কোভিড 19 সংক্রমনের থেকে মুক্তি – সহজ করে কিছু তথ্য
ড: পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা,১৫.০৫.২০২১:
●কোভিড 19 একটি ভাইরাস। ভাইরাস হল আমাদের জানা ক্ষুদ্রতম জীবন কনা, যা জীবিত শরীরের বাইরে বেশি সময় বাঁচে না।এর বংশবিস্তারও জীবিত শরীরের ভিতরে।কোষ হলো এদের টার্গেট অর্গান।নিজেদের বংশবিস্তারের গতিপথে যেসব কোষ এদের সংস্পর্শে আসে সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।এবং তা হয় এদের অজ্ঞাতসারেই। এক্ষেত্রে যেমন অনেক সময় ফুসফুসের কোষগুলো টার্গেট অর্গান।তারই ফলশ্রুতি ফুসফুসের ক্ষতি।
●এমনটাই আজ পর্যন্ত সবসময় ঘটে এসেছে যে, প্রায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জীবাণু ঘটিত রোগগুলো,মানব শরীরে প্রথমবার আত্মপ্রকাশের সময় যতখানি তীব্র ও মারণশক্তি সম্পন্ন হয়েছে, সময় এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে তার তীব্রতা আর ততখানি থাকেনি। এর সরল ব্যাখ্যা হলো, শরীরের থিংক ট্যাঙ্ক মস্তিষ্ক সময়ের সাথে সাথে বুঝে গেছে,কি ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এই জীবাণুকে।এবং সেই অনুসারে খবর পাঠিয়েছে টার্গেট অর্গান কে।
●শরীরে রোগজীবাণু প্রবেশ করার পর কিন্তু শরীরও চুপচাপ বসে থাকেনা। কিছু সময় পর থেকে কে নিয়ন্ত্রণ নেবে শরীরের সে নিয়ে স্ট্র্যাটেজির লড়াই চলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জয় পরাজয়ের নিষ্পত্তি হয় শরীর বেশি শক্তিশালী না জীবাণু বেশি কৌশলী তার উপর নির্ভর করে।কিছু ক্ষেত্রে শরীরের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য জীবাণু মাঝে মাঝেই তার চরিত্রগত পরিবর্তন করে শরীরের কাছে আবার গুপ্ত শত্রু হয়ে যায়।তখন শরীরের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে লড়াই।এই চরিত্রগত পরিবর্তনটার নাম মিউটেশন।শরীর অবশ্য শেষমেশ এই মিউটেশনকেও কব্জা করে ফেলে যদি তা নীরোগ সতেজ ও কর্মক্ষম হয়।
●অনেকক্ষেত্রে জীবাণুর তত তীব্রতা না থাকলে তারা সংখ্যায় বেড়ে তীব্রশক্তির হয়। তারপর গণ অভ্যুত্থানের মতো আক্রমণ শানায়।এই জিনিসটিকে বলে ‘লোড’। কোভিড সংক্রমণের ক্ষেত্রে লোড যত বেশি, তার মারণক্ষমতা ও তীব্রতা তত বেশি। এই লোড যাতে না বাড়ে এজন্যই বিশেষজ্ঞরা চিৎকার করেন। মাস্ক পরুন।হাত পরিস্কার রাখুন। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন।
●স্বাস্থ্যবিধি মানা বা না মানা সত্ত্বেও অনেক সময় শরীর ভাইরাসের প্রবেশ এড়াতে পারেনা। সেক্ষেত্রে শরীর সতেজ,নীরোগ ও কর্মক্ষম থাকলে নিজেরাই সে ভাইরাসকে কাবু করে ফেলে।তাদের মধ্যে রোগের কোনো উপসর্গ হয়না।তারা ‘নীরব বাহক’।বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা অন্য মানুষকে তত সংক্রমিত করতে পারে না। আর শরীর ক্রনিক রোগের কারণে নড়বড়ে থাকলে নির্বিষ শত্রুও বিষাক্ত হয়ে যায় শরীরের শক্তিহীনতার কারণে।এই রোগ থাকা শরীরের স্থিতির নাম কো-মর্বিডিটি।ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ,হার্টের ব্যামো, কিডনির ব্যামো,ক্যান্সার, ইত্যদিরা হলো কো-মর্বিডিটির উদাহরণ।
●রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বলে ইমিউনিটি।ইমিউনিটি তখনই সম্ভব যখন শরীরের কোষগুলো সতেজ এবং তরতাজা থাকে। সতেজ এবং তরতাজা শরীরের জন্য সুষম খাদ্য(যাতে পরিমানে ও মানে মানব শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যগুণ থাকে),শরীরচর্চা ও পরিমিত বিশ্রাম দরকার।শরীর চর্চা শরীরে রক্ত চলাচলের মাত্রা সঠিক রাখে, যাতে করে শরীরের প্রতিটি কোষে খাদ্য সঠিক মাত্রায় সরবরাহ হয়। শরীর চর্চা শ্বাস প্রশ্বাসের গতিও সঠিক রাখে।ফলে ফুসফুসের মাধ্যমে শেষমেশ প্রতিটি কোষে অক্সিজেন পৌঁছয়। অক্সিজেন কোষে পৌঁছনো খাদ্যের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে শক্তি তৈরি করে,ফলে কোষ সতেজ ও কর্মক্ষম থাকে। পরিমিত বিশ্রামে শরীরের সব সিস্টেমগুলোও বিশ্রাম পায়, ফলে তাদেরও কাজের ভুল হয়না।
●মানুষের বয়স বাড়া মানে হলো তার কোষগুলোর ক্রমে অকেজো হওয়া ও কর্মক্ষমতা হারানো। এই জিনিসটাকে বলে ডিজেনারেশন। এক একজনের ক্ষেত্রে এই ডিজেনারেশনের গতি এক এক রকম।অনেকখানিই জেনেটিক হলেও শরীর চর্চা, খাদ্য, নিরুদ্বিগ্ন জীবনযাপন, ডিজেনারেশনের গতিকে কমায়।তাই বার্ধক্য এক একজন বয়স্কদের এক এক সময় আসে।যার বার্ধক্য যত বেশি, কোভিডের ক্ষেত্রেই স্বাভাবিকভাবেই তার সমস্যা তত বেশি।
●কোভিডের ক্ষেত্রে অন্য সংক্রামক রোগের মতোই ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা অন্য বিধিগুলোর থেকে বেশি নয়।সংক্রামক রোগের সৃষ্টি হয় জীবাণুর এন্টিজেনের দ্বারা। ভ্যাক্সিন, সহজ কথায় হলো সেই এন্টিজেনের শত্রু, অর্থাৎ এন্টিবডি। কিন্তু এরপরেও অনেক ক্ষেত্রে এন্টিজেন এন্টিবডির থেকে বেশি শক্তিশালী হয়ে এন্টিবডিকে হারিয়ে দেয়।তাই বলা হয় ভ্যাক্সিন যত না রোগ প্রতিরোধকারী তার থেকে বেশি তীব্রতা নাশকারী।
●যে সব ওষুধগুলো রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় যেমন স্টেরয়েড, ক্যান্সারের ওষুধ, তারা কিন্তু পরোক্ষভাবে কোভিডের তীব্রতাও বাড়ায়।
●কোভিডের সময় নিরুদ্বিগ্ন ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখার একটা সহজ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। উদ্বিগ্ন মানুষের শরীরে স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে।তাতে শ্বাসের গতি এবং হৃৎপিণ্ডের গতি বাড়ে।তাতে কিন্তু লাভ নয়, ক্ষতি হয়। ধরুন একটা স্টেশনে একটা ট্রেনের দাঁড়ানোর কথা তিন মিনিট।কিন্তু তা যদি হঠাৎ আধ মিনিট করে দাঁড়াতে শুরু করে তাহলে? সে ক্ষেত্রে সে ট্রেনে না পারবে যাত্রীরা ঠিক মতো উঠতে,না পারবে নামতে।হৃৎপিন্ড ও শ্বাসের গতি বেড়ে যাওয়াও তাই’ই ।সেক্ষেত্রে প্রতিটি সাইকেলে কম সময়ের জন্য রক্ত না পারবে কোষে সঠিক পরিমান খাদ্যের যোগান দিতে,না পারবে ফুসফুস থেকে কম সরবরাহের কারণে সঠিক পরিমান অক্সিজেনের যোগান দিতে।ফলত লড়াই ক্ষমতা হারিয়ে কোষ ও মানব শরীর অবসন্ন হয়ে পড়বে। ফলে উদ্বেগও ‘ডিস্যাচুরেশন’ ঘটাবে মানব শরীরের।ফুসফুস সংক্রমন না থাকা সত্ত্বেও।
●●আশা করি বোঝাতে পারলাম সবটুকু।
সুতরাং সরকার বা অন্যকে দোষারোপ না করে নিজেদের ভালো নিজেদেরই বুঝতে হবে।এ ছাড়া রোগমুক্তির উপায় নেই। এমনকি আপাত রোগমুক্তির পরেও মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি।কারণ ভাইরাস অত সহজে বিদায় নেয়না।ঘুমিয়ে থাকে শরীরে।তারপর সুযোগ ও সময় বুঝে বংশবিস্তার করে শক্তি বাড়িয়ে আবার আঘাত হানে মানবসভ্যতার শরীরে।তৈরি হয় সেকেন্ড ওয়েভ,থার্ড ওয়েভ,ফোর্থ ওয়েভ…।
ওয়েভ আসতেই থাকে।উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো।
Dr. Palash Banerjee, Editor Child Medicine & Literature, Post Graduate of Pediatric Nutrition,(Boston University). Doctor, Author, Poet, and a beautiful mind.
Published under COVID-19 Relief support Free Information service from IBG NEWS send your details to [email protected]