সুখ স্বপনে… শান্তি শ্মশানে
ড: রঘুপতি ষরেঙ্গী
যদি আজও বিবেক না জাগে, তবে ভয় হয় একদিন সিরিয়ার সেই বাচ্ছাটার কথা ভেবে, যে বলেছিলো, “আমি সৃষ্টিকর্তাকে সব বলে দেব ।” সে বোধ হয় বলা শুরু করেছে আর ঈশ্বর বিশ্বশান্তির পথ খুলে দিয়েছেন।”ভাবুন,ভাবুন ভাবা প্রাকটিস করুন” ।
একবার এক কোটিপতিকে রেডিও জকি তাদের এক interview তে ডেকে জানতে চাইছিল,”কোন্ জিনিস আপনাকে সবচেয়ে সুখ দিয়েছে ?”
উনি উত্তরে বলেছিলেন্ঃ
আমি জীবনে চার ধরনের সুখ পেয়েছি…….আর শেষ বার পাওয়া সুখটাই আমাকে বুঝিয়েছে তার আসল সংঙা।
প্রথমে অর্জন করলাম, অঢেল অর্থ আর নাম-যশ-প্রচার আর প্রসার………… সুখ পেলাম না!
দ্বিতীয় বারে, নামী-দামী কোম্পানি’র অসংখ্য বিলাস বহুল গাড়ি কিনলাম। একে একে সাত-তারা বাড়ি বানালাম মুম্বাই আর চেন্নাই তে। জুহু বীচ এ গড়লাম আমার স্বপ্নের ইমারত। কিন্তু হায় রে হায় ! দু’দিন ছাড়া IT অফিস থেকে খালি নেমন্ত্রণ আসতে লাগলো! দূর ছাই…… কোথায়……….. সুখ! হাজিরা দিতে দিতেই শুকতালা ক্ষয়ে গেলে বাড়িতে থাকি আর কখন?
তৃতীয় ধাপে, ভাবনাটা আর একটু মজবুত বানালাম। নেতা-মন্ত্রীদের সাথে সখ্যতা বাড়লো। একসাথে খানা-পিনা চলতো, মাঝেমধ্যেই। একে-একে গোটা তিন হোটেলের পরে দু দু’টো ট্যুরিস্ট-রিসর্ট বানালাম। দেখতে দেখতে ১ টা ফুটবল টিম ও কিনে ফেললাম। ঠিকই । কিন্তু একান্তে মনে হতেই লাগলো, সুখ…. ” তুমি কী কেবলই ছবি ?”
এবার সুখের চতুর্থ স্তর। বয়েসটাও একটু একটু করে বাড়ছে।
হঠাৎ রণধীর, আমার সেই ছোট্ট বেলাকার বন্ধু, এসে একদিন বলে,” অনেক তো কামালি… এবার কয়েটা অন্ততঃ হুইল-চেয়ার কিনে বিতরণ করলে ভালো করতিস্।”
কথাটি বেশ মনে ধরলো। দিন দু’ই পরে, ডজন কয়েক হুইল বসানো চেয়ার কিনে এনে ফোন করতেই হাসতে হাসতে বন্ধু এসে হাজির।
এসেই বলে,” বিতরণ অনুষ্ঠানে নাম ঘোষণা হবে, তুই থাকবি। না……মানে কী? থাকতেই হবে, বলে দিলুম।”
অগত্যা যেতেই হল। নিজের হাতে বিলোতেও হল। চেয়ারে এসে বসতেই চোখে পড়ছে, নিশ্চল শিশুরা মহানন্দে একে অপরের দিকে চেয়ে হাসছে…… চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছে….হাত নাড়াচ্ছে।
কী না…..মজা ওদের সেদিন!
এবার আমায় উঠতেই হবে। দুই-তিন জন Business- Executive এর সাথে বসার কথা
আছে আজ। আমি মঞ্চ ছেড়ে উঠে আসবো, এমন সময়ে পা-ঘষটে ঘষটে একটি শিশু এসে আমার পা জড়িয়ে ধরলো।
স্নেহভরে, কচি হাত দুটো তার আলতো করে খুলে দিতেই কেমন উদাস চোখে আমার দিকে বেশ কিছুটা সময় চেয়েই……. রইলো। মায়াবী এই কচি-মুখটা তবে কী আর একটা কিছু চায় ? বললাম,” তোমার আর কিছু দরকার………
আমায় বলো..…..……… বলো না।”
শিশুটি সেদিন যা বললো ঠিক সেটাই ছিল আমার সারাটা জীবনের জরুরী শিক্ষা।
সে বললো, “না, স্যার। মৃত্যুর পরে স্বর্গে তো আমাদের দেখা হবেই। সেখানে যেন চিনতে পেরে আপনাকে আবারও ধন্যবাদ দিতে পারি, সে জন্যই আপনার মুখটাকে বারবার করে দেখছিলাম।”
Dr. Raghupati Sharangi, a renowned homeopath and humanitarian who lives for the people’s cause. He is also a member of the Editor panel of IBG NEWS. His multi-sector study and knowledge have shown lights on many fronts.