টানা তৃতীয়বারের মতো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে অভিনন্দন জানিয়ে যে বার্তা পাঠিয়েছেন, এবার মমতাও তার জবাব দিলেন।
গত ৬ মে (বৃহস্পতিবার) মমতা ব্যানার্জির স্বাক্ষরিত ওই চিঠি ইতোমধ্যে ঢাকায় পৌঁছেছে বলে নবান্ন (কলকাতায় রাজ্য সচিবালয়) সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাংলা ট্রিবিউনের হাতেও তার একটি প্রতিলিপি এসেছে।
‘দুই বাংলার মধ্যে ভালোবাসার বন্ধন আগামীতে আরও সুদৃঢ় হবে’ চিঠিতে মমতা ব্যানার্জি এই প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও অমীমাংসিত তিস্তা চুক্তির কথা অবশ্য একবারের জন্যও উল্লেখ করেননি। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর চিঠির ভাষা ও ভঙ্গিতে ইতিবাচক সুরই দেখছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
চিঠিতে মমতা ব্যানার্জি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সম্বোধন করেছেন ‘শ্রদ্ধেয়া হাসিনা জী’ বলে। নিচে নিজের হাতে সই-ও করেছেন শুধু ‘মমতা’ বলে।শেখ হাসিনাকে লেখা মমতা ব্যানার্জির চিঠি
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে তৃণমূল বিরাট জয় পাওয়ার পর শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা বার্তা পেয়ে তিনি যে ‘আনন্দিত ও আপ্লুত’, সে কথাও মমতা শুরুতেই লিখেছেন। তার পরেই জানিয়েছেন, ‘এই জয় যেমন বাংলার মা-মাটি-মানুষের ও উন্নয়নের জয়, তেমনি সর্বোপরি একতা, শান্তি, সম্প্রীতি, সংস্কৃতি, সভ্যতা ও সৌভ্রাতৃত্বের জয়!’
বস্তুত পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির হারকে ভারতের অনেক পর্যবেক্ষকই ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতির পরাজয় হিসেবেই তুলে ধরেছেন। মমতাও তার বার্তায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি রাজ্যের সব ধর্মের ও সব শ্রেণির মানুষকে একসঙ্গে নিয়েই চলতে চান।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি চিঠিও লিখেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। সেই চিঠিতে বাংলার দীর্ঘদিনের চর্চিত ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি’ এবং ‘সৌভ্রাতৃত্ব’কে ধরে রাখার জন্য মমতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি। আরও লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই সম্প্রীতির আদর্শ নিয়েই দেশ গড়েছিলেন।’
কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার বক্তব্য, এর মাধ্যমে দিল্লির মোদি সরকারকেই একটা সূক্ষ্ম বার্তা দিতে চেয়েছে ঢাকা যে সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না।
সাম্প্রতিক অতীতে ভারতের জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি) ও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিতর্কে যেভাবে বাংলাদেশকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে এক ব্র্যাকেটে রাখা হয়, অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যেভাবে বাংলাদেশিদের বিষয়ে লাগাতার বিরূপ মন্তব্য করে গেছেন– সেটাও যথারীতি বাংলাদেশ ভালোভাবে নেয়নি। অনেকের মতে, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির পরাজয়ের পর ঢাকা যে ভাষায় ও ভঙ্গিতে মমতা ব্যানার্জিকে অভিনন্দন জানিয়েছে তাতে সেই মনোভাবের প্রতিফলন থাকাটা খুবই স্বাভাবিক।
এখানে মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে, ২০১৬ সালে মমতা ব্যানার্জি যখন দ্বিতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তখন কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সঙ্গে তার এভাবে সরাসরি ব্যক্তিগত স্তরে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়নি। তখন যেটা হয়েছিল, সেটা ছিল রুটিন কূটনৈতিক বিনিময়।
এবারে কলকাতা ও ঢাকার মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে এই আন্তরিক আদান-প্রদানকে তিস্তা চুক্তির জন্যও ভালো লক্ষণ বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
রাজনৈতিক ভাষ্যকার অরুন্ধতী মুখার্জি যেমন বলছিলেন, ‘বাংলাদেশের জলের প্রয়োজন নিয়ে মমতা ব্যানার্জি পুরোপুরি ওয়াকিবহাল। তবে এতদিন রাজনৈতিক কারণেই তিনি তিস্তা নিয়ে এগোতে চাননি। কিন্তু টানা তৃতীয়বার বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর তিনি এ ব্যাপারে উদারতা দেখাতে পারবেন, এটা হয়তো আশা করাই যায়।’
মমতা ব্যানার্জি তার বার্তায় তিস্তার কথা সরাসরি উল্লেখ না-করলেও এটুকু লিখেছেন, ‘দুই বাংলার মধ্যে ভৌগোলিক সীমারেখা থাকলেও চিন্তা-চেতনা-মননে আমরা একে অপরের অত্যন্ত আপন। এই ভালোবাসার বন্ধন আগামী দিনে আরও সুদৃঢ় হবে, এই বিষয়ে আমি নিশ্চিত।’
Source: Government of Bangladesh & Bangladesh Corespondent – Anowarul Hoque Bhuiyan