ব্রহ্মবিদ্যাম্ তস্যাম্ রমতে………
ডাঃ রঘুপতি সারেঙ্গী,কোচবিহার
“ব্রহ্মবিদ্যাম্ তস্যাম্ রমতে ইতি ভারতঃ”। যে ভূ-খন্ডের সিন্ধু-সরস্বতী’র বালুময় তটের প্রতিটি প্রভাত কল্লোলিত হোত ঋষি-বালকদের বেদ-মন্ত্র উচ্চারণে…. তার নাম ভারতবর্ষ।
বেদই ছিল জ্ঞাতব্য। ব্রহ্মজ্ঞানী ঋষি এবং ঋষিকারা ছিলেন বেদ এর দ্রষ্টা-জ্ঞাতা ও ধর্তা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, আশ্রম-বাসী ঋষি-বালক এবং বালিকারাই হতেন এই গূঢ় বিষয়ের বিদ্যার্থী। সে যুগে ঘোশা, লোপামুদ্রা , মৈত্রেই এবং গার্গি সর্বজন শ্রদ্ধেয় নারী যাদের বেদের জ্ঞান তাদের সপ্ত ঋষির তুল্য সম্মানীয় মনে করতো । আর বেদই নারী শিক্ষা কে সর্বোপরি সম্মান দিতো সেকালে এবং সেই কারণেই ভারত জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ ছিল কোনো সন্দেহ ছাড়া ।

বেদ অপৌরুষেয় ….. মানুষের দ্বারা লিখিত কোনো গ্রন্থ নয়……….
তত্ববেত্তা ঋষি’র দৃষ্টিতে প্রকটিত মন্ত্র। তাই, ঋষি-মুখে কেবল শুনে-শুনে, লাভ করতে হোত এঁদের সাধন-লব্ধ সম্পত্তি। “শ্রুয়তে ধর্মকথা ইতি “…. তাই বেদ এর আর এক নাম ‘শ্রুতি’।
বেদ সৃষ্টির আদি জ্ঞান। সংস্কৃত ✓বিদ্ থেকে এসেছে বেদ শব্দ….. যা “জ্ঞান, লাভ, বিচার” অর্থে ব্যবহৃত হয়। ম্যাক্স মুলার সাহেব একে সাড়ে তিন হাজার বছরের পুরণো বলে দাবি করলেও মারাঠী-রাহ্মণ, পন্ডিত বাল গঙ্গাধর তিলকের অভ্রান্ত যু্ক্তি, “কোন ক্রমেই এর বয়স আট থেকে বারো হাজার বছরের কম নয়।”
জানা যায়, এক একটি বেদ অধ্যয়ন করতে সময় লাগতো, কম করে ৮ বছর। ঋক্-সাম-যজুঃ এবং অথর্ব এই ৪ টি বেদ শিক্ষা করতে বালক-বালিকা দের জীবনের ৩২ টা বছর একটানা লেগে থাকতে হোত। প্রতিটি বেদ এর সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক এবং উপনিষদ এই চারটি উপাংশ এবং শিক্ষা-কল্প নিরুক্ত-ব্যাকরণ-ছন্দ ও জ্যোতিষ নিয়ে হয় তার ‘ষড়্-অঙ্গ’।
ভাবুন, এইসব শিশু-বিদ্যার্থীদের ত্যাগ, তপস্যা আর অধ্যবসায় ! যাঁরা একটি বেদ শিক্ষা করতেন তাঁরা ‘বেদী’ উপাধি নিতেন। যাঁরা দু’টি বেদের জ্ঞাতা হতেন তাঁরা ‘দ্বিবেদী’ আর এইভাবে ‘ত্রিবেদী’ এবং ‘চতুর্বেদী’ ব্রাহ্মণ এর সৃষ্টি হত সমাজে। বিনা পারিশ্রমিকে বেদ-জ্ঞান এর প্রচার, প্রসার ও অখন্ড ভারতবর্ষে সম্প্রসারণ করাই ছিল এঁদের জীবনের একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
তাঁরা এটা ভালো করেই জানতেন, ” ইহ চেৎ আবেদীদথ সত্যমস্তি; ন চেৎ ইহাবদীন্মহতী বিনষ্টীঃ”(শ্রুতি)….অর্থাৎ এখানে থেকে এই জীবনে যদি তাঁকে জানা যায়, তবেই জীবন সত্য; আর যদি জানা না যায় তাহলে সর্বোচ্চ ক্ষতি। কিন্তু, এতো শ্রম, এতো ত্যাগ, এতো কষ্ট করে লাভ করা এই অধ্যাত্মিক-সম্পত্তি কে বিলানোর এত আগ্রহ কী কারনে ? এই তো সেদিন, ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানী গ্রিফিৎ-ম্যাক্স্ মুলার প্রভৃতি জার্মান স্কলার নিয়োগ করে যা’র এক একটি পৃষ্ঠাকে অনুবাদ করতেই কোষাগার থেকে ১০ পাউন্ড করে অর্থ বরাদ্দ করেছিল….. সেই অমূল্য সম্পদ বিতরণ এর প্রয়োজন কী ছিল? আর, কেনই বা তা ?
আসলে, বেদ ই ভারতের সনাতন-সংস্কৃতির আকর। বেদ ই ভারতের ঐক্য আর সংহতির আর এক নাম। বেদ ই আমাদের “National Cadence”…… ভারতবাসী’র জীবন-সংগীত। বেদবতী-সরস্বতী’র গতিময় জ্ঞান আর দর্শণের অপূর্ব যে মেল-বন্ধন তাঁরই নাম বেদ। তাই তো অখন্ড ভারতবর্ষে বেদ এর প্রচার করতে করতে ঋষি’রা পেরিয়ে গেছেন আজকের পাকিস্তান, ইরাক, ইরান, তুর্কি, সিরিয়া ছাড়িয়ে মধ্য-প্রাচ্য এর বিডিন্ন দেশে। না, এখানেই থেমে যান নি এনারা। কন্যা-সম্প্রদান এর মাধ্যমে বা আত্মীয়তার সুবাদে, এনারা পৌঁছে গেছেন সুদূরের কোন মিশরেও!
যেখানে দেখিয়েছেন…… জানি, সেখানে আমার ঠাকুরদা’রা থাকেন…… তবুও মনে হোল, তাই।ভগবান যীশু এক জায়গায় বলেছেন, ” আমি তোমাদের জল সিঞ্চন করে পবিত্র বানাচ্ছি। আমার পরে যিনি আসবেন, তিনি অগ্নি’র দ্বারা তোমাদের পবিত্র করবেন।”
কিন্তু এখানে এসে দেখি, যীশুর জন্মের কয়েক হাজার বছর আগেই পুণ্যতোয়া সিন্ধু-সরস্বতী আর দৃশদ্বতির জল ছিটিয়ে “অগ্নিমীলে পুরোহিতং যজ্ঞস্য দেবমৃত্বিজম্। হোতারম্ রত্ন ধাতমম্।।”….বলে, আপামর ভারতবাসীর জন্য জ্ঞানের-অগ্নিতে অমৃতত্ব প্রাপ্তির পবিত্র প্রার্থনা জানিয়েছেন ঋক্-বেদ এর ঋষি।
মহামুনি মনু ও তাঁর সংহিতায় লিখছেনঃ
” বিভর্তি সর্ব্বভূতানি বেদশাস্ত্রং সনাতনম্।
তস্মাদেতৎ পরং মন্যে যজ্জন্তোরস্য সাধনম্।।”……
অর্থাৎ বেদ ই মানুষের পুরুষার্থ সাধনের পরম উপায়, ইনিই সকল জীব এর ধারক।
সে কারনেই হয়তো বা বীর-সন্ন্যাসী’র কন্ঠেও শুনি এক আক্ষেপের সুর….. “এমন দিন কবে আসবে যেদিন বাঙলার প্রতিটি ঘরে, গৃহ-দেবতার পাশেই বেদ’র ও পুজো হবে।”
আজ সনাতন ধর্মের সংকট আসন্ন কিছুটা নিজেদের অবহেলায়, কিছুটা ছিদ্রানেষী দুর্বৃত্তের সোশ্যাল ইঞ্জিনীরিংয়ের কুফল এবং তাঁর রক্ষা প্রয়োজন, না হলে, ইতিহাসের পাতায় বৈদিক সনাতন সংস্কৃতিকে খুঁজতে হবে । তাই মানব সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ নির্যাস বেদের জ্ঞানকে কে পুনঃ স্বমহিমায় অধিষ্ঠান প্রয়োজন । যা আজ সারা বিশ্ব জ্ঞানের অমৃত বলে চিনছে ।
A great information source on Vedas from Project Shivoham.

Dr. Raghupati Sharangi, a renowned homeopath and humanitarian who lives for the people’s cause. He is also a member of the Editor panel of IBG NEWS. His multi-sector study and knowledge have shown lights on many fronts.