ভারতীয় রেলকে স্পেকট্রাম বন্টন এবং রেল চলাচলে সার্বিক নিরাপত্তা বাড়াতে আরও আধুনিক সিগনালিং ব্যবস্থার প্রয়োগ
By PIB Kolkata
নতুন দিল্লি, ১৫ জুন, ২০২১
রেল চলাচলে সিগনালিং ব্যবস্থা নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে। ভারতীয় রেলে ব্যবহৃত সাজ-সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতিগুলির মানোন্নয়ন এবং কার্যকালের মেয়াদ শেষে তা পাল্টে ফেলা এক ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কর্মক্ষমতা, ব্যবহারিক চাহিদা এবং সম্পদের যোগানের ভিত্তিতে সাজ-সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতিগুলি পাল্টানো হয়।
ট্রেন চলাচলে নিরাপত্তা আরও বাড়াতে এবং সিগনাল ব্যবস্থার আধুনিকিকরণে একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে –
• ট্রেন চলাচলে নিরাপত্তা ও নমনিয়তা বাড়াতে ইলেক্ট্রনিক ইন্টারলকিং ব্যবস্থা – ট্রেন চলাচলে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে এবং নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ইলেক্ট্রনিক ইন্টারলকিং ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত এই ব্যবস্থা ২ হাজার ২২১টি স্টেশনে চালু হয়েছে। এছাড়াও আগামী তিন বছরে আরও ১ হাজার ৫৫০টি ইলেক্ট্রনিক ইন্টারলকিং ব্যবস্থা বিভিন্ন স্টেশনে কার্যকর করা হবে। এর ফলে, ট্রেন চলাচলে নিরাপত্তা ও দক্ষতা আরও বাড়বে।
• লেন ক্যাপাসিটি বাড়াতে অটোমেটিক ব্লক সিগনাল – বর্তমানে রেলের ব্যস্ততম রুটগুলিতে লেন ক্যাপাসিটি বা আরও অধিক সংখ্যায় ট্রেনের যাতায়াত বাড়াতে এক ব্যয় সাশ্রয়ী পন্থা হিসেবে অটোমেটিক ব্লক সিগনাল ব্যবস্থা কার্যকর করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত রেলের ৩ হাজার ৪৪৭ কিলোমিটার রুটে এই ব্লক সিগনাল ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। মিশন মোড ভিত্তিতে এধরণের ব্যবস্থা কার্যকর করা হচ্ছে, যাতে রেলের ব্যস্ততম রুটগুলিকে আরও অধিক সংখ্যায় ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা যায়।
• লেভেল ক্রসিং গেটগুলিতে নিরাপত্তা – নিরাপত্তার দিক থেকে লেভেল ক্রসিং গেটগুলি রেলের কাছে সর্বদাই উদ্বেগের বিষয়। সিগনাল ব্যবস্থা সহ লেভেল ক্রসিংগুলিতে ইন্টারলকিং পদ্ধতি কার্যকর করে নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে। ভারতীয় রেল ইতিমধ্যেই লেভেল ক্রসিংগুলিতে নিরাপত্তা বাড়াতে ১১ হাজার ৭০৫টি লেভেল ক্রসিং-এ সিগনাল সহ ইন্টারলকিং ব্যবস্থা কার্যকর করেছে।
• চালকের ভুল এড়াতে রেলইঞ্জিনগুলিতে অটোমেটিক ট্রেন প্রোটেকশন ব্যবস্থা – সারা বিশ্বে আধুনিক রেল ব্যবস্থায় রেলইঞ্জিনগুলিতে অটোমেটিক ট্রেন প্রোটেকশন কাজে লাগানো হয়। এই ব্যবস্থার ফলে চালকের ভুল সত্বেও দুই ইঞ্জিনের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব। রেলইঞ্জিনের সংঘর্ষ এড়াতে ভারতীয় রেল ইতিমধ্যেই অটোমেটিক ট্রেন প্রোটেকশন ব্যবস্থা কাজে লাগিয়েছে। ভারতীয় রেল এতদিন পর্যন্ত রেল প্রোটেকশন ব্যবস্থার জন্য বিদেশি প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু এখন ভারতীয় রেল সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে সাফল্যের সঙ্গে রেলইঞ্জিনের মধ্যে সংঘর্ষ এড়াতে আধুনিক প্রোটেকশন ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেছে ও তা কাজে লাগাচ্ছে। রেলের ৩৭ হাজার ৩০০ কিলোমিটার রুটে ইতিমধ্যেই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ প্রতিরোধী ব্যবস্থা কার্যকর করার অনুমতি মিলেছে
•উল্লেখ করা যেতে পারে, আত্মনির্ভর ভারত অভিযানে আরও গতি আনতে সরকার স্টেশন এবং ট্রেনগুলিতে মানুষের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য ভারতীয় রেলকে ৭০০ মেগাহাৎর্জ ফ্রিকোয়েন্সি ব্র্যান্ডে ৫ মেগাহার্ৎজ স্পেকট্রাম বন্টনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এই স্পেকট্রামের ফলে ভারতীয় রেল রুটগুলিতে মোবাইল ট্রেন রেডিও কমিউনিকেশন ভিত্তিক দীর্ঘ মেয়াদী যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যকর করতে পারবে। মোবাইল ট্রেন রেডিও কমিউনিকেশন ভিত্তিক এই ব্যবস্থা কার্যকর করতে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হবে। আগামী ৫ বছর ধরে এই ব্যবস্থা রূপায়িত হবে। দীর্ঘ মেয়াদী ভিত্তিতে মোবাইল ট্রেন রেডিও কমিউনিকেশন ব্যবস্থা কার্যকর হলে রেল চলাচল ও রেলের রক্ষণাবেক্ষণে আমূল পরিবর্তন আসবে। এমনকি, এর ফলে রেলের সার্বিক নিরাপত্তার মানোন্নয়ন ঘটবে এবং বর্তমান পরিকাঠামো ব্যবহার করে রেললাইনগুলিকে আরও অধিক সংখ্যায় ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে তোলা যাবে। দীর্ঘ মেয়াদী ভিত্তিক মোবাইল ট্রেন রেডিও কমিউনিকেশন ব্যবস্থা ট্রেন চলাচল, নিরাপত্তা ও সুরক্ষার ক্ষেত্রে এক কার্যকর মাধ্যম হয়ে উঠবে। এছাড়াও, ট্রেন রেডিও কমিউনিকেশন আধুনিক সিগনালিং ব্যবস্থার মানোন্নয়ন ঘটাবে। যাত্রাপথে ট্রেনের চালক, গার্ড, স্টেশন মাস্টার, ট্রেন ট্রাফিক কন্ট্রোলার এবং মেন্টেনেন্স বিভাগের কর্মীদের মধ্যে নির্বিঘ্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা অটুট রাখা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে ট্রেন এবং স্টেশনগুলিতেও যাত্রী জ্ঞাপন ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে।
দীর্ঘ মেয়াদী ভিত্তিতে মোবাইল ট্রেন রেডিও কমিউনিকেশন ব্যবস্থা কার্যকর করার পাশাপাশি রেল টেলিকম ব্যবস্থায় আরও উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলি হল:
• ৬ হাজার ২০০টি স্টেশনে ওয়াইফাই পরিষেবা। বাকি ১০১টি স্টেশনে শীঘ্রই এই পরিষেবা চালু হবে। যাত্রী সাধারণের পাশাপাশি রেলের হকার ও কুলিরাও এই পরিষেবার সুবিধা নিচ্ছেন।
• ইতিমধ্যেই ৮০১টি স্টেশনে নজরদারির জন্য সিসিটিভি বসানো হয়েছে। বাকি স্টেশনগুলিতেও সিসিটিভি বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
• রেলের ৬২ হাজার ২০৫ কিলোমিটার রুটে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল ভিত্তিক ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এর ফলে রেলের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হয়েছে।
• ভারতীয় রেল প্রশাসনিক কাজকর্মে ডিজিটাল পদ্ধতির প্রয়োগ বাড়াতে ই-দাখিল ব্যবস্থা চালু করেছে। সমস্ত ডিভিশন এবং জোনে ই-অফিস ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে। এধরণের ব্যবস্থা কার্যকর হওয়ার ফলে নথিপত্র সম্বলিত ফাইল আদান-প্রদান এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে।
ভারতীয় রেল সিগনাল ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকিকরণে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে।