আবার করোনা – সেকেন্ড ওয়েভ, যা হচ্ছে মিউটেন্ট ও রেসিস্টেন্ট ভাইরাসের কারণে
ড: পলাশ বন্দোপাধ্যায়
দেশে আবার করোনা সংক্রমণ বাড়ছে।কেউ কেউ একে বলছেন সেকেন্ড ওয়েভ। যা হচ্ছে মিউটেন্ট ও রেসিস্টেন্ট ভাইরাসের কারণে এবং যাতে নাকি ভ্যাক্সিনও ফলপ্রসূ নয়।এরকম সম্ভাবনা থাকলেও আমাদের মতো খোঁজ খবর রাখা অনেকেরই ধারণা,ব্যাপারটা ঘটছে বেশির ক্ষেত্রেই আমাদের দোষে।
আসুন,কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর দিকে আঙুল না তুলে যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিয়ে সমস্যাগুলো আমরা একটু দেখে ফেলি।
●বহুদিন ধরে করোনা সম্বন্ধে বহু বিভ্রান্তিকর তত্ত্ব ও তথ্য সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট হলেও মোদ্দা যে ভাবে এ রোগটিকে আয়ত্বে রাখা যায় তার তিনটি মূল মন্ত্র হল মাস্ক পরা, নিয়মিত হাত ধোয়া এবং অন্তত ছ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা মানুষে মানুষে।
●আক্রান্ত থেকে সুস্থ মানুষের শরীরে দু ভাবে করোনা যায়।প্রথমটি হল ,আক্রান্ত ও আক্রান্ত নয়,এই দুই গোষ্ঠীর মানুষ কাছাকাছি আসলে আক্রান্তের নিশ্বাস,হাঁচি বা কাশি থেকে নির্গত জীবাণু কনা সরাসরি সংস্পর্শে আসা মানুষের শরীরে তার নাক,মুখ দিয়ে ঢুকে যায়।দেখা গেছে নিঃশ্বাস বায়ুর সঙ্গে বাহিত জীবানুকনা ছ ফুট পর্যন্ত বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। তারপর তা মাটিতে থিতিয়ে যায়।অর্থাৎ দূরত্ববিধি ঠিকঠাক মানলে আক্রান্তের থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমে।
●যে জীবনানুকনাগুলো নিঃশ্বাসের সঙ্গে বের হচ্ছে সেগুলোর নাম ড্রপ্লেট পার্টিকল।দ্বিতীয় মানুষের নাকের বা মুখের কাছে পর্যন্ত পৌঁছতে না পারলে সেগুলো থিতিয়ে হয় মাটিতে অথবা মানুষের শরীরে বা তার বাইরের যে কোনো জায়গাতে জমা হয়।এগুলোকে বলা হয় ফোমাইটস।ফোমাইটস আমাদের হাতেও জমে।
মুখে,চোখে ও নাকে হাত দেওয়া আমাদের এক সহজাত অভ্যাস।ফোমাইটস জমা হাত তা করলে সে কারণে আমাদের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।কারণ সংক্রমণ সুস্থ মানুষের নাক,চোখ ও মুখ দিয়েই তার শরীরে ঢোকে।তাই হাত পরিষ্কার করতে বলা হয় ঘন্টায় ঘন্টায়।হয় ঠিকঠাক স্যানিটাইজার অথবা সাবান দিয়ে।
●মাস্ক ব্যবহারের মূল কারণ হল,এটি আসলে একটি প্রোটেক্টিভ ব্যারিয়ার হিসেবে কাজ করে যাতে ,হঠাৎ অথবা অসাবধানে কাছাকাছি চলে আসা আক্রান্ত মানুষের শ্বাসতন্ত্রের থেকে হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে হঠাৎ করে বেরিয়ে আসা এই ড্রপ্লেট পার্টিকলগুলো সুস্থের শ্বাসযন্ত্র(এক্ষেত্রে নাক বা মুখ) দিয়ে প্রবেশ করতে না পারে।থ্রি লেয়ার n95 মাস্ক সব থেকে ভালো।তাতে জীবাণুও মাস্কের গায়ে অনেকটাই আটকে যায়।সাধারণ মাস্ক মন্দের ভালো,তাতে ড্রপ্লেট আটকে যায়।সঙ্গে থাকা জীবাণুকনাও।
●●প্রশ্ন উঠতে পারে, এসব নিয়ম মাথায় না রেখেও অনেকে দিব্যি সুস্থ থাকছেন কি করে।সেটা কিভাবে সম্ভব?
সম্ভব তিনভাবে।যাঁদের শরীরে বেশি ভাইরাস ঢুকছে তাঁরা উপসর্গযুক্ত রোগী হচ্ছেন।যাদের শরীরে তুলনায় ভাইরাস কম ঢুকছে তাঁরা উপসর্গহীন রোগী হচ্ছেন।এবং যাঁদের শরীরে আরো কম সংখ্যক ভাইরাস ঢুকছে,তাঁরা রোগগ্রস্ত হচ্ছেন না। শরীরের সাধারণ প্রতিরোধ ক্ষমতা তাঁদের বাঁচিয়ে দিচ্ছে।প্রথম দুই গোষ্ঠী থেকে অন্য সুস্থ মানুষের শরীরে রোগ ছড়াচ্ছে।
এবার দেখা যাক এতদিনে এত কিছু জেনে গিয়েও(সবার মোবাইলে মন্ত্র পড়ার মত এ কথাগুলো শোনা যায়।) আমরা কি ভুলগুলো করছি।
●আমরা বেড়াতে যাওয়া, অপ্রয়োজনে হাট বাজার যাওয়া,মলে যাওয়া,গ্যাদারিং এ যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারি নি।এসব জায়গাতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়।
●মাস্ক পরাতে আমাদের অনীহা ,আপত্তি দুটোই।অবৈজ্ঞানিক যুক্তিও আছে তার পিছনে,মাস্ক পরলে নাকি শ্বাস কষ্ট হয়।অনেকে মাস্ক পরেন কিন্তু পুরো নাকটা খোলা থাকে।অনেকে আবার আরো ভালো।তাদের মাস্ক থাকে থুতনিতে।যখন ইচ্ছে হল পরলেন।অনেকে আবার কথা বলার সময় মাস্কটা নামিয়ে নিলেন।তাতে কথা বলতে ও বোঝাতে নাকি সুবিধা হয়।
●হাত ধোয়ার বা পরিস্কার করার পাট প্রায় উঠেই গেছে।সঙ্গে চলছে যত্রতত্র মাস্ক নামিয়ে অপরিস্কার হাতে খাবার খাওয়া ও ধূমপানের হিড়িক।
★★এসবের প্রতিবাদ আপনি জনসমক্ষে করতে পারবেন না।তাহলেই বিরোধিতার সম্মুখীন হবার প্রবল সম্ভাবনা।
●এর সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে ভোটের ধুম।যাঁরা এতদিন সমাজবন্ধু হয়ে মানুষের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন তাঁরা এখন সব কর্তব্য ডকে তুলে দিয়েছেন।সেটা তাঁরা স্বীকারও করছেন।
●●বাস্তব কথা হলো, করোনা যাবে না।থাকবে।আমাদের শিখে নিতে হবে এরই মধ্যে বিধি মেনে কিভাবে জীবন জীবিকা চালানো যায়।কয়েকদিনের সুখের উৎসব পালনের জন্য লাগামছাড়া হওয়া আসলে বাকি জীবনটাকেই অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেওয়া,এটা না বুঝলে বার বার হবে সর্বনাশা কর্মনাশা লকডাউন।পঙ্গু হবে আমাদের অর্থনীতি।আমরা না খেয়ে মরব।দায়িত্ব নাগরিক,নেতা,বুদ্ধিজীবী,সমাজকর্মী, চিকিৎসক,পুলিশ,প্রশাসন,শাসক,বিরোধী সবার।একে অপরের দিকে আঙুল তুলে পার পাবার দিন শেষ।
আর হ্যাঁ।নিজের সময়ে করোনা টিকা সকলকে নিতে হবে।সব্বাইকে।টিকার প্রাণঘাতী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।যা হতে পারে তা হল এলার্জি সংক্রান্ত সমস্যা।সেটা হলে হবে আধ ঘন্টার মধ্যে।সুতরাং টিকা নিয়ে আধ ঘন্টা টিকা কেন্দ্রে বসে থাকতে হবে,নির্দেশ অনুসারে।কেউ দয়া করে বিজ্ঞানটা না জেনে দায়িত্বজ্ঞানহীনের মত সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো আলটপকা পোস্ট দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত বা ভীত সন্ত্রস্ত করবেন না।তাতে লড়াইটা কঠিন হয়ে যাবে।যৌথ লড়াই সবাই মিলে জিততে হয়।ক্ষুদ্র ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থের কোনো স্থান নেই এখানে।
