অনেক উপাধি তব – জানা অজানা আমাদের উপাধির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
ড: রঘুপতি সারেঙ্গী
শেক্সপীয়ার বলেছেন “That which we call a rose by any other name would smell as sweet” (Quote from Romeo and Juliet by William Shakespeare) ভাগ্যিস উপাধি সম্পর্কে এই অপবাদ নেই আর তাই উপাধির ক্ষুদ্র ইতিহাস নিয়ে এই লেখা ।

বাংলাএর অভিধানে উপাধি এর সংজ্ঞা:
উপ+ আ+✓ ধা এর সাথে ই প্রত্যয় যোগে নিষ্পন্ন হয় ‘উপাধি’ শব্দ….যার মানে অতিরিক্ত ধারণ করা বা পাওয়া নামউপ+ অ, অভিধা, স্বত্ব- দান, মনোনীত করা ইত্যাদি ইত্যাদি।
উপাধি [ upādhi ] বি. 1 উপনাম; জাতি বংশ বিদ্যা সম্মান প্রভৃতির পরিচায়ক নামান্ত; 2 পদবি; 3 (দর্শনে) যা কাছে থেকে নিজগুণ নিকটস্হ বস্তুতে আরোপ করে, যেমন জবাফুল স্ফটিকের ‘উপাধি’। [সং. উপ + আ + √ ধা + ই]। ̃ ক, ̃ ধারী (-রিন্) বিণ. উপাধি পেয়েছে এমন; উপাধিযুক্ত। ̃ পত্র বি. যে পত্রে উপাধি লেখা হয়, প্রশংসাপত্র, certificate.
জাতি-ধর্ম-কর্ম-শিক্ষা-ক্রীড়া- কৌলিন্য- সামরিক- অসামরিক মিলে উপাধি’র অন্ত নেই। কোনো একজন সু-মহৎ ব্যাক্তিত্বের পাওয়া উপাধিকে পরবর্তী প্রজন্মেও ব্যবহার করতে করতে তা একসময়ে অধিকার বলে ওটা তাদের পদবিই যে হয়ে গেছে এমন উদাহরণ আকছার দেওয়া যায়।এসব কারনেই বুঝি, উপাধি আর পদবি কাছাকাছি এসে অনেক সময়েই তা এক হয়ে গেছে।
পুরাণের বড়ো রাজাদের অনেকেই “রাজ-চক্রবর্তী” বা “চক্রবর্তী সম্রাট” উপাধি নিতেন। ‘বুদ্ধদেব’ তো সিদ্ধার্থ গৌতম শাখা মুন্নী’র পাওয়া উপাধি।
মামুদ গজনবী ই নাকি প্রথম “সুলতান” উপাধির ধারক।
পাওয়া উপাধি (কালক্রমে যা পদবি তে পরিবর্তিত) ‘র ইতিহাস টা হয়তো বা বুঝি একটু আলাদা।
ইসলাম ধর্মের ‘শেখ্’ আসলেই কোনো পদবি নয়।
সম্ভ্রান্ত পরিবারের বয়োঃজ্যেষ্ঠ সদস্যের প্রতি সম্মান নিদর্শনের ভাষা মাত্র। আবার দেখুন, আরবি শব্দ শিক্ মানে ‘রাজস্ব’ ; ফারসি শব্দ দার মানে আদায়কারী বা গ্রহনকারী। দুটি শব্দ জুড়ে হোল ‘শিকদার’…. যা’র অর্থ এক ধরনের রাজ-কর্মচারী।
রাষ্ট্র বা জমিদার এর মজমা বা মৌজা ( নির্দিশ্ট এক ভূখন্ড) ‘র যিনি দলিল-রক্ষক তিনিই হলেন মজুমদার। আরবি শব্দ ‘তালুক’ মানে স্থায়ী জমি-জমা ; দার মানে রক্ষনকারী তাই তালুকদার ।
মোঘল আমলে হিন্দু-মুসলিম এই উভয় সম্প্রদায়ের মানুষদের উপাধি দেওয়ার রেওয়াজ তো ছিলই।
যেমন, ’সরকার’ এই ফরাসি শব্দের অর্থ প্রভু, ভূ-স্বামী বা শাষণ কর্তা। আবার মনে করুন, আরবি শব্দ মালিক যা’র মানে গ্রামের প্রধান বা মোড়ল।এই ‘মালিক’ উপাধি থেকেই মল্লিক পদবি এসেছে বলে ভাষা-বিদ্ দের অভিমত। ছোটো-খাটো সামাজিক সমস্যাকে ” পাড়ায় সমাধান” করা ছিল এদের কাজ। কোনো কোনো ঐতিহাসিক এর মতে মুরা’র নাম অনুসারে বংশের পরিচয় মৌর্য। আবার কেউ মনে করেন, ময়ূরকে ভালোবাসার নজির হিসাবে এঁরা মৌর্য উপাধি ধারণ করেছিলেন।
দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের ‘বিক্রমাদিত্য’ উপাধি ধারণ তো ইতিহাস স্বীকৃতই।
আবার দেখুন, ’চৌধুরী’ শব্দটি। রাজশেখর বসু’র মতে, সংস্কৃত ‘চতুর্ধুরিণ’ শব্দ থেকে জাত যা’র মানে চতুঃসীমানা’র শাষক। নবাব বা জমিদারদের
যাঁরা তাঁদের আঁকা-লেখা-বলাতে ও শিল্পের ছাপ রেখে তাঁদের মনোরঞ্জন করতেন (মুন্সীয়ানা’র ছাপ) তাঁদের উপাধি ছিল ‘মুন্সী’। শ্রীল অর্থাৎ শ্রী বা লাবন্য মন্ডিত থেকেই শীল উপাধি অর্থ দাঁড়ায়, বিশুদ্ধ স্বভাবের চরিত্র। বৌদ্ধযুগে এই উপাধির ভুরি ভুরি নজির আছে।
‘সাধু’ উপাধি > সাহু> সাহা পদবি…. অর্থ যাঁরা মজুত ব্যবসাতে নিযুক্ত শ্রেনী। এই সাহা-বাবুরাি কী তবে বিহারে গিয়ে ‘শা” উপাধি নিলেন ?
আবার আচার্য (শিক্ষক)> অপভ্রংশে, হোল ওঝা যা পরিনামে ‘ঝা’ কিনা কে বলতে পারে ?
আবার, চাঁদ রায়, কবিয়াল মুকুন্দ রায় থেকে অন্নদাশঙ্কর, সত্যজিৎ সিদ্ধার্থশঙ্কর এর ‘রায়’ ও নিঃসন্দেহেই তাঁদের উপাধি রায় রামানন্দ ই
তার প্রমান। ‘রায়’ বা ‘রায়চৌধুরী’ রাই ছিলেন অবিভক্ত বঙ্গের অবিসংবাদী জমিদারকুল।
পেশাগত উপাধিঃ (পরে যা পদবি) ‘র উদাহরণ অসংখ্য গোসাঁই, কীর্তনীয়া, মালাকার,কর্মকার,কানুনগো,ঘটক, পাঠক,বনিক, বৈদ্য সূত্রধর, কবিরাজ দীর্ঘ্য তালিকার কয়েকটি।
ধর্মীয় ক্ষেত্রেঃ পরমহংস, দ্বিবেদী, ত্রিবেদী, চতুর্বেদী, পুরোহিতবা মোল্লা, গাজি, রহমান, ফকির, চিশতি বা সিদ্দিকী বা ফাদার- সিস্টার- পোপ সন্দেহ নেই, এ সবই তো একই তালিকা ভুক্ত। ষড়ঙ্গী ও এর ব্যাতিক্রম নয়। শিক্ষা ,কল্প, ব্যাকরণ, নিরুক্ত, ছন্দ্য ও জ্যোতিষ …. এই ষড়্-বদাঙ্গ নিয়ে যাঁরা চর্চ্চা করতেন তারাই ‘ষড়ঙ্গী’ > সারেঙ্গী। আবার, তুর্কি-পারস্য ধর্মের মানুষদের উপাধি ছিল ‘বেগ’, ‘খাস’, ‘মির্জা’, ‘সেকেন্দার’ ইত্যাদি।
উৎপত্তি স্থল থেকেঃ ‘বন্দ্য’ ও ‘চাটুটি’ এই দুই গ্রাম থেকে আহুত ব্রাহ্মণ-শিক্ষক সমাজ ই বর্তমানের বন্দ্যোপাধ্যায়> ইংরেজ আমলে উচ্চারণের অসুবিধার কারণেই ‘ব্যানার্জী’, চট্টোপাধ্যায়রা হোয়ে গেলেন ‘চ্যাটার্জী’ ! সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন তো ছিলেন ‘সর্বপল্লী’ গ্রামের মানুষ। নীলমনি কুশারী’র বংশধর ঠাকুর-দেবতার সেবা-পুজো করতে করতে হোলেন ঠাকুর। সাহেব-সুবোদের উচ্চারণের সুবিধার্থে নোবেলজয়ী ‘টেগোর’।
‘মহামহোপাধ্যায়’ উপাধি অবশ্য ভারত সরকারেরই দেওয়া । তা যাক। উপাধি থেকে পদবি হোক বা এর উল্টোটাই হোক এতে কোনো অসুবিধে নেই। অসুবিধাটা হয় এই জায়গাতে যখন পদবি’র কৌলিন্যে আমরা অনেকেই কিছুমাত্র হোলেও গর্ব অনুভব করি আর বেমালুম ভুলে যাই যে আসলে এটা আমাদের উপাধি। মানে, পূর্বপুরুষদের সু-কর্মের (অবশ্যই সবক্ষেত্রে না হোলেও বহুক্ষেত্রেই) ধ্বজাধারী হয়ে, অহংকারের বসে ভুলে যাই আমরা কবিগুরুর সেই ছোট্ট সাবধান-বাণীঃ
“অনেক উপাধি তব। ‘
মানুষ’ উপাধি হারায়েছ শুধু,
সে কথা কাহারে ক’ব ?”
Click the link to see the reference: https://www.bharatiyabhashaparishad.org/, Some famous Indian with their popular name
Paper Bengali Surnames Published September 1959, Tribes and Cast of Bengal, Bengali Surnames

Dr. Raghupati Sharangi, a renowned homeopath and humanitarian who lives for the people’s cause. He is also a member of the Editor panel of IBG NEWS. His multi-sector study and knowledge have shown lights on many fronts.