স্বামীত্ব কর্মসূচির আওতায় প্রধানমন্ত্রী ই-সম্পত্তি কার্ড বন্টনের সূচনা করেছেন
৪.০৯ লক্ষ সম্পত্তির মালিকানাধীন ব্যক্তিকে ই-সম্পত্তি কার্ড দেওয়া হয়েছে
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পঞ্চায়েত পুরস্কার ২০২১ প্রদান করেছেন
করোনা মোকাবিলায় পঞ্চায়েতগুলির ভূমিকার প্রশংসা
কঠিন এই সময়ে কোনো পরিবারই যাতে ক্ষুধার্থ না থাকে তা দেখা আমাদের কর্তব্য : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনায় ৮০ কোটি সুফলভোগীকে আরও দু-মাস বিনামূল্যে রেশন, কেন্দ্র এই কর্মসূচিতে ২৬ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করেছে : প্রধানমন্ত্রী
সমস্ত কেন্দ্রীয় নীতি ও উদ্যোগের মূল কেন্দ্রে রয়েছে গ্রামগুলি : প্রধানমন্ত্রী
কেন্দ্রীয় সরকার পঞ্চায়েতগুলির জন্য ২.২৫ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, এরফলে পঞ্চায়েতগুলির কাজকর্মে আরও স্বচ্ছতা আসবে : প্রধানমন্ত্রী
By PIB Kolkata
নয়াদিল্লী, ২৪ এপ্রিল, ২০২১
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী জাতীয় পঞ্চায়েতী রাজ দিবস উপলক্ষ্যে স্বামীত্ব কর্মসূচির আওতায় আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ই-সম্পত্তি কার্ড বন্টনের সূচনা করেছেন। এই উপলক্ষ্যে ৪ লক্ষ ৯ হাজার সম্পত্তির মালিকানাধীন ব্যক্তিকে ই-প্রপার্টি কার্ড দেওয়া হয়। একইসঙ্গে সারা দেশে আজ থেকে স্বামীত্ব কর্মসূচির সূচনাও হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র সিং তোমর সহ কয়েকটি রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী ও পঞ্চায়েতী রাজ মন্ত্রীরা এই উপলক্ষ্যে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঞ্চায়েতী রাজ দিবস এমন একটি উপলক্ষ্য যেখানে গ্রামীণ ভারতের পুনরুন্নয়নে আমরা নিজেদের আত্মনিয়োজিত করার জন্য শপথ গ্রহণ করি। এই দিনটি আমাদের গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির অসাধারণ কাজের স্বীকৃতি জানানোর মুহূর্ত।
করোনা মোকাবিলায় এবং মারণ এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গ্রাম পঞ্চায়েত তথা স্থানীয় নেতৃবৃন্দের ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদের সচেতনতামূলক উদ্যোগের কারণেই এই ভাইরাস গ্রামে ছড়িয়ে পরতে পারেনি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, মহামারীর এই মরণ কামড় থেকে গ্রামীণ ভারতকে দূরে রাখতে হবে। শ্রী মোদী পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠানগুলিকে করোনা সংকট মোকাবিলায় জারি হওয়া নীতি-নির্দেশিকাগুলি যথাযথভাবে কার্যকর করার জন্য পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আমাদের সুনিশ্চিত করতে হবে যে গ্রামের প্রতিটি মানুষই যেন করোনার টিকা পান এবং প্রত্যেকেই যেন আগাম সমস্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা মেনে চলেন।
প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, কঠিন এই সময়ে যাতে কোনো পরিবার ক্ষুধার্থ না থাকে তা আমাদের দেখা কর্তব্য। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনার মাধ্যমে প্রত্যেক দরিদ্র মানুষ মে এবং জুন মাসে নিখরচায় রেশন পাবেন। এই কর্মসূচির ফলে ৮০ কোটি সুফলভোগী উপকৃত হবেন এবং কেন্দ্র এই খাতে ২৬ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, এক বছরের মধ্যে যে ৬টি রাজ্যে স্বামীত্ব কর্মসূচি রূপায়ণ করা হয়েছিল তার প্রভাব মেলা শুরু হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় দ্রোণ প্রযুক্তির মাধ্যমে সমগ্র গ্রামের সম্পত্তির সমীক্ষা করা হচ্ছে এবং এর ভিত্তিতে মালিকানাধীন ব্যক্তিদের সম্পত্তি কার্ড দেওয়া হয়। আজ ৫ হাজারের বেশি গ্রামের ৪ লক্ষ ৯ হাজার ব্যক্তিকে ই-সম্পত্তি কার্ড দেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচি রূপায়িত হওয়ার ফলে গ্রামগুলিতে নতুন আস্থার সঞ্চার হয়েছে। ই-সম্পত্তি কার্ড সম্পত্তির যেকোন বিবাদ মিমাংসার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নেবে। একইসঙ্গে দরিদ্র মানুষকে শোষণ এবং দুর্নীতির হাত থেকে রক্ষা করবে। সাধারণ মানুষ ই-সম্পত্তি কার্ডের ফলে সহজে ঋণ সহায়তা পাবেন। এই কর্মসূচি দরিদ্র মানুষের সম্পত্তির নিরাপত্তা যেমন সুনিশ্চিত করবে তেমনই গ্রামগুলির সুপরিকল্পিত উন্নয়ন ও আর্থিক বিকাশ ত্বরান্বিত হবে বলে প্রধানমন্ত্রী অভিমত প্রকাশ করেন। শ্রী মোদী রাজ্যগুলিকে সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে সমঝোতা স্বাক্ষর করার পরামর্শ দেন যাতে সমীক্ষা পরিচালনার কাজে প্রয়োজন সাপেক্ষে রাজ্যস্তরীয় আইনগুলিকে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা যায়। প্রধানমন্ত্রী ব্যাঙ্কগুলিকে প্রপার্টি কার্ডের ফরম্যাট অনুযায়ী সহজে ঋণ দানের সুবিধা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, অগ্রগতি এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আমাদের গ্রামগুলি সর্বদাই অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে এসেছে। এই কারণেই সমস্ত কেন্দ্রীয় নীতি ও উদ্যোগের মূল কেন্দ্রে গ্রামগুলিকে রাখা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের উদ্দেশ্যই হল আধুনিক ভারতের গ্রামগুলিকে সক্ষম ও স্বনির্ভর করে তোলা।
পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠানগুলির ভূমিকা সম্প্রসারণে গৃহিত পদক্ষেপগুলির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন পঞ্চায়েতগুলি অগ্রগতির নতুন উচ্চতায় পৌঁছচ্ছে এবং ফাইবার নেট ব্যবস্থার সঙ্গে পঞ্চায়েতগুলিকে যুক্ত করা হচ্ছে। জল জীবন মিশনের আওতায় প্রতিটি পরিবারে পাইপ বাহিত পানীয় জলের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতগুলির বড় ভূমিকা রয়েছে। একইভাবে প্রত্যেক দরিদ্র মানুষের জন্য পাকা বাড়ির সংস্থান অথবা কর্মসংস্থানের সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। শ্রী মোদী পঞ্চায়েতগুলি ক্রমবর্ধমান আর্থিক স্বায়ত্ব শাসনের প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে ২ লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে, যা এককথায় অপ্রত্যাশিত। এরফলে পঞ্চায়েতগুলির কাজকর্মের হিসেবে স্বচ্ছতা আরও বাড়বে। পঞ্চায়েতীরাজ মন্ত্রক ই-গ্রাম স্বরাজ কর্মসূচির মাধ্যমে অনলাইন মাশুল মেটানোর ব্যবস্থা চালু করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান। এরফলে গ্রাম পঞ্চায়েতের যেকোন কাজকর্মে প্রাপ্য মাশুল পাবলিক ফিনান্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা পিএফএমএস ব্যবস্থার মাধ্যমে মেটানো যাবে। একইভাবে অনলাইন অডিট ব্যবস্থা কার্যকর হলে আর্থিক স্বচ্ছতা আরও বাড়বে। তিনি জানান, বহু পঞ্চায়েত ইতিমধ্যেই পিএফএমএস ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বাকি গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকেও তিনি অবিলম্বে এই ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরামর্শ দেন।
ভারতের স্বাধীনতার আসন্ন ৭৫-তম বর্ষপূর্তির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠানগুলিকে চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও উন্নয়নের চাকা গতিশীল রাখার পরামর্শ দেন। তিনি গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে লক্ষ্য ও পরিকল্পনা স্থির করে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে তা পূরণে উদ্যোগী হতে বলেন।
স্বামীত্ব কর্মসূচি সম্পর্কে
প্রধানমন্ত্রী ২০২০-র ২৪ এপ্রিল আর্থ-সামাজিক দিক থেকে শক্তিশালী এবং আত্মনির্ভর গ্রামীণ ভারত গড়ে তোলার জন্য কেন্দ্রীয় স্তরের প্রকল্প হিসেবে স্বামীত্ব কর্মসূচির সূচনা করেন। স্বামীত্ব কর্মসূচি হল গ্রাম এলাকায় আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রামের সমীক্ষা এবং মানচিত্র নির্মাণ। আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে গ্রামীণ ভারতের রূপান্তরে এই কর্মসূচির বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। গ্রামবাসীরা নিজেদের সম্পত্তিকে আর্থিক সম্পদ হিসেবে কাজে লাগিয়ে ঋণ ও অন্যান্য আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ২০২১-২০২৫ পর্যন্ত সারা দেশে ৬ লক্ষ ৬২ হাজার গ্রামকে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
উল্লেখ করা যেতে পারে ২০২০-২১এ পরীক্ষামূলকভাবে এই কর্মসূচি মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখন্ড, মধ্যপ্রদেশ-এই ৬টি রাজ্য সহ পাঞ্জাব ও রাজস্থানের নির্দিষ্ট কয়েকটি গ্রামে রূপায়ণ করা হয়।