ষাটের দশক – স্কুলবেলা – বহরমপুর – আমাদের কিছু মাষ্টার মশায়
দিব্যেন্দু প্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়
ভূমিকা
গতকাল ফেসবুকের কারুর পোস্টে মন্তব্য করতে গিয়ে আমি হিন্দী ভাষার প্রয়োগ করে ফেলে ছিলাম ! হিন্দী যে খুব একটা ভালো জানি তাও নয় কারন আমার হিন্দী পড়ার দৌড় মাত্র দু বছর – ক্লাস সিক্স ও সেভেন । কিন্তু উক্ত পোস্ট টা বাংলা ভাষায় লেখা হলেও মনে হল যা লেখা আছে, বক্তব্যটা হয়তো সেটা নয় – অর্থাৎ কেবল পোস্ট প্রদানকারী ব্যক্তি ও তার সম মনোভাবাপন্ন ( same wavelength) মানুষরাই সেটা অনুধাবন করতে পারবে। আমার মত বুড়ো হাবড়াদের কাজ নয় তাতে দাঁত ফোটানোর । আমার ওটা পড়ে কেন জানিনা ” সান্ধ্য” ভাষার কথা মনে পড়লো । তাই আন্দাজে ঢিল ছোড়ার মত যাহোক কিছু একটা লিখে দিলাম হিন্দীতে ।
উনি ওনার মত করে লিখে পাঠালেন যার অর্থ দাঁড়াল উনি হিন্দী জানেন না ।
আমি বললাম ” কোয়েলের কাছে ” উপন্যাসের ডাকাবুকো চরিত্র প্রবাসী বাঙালি যশয়ন্ত তার লালবাবুকে (উপন্যাসটির নায়ক) শেখালেন, যে, হিন্দীতে কথা বলা কত সহজ! বাক্যের শুরুতে “ক্যা” আর শেষে ” বা” লাগিয়ে দিলেই চলনসই হিন্দী হয়ে যেতে পারে । যেমন ” কী সুন্দর সূর্যোদয়” বলতে – বলা যেতে পারে “ক্যা বড়িয়া সানরাইজ বা ” ইত্যাদি ।
মজার ব্যাপার হল বাংলা এবং হিন্দী দুটো ভাষারই উৎস, হল বৈদিক সংস্কৃত যার প্রাচীনতম সাহিত্যিক রূপটি মুদ্রিত রয়েছে ঋক বেদের সংহিতায় ।
আর্যরা আনুমানিক খৃষ্টপূর্ব দু হাজার বছর পূর্বে ভারতে এসে পাঞ্জাবে বসতি স্থাপন করেন । সেখান থেকে ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
ভারতবর্ষে তৎকালে প্রচলিত অনার্য ভাষাগুলির প্রভাবাধীনে এসে ভাষার পরিবর্তনের নিয়মানুসারে আর্য ভাষা নিজের বিশুদ্ধি রক্ষা করতে পারলনা – ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকল। সেই পরিবর্তনের সূত্র ধরে বৈদিক সংস্কৃত কে তখন বলা হল মধ্যভারতীয় আর্য বা প্রাকৃত – সময় কাল খৃষ্ট পূর্ব অষ্টম হতে ষষ্ঠ শতকের দিকে অর্থাৎ গৌতম বুদ্ধের সময়ের পূর্বে প্রাকৃত ভাষার উদ্ভব হল।
প্রদেশ ভেদে প্রাকৃত ভাষার তিন প্রকার রূপ দেখা গেল – উদিচ্য প্রাকৃত, মধ্যদেশীয় প্রাকৃত ও প্রাচ্য প্রাকৃত ।
বাংলা ভাষার উদ্ভব কাল মোটামুটি খৃষ্টোত্তর দশম শতকে । বাংলা ভাষার আবার তিনটি যুগ বিভাগ আছে :
১) আদি বা প্রাচীন যুগ (এই সময় চর্যা পদ লেখা হয় )
২) মধ্যযুগ ( স্মরনীয় গ্রন্থ হচ্ছে বড়ু চন্ডিদাস কৃত শ্রীকৃষ্ণ কির্তন কাব্য )
৩) নবীন বা আধুনিক বাংলা!
বৈদিক ভাষা বহুবছর ধরে সরল হতে হতে বর্তমান আধুনিক বাংলার বিশিষ্ট রূপ নিল । কয়েকটা উদাহরন :
বৈদিক সংস্কৃত আধুনিক বাংলা
কর্কট কাঁকরা
কৃষ্ণ কানাই
কথয়তি কহে বা কয়
ভবতি হয়
সকল ভাষাই সম্মানের, কিন্তু তবু আমি বিশ্বাস রাখি মাতৃভাষা অবশ্যই অনন্য । এশিয়ার অনেক উন্নত দেশই কেবল মাত্র মাতৃভাষার ওপরই নির্ভরশীল এবং বলতে দ্বীধা নেই, তাঁরা কিন্তু সাফল্যের চূড়ায় বসে রয়েছেন। আমরা কি এই রকম ভাবে চিন্তা ভাবনা করতে পারিনা! কি মনে হয় আপনাদের?

Dibyendu Prasad Bandyopadhyay a native of the suburban town Berhampore, Murshidabad, in West Bengal. He discharged his duty in the Indian Army in his early. A true gentleman cadet, simple but disciplined as a true Army man. After he hanged off his boots, settled in a hamlet under Shyamnagar. He likes to pen down his thoughts over diverse areas of life.