করোনা ভাইরাস মুক্তি কবে? – কার্য্য ও কারণ নিয়ে বিশ্লেষণ
ড.পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায়।
কলকাতা , ১১ জুলাই ২০২১
এতদিন পর্যন্ত, বই পড়ে যা শিখে এসেছি তা নিয়ে আশায় বুক বেঁধে বসেছিলাম যে রোগের প্রাকৃতিক ইতিহাস (Natural History of Disease) যা বলে, তার মধ্যে একটা বস্তু, অর্থাৎ সহজ ভাবে, যে রোগের প্রাদুর্ভাব একদিন শুরু হয়, তা একদিন শেষও হয়, সেই মোতাবেক একদিন করোনার পৃথিবীতে আর পাঁচটা মারণ ক্ষমতাহীন রোগের মতো হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি চিকিৎসক, চিকিৎসা গবেষক,পরিসংখ্যানবিদ সবার আশা,হিসেব ,পূর্বাভাস ও আত্মবিশ্বাসকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে করোনা হয়তো পৃথিবী জুড়ে স্থায়ী ত্রাসই হয়ে যেতে বসেছে। অন্তত বিভিন্ন দেশে হিসেব উল্টে দেওয়া আক্রান্তের সংখ্যা সেদিকেই আঙুল দেখাচ্ছে। আমাদের দেশ ভারতবর্ষে যে সেকেন্ড ওয়েভের গ্রাফ জুলাইয়ের শেষে বেসলাইনে নেমে অগাস্ট বা সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল ,তার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছেনা এখনো পর্যন্ত।
দেখা যাওয়ার কারণও বিশেষ আছে বলে মনে করিনা। এর ব্যাখ্যাটা ,একটু ভেবে দেখলেও খুব কঠিন কিছু নয়। সংক্রামক রোগ মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়, এ কথা আজ নয়, বহুদিন আগে থেকেই আমরা জানি। তাই সংক্রামক রোগ প্ৰতিরোধের উপায় হিসেবে রোগীকে ততদিন পর্যন্ত আলাদা করে রাখতে হবে যতদিন না সে রোগ ছড়ানোর ক্ষমতা হারায়, এ আমরা বহু আগেই পড়েছি কমিউনিটি মেডিসিনের বইয়ে। এখন না হয় তা কোয়ারেন্টাইন নামক গালভরা নামটি নিয়ে বিশ্বখ্যাত হয়েছে। তা হলে কি হয়? আমাদের নাগরিকদের কি আর ইগো নেই যে আমরা বিশেষজ্ঞদের মতামত চাঁদ পানা মুখ করে মেনে নেব? আমাদের কি দায় ঠেকেছে মানব সভ্যতা এবং সমাজের অন্যদের ভালোর কথা ভাবতে? আমরা বিধি মানাকে ভাবি কারাবাস এবং বিধি ভাঙাকে ভাবি কারামুক্ত হয়ে খোলা আকাশের নীচে দাঁড়ানো। এটা মানুষের আদিম সর্বনাশা প্রবৃত্তি। এ ব্যাপারে পৃথিবীর সভ্যদেশগুলির নাগরিকেরা ধোয়া তুলসীপাতা নয়, বরং আরো বেশি দায়ী,যতই উন্নতিকামী দেশগুলোকে বলির পাঁঠা করা হোক না কেন। সাম্প্রতিক ইউরো কাপ ও উইমব্লেডনে স্বাস্থ্যবিধি না মানা অসংখ্য মানুষের ভিড় চোখে আঙুল দিয়ে আমাদের সে ব্যাপারটিই দেখিয়ে দেয়।
সভ্য দেশের সঙ্গে আমাদের দেশের মূল পার্থক্য হলো জনসংখ্যার। এই একটি ব্যাপারই তাদের সঙ্গে আমাদের অর্থনীতি, নাগরিক সুবিধা,ইত্যাদির পার্থক্য গড়ে দেয়। যে ব্যাপারে সরকারেরই যেন শুধু দায় আছে , নাগরিকদের কোনো দায়’ই নেই। তার উপর আজ এ উৎসব, কাল ও পরব, , তারপরের দিন ধর্মীয় সমাবেশ, তারপরের দিন রাজনৈতিক সমাবেশ, কোনটা ছেড়ে কোনটার কথা বলি! দেশের বেশির ভাগ মানুষ এখনো টিকা পেলনা। যারা পেল তারা অনেকেই সেকেন্ড ডোজ পেল না, এ ব্যাপারে কারো কোনো মাথা ব্যাথাই নেই। আমরা নাগরিকেরা যেমন আনন্দ ফুর্তিতে মেতে আছি, তেমন আমাদের কর্পোরেট হাসপাতালগুলো তাল ঠুকছে যে আগামী তৃতীয় ঢেউয়ের চিকিৎসা করে কে ক পয়সা লুটে নেবে। সামান্য স্বাস্থ্যবিধি পালনের ব্যাপক প্রচার যে সমূলেই বিনষ্ট করতো আসন্ন তৃতীয় ওয়েভের সম্ভাবনা , এ ব্যাপারটা যেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে চেপে যাওয়া হচ্ছে ব্যবসায়ী মুনাফাখোর ধান্দাবাজদের স্বার্থে, যদিও আমরা শিখে এসেছি প্রিভেনশন ইজ বেটার দান কিওর।
আমাদের সরকার, প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা এবং নাগরিকদের মধ্যে কোনোরকম দলগত সংহতি নেই।থাকুক তা চাননা কেউ। তাই দেশের লাঠি একের বোঝার নীতি মেনে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসছে বলেই মনে হয়। ভাইরাসের মিউটেশনকে যদি আমরা নিমন্ত্রণ দিয়ে সুবিধা করে দিই, সে নিমন্ত্রণ রক্ষা না করার মতো শিক্ষা ভাইরাসের নেই। ভাইরাসের বাবা মা অন্তত তাদের তাই ই শিখিয়েছে। হিসেব মিলছে না। মিলবে না। এ বোধহয় একপ্রকার নিশ্চিত যে দ্বিতীয় ওয়েভের ঘাড়েই ডাবল মিউট্যান্ট ভাইরাস ঘটিত তৃতীয় ওয়েভ উঠবে, গ্রাফ না নেমে ধনুকের উত্তল অংশের মতো চলমান থাকবে, এবং এর জন্য সবথেকে বেশি দায়ী থাকবে নাগরিকসমাজের দায়িত্বহীনতা। শিশুদের এমনিতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরো তৈরি হতে সময় লাগে ন বছর, তার উপরে তারা এখনো ভ্যাক্সিন ড্রাইভের আওতায় আসেনি। এই দুই মিলে আসন্ন ওয়েভের টার্গেট গ্রুপ হতে যাচ্ছে সম্ভবত তারাই। হু প্রধানের কপালে চিন্তার ভাঁজ বোধহয় সে ব্যাপারেও।

Dr. Palash Bandopadhyay popular pediatrics expert with Post Graduate of Pediatric Nutrition,(Boston University). Doctor, Author, Poet, and a beautiful mind. He, always a great content provider for the readers with value to the core of the subject.