দুয়ারে সাংবাদিক – দক্ষিন দিনাজপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী টাউন ব্যান্ক আজ ভুলুন্ঠিত
নীলাদ্রি শেখর মুখার্জি
দক্ষিন দিনাজপুর
দক্ষিন দিনাজপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী টাউন ব্যান্ক ভাঙ্গা শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। যা নিয়ে রীতিমতো সরগরম দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক পরিমণ্ডল। এই বিষয়ে আন্দোলনে নেমেছেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হেরিটেজ সোসাইটির সদস্যরা।
বালুরঘাট শহরের মোক্তারপাড়া (দিপালীনগর) এলাকায় অবস্থিত ইংরেজ আমলের সুপ্রাচীন টাউন ব্যাংক আজ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তথা প্রোমোটারদের চক্রান্তের শিকার। যার ফলস্বরূপ জেলার প্রাচীন ঐতিহ্য আজ ধ্বংসের মুখে। স্থানীয় এক ব্যবসায়ীও এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং তিনি আদালত ও প্রশাসনের দারস্থ হয়েছেন।
এই টাউন ব্যান্কের ঐতিহাসিক গুরুত্ব নিয়ে জেলার ইতিহাসবিদ শিক্ষক সমিত ঘোষ বলেন,” ১৯১৩ সালে স্হাপিত এই “দি টাউন কমার্শিয়াল কোঃ ব্যান্ক লিমিটেড” শুধু বালুরঘাট নয় সমগ্র দেশে এক বিশেষ নাম বহন করত। বালুরঘাট শহরের প্রানকেন্দ্রে ২০–২৫ কাঠা জায়গা নিয়ে এই টাউন ব্যান্ক আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রাক স্বাধীনতাকালে বালুরঘাট এবং তত্সংলগ্ন এলাকায় টাকা পয়সার লেনদেনের কাজ হতো। সেই সময় খুবই জমজমাট ছিল এই অঞ্চল। বালুরঘাট এবং অধুনা বাংলাদেশ ও কলকাতার কিছু গুনিজন ও সুধীজনের উদ্যোগে এই ব্যান্ক প্রতিস্ঠিত হয়। ব্যান্কের নিজস্ব সম্পত্তি হিসেবে ছিল বেশ কিছু রাইস মিল যা আজ অতিত। এরপর ভারত স্বাধীন হলে কালের নিয়মে অনেক জাতীয় ব্যান্ক তৈরী হয়। ফলে এই ব্যান্ক তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে।”
কিছুদিন আগে পর্যন্ত এই ব্যান্কের কিছু ঘর ভাড়া দিয়ে শিঘা আচার্য মহাশয়া এই ঐতিহ্য বাচিঁয়ে রেখেছিলেন।
এই প্রসঙ্গে শহরের বিশিষ্টজনেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিশিষ্ট থিয়েটার কর্মী মনোজ কুমার গাঙ্গুলি বলেন,”এ শহরও আস্তে আস্তে প্রোমোটার দের দখলে যেতে চলেছে । সব ঐতিহ্য প্রায় ধ্বংস হতে বসেছে এই শহরে । প্রতিবাদ হোক ।”
বিশিষ্ট কবি ও ভাষ্কর মৃনাল চক্রবর্তী বলেন,”এ শহরের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি বলে আর কিছু থাকবে না।”
জেলার হেরিটেজ সোসাইটির সভাপতি তুহিন শুভ্র মন্ডল বলেন,”ভান্গা পড়ছে শহরের ঐতিহ্যবাহী টাউন ব্যান্ক।কি করে আমাদের সবার জানা টাউন ব্যান্ক টাউন কমার্শিয়াল কোম্পানী লিমিটেড হয়ে গেল বুঝতে পারছি না। আমরা একসময় একে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম হেরিটেজ ঘোষনার জন্য। বিষয়টা দেখুক পৌরসভা প্রশাসন।”
বিশিষ্ট দন্ত চিকিৎসক স্বর্নায়ু মৈত্র বলেন, “আবার এক ইতিহাস বিলোপ হয়ে যাবে, থেকে যাবে স্মৃতি”।
আজ দক্ষিন দিনাজপুর হেরিটেজ সোসাইটির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রতিকী প্রতিবাদ জানানো হল এবং সেইসন্গে সই সংগ্রহ করা হলো।
বিষয়টি নিয়ে সোসাইটির সম্পাদক দিপক মন্ডলকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,” এই ব্যান্কের গঠনের সময় বোর্ড অফ ট্রাস্টিসের অধিনে ছিল কিন্তু এখন তা আর আছে বলে জানা নেই।”
সত্যিই কি শহর থেকে এভাবেই ঐতিহ্য নিশিন্হ হয়ে যাবে??প্রশাসন ও নাগরিক সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
দুয়ারে সাংবাদিক এই বিষয়ের ওপর কড়া নজর রাখছে ও আরো বিশদ তথ্য সংগ্রহ করছে ভারতের কোনো ঐতিহ্য নষ্ট করে কোনো প্রকৃত উন্নয়ন হয় না । বিশ্বের সর্বত্র হেরিটেজ রক্ষা করা নাগরিকদের প্রাথমিক কর্তব্য ।