষ্ঠা -৩৮১)]।
দেশ বিভাগ পরবর্তী নয়া প্রজন্ম থেকে উত্থিত খাজিম আহমেদ (জন্ম ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৭) বস্তুত প্রবন্ধ নির্মাণের ক্ষেত্রে কাজী আবদুল ওদুদ রেজাউল করিম আর এম. আবদুর রহমানের উত্তরসূরী হিসেবে নিজের মেধা আর মননকে নিজস্বতার খোঁজে নিরপেক্ষতা এবং বৃহত্তর নৈর্ব্যক্তিকতার প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করছেন। অনির্বচনীয় প্রকাশ স্টাইল তার শব্দ ব্যবহার দুর্বোধ্য প্রবন্ধ পাঠকেও সুখপ্রদ করে তোলে। আর বিষয় নির্বাচনে খাজিম আহমেদের সমাজ মনস্কতা পুনঃ পুনঃ আমাদের চমকিত করে। দেশ বিভাগজনিত কারণে একটি আন্তর্জাতিক এবং একেশ্বরবাদী জাতিসত্তার প্রতি যে অবিচার এবং ‘দূরমুশ’ করার প্রবণতা ক্রিয়াশীল ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠের মনে তার বিরুদ্ধে যে যৌক্তিক প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তা প্রখর নির্ভীকতার পরিচয়বাহী। ‘বেসুমার’ মুগ্ধতা নিয়ে প্রকাশক হিসেবে তাঁর প্রথম অসাধারণ প্রবন্ধগ্রন্থ ‘পশ্চিমবাংলার বাঙালি মুসলমান : অন্তবিহীন সমস্যা’ পাঠক সজ্জনের দরবারে পেশ করি। প্রবন্ধগ্রন্থ এমনভাবে সমাদৃত হবে তা চিন্তার অগোচর ছিল। সোজাসুজি বলতে কি বাংলা আর ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলোতে ২০১২-তে ব্যাপক সুখ্যাতি করা হয়েছিল। আজও- বেঙ্গলি পত্র-পত্রিকায় উক্ত গ্রন্থটির রিভিউ হচ্ছে। প্রথম মুদ্রণ নিঃশেষিত। দ্বিতীয় সংস্করণ ‘উদার আকাশ প্রকাশন’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। লকডাউন আমাদের বিড়ম্বিত করেছে। অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন বিগত চুয়ান্ন বছর অগণন প্রবন্ধ তাঁর পত্রস্থ হয়েছে, অথচ সেগুলো গ্রন্থাকারে পাওয়া গেল না কেন? এমনবিধ প্রশ্ন আমার মনেও ছিল। জনাব আহমেদকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করায় দ্বিধাহীন উত্তর করলেন, ‘এই অকৃতী অধমের কাজ হল লেখা, পাঠক পড়বেন, প্রকাশক বই ছাপবেন, এটাই তো দস্তুর। বই প্রকাশ আমার কম্ম নয়।’ এমনই নির্মোহ তাঁর মানস ভাবনা। ‘উদার আকাশ পত্রিকা’র সম্পাদক এবং ‘উদার আকাশ প্রকাশন’-এর পরিচালক হিসাবে আমি তাঁর সাহিত্য সৃষ্টিকে গ্রন্থবদ্ধ করার অভিপ্রায় এবং অভিলাষ পোষণ করি। আমার পরম শ্রদ্ধেয় অভিভাবক তুল্য খাজিম আহমেদ সানন্দে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। মল্লিক ব্রাদার্স, প্রভিনিসিয়াল বুক এজেন্সি, নবজাতক প্রকাশন, লেখা প্রকাশনী, বুকস ওয়ে, অভিযান পাবলিশার্স, সর্বোপরি প্রবাদপ্রতিম মিথ বা কিংবদন্তি প্রকাশন সংস্থা ‘হরফ প্রকাশনী’র উত্তরসূরি হিসেবে ‘উদার আকাশ প্রকাশন’ বিগত এক দশকে প্রায় শত খানি গ্রন্থ সফলভাবে প্রকাশ করেছে। সাহিত্যের সব শাখাতেই এই নয়া আর তরতাজা প্রকাশন বিচরণ করেছে। পাঠকবর্গের স্নেহ-ভালবাসা, পৃষ্ঠপোষকতা আমাদের পরমপ্রাপ্তি। স্বভাবতই নত-মস্তক হচ্ছি।
দেশ-বিভাগ পরবর্তী পশ্চিমবাংলার জাতিসত্তা বিষয়ক অনন্যসাধারণ প্রাবন্ধিক ইতিহাসবেত্তা উপমহাদেশ বিষয়ক সমাজ বিক্ষোভ খাজিম আহমেদের দীর্ঘ জীবন চর্চিত অজস্র প্রবন্ধাবলির মধ্য থেকে ১৮টি নির্দেশক গবেষণা ‘উদার আকাশ প্রকাশন’ থেকে ‘বাঙালি মুসলমান : আপন ভুবনের সন্ধানে’-এর শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ প্রকাশের সুযোগ পেয়ে নির্মল গর্বানুভব করছি। সততার সঙ্গে উচ্চারণ করি ২০১৬ সালের মে মাস থেকে ২০১৯-এর ২৫ ডিসেম্বর তক জনাব খাজিম আহমেদ ‘ডেডলি ডিজিজ’-এর সঙ্গে লড়াই করেছিলেন এবং অবশেষে তিনি সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। দীর্ঘদিন বাদে তাঁর লেখক সত্তাকে পুনরুজ্জীবিত করার সওয়ালে শ্লাঘা বোধ করছি। ‘উদার আকাশ প্রকাশন’ হরওয়াক্ত তাঁর পাশে রয়েছে। ‘উদার আকাশ পত্রিকা’য় দেড় ডজনের ওপর প্রথাবিরোধী কঠোর পরিশ্রম সাধ্য গবেষণাজাত প্রবন্ধ খাজিম আহমেদ লিখেছেন। সমালোচনা, নানাবিধ মূল্যায়ন ছয় দশকের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার ও ‘উদার আকাশ’ শীর্ষক রচনা বিভাগ পরবর্তী পশ্চিমবাংলার ৬০ বছরের এক ঐতিহাসিক দলিল ভবিষ্যতের জন্য রেখে গেলেন। বলাবাহুল্য নিজস্বতার খোঁজে এই রচনাগুলো মূল্যবান উপাদান হিসেবে বিবেচিত হবে।
‘বাঙালি মুসলমান : আপন ভুবনের সন্ধানে’ নামাঙ্কিত এই গ্রন্থের বিষয় সমূহের মর্মবস্তু সম্পর্কে যৎকিঞ্চিৎ পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ এলাকার পুরো জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই ছিল ইসলামধর্মী। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর জনবিন্যাসের পরিবর্তন হয়ে যায়। এর ফলে নানা মুশিবতের জন্ম নেয়। বস্তুত বর্তমান গ্রন্থটিতে নিজস্বতার খোঁজে, মর্যাদার সন্ধান, আত্মচেতনার বিকাশ আর স্বরূপ সন্ধান প্রয়াসী হয়েছেন বর্তমান গবেষক লেখক। ড. রফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন ‘A Quest for Identity ; Preface’ ‘দ্য বেঙ্গল মুসলিমস’, ১৮৭১-‘০৬। Richard M. Eaton ‘The Rise of Islam and the Bengal Frontier, 1204-1760’ নামক গ্রন্থে (Copyright: The Regents of the University of California) লিখেছেন, ‘In 1984 about 93 million of the 152 of the estimated 96.5 million people inhabiting Bangladesh, 81 million or 83 percent. Were Muslims in fact, Bengalis today comprise the second largest Muslim ethnic population in the world, after the Arabs.’
উপাদানের সূত্র: Richard V. Weekes, Ed. Muslim Peoples: A World Ethnographic Survey, 2nd Ed. (Westport Green Wood Press). (Page-2). এমন বিশাল সংখ্যক বাঙালি মুসলমানদের বেদনার কথাটির ডক্টর এ আর মল্লিক প্রকাশ করেছেন এইভাবে, ‘বাঙালি মুসলমানদের বড় দুর্ভাগ্য হচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি হিসেবে তাদের মন্থর ও বিলম্বিত অভ্যুত্থান। এখনও সেই বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গে অনেকাংশে প্রযোজ্য।’ সেই ‘পরাভব; চেতনা’ থেকে মুক্ত হবার পথ সন্ধান করা হয়েছে ‘বাঙালি মুসলমান : আপন ভুবনের সন্ধানে’ নামক এই বিষ্ফোরক গ্রন্থে।
হাজী মুহাম্মদ মহসীনের কাছে বাঙালি জাতির ঋণ অপরিমেয়। অবিভক্ত বাংলার অতিদূর প্রত্যন্তেও তাঁর দানে বহু শিক্ষার্থী জীবনের অর্থ খুঁজে পেয়েছেন। অথচ হাজী মুহাম্মদ মহসীনের প্রতি যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা জরুরি ছিল আত্মবিস্মৃত বাঙালি জাতি তা করেনি। অথচ হিন্দু-মুসলমান সকলেই তাঁর কাছে দায়বদ্ধ। প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁর বিপুল ধন-সম্পদের উপার্জিত অংশ থেকে উভয় সম্প্রদায়ই উপকৃত হয়েছিল। কলকাতাকেন্দ্রিক পশ্চিমবাংলায় হাজী মুহাম্মদ মহসীন সম্পর্কে নিশ্চিত অনীহা বিস্ময়াবহ। বাঙালির সেই কৌতুহলহীনতা অপনোদনের অভিপ্রায়েই ‘বাঙালি মুসলমান জাগরণের অপ্রত্যক্ষ অভিভাবক হাজী মুহাম্মদ মহসীন’ গ্রন্থবদ্ধ করেছি। মহাপ্রাণ মহসীনের মৃত্যুর শতবার্ষিকীতে ১৯১৩ সালে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তাঁকে ‘One of the Greatest Indian of the 18th century’ বলে সম্মান নিবেদন করেন।
উনিশ শতকের শেষার্ধ থেকে বাঙালি মুসলমান সমাজের বিকাশ ও প্রতিষ্ঠার তাগিদে যাঁরা অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে নওয়াব আবদুল লতিফ (১৮২৮-১৮৯৩) এবং জাস্টিস সৈয়দ আমির আলির নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মুসলিম বাংলায় আধুনিকতার অগ্রনায়ক আবদুল লতিফ নামক সন্দর্ভে তাঁর ঐতিহাসিক অবদান সম্পর্কে মূল্যায়ন করা হয়েছে।
সৈয়দ আমির আলি ছিলেন পূর্ব ভারতের সৈয়দ আহমদ খান। মুসলিম চিন্তার উৎকর্ষ বিধান আত্মজিজ্ঞাসার উদ্বোধন করা ছিল তাঁর জ্ঞানগর্ভ তথ্যভিত্তিক ও বৈজ্ঞানিক যুক্তি সিদ্ধান্ত প্রণয়নের উদ্দেশ্য। প্রতিবেশী হিন্দুরা হিন্দু ধর্ম ও ভারতের পুরাণ ইতিহাসকে আশ্রয় করে পুনর্জাগরণ ও জাতীয়তাবাদের সুর তুলেছেন। ইসলাম ধর্মের অনুসারী হিসাবে মুসলমানদের কাছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। তার তথ্যপূর্ণ ও যুক্তিশীল রচনা দ্বারা খ্রিস্টান জগতের অনেক ভ্রান্তি ও অজ্ঞানতা দূরীভূত হয়। চোখে ইসলামের ও মুসলমানদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায় সৈয়দ আমির আলি ইসলামের ‘বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যানুভূতি’তে বিশ্বাস করতেন।
জামাল উদ্দিন আল আফগানি (১৮৩৯-১৮৯৭) জন্ম ইরানে হলেও পূর্বপুরুষদের সূত্রে নিজেকে আফগানি বলে পরিচয় দিতেন। মুসলমান সমাজে তিনি যে সংস্কার আন্দোলন শুরু করেছিলেন তার ঢেউ ভারতেও এসে পৌঁছায় এবং নিজেও তিনি এ দেশে এসেছিলেন, এমনকি কলকাতাতেও। তাঁর চেষ্টা ছিল ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবীর মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করা, যে কারণে তাঁকে প্যান ইসলামিক নেতা বলা হয়। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল আধুনিক।
‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ : বুদ্ধি ও বিবেকের মুক্তি আন্দোলন’ মুসলমান সমাজে আধুনিকমনস্কতা উজ্জীবনের জন্য ক্রিয়াশীল ছিল। মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে এই সংস্থা কাজ শুরু করে সংস্থার প্রথম সম্পাদক হন আবুল হোসেন। কাজী আবদুল ওদুদ, কাজী আনোয়ারুল কাদির, কাজী মোতাহার হোসেন প্রভূত পরিশ্রম করেছিলেন এই সংস্থার সাফল্যের জন্য। জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।
রেজাউল করিম সংস্কৃতির সমন্বয়ের জন্য পুরো জীবন কাজ করেছেন। তাঁর ধর্মভাবনা সম্প্রীতি বোধে উদ্দীপ্ত। এই উদার বোধ থেকে ‘সাধক দারাশিকো’র জীবনাদর্শকে ব্যাখ্যায়িত করেন। বাংলা আর ইংরেজি মিলিয়ে দু’ডজন গ্রন্থের তিনি প্রণেতা। সম্প্রীতির অগ্রণী সৈনিক রেজাউল করিম।
সৈয়দ বদরুদ্দোজা বিভাগ পরবর্তী পশ্চিম বাংলার মুসলমানদের মন থেকে মাইনোরিটি কমপ্লেক্স সংখ্যালঘিষ্ঠতাজনিত অস্বস্তিকাতরতা দূর করতে প্রয়াসী ছিলেন। তিনি নিরন্তর প্রচার করতেন যে, স্বদেশের ধুলোমাটি অনেক বেশি পবিত্র, তাঁরা যেন দেশত্যাগ না করেন। স্বদেশ প্রেম ঈমানের অঙ্গ অর্থাৎ হুব্বুল ওয়াতানে মিনাল ইমান। দেশত্যাগ বন্ধ করাই ছিল তাঁর বিশাল জীবনের মহান ব্রত। সৈয়দ বদরুদ্দোজা এক মহা জীবনের কথা। এটি একটি দলিল বিশেষ।
হুমায়ুন কবির কবি, সাহিত্যিক, সমালোচক, দার্শনিক হিসেবে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক কবির ফরিদপুরের সন্তান হওয়া সত্বেও দেশ বিভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে চলে যান নি। তিনি দেশ-বিভাগের বিরোধী ছিলেন। তাঁর ছাত্রজীবন আর অধ্যাপনার জীবন ছিল অত্যুজ্জ্বল। এমন বিশাল মাপের মানুষের মূল্যায়ন হয়নি পশ্চিমবাংলায়।
এম. আবদুর রহমান অবিভক্ত বাংলা এবং খন্ডিত পশ্চিমবাংলার একজন বিশিষ্ট পণ্ডিত ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি। ইসলামি সংস্কৃতি জীবনীগ্রন্থ ইসলাম বিষয়ক প্রবন্ধ এবং ইতিহাসাশ্রয়ী লেখায় তাঁর ক্ষমতা প্রমাণিত। বিস্মৃতপ্রায় মনীষী এম. আবদুর রহমানকে স্মরণযোগ্য করে তুলেছেন ইতিহাসবেত্তা খাজিম আহমেদ। এমন উপেক্ষার সময়ে এই উদারপ্রাণ মানুষটিকে বিস্মৃতির অতল গহ্বর থেকে টেনে তোলা অপরিহার্য ছিল।
মৌলানা আজাদ এই উপমহাদেশের রাজনীতি ক্ষেত্রে এক ‘মহান আর নিঃসঙ্গ পদাতিক’। তাঁকে প্রথমে কয়েদ-ই-আজম অভিধায় ভূষিত করা হয়, কিন্তু সময় তাঁকে নির্বান্ধব করে তোলে, কী দুঃসহ ‘দর্দ’ তাঁর হৃদয়কে ছিন্ন করে দেয়। তার সাবুত রয়েছে প্রকাশিত সন্দর্ভটিতে।
এই উপমহাদেশের বাংলা সাংবাদিকতার মহীরুহ আবুল শামসুদ্দিন পশ্চিমবঙ্গীয় সাংস্কৃতিক জগতে অনালোচিত থেকে গেলেন অথচ তাঁর নির্দেশনায় সাংবাদিকতার পাঠ নিয়েছেন- প্রয়াত সন্তোষ কুমার ঘোষ, সাগরময় ঘোষ এবং আরো কয়েকজন কলকাতাকেন্দ্রিক যশস্বী সাংবাদিক-সাহিত্যিক। ১৯৪৬-এর দাঙ্গাকালে দৈনিক আজাদের দপ্তরে আসা-যাওয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছিলেন তাঁর প্রিয়ভাজন সন্তোষ কুমার ঘোষের জন্য। জনাব শামসুদ্দিন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে ঘৃণা করতেন।
ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ মুসলমান শীর্ষক নিবন্ধে খাজিম আহমেদ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একান্ত অন্ধ ও বদ্ধ ধারণার শিকড় সমূলে উৎপাটন করে দিয়েছেন। কোনটা সন্ত্রাসবাদ কোনটা ইনসাফের জন্য লড়াই আর কোনটা স্বাধীনতা সংগ্রাম দেশ ও মহল বিশেষে তার মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদ শক্তিগুলি ঊনবিংশ শতাব্দীতে এশিয়া-আফ্রিকা প্রভৃতি মহাদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্র দখল করার পর তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনসাধারণ রুখে দাঁড়ালেই তকমা দেওয়া হত এরা হচ্ছে সন্ত্রাসবাদী। আর বিংশ শতাব্দীতে যখনই মুসলমানরা নয়া ঔপনিবেশিকতাবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে, তাদেরকে ‘উগ্র-সন্ত্রাসবাদী’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে সাম্য, ইনসাফ ও সুবিচারকে দমন করার জন্য এই শব্দগুলি হচ্ছে হাতিয়ার। সমগ্র বিষয়টির ওপর নির্মোহ দৃষ্টিপাত করেছেন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ জনাব খাজিম আহমেদ।
পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি সমাজ গুরুবাদ, অদৃষ্টবাদ, অবতারবাদ, ভক্তিবাদ-এ আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে। কবজ-মাদুলির মাধ্যমে জীবনের সিঁড়িগুলিকে ডিঙ্গিয়ে উপরে ওঠার লড়াইয়ে মত্তপ্রায়। এমন মানুষই অন্ধতার মধ্যে সেক্যুলারিজমের চর্চা প্রায় না মুমকিন। এদেশে সেক্যুলারিজম বলতে সব ধর্মকে চুমু খাওয়ার নীতি বোঝানো হচ্ছে। আদতে ইউরোপীয় কনসেপ্টে সেক্যুলারিজম হচ্ছে, ‘অ্যাবসেন্স অফ রিলিজিয়ান’ অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় ধর্মহীনতা। এতদ্দেশীয় সেক্যুলারিজমে বোঝানো হচ্ছে সব ধর্মকে সম্মান উৎসাহদান। এটি যথার্থ আইডিয়া নয়। এতদ্দেশীয় সমাজবিজ্ঞানী খাজিম আহমেদ নির্মোহ একটি মূল্যায়ন আমাদের সামনে হাজির করেছেন।
ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ ফ্যাসিবাদ আর অতলান্তিক এক অসহিষ্ণুতা অবিশ্বাস্য গতিতে এতদ্দেশীয় জনমানসকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে অথচ সবাইকে আপন জ্ঞান করায় আবহমানকাল থেকে ভারতের চিন্তনের বৈশিষ্ট। এক অদ্ভুত আঁধার ঘিরেছে চারিদিক। মর্মস্পর্শী আলোচনাটি খাজিম আহমেদ সতর্কতায় উপস্থাপিত করেছেন।
গ্রন্থটিতে আমরা মূলত সাবেক বাংলা আর পশ্চিমবাংলার বিষয়টিতে গুরুত্ব আরোপ করেছি। তথাপি ভারতের মুসলমানদের জন্য চিন্তা ভাবনাও রেখেছি। এটি প্রকাশিত হয়েছিল মহাশ্বেতা দেবীর ‘বর্তিকা’- ‘মুসলিম সমাজ ভাবনা’ (১৯৮৮ জানুয়ারি-মার্চ) সংকলনে। এই সংখ্যাটি সম্পাদনা করেছিলেন খাজিম আহমেদ।
অপ্রতিরোধ্য অশ্বারোহী সেনানায়ক মালিক ইমতিয়াজ উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী ১১৯৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২০৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই কয়েক বছর ঝড়ের গতিতে জীবন পরিচালনা করেছেন এবং সাবেক বাংলায় ইসলামের প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গেছেন। সেই সুবাদে জেলা মুর্শিদাবাদে ইসলামের পত্তন ও বিকাশ চমকপ্রদভাবে বিস্তৃতি পেয়েছে। ইখতিয়ারউদ্দিন ছিলেন এক ট্র্যাজিক অধিনায়ক।
দেশ-বিভাগ পরবর্তী পশ্চিমবাংলার নয়া প্রজন্ম থেকে উত্থিত মধ্যবিত্ত মুসলিম বাঙালি সমাজের মেধা ও মননের প্রতিনিধি স্থানীয় সমাজবিজ্ঞানী খাজিম আহমেদ ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে একবিংশ শতকের মুর্শিদাবাদ জেলায় ইসলামের উত্থান প্রতিষ্ঠা বিকাশ আর বিশ শতকের ১৯৪৭ থেকে ২০০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জেলার রাজনীতিতে মুসলমানদের ভূমিকা বিষয়ক একটি অত্যাধুনিক গবেষণাজাত প্রবন্ধ নির্মাণ করেছেন। আলোচনাটি এতই বিস্তৃত এবং বিশ্বাস যে, তা ভাবনাতে গবেষকদের কাছে একটি দলিল হিসেবে মান্যতা পাবে। ‘মুর্শিদাবাদ: মুসলিম ভাবানুষঙ্গ’, ‘সুবেবাংলার নিজামত প্রশাসন: অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারা’, ‘দেশ-বিভাগ পরবর্তী মুর্শিদাবাদের রাজনীতিতে মুসলমানদের ভূমিকা’ শীর্ষক তিনটি কঠোর পরিশ্রম লব্ধ বীক্ষণ আমরা গ্রন্থবদ্ধ করেছি। ভিন্নতর জেলার জন্য আমাদের এই পরিকল্পনাটিতে অনুসরণযোগ্য হতে পারে।
সৈয়দ আমির আলি সম্পর্কিত তিনটে পাঠ-প্রক্রিয়াজাত লেখা (অণীক মাসিকপত্র) এবং সাপ্তাহিক ঝড়ে প্রকাশিত চিন্তানায়ক আমির আলি শীর্ষক একটি মূল্যায়ন পরিশিষ্ট অংশ মুদ্রিত হয়েছে।
অসাধারণ মননদীপ্ত এই প্রবন্ধগুলো খাজিম আহমেদের স্বীয় মনস্বিতার দ্বারা অর্জিত সম্পদের এবং তদজাত ওজস্বীতার ফসল। ‘চতুরঙ্গ’- সম্পাদক, আবদুর রাউফ; ‘মাসিক কাফেলা’- সম্পাদক আবদুল আজিজ আল্-আমান; ‘বর্তিকা’ – সম্পাদক, মহাশ্বেতা দেবী; ‘কলম’ এবং ‘পুবের কলম’- সম্পাদক, আহমেদ হাসান; ‘জনমত’- সম্পাদক, রাধা রঞ্জন গুপ্ত; ‘গণকণ্ঠ’- সম্পাদক, প্রাণ রঞ্জন চৌধুরী; ‘অণীক’ এবং ‘মুর্শিদাবাদ বীক্ষণ’- সম্পাদক, দীপঙ্কর চক্রবর্তী; ‘আবার এসেছি ফিরে’, ‘এবং পুনশ্চ’- সম্পাদক, এবাদুল হক, সর্বোপরি ‘উদার আকাশ পত্রিকা’য় বিভিন্ন সময়ে প্রবন্ধগুলি প্রকাশিত হয়েছিল। সম্পৃক্ত পত্রিকার পরম শ্রদ্ধেয় সম্পাদক মহোদয়দের ‘উদার আকাশ প্রকাশন’-এর পক্ষ থেকে আন্তরিক শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। ‘মৌলানা আজাদ এক নিঃসঙ্গ পদাতিক’ অতিসম্প্রতি মুদ্রিত হয়েছিল জাইদুল হক সম্পাদিত দৈনিক “আপনজন” পত্রিকায়।
‘উদার আকাশ প্রকাশন’, উদার জীবনের অন্বেষণ আর ‘কম্পোজিট কালচার’ (মিশ্র সংস্কৃতির আবহমান ধারা)-এ বিশ্বাস করে। সেই সুবাদে ‘বাঙালি মুসলমান: আপন ভুবনের সন্ধানে’ গবেষণা গ্রন্থটি সুজন পাঠকদের দরবারে হাজির করা হল পঠকদের দ্বারা গ্রন্থটি সমাদৃত হলে আমাদের পরিশ্রম সার্থক।
লেখক: প্রকাশক ও সম্পাদক, উদার আকাশ।
***Authors view not a reflection of the channel’s ideology***