দৈনিক ভিত্তিতে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান এমন রাজ্যগুলিকে চিঠি দিলো কেন্দ্র
আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষার হার বাড়ানো এবং র্্যপিড অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে যাদের নমুনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে তাদের আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে পুনরায় নমুনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক
Py PIB Kolkata
নতুন দিল্লি, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দেশে গত কয়েক দিন ধরে সুস্পষ্টভাবে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানা গেছে। এর ফলে আজ ওই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৬৩৪। দেশে মোট করোনায় আক্রান্তের কেবল ১.৩২ শতাংশ সুস্পষ্টভাবে করোনায় আক্রান্ত। দেশে সুস্পষ্টভাবে করোনায় আক্রান্তের ৭৪ শতাংশের বেশি মানুষ কেরালা ও মহারাষ্ট্রের। অন্যদিকে, ছত্তিশগড় এবং মধ্যপ্রদেশেও দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে বলে দেখা গেছে। পাঞ্জাব এবং জম্মু ও কাশ্মীরে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা উর্ধমুখী। কেরালায় গত চার সপ্তাহে গড় সাপ্তাহিক ভিত্তিতে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বাধিক ৪২ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৩৪ হাজার ৮০০ হয়েছে। একই ভাবে গত চার সপ্তাহে সাপ্তাহিক আক্রান্তের হার ১৩.৯ শতাংশ থেকে ৮.৯ শতাংশে ঠেকেছে। রাজ্যের আলাপুজ্ঝা জেলায় পরিস্থিতি বিশেষ উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। এই জেলাটিতে সাপ্তাহিক আক্রান্তের হার বেড়ে হয়েছে ১০.৭ শতাংশ এবং সাপ্তাহিক আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৮৩৩। মহারাষ্ট্রে গত চার সপ্তাহে সাপ্তাহিক আক্রান্তের সংখ্যা উর্ধমুখী এবং এই সংখ্যা ১৮ হাজার ২০০ থেকে বেড়ে ২১ হাজার ৩০০ হয়েছে। একইভাবে সাপ্তাহিক আক্রান্তের হারও ৪.৭ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশ হয়েছে। মুম্বাই শহরতলি এলাকার পরিস্থিতি বিশেষ করে উদ্বেগজনক। এই শহরতলি এলাকায় সাপ্তাহিক আক্রান্তের হার বেড়ে ১৯ শতাংশ হয়েছে। নাগপুরের একাধিক এলাকাতেও আক্রান্তের হার ৩৩ শতাংশ বেড়েছে, কিছু কিছু এলাকায় তা বেড়ে হয়েছে ৫৫ শতাংশ ও ৪৮ শতাংশ। পাঞ্জাবেও কোভিড-১৯ সংক্রমণ জটিল পরিস্থিতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। রাজ্যে গত চার সপ্তাহে সাপ্তাহিক আক্রান্তের হার ১.৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ১.৬ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে, গত চার সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যাও ১ হাজার ৩০০ থেকে বেড়ে ১ হাজার ৬৮২ হয়েছে। রাজ্যের এসবিএস নগর জেলাতেই সাপ্তাহিক আক্রান্তের হার ৩.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪.৯ শতাংশ হয়েছে। একইভাবে সাপ্তাহিক আক্রান্তের সংখ্যাও ১৬৫ থেকে দ্বিগুণ বেড়ে ৩৬৪ হয়েছে। ৫টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সাপ্তাহিক আক্রান্তের হার জাতীয় গড়ের তুলনায় বেশি। জাতীয় স্তরে আক্রান্তের গড় হার ১.৭৯ শতাংশ। মহারাষ্ট্রে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে আক্রান্তের হার সর্বাধিক ৮.১০ শতাংশ। এই প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার ওই রাজ্যগুলিকে আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। র্্যপিড অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষার ফল যেসব ক্ষেত্রে নেগেটিভ এসেছে সেই সমস্ত ব্যক্তির আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে দ্রুত নমুনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে সুনির্দিষ্ট জেলাগুলিতে সংক্রমিত এলাকায় নজরদারি আরও জোরদার করতে। যেসমস্ত জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি সেখানে চিকিৎসা পরিষেবার ওপর আরও গুরুত্ব দিতে। কোভিড টিকাকরণের দিক থেকে ভারতে টিকাকরণের সংখ্যা ১ কোটি ১০ লক্ষ ছাড়িয়েছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত ১ কোটি ১০ লক্ষ ৮৫ হাজার ১৭৩টি টিকাকরণ রয়েছে। এর মধ্যে ৬৩ লক্ষ ৯১ হাজার ৫৪৪ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকার প্রথম ডোজ, ৯ লক্ষ ৬০ হাজার ৬৪২ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকার দ্বিতীয় ডোজ এবং করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অগ্রভাগে থাকা ৩৭ লক্ষ ৩২ হাজার ৯৮৭ জনকে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার ২৮ দিন পূরণ করার পর সুফলভোগীদের গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ৬ লক্ষ ৩৩ হাজার ২৭১ জন সুভলভোগীকে টিকার প্রথম ডোজ এবং ৪৯ হাজার ৭৮৬ জনকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে। টিকাকরণের ৩৬ তম দিনে (২০ ফেব্রুয়ারি) ৪ লক্ষ ৩২ হরাজার ৯৩১ জন সুফলভোগীর টিকাকরণ হয়েছে। এর মধ্যে ২ লক্ষ ৫৬ হাজার ৪৮৮ জন সুফলভোগীকে টিকার প্রথম ডোজ এবং ১ লক্ষ ৭৬ হাজার ৪৪৩ জনকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে। ৭টি রাজ্যে দ্বিতীয় দফায় টিকাকরণের মোট ৬০.০৪ শতাংশ টিকাকরণ করা হয়েছে। কর্ণাটকেই ১১.৮১ শতাংশ বা ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৪৩০ জন সুফলভোগী দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন। দেশে এখনও পর্যন্ত ১ কোটি ৬ লক্ষ ৮৯ হাজার ৭১৫ জন করোনা মুক্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘন্টায় আরোগ্যলাভ করেছেন ১১ হাজার ৬৬৭ জন। জাতীয় স্তরে সুস্থতার হার বেড়ে হয়েছে ৯৭.২৫ শতাংশ, যা বিশ্বে অন্যতম সর্বাধিক। দেশে গত ২৪ ঘন্টায় আরোগ্যলাভকারীদের ৮১.৬৫ শতাংশই ৫টি রাজ্যের বাসিন্দা। কেরালা থেকে একদিনেই ৫ হাজার ৮৪১ জন সুস্থ হয়েছেন। মহারাষ্ট্রে আরোগ্যলাভ করেছেন ২ হাজার ৫৬৭ জন। অন্যদিকে, তামিলনাড়ুতে সুস্থ হয়েছেন ৪৫৯ জন। দেশে গত ২৪ ঘন্টায় ৫টি রাজ্যেই নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৫.৬১ শতাংশ মানুষ। মহারাষ্ট্রে একদিনে সর্বাধিক ৬ হাজার ২৮১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। কেরালায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৬৫০। কেবল মহারাষ্ট্র ও কেরালাতে গত ২৪ ঘন্টায় দৈনিক ভিত্তিতে করোনায় আক্রান্তের ৭৭ শতাংশ ঘটনা ঘটেছে। ২২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় মৃত্যুর খবর নেই। এই রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে রয়েছে গুজরাট, ওড়িশা, জম্মু ও কাশ্মীর, অন্ধ্রপ্রদেশ, আসাম, মেঘালয়, লাদাখ, ত্রিপুরা প্রভৃতি। দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি রাজ্যেই মারা গেছেন ৮০ শতাংশ রোগী। মহারাষ্ট্রে সর্বাধিক ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। কেরালায় মারা গেছেন ১৩ জন এবং পাঞ্জাবে মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। দেশে গত ২৪ ঘন্টায় কেবল একটি রাজ্যেই ২০ জনের বেশি করোনায় মারা গেছেন। ১০ থেকে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে কেবল একটি রাজ্যে। দুটি রাজ্যে মারা গেছেন ৬ থেকে ১০ জন করে। অন্যদিকে, ১০টি রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ১ থেকে ৫ জন করে রোগীর।