বিশ্ব-নারী দিবসে মহামুনি’র নীতিকথা
ডাঃ রঘুপতি সারেঙ্গী
“For God’s sake, hold your tongue, and let me love,”
A LINE FROM The Canonization BY JOHN DONNE
আজ বিশ্ব নারী দিবস। বহুরূপী এই নারীর জন্মলগ্নে নাম কন্যা, যৌবনে নারী হয় স্ত্রী, খাদ্য-পরিবেশন কালে সে ই হয়ে ওঠে পুরুষের মাতৃস্বরূপা। নারী মানে নিষ্ঠাসহ স্বধর্ম পালন। এমনও একটি কথা রয়েছে…” গৃহিণী গৃহমুচ্যতে”……. অর্থাৎ কিনা, গৃহ এবং গৃহিনী সমার্থক। মানে, গৃহিণী ছাড়া গৃহ অলীক কল্পনা মাত্র। এই যদি নারী জাতি’র ঠিক ঠিক সত্ত্বা হয়ে থাকে তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, তাঁদের পুরুষের ভোগ্যবস্তু ভাবাটা নেহাৎই বালখিল্যতা নয় কী ?
দিতি এবং অদিতি’র গর্ভেই একদিন নিহিত ছিলেন স্বয়ং দেবতা এবং দানব-কুল। আর, মণু-শতরূপার কোল আলো করে যে নেমে এসেছিল সমগ্র মানবকুল….. সে কী ভুলে যাওয়ার বিষয়?
নারী মানেই তো ‘গোমুখ’…. মহান সৃষ্টির উৎসস্থল !
অপালা, ঘোষা, বিশ্ববারা’র নাম, তাঁদের মৌলিক অবদান এর কথা ভারতবাসী মাত্রই জানেন। পুজোর আগেই কুমারী-পুজোর সনাতন পরম্পরা…. তার নাম ভারতবর্ষ ! “অহল্যা-দ্রৌপদী-কুন্তী-তারা-মন্দোদরী”…… এই ‘পঞ্চ-সতি’ আমাদের দেশেই প্রাতঃস্মরণীয়া।
পুরাণ এর “কালী-তারা-মহাবিদ্যা-ষোড়শী- ভূবনেশ্বরী….. ইত্যাদি “দশ-মহাবিদ্যা”য় তো কোনো পুরুষ-দেবতার নামগন্ধ ও খুঁজে পাওয়া যায় না !
আর, আমাদের বীর-সন্ন্যাসী তো সেই কবেই শুনিয়েছেন তাঁর সাবধানবাণী.….” হে ভারত! ভুলি ও না তোমার নারী জাতি’র আদর্শ….. সিতা-সাবিত্রী-দময়ন্তী.……”!
এই যে দেশের মহান নীতি ও আদর্শ, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হোলেও বাস্তব এটাই, সে দেশেও নিয়ম করে উচ্চতম আদালতের নির্দেশ ক্রমে আল্ট্রাসনোগ্রাম এর মাধ্যমে ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হোয়েছে। কারণটা সহজেই অনুমেয়।
আসুন, এই শুভদিনে আমরা একটু জেনে নি, মহামুনি মনু সচেতন হয়ে নারীদের বিষয়ে তাঁর কী সনাতন সিদ্ধান্ত জানিয়েছেনঃ—-
স্ত্রী’র আর এক নাম ‘ভার্য্যা’ কেন ?
শাস্ত্রে আছে, ” পুত্রার্থে কৃয়তে ভার্যা “। বংশ-রক্ষা করার মহান ব্রত সম্পাদনে বিবাহ-বিধি।
মহামুনি মনু আরও এক ধাপ এগিয়ে জানাচ্ছেন—
বৰচ ব্রাহ্মণে লিখিত আছে—
“পতির্জায়াং প্রবিশতি গর্ভো ভূত্বেহ মাতরম্ ।
তস্তাং পুননবো ভূত্বা দশমে মাসি জায়ত্তে।
গুজায়া জায়া ভবতি যদস্তাং জায়তে পুনঃ ॥
- অর্থাৎ পতিই শুক্ররূপে স্ত্রীর গর্ভে প্রবিষ্ট হইয়া গর্তরূপে অবস্থান করেন এবং তাহা হইতে পুনর্বার জন্মগ্রহণ করেন, এই জন্মই ধৰ্ম্মপত্নী জায়া নামে অভিহিত হন।
অর্থাৎ পতি শুক্ররূপে নিজ পত্নীর শরীরে প্রবেশ করে গর্ভ থেকে সে নিজেই আবার পুত্ররূপে বেরিয়ে আসে। তাই তিনি শুধু পুত্রের নয়….অন্যপক্ষে
স্বামী’রও একরকম জন্মদাতা। তাই তাঁর আর এক নাম.. ‘ভার্য্যা’। জাতীয় প্রয়োজনেই তাই এঁদের সম্মান, নিরাপত্বা এবং সঠিক রক্ষণাবেক্ষন অতি স্পর্শকাতর এবং অত্যন্ত সংবেদনশীল এক বিষয়।
মনুজী জানাচ্ছেনঃ
১২৬ ৷ অপিচ। পিতা রক্ষতি কৌমারে ভর্তা রক্ষতি যৌবনে । পুত্রশ স্থবিরে ভাবে ন স্ত্রী স্বাতন্ত্র্যমৰ্হতি ॥
ছোটবেলায় বাবা, বিবাহের পরে স্বামী’র দায়িত্বে এবং বয়স গড়ালে এনারা পুত্রের যত্নে থাকবেন। এটা কোনোভাবেই কারুর কোনো স্বাধীনতাতে হস্তক্ষেপ ভাবাটা কতোটা যুক্তিযুক্ত তার মূল্যায়ন মূল্যবান পাঠকের ওপরই ছেড়ে দিলাম।
কেন এদের এতো প্রয়োজন ?
মহামুনি লিখছেঃ
মনুসংহিতার নবম অধ্যায়ের ২৬ নম্বর শ্লোকটি জানাচ্ছে, ‘‘প্রজনার্থং মহাভাগাঃ পূজার্হা গৃহদীপ্তয়ঃ।’’ মানে, স্ত্রীলোক সন্তান প্রসব ও পালন করে বলেই তারা গৃহের দীপ্তি।
স্ত্রীয়ং শ্রিয়শ্চ গেহেষু ন বিশেষঃ অস্তি কশ্চন্।।”
মানে, বংশরক্ষাই শেষ কথা নয়। মনূজী’র চোখে এনারা গৃহের প্রদীপ তুল্য। পূজা-যোগ্যা। বাড়ির
শ্রী এবং বাড়ির স্ত্রী একই কথা।
শুধু এটুকুই ? এতেই এতো যত্ন ?
না… না। তিনি আরও অনেক কথাই বলেছেন। যেমনঃ
অপত্যং ধর্ম্মকার্য্যাণি শুশ্রূষা রতিরুত্তমা।
দারাধীনস্তথা স্বর্গঃ পিতৃণামাত্মনশ্চ হ॥৯।২৮।
বলছেন, কূল-রক্ষা, গৃহে ধর্ম কার্য্যের অনুষ্ঠান, সেবা, স্বামীকে রতি-দান ই নয় পিতৃকূল এবং স্বামীকূলের স্বর্গ-গতি ও এঁদের অধীন। বৈদিক যজ্ঞে
যুগলের সক্রিয় অংশগ্রহন এক শতসিদ্ধ সিদ্ধান্ত।
তাহলে কী এদের কোনো দূর্বলতার কেন্দ্রবিন্দু নেই ?
মুনি বলছেন, আছে বৈ কি! শুনবে?
“সুরূং বা বিরূপং বা পুমানিত্যব ভুঞ্জতে।
পৌংশ্চল্যাঃ চল চিত্তাচ্য নৈঃস্নেহ্যাচ্চ স্বভাবতঃ।।
কোমল স্বভাবের মায়াবী নারীকূলের দূর্বলতা,এটাই, জাত-কূল-সমাজ বিচার না করে অনেক ক্ষেত্রেই আবেগ তাড়িত হয়ে পড়া। সহজেই চঞ্চল মনে এরা ভুল পথে পাড়ি দেয়।
কিন্তু আগে-ভাগে এদের সচেতন করা যায় কী করে ?
মনুজী তাও জানাচ্ছেন, স্পষ্ট ভাষায়।
তিনি লিখছেনঃ
পানং দুর্জ্জনসংসর্গঃ পত্যা চ বিরহোহটনম্।
স্বপ্নোহন্যগেহবাসশ্চ নারীসন্দূষণানি ষট্।। মনু ৯।১৩ ।।
মদ্য এবং ভাং প্রভৃতি মাদকদ্রব্য সেবন, দুষ্ট লোকের সংসর্গ, পতি বিয়োগ, ভণ্ড (সাধু) দর্শনের ছলে একাকিনী যেখানে সেখানে বৃথা ভ্রমণ, পরগৃহে যাইয়া শয়ন অথবা পরগৃহে বাস–এই ছয়টি দোষ নারীচরিত্রকে কলুষিত করে। পুরুষেরও এই সকল দোষ ঘটিয়া থাকে। পতি পত্মীর মধ্যে দুই প্রকার বিয়োগ ঘটে। (প্রথমতঃ) কোন ক্ষেত্রে কার্য্যবশতঃ দেশান্তর গমন, দ্বিতীয়তঃ মৃত্যুবশতঃ বিচ্ছেদ ঘটা। প্রথমোক্ত ক্ষেত্রে প্রতীকার এই যে, দূরদেশে যাত্রা করিতে হইলে স্ত্রীকেও সঙ্গে রাখিবে। ইহার প্রয়োজন এই যে বহুকাল পর্য্যন্ত (পতি পত্মীর) পৃথক্ অবস্থান সঙ্গত নহে।
অর্থাৎ যে কোনো নেশা, অসৎ সংসর্গ, পর-পুরুষের সাথে ইতস্ততঃ ভ্রমন, স্বামী’র মৃত্যু, অকালে নিদ্রা (রাতে কিন্তু ঘুম আসে না) এবং মাঝেমধ্যে অন্য জায়গাতে থাকা….. এই ৬ টি লক্ষন দেখে চেনা যায় তার পবিত্রতা এবং পতিব্রতা। পতিব্রতা সাবিত্রীতার অখন্ড সতিত্ব-শক্তিতেই স্বয়ং যে যম রাজকে পরাস্ত করে সত্যবান এর জীবন ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন।
শ্রদ্ধা-সম্ভ্রম-ভালোবাসা পেলে এদের “বুকেও আতরের গন্ধ হবে”।
রবিঠাকুরকে বাদ দিলে বোধহয় আবেগ বাঙালির পূরণ হয় না, তাই কবিগুরুর শেষের কবিতা থেকে বলি:
“Blow gently over my garden
Wind of the southern sea.
In the hour my love cometh
And calleth me.
চুমিয়া যেয়ো তুমি
আমার বনভূমি,
দখিন-সাগরের সমীরণ,
যে শুভখনে মম
আসিবে প্রিয়তম–
ডাকিবে নাম ধরে অকারণ।”
Source:https://rabindra-rachanabali.nltr.org/node/209 , Dayananda Swaraswati Works
Dr. Raghupati Sharangi, a renowned homeopath and humanitarian who lives for the people’s cause. He is also a member of the Editor panel of IBG NEWS. His multi-sector study and knowledge have shown lights on many fronts.