“জানি না, ফুরাবে কবে এই পথ চাওয়া”
ডাঃ রঘুপতি সারেঙ্গী
একবার এক ধোপা’র গাধার সাথে এক সার্কাসের গাধার দেখা হোল। দু-জনের শুভেচ্ছা বিনিময় হতে হতে ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে কথা চলছে। সার্কাসের গাধা বললো ,” কেমন চলছে তোমার, বলো”। ধোপা’র গাধা বললো, ” আর বলো না, ভীষণ কষ্টে আছি, ভাই রে। সেই কোন সকালে রোজ আমাকে নিয়ে ঘর-ঘর ঘুরে কাপড় সংগ্রহ করে, তারপরে সেই নোঙরা কাপড়ের ভারি মোট আমার পিঠে চাপিয়ে চাবুক মারতে মারতে নদীপাড়ে নিয়ে যায়। তারপর ধুম রোদে বেঁধে দিয়ে…. কাপড় কাচতে লেগে পড়ে।
কাপড়-চোপড় শুকলে এক চুমুক নদী’র জল খাইয়ে যা’র যা’র কাপড় তার ঘরে পৌছে তবেই বাড়ি ফিরা।
কবে যে মুক্তি পাবো, কে জানে ! সে যাক্,, এবার তোমার কথা বলো।”
সার্কাসের গাধা বললো,” তুমি তো তবু সূর্যের আলোতে ঘুরে একটু ঘাষ-পাতা খেতে পাও…. আমার তো জীবনটাই কাটে তাঁবুর নীচে। যেদিন যতটুকু খেতে দেয় ব্যাস সেটুকু খেয়েই কোনোমতে জীবন কেটে যাচ্ছে। থাকতাম নাকি এতো কষ্ট করে, থোড়াই! শুধু Prospect টার কথা মাথায় রেখে মুখ বুজে সব সয়ে যাচ্ছি, এতগুলো বছর।”
“Prospect ……তোমার…………সে কী আবার !”
” না, মানে…. আমার পিঠে চেপে যে মেয়েটি খেলা দেখায় ওকে আমাদের রিং মাস্টার একদিন রেগে বলেছে, দর্শকের মাঝে খেলা দেখাতে গিয়ে যদি কখনো পড়ে যায় তো আমার সাথে ওর বিয়ে দিয়ে দেবে। আমি নিজের কানে শুনেছি।”
আমাদের জীবনটাও যেন অনেকটা সেরকমই। আশা……… আর আশা! নিরন্তর কামনা। এর যেন কোনো অন্ত নেই। কামনা নামক বস্তুটি যে চির-যুবা.…… এ কখনোই বৃদ্ধ হতে শেখে নি।
জল ভেবে, মরীচিকার পিছনে বরং দৌড়াবে কিন্তু লাগাম টানার বদলে, ভাববে….আজ হোলো না তো কাল হবে। কাল হোলো না….… পরশু হবে। ঠিক যেন সার্কাসের গাধাটির মতো। আসলে, আমাদের মন এ কথা কখনোই মনে রাখে না যে কামনাই জীবনের অধিকাংশ দুঃখের একমাত্র কারণ। আর, এর মূলে রয়েছে আমাদের অজ্ঞতা। তা থেকে জন্ম নেয় ’অস্মিতা’…আমিত্ব-বোধ…..”ম্যায় ঔর হামারা”। ” “অহম্ এষাম্ মম এতে।” । সবই হোক্…..আর কেবলই তা আমার। দেখলেন তো, অস্মিতা থেকে কী সুন্দর জন্ম নিল চরম-স্বার্থপরতা। পরিনামে, নিশ্চিত অশান্তি…..অনিদ্রা…..উচ্চ-রক্তচাপ…..
মধুমেহ আর তারপরে……. সে তো আপনাদের জানাই। “শোকস্য কারণম্ মোহঃ”… এই আপ্তবাক্য বই’ র পাতা আলো করার জন্য ই কী লিখা………..
……. কী জানি! কিন্তু, আমাদের শোক কখন হয়? কোনো কিছু জীবন থেকে হারিয়ে গেলে। মোহ কখন গ্রাস করে আমাদের? কোন কাম্য-বস্তু হাতের নাগালে না- পাওয়া পর্যন্ত।
তার মানে দাঁড়াচ্ছে, কামনার পরিপূর্ণতা মানেই…. শান্তির প্রাপ্তি। মহামুনি মনু কিন্তু এক মুহূর্তের জন্য আবেগ-তাড়িত না হয়ে স্পষ্ট ভাষায় লিখছেনঃ
” ন যাতু কাম কামানাং উপভোগেন শাম্যতি।
হবিষা কৃষ্ণ বর্ত্ম্যেব ভূয়ঃ এবাভিবর্ধতে।।”
……. অর্থাৎ যেমন জ্বলন্ত আগুনে ঘি ঢেলে তাকে নিভানো যায় না, ঠিক তেমনি পরিতৃপ্তির মাধ্যমে কামনাকে জয় করা একপ্রকার অসম্ভব। ইন্দ্রিয়
এর দমন ই একমাত্র পথ। আর, অবশ্যই তা জ্ঞান এর মাধ্যমে।
” আপূর্যমাণম্ অচলপ্রতিষ্ঠং
সমুদ্রম্ আপঃ প্রবিশন্তি যদ্ বৎ।
তদ্ বৎ কামা যং প্রবিশন্তি সর্বে
স শান্তিম্ আপ্নোতি ন কামকামী।।…. গীতা’র উদ্ঘোষ। মানে, সমুদ্রের বুকে যেমন অসংখ্য
নদী-নালা প্রতিনিয়ত প্রবেশ করে বিলীন হরে যায়,ঠিক তেমনি যাঁর অন্তরে আশা বা কামনা এলেও তা যাঁর চিত্তে কোনো চাঞ্চল্য ঘটায় না সেই সমাহিত-চিত্ত ব্যক্তিই কেবল চিরশান্তি লাভ করেন।
মুস্কিল টা হোচ্ছে, এইসব জেনে শুনেও নিত্য-কর্ম, নৈমিত্তিক-কর্ম এবং প্রায়শ্চিত্য-কর্ম কে বাদ দিয়ে আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, বেছে-বেছে, শুধু কাম্য-কর্মগুলি ই করি…..যার মূলে থাকে সেই কোনো না কোনো পার্থিব কামনা পূরণের আশা। দেখুন, কী নির্মম পরিহাস ! আদি শঙ্করাচার্য দুঃখ করে লিখছেন……
” অঙ্গং গলিতং পলিতং মুন্ডং দন্ত-বিহীং যাত তুন্ডং কর ধৃত কম্পিত শোভন দন্ডং…..
তদপি ন মুঞ্চতি আশা ভান্ডম্।”….. আসল সত্য কে না বুঝার কারণে কী দুর্দশা আমাদের !
দেহ থেকে মাংস ঝুলে পড়ছে, দাঁত ফাঁকা হয়ে গেল, চুল পেকে সাদা হোয়ে গেল, হাতে ধরা লাঠি টা ও থরথর্ করে কাঁপছে…… কিন্তু আশা যে কখনোই বৃদ্ধ হতে জানে না কিনা !
Shakespeare এক জায়গায় বলছেন,” I always feel happy, you know why ? Because of I don’t expect anything from anyone. Expectations always hurt.”
“Paradise Lost”, It is considered to be Milton’s masterpiece, and it helped solidify his reputation as one of the greatest English poets of his time. The poem concerns the biblical story of the Fall of Man: the temptation of Adam and Eve by the fallen angel Satan and their expulsion from the Garden of Eden.
প্রাচ্যের শঙ্করাচার্য বুঝেছিলেন, মনুজী বুঝেছিলেন, পাশ্চাত্যের শেক্সপিয়ার বুঝলেন….. তো এ পোড়া মন বুঝবে কবে? এ কী সেই সার্কাস পার্টির গাধা’র মতো ওপরে তাকিয়েই থাকবে….. বাচ্চা মেয়েটি কবে খেলার মাঝে পা পিছলে পড়বে, সে দিকে?
নৈলে, কিন্তু জীবনে আমাদের এমনটাও হতে পারে
“বো চমচম্ করতে আয়ি, ঔর চমচম্ করতে চলি গয়ি,
ম্যায় সিন্দুর লে কে খাড়া রহা, বো রাখী বাঁধকে চলি গয়ি!”

Dr. Raghupati Sharangi, a renowned homeopath and humanitarian who lives for the people’s cause. He is also a member of the Editor panel of IBG NEWS. His multi-sector study and knowledge have shown lights on many fronts.