শ্রদ্ধা জানান, ও জানুন কিছু অজানা তথ্য, কারণ আজ পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব শিক্ষক, বিজ্ঞানী স্বপ্নের ফেরিওয়ালার এ পি জে আব্দুল কালামের ৬-ষ্ঠ মৃত্যু বার্ষিকী।
প্রশান্ত দাস, কলকাতা,27 July 2021
“স্বপ্ন সেটা নয় , যেটা মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে
সপ্ন সেটাই যেটা পূরণের প্রত্যাশা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না “~ডঃ এ.পি.জে.আব্দুল কালাম।
মৃত্যুর মাত্র চার দিন পর ….ভুলটা সত্যি হয়ে গেল
ঘটনাটা ছিল, ওনার মৃত্যুর মাত্র চার দিন আগে, ২০১৫ সালের ২২-শে জুলাই , (বুধবার) ঝাড়খণ্ডের কোদারমা জেলার এক স্কুলের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করতে আসেন ঝাড়খণ্ডের শিক্ষামন্ত্রী নীরা যাদব। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি। সেখানেই আব্দুল কালামের ছবিতে মাল্যদান করেন তিনি। একই সঙ্গে নিজের বক্তব্যে তিনি বলেন, “স্কুলের শুভ অনুষ্ঠানে দেশের জ্ঞানী-গুনিদের শ্রদ্ধা জানানো উচিত।” একা শিক্ষামন্ত্রী নন। আব্দুল কালামের গলায় মাল্যদান করেন ওই রাজ্যের বিজেপি বিধায়ক মনিশ জয়সওয়ালও। আগাগোড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তবে সবটা দেখেও কেউ বাধা দিলনা কেন ? আমাদের হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী, কেবল মারা গেলেই তাঁর স্মৃতিতে ছবিতে মাল্যদান করা হয়।কিন্তু আব্দুল কালামের ছবিতে ধূপ-ধুনো সহযোগে মাল্যদান ঘিরে তাই বিতর্ক শুরু হয়েছিল দেশ জুড়ে। ঘটনার পরে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বের তরফে কোনও তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি। তবে ততদিন পর্যন্ত তাঁর মৃত্যুর খবর কোথাও ছিল না। তবুও ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি তথা বিজ্ঞানী এপিজে আব্দুল কালামের গলায় মালা দিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন ঝাড়খণ্ডের শিক্ষামন্ত্রী।
কিন্তু ওই ঘটনা ঘটার মাত্র চার-দিন পর সেটা যে সত্যি হবে, তা ‘ কি জানতেন ? ঝাড়খণ্ডের শিক্ষামন্ত্রী নীরা যাদব বা বিজেপি বিধায়ক মনিশ জয়সওয়াল। সত্যি সত্যি মাত্র চারদিন পরে ২৭-শে জুলাই, ২০১৫ (সোমবার) প্রয়াত হলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম।
ভারতের এগারো তম রাষ্ট্রপতি। ২৫ জুলাই ২০০২ সাল থেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন টানা ২০০৭ সালের ২৫ জুলাই পর্যন্ত। ১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবর জন্মেছিলেন তামিলনাড়ুর রামানাথপুরমে। এই পরমাণু বিজ্ঞানী ভারতে ‘মিসাইলম্যান’ নামে পরিচিত ছিলেন।
২০১৫ সালের ২৭-শে জুলাই, (সোমবার) মেঘালয়ের শিলংয়ে একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে পড়ে যান ৮৪ বছর বয়সী কালাম, বুকের বঁদিকে যন্ত্রণা অনুভব করেন। সঙ্গে সঙ্গে সন্ধে সাতটা নাগাদ তাকে বেথানি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির। এপিজে আবদুল কালামের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন বেথানি হাসপাতালের ডাক্তার জন শৈল।
আবুল পাকির জয়নুল আবেদিন আব্দুল কালাম, তবে তিনি জনমানসে সর্বাধিক খ্যাতি লাভ করেছিলেন এ পি জে আব্দুল কালাম নামে। একদিকে ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি, অন্যদিকে ছিলেন একজন বিজ্ঞানী। এত দ্বায়িত্বের মধ্যেও তিনি ছিলেন একজন শিক্ষক ও জনগণের খুব কাছের বন্ধু।
বিশ্বের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী হয়েও, সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন কালাম। তাঁর জীবনের কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করলাম।
তিনি তখন রাষ্ট্রপতি। আইআইটি বারাণসীর সমাবর্তনে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে গিয়েছিলেন। মঞ্চে পাঁচটি আসন রাখা ছিল। তার মধ্যে মাঝের আসনটি রাষ্ট্রপতির জন্য সংরক্ষিত ছিল। বাকি আসনগুলিতে উপাচার্য, সহ-উপাচার্যদের বসার ব্যবস্থা করা হয়। মঞ্চে উঠে বসতে গিয়ে কালাম খেয়াল করেন, তাঁর আসনটি অন্যদের তুলনায় বড়। তিনি সেই আসনে না বসে সেখানে উপাচার্যকে বসতে বলেন। অস্বস্তিতে পড়ে যান উপাচার্য। তিনি সেই আসনে বসতে চাইছিলেন না। শেষে কালামের জন্য অন্য একটি আসনের ব্যবস্থা করা হয়।
কালাম দক্ষিণ ভারতীয় খাবার বিশেষত ‘ইডলি’ খেতে খুব পছন্দ করতেন।
ডক্টর কালাম কর্ণাটকী কণ্ঠ শিল্পী এমএস শুভলক্ষ্মীর গানের বড় ভক্ত ছিলেন। শুভলক্ষ্মীও কালামকে খুব ভালবাসতেন। বিখ্যাত এই সঙ্গীতজ্ঞ নিজে হাতে কিছু রান্না করলে তা কালামকে পাঠাতেন। দুজনে মিলে মেঝেতে বসে কলা পাতার ওপর খেতেনও।
ছোটবেলায় কালামের তিনজন ঘনিষ্ঠবন্ধু ছিল। রামনধ শাস্ত্রী, অরবিন্দন ও শিবপ্রকাশন। এই তিনজন বন্ধুই ছিল ব্রাহ্মণ পরিবারের সদস্য
রামেশ্বরম মন্দিরের প্রধান পুরোহিত পক্ষী লক্ষ্মণ শাস্ত্রী ছিলেন কালামের বাবার প্রিয় বন্ধু
রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে কালাম এক কামরার এখটা ছোট্ট ঘরে থাকতেন। রাষ্ট্রপতির বিশাল ভবনেও উনি ছোট্ট একটি ঘরে চৌকিতে শুতেন।
রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী তাঁর আত্মীয়রা রাষ্ট্রপতি ভবনে বিনা খরচে বিমানে চেপে কালামের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারতেন। কিন্তু তা না করে কালাম দ্বিতীয় শ্রেণীর ট্রেনের টিকিট চেয়েছিলেন।
বাড়ির বাইরের দেওয়ালে একবার ভাঙা কাচ লাগানোর কথা কালামকে বলা হয়েছিল, সেটা শুনে প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছিলেন। কারণ তার মনে হয়েছিল তাহলে পাখিদের খুব অসুবিধা হবে।
কেরলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর প্রথম সফরে কালাম রাজভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বিশেষ দুজনকে। একজন হলেন রাস্তার মুচি আর অন্যজন ছোট এক হোটেলের মালিক
৪০০ জন ছাত্রছাত্রীর কাছে কালম ভাষণ দেওয়ার সময় বিদ্যুত্ চলে যায়। তিনি তাতে থেমে থাকেননি। সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের বলেন তাকে গোল হয়ে ঘিরে দাঁড়াতে। খালি গলাতেই ৪০০ জন ছাত্রছাত্রীর মাঝে বক্তৃতা দিতে থাকেন।
অল্প বয়স থেকেই পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তাঁকে কাজ করা শুরু করতে হয়। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে, পরিবারের সাহায্য করার জন্য তিনি সংবাদপত্র বিক্রি শুরু করেন, প্রতিদিন স্কুল শেষে তিনি এই কাজ করতেন।
তিনি রামানাথপুরমের স্কোয়ার্টজ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা শেষ করেন। তাঁর পছন্দের সাবজেক্ট ছিল পদার্থবিজ্ঞান এবং গণিত।
তিনি ১৯৫৪ সালে ত্রিচুরাপল্লীর সেন্ট জোসেফ কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করেন এবং ১৯৫৫ সালে তিনি মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে ভর্তি হন।
তিনি ১৯৬০ সালে স্নাতক সম্পন্ন করার পর ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার অ্যারোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এস্টাব্লিশমেন্টে একজন বিজ্ঞানী হিসেবে যোগদান করেন।
১৯৬৯ সালে তাকে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO) -য় স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে তিনি ভারতের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণকারী যান (এস এল ভি-III)-এর প্রকল্প পরিচালক ছিলেন, যা ১৯৮০ সালের জুলাই মাসে ‘রোহিণী’ কৃত্রিম উপগ্রহকে তার কক্ষপথে স্থাপন করে।
১৯৭০-১৯৯০ সালের মধ্যে আব্দুল কালাম পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল (পি এস এল ভি) এবং এস এল ভি -III, এই প্রকল্পগুলি গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন এবং এই কাজে তিনি সফল হয়েছিলেন।
১৯৯১ সালের জুলাই থেকে ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এ পি জে আব্দুল কালাম প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা এবং প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আব্দুল কালাম-কে দেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার, ভারতরত্ন (১৯৯৭), পদ্মভূষণ (১৯৮১) এবং পদ্মবিভূষণ (১৯৯০) সহ আরও অনেক পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছিল।
২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের একাদশ রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
কালামের পছন্দের বিষয় ছিল অঙ্ক এবং ফিজিক্স। তবে পরবর্তী সময়ে এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন তিনি ।
তাঁর আত্মজীবনী উইংস অব ফায়ার: অ্যান অটোবায়োগ্রাফি প্রথমে ইংরাজিতে প্রকাশিত হয়। পরে তার অনুবাদ হয় ১৩টি ভাষায়, যার মধ্যে ফরাসি এবং চীনা ভাষাও ছিল।
২০১১ সালে, ‘আই অ্যাম কালাম’ নামক একটি বলিউড চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছিল, তাঁর জীবন কাহিনীর উপর নির্ভর করে।
২০১২ সালের মে মাসে আব্দুল কালাম দুর্নীতির বিরুদ্ধে হোয়াট ক্যান আই গিভ মুভমেন্ট নামক একটি প্রোগ্রাম চালু করেছিলেন।
রাষ্ট্রপতি পদ ছেড়ে দেওয়ার পর, তিনি দ্য ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট শিলং, দ্য ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট আহমেদাবাদ এবং দ্য ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট ইন্দোরের অধ্যাপক হন।
দেশের জন্য কাজ করার স্বার্থেই কালাম কোনওদিন বিয়ের সিদ্ধান্ত নেননি৷
Defence Research and Development Organisation (DRDO)-র বিজ্ঞানী ছিলেন তিনি এবং ভারতীয় সেনার জন্য হেলিকপ্টারের নকশা তৈরি করেছিলেন তিনি৷
সমস্ত রাজনৈতিক দলের সমর্থনে তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন৷
দেশের প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি৷
২০০৫ সালে সুইজারল্যান্ডে কালামের উপস্থিত থাকার দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ২৬মে-কে সায়েন্স ডে হিসেবে ঘোষণা করা হয়৷
বিশ্বের ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডক্টরেট অর্জন করেন তিনি৷
কালামের ৭৯ তম জন্মদিনকে ওয়ার্ল্ড স্টুডেন্ট ডে হিসেবে চিহ্নিত করে ইউনাইটেড নেশনস৷
তিনি ভারতীয় বায়ুসেনার ফাইটার পাইলট হতে চেয়েছিলেন কিন্তু এক ব়্যাঙ্কের জন্য তা হাতছাড়া হয়ে যায় তাঁর৷
২০০৩ এবং ২০০৬ সালে তিনি এমটিভি ইউথ আইকন অ্যাওয়ার্ড পান৷

আব্দুল কালাম ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ স্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, তিরুবনন্তপুরমের আচার্য্য ছিলেন এবং আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক ছিলেন।
ড. কালাম যখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন সে সময় নমন নারায়ণ নামের এক শিল্পী তার স্কেচ করে তাকে পাঠিয়েছিলেন । নমনের কাছে রাষ্ট্রপতির নিজে হাতে তৈরি ধন্যবাদ কার্ড এবং সেইসঙ্গে বার্তাও পৌঁছে যায় । যা তাকে হতবাক করে দেয়।
প্রয়াত এপিজে আবদুল কালামের আত্মার প্রতি রইলো আমার গভীর শ্রদ্ধা,হে পৃথিবী শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব লহ প্রনাম।
প্রশান্ত দাস মতিঝিল কলেজে অ্যাডমিন বিভাগের দ্বায়িত্বপূর্ন পদে কর্মরত । নানা বিষয়ে পড়াশুনা ও গবেষণা নিয়ে ব্যাস্ত থাকেন , নতুন নতুন রান্না নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট , বাগান ও পরিবেশ সচেতন নাগরিক ও ছাত্রদরদী সোশিওলজির শিক্ষক ।