কারণে অকারণে এ ও এক মুক্তিযুদ্ধ যেন……..
ডাঃ রঘুপতি সারেঙ্গী।
লোক-শিক্ষার জন্য, শৌনক আদি ঋষিরা মহারাজ যুধিষ্ঠিরকে উপদেশ দিচ্ছেনঃ
“দেয়ম্ আর্তস্য শয়নং স্থিতশ্রান্তস্য চাসনম্।
তৃষিতস্য চ পানীয়ং ক্ষুধিতস্য চ ভোজনম্।।”
………..’বনপর্ব’, মহাভারত।
কিন্তু উহান থেকে উড়ে আসা এই চিন দেশের অচিন অতিথি (যে কোনো তিথি বা ক্ষন না মেনে ঘরে আসে) বনপর্বের এই শিক্ষাকে ও যেন অক্কা পাইয়ে দিচ্ছে। কে কাকে যে আগামিকাল বসতে আসন দেবে, দূরত্ব বজায় রেখে শোওয়ার ঠাঁই দেবে কেই বা তা বলতে পারে! তৃষ্ণার্তের হাতে এক গ্লাস জল বা ক্ষুধিত এক জনের হাতে এক প্লেট খাবার তুলে দিতে হোলেও তো তিন মিটার এর গন্ডি টপকাতেই হয়। বুঝুন, কেমন অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবন কাটালে স্বাস্থ্য-কর্মীদের সাথে মিটিং এর ভূমিকাতে স্বাস্থ-অধিকর্তাকেই বলতে হয়, ” আমি জানি না, পরের বার আমাদের আজকের এই ক’জন আবার একসাথে বসার সুযোগ পাবো।”
অতিথি যে সারা বিশ্বকেই তাঁর অস্তিত্বের প্রমান দিতে একরকম বদ্ধপরিকর। “মধু-মাখা হরিনাম” শুনিয়েই ছাড়বে সে!
সভ্যতা বলে…”হার নেহি মানুঙ্গা”। শুরুর দিকে, তাই নাইট-কার্ফু জারি হোল। স্থলপথে, আকাশপথে যাতায়াতে লাগাম পড়লো। শেষমেস, দেশের আর্থিক মন্দা কে উপেক্ষা করেও সুচিত্রা সেন আর ঋষি অরবিন্দের গল্প শুনিয়ে জনগনকে গৃহবন্দী রাখা হল….. টানা কয়েকটা মাস ! Quarantine আর Isolation এর মতো ডাক্তারি শব্দ গুলো Public domain এ চলে এলো। কোচ রাজের দেশ থেকে ভূটানের পাহাড় চকচক্ করলো। নীল জলে নাকি আনন্দে ডলফিন খেলা করতেও শুরু করলো। করোনা’র খেলা একটু কমলো, কিন্তু থামলো কৈ? Allopath রা তাঁদের Treatment protocol দিলেন..
1)”Antiviral হিসেবে Remdesivir 200mg in i.v. on day1 তারপরে, 100 mg in i.v. for the next 5-10 days.
2) Immunomodulator Inj Methylprednisolone 0.5mg to 1mg / kg body wt.
3) Low dose Anticoagulant হিসেবে UFH 0.5 mg / kg/day । সাথে, Ivermectin 12 on day 1, day 7 and day 30 th day every month in addition to Vaccine.
Homoeopath রা দাঁড়িয়েই রইলেন ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকারের AYUSH দপ্তরের দেওয়া Protocol এর ওপরঃ প্রতি মাসে তিন দিন করে ARSENICUM ALB 30 খেতে হবে। কেউ কেউ অবশ্যই ২/১ টা আলাদা ওষুধ…. ব্রায়োনিয়া এবং কার্বোভেজ এর উল্লেখ ও করলেন। মহারাষ্ট্র তে
এই ওষুধের ওপর নির্ভর করে ILI নিয়ে এবং কোভিড সন্দেহে কোয়ারেনটাইনে থাকা 99.3% ক্ষেত্রে অসুস্থ মানুষজনকে সুস্থ করে বাড়ি পাঠানো সম্ভব হোল।।
Ayurved’র AYUSH 64, গিলয়, ধন-বটি, যষ্ঠিমধু ইত্যাদিও কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছে বলে জানা গেল। ডাক্তার না হয়েও, Morning SMS করা কোভিড- যোদ্ধার সংখ্যাটি ও নেহাতই কম রইলো না !
কেউ গরম জল পান করার নির্দেশ দেন তো কেউ স্টিম নেওয়ার পরামর্শ দেন। কেউ দিচ্ছেন, ঘনঘন গ্রীন টি পান করার নির্দেশ।
Social distancing কঠোরভাবে মেনে ভারতের মতো ঘন-বসতিপূর্ণ দেশে থাকতে হলে করোনা’র কারনেই কয়েক কোটি মানুষকে পাকিস্তানে আর কয়েক কোটিকে উল্টোদিকে, বাংলাদেশে যেতে হবে… এও এক সত্য !
Sanitizer নিয়ে তো বিজ্ঞানী মহলেই বিস্তর চাপান-উতোর আজও অব্যাহত ! মাস্ক ব্যবহার নিয়ে অবশ্য মতান্তর নেই কোনো মহলেই।
এদিকে, চিকিৎসা-বিজ্ঞানীদের একটাই কথাঃ
জ্বালবে বাতি আলাদীন
আসবে চলে ভ্যাকসিন।
সেই আশাতেই বুক বাঁধলাম আমরা সাধারণ মানুষ।বিশ্ব-জুড়ে প্রতিযোগিতায়, স্বল্প প্রতিক্ষার অবসানে বাতি জ্বললো …… কিন্তু তেলের পরিমান আলাদা।
ভারত-বায়োটেক এর বাতি তে ৮১ শতাংশ তেল ধরে,অ্যাস্ট্রা জেনেকা তে ৮৯ শতাংশ, আর রাশিয়ান স্পুটনিকে একটু বেড়ে, তা ৯২ শতাংশ বলে দাবি।
এরই মাঝে দু-দুবার রূপ বদলে, রঙ্গমঞ্চে হাজির করোনা রানী। তূন এর তীর আগের থেকে এবার একটু ভোঁতা হলেও সংখ্যাটা যে বড্ড বেশি !!
বিশ্ব-স্বাস্থ সংস্থা’ র মতে, আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে করোনা’র কৃপা থেকে এ বিশ্বের মুক্তি নেই।
কোনো কোনো বিজ্ঞানী’র মতে ইনি কালজয়ী।কোনো কোনো মহল জানাচ্ছেন, Lock-down এখুনি ঘোষণা করা উচিৎ…. অ্যামেরিকান লবি বলছে, বদ্ধ-ঘরেই সংক্রমনের প্রকোপ বেশি।
শোনা যাচ্ছে, ওখানকার উচ্চ-শিক্ষিত ধনকুবেররা ও নাকি এখন তাঁদের পস্-এলাকার প্যালেস ছেড়ে পাল্স-অক্সিমিটার হাতে এক চিলতে মুক্ত-হাওয়া পেতে গ্রামের পথে পাড়ি দিচ্ছেন। হলি-ডে হোম বানাচ্ছেন।
বলি, হোল টা কী…. আপনার সেই “লোহার পাঁজরে ইটের খাঁচা” টা’র? সেটা বুঝি তখন, ব্র্যান্ডেড স্টিল দিয়ে বানান নি! কেনো ক্যাপ্টেন সাপ্লাই দেয়নি? Top technology যুক্ত TMT বার? না, তাও নয়? ও!…….সে কারনেই ঠিক ফ্লেক্সিবল্ ও নয় বোধহয়!
এত dilema র মাঝেও, আমার মনে হয়, কোথাও যেন কোনো সত্যকে আমরা স্বীকার করছি না।
প্রশ্ন জাগে, আমরা নিজেদের সংকল্পে কাছে নিজেই কতোখানি দৃঢ়। 1st Wave এ আমেরিকার ক্ষতি সর্বোচ্চ হোলেও পরবর্তী Wave গুলোতে ভীষণ ভাবেই সফল। আমরা পারলাম কৈ !
শ্রদ্ধেয় প্রধান-মন্ত্রী বা মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্য -মন্ত্রী’র সমালোচনা করার সাংবিধানিক অধিকার আপনার আছে। নিশ্চই আছে। কিন্তু তাতে করোনা কমবে কী ?
ডাক্তারি সিলেবাসে (PSM) সাধারণ নাগরিকদের উদ্দেশ্যে কতগুলি Responsibilities এর কথা স্পষ্ট করা আছে…… যা’র প্রথম টিই হোল INDIVIDUAL Responsibility … “This health generating activities that are undertaken by the persons themselves”…অর্থাৎ আমার নিজের ভালোর জন্য, আমার পরিবারের স্বার্থে আমার একক প্রচেষ্টাতে আমি যা করতে পারি। বলুন তো, সরকারি বিজ্ঞপ্তি না মেনে ৫০০ টাকা ফাইন দেওয়া কেমনতর শিক্ষার নজির ? মাঝ-রাতের এই লেখা শেষ হওয়ার আগেই সংক্রমণ যেখানে চার লক্ষ ছুঁই-ছুঁই, মুখের মাস্কটা কে নাকের নীচে নামিয়ে রাখাটা তখনো কী এক style ? এর পরে, তো Community responsibility তারপরে State responsibility….
এবং সবশেষে, রয়েছে International responsibility (WHO, ASEAN, SAARC) এ সবের প্রসঙ্গ। WHO এর সমালোচনা ভুলে আজ আত্মসমালোচনা করার বড্ড বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে, মনে হয়।
সত্তরের দশকের অতি জনপ্রিয় এক হিন্দি ছবি অমর প্রেমের গান আনন্দ বাকশি সায়েবের লেখা ,মনে হয় যেন এই সময়কে মনে করে লেখা
চিঙ্গারী কোই ভড়কে
হু চিঙ্গারী কোঈ ভড়কে
চিঙ্গারী কোঈ ভড়কে
তো শাওন উসে বুঝায়ে
শাওন যো অগন লাগায়ে
উসে কৌন বুঝায়ে
হো উসে কৌন বুঝায়ে
পতঝড় জো বাগ উজাড়ে
ও বাগ বাহার খিলায়ে
জো বাগ বাহার মে উজড়ে
উসে কৌন খিলায়ে
হো উসে কৌন খিলায়ে
অর্থাৎ আয়েশে,আরামে আর অসতর্ক জীবন যাত্রা যেন মানব সভ্যতাকে শেষ করে না দেয় ?
শঙ্করাচার্যের কথা দিয়েই লেখার ইতি করি……
“কুরুতে গঙ্গাসাগর গমনং
ব্রত পরিপালনম্ অথবা দানম্।
জ্ঞানবিহীনঃ সর্বমতেন
মুক্তিং ন ভজতি জন্মশতেন।।
সত্য এটাই, আপনি মানুন বা, না মানুন।
Dr. Raghupati Sharangi, a renowned homeopath and humanitarian who lives for the people’s cause. He is also a member of the Editor panel of IBG NEWS. His multi-sector study and knowledge have shown lights on many fronts.