নবরাত্রি: কেন্দ্রে প্রত‍্যাবর্তন – গুরুদেব শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর

0
594
Sri Sri Ravishankar Ji
Sri Sri Ravishankar Ji
0 0
Azadi Ka Amrit Mahoutsav

InterServer Web Hosting and VPS
Read Time:6 Minute, 38 Second

নবরাত্রি: কেন্দ্রে প্রত‍্যাবর্তন
গুরুদেব শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর

নবরাত্রি উৎসব আশ্বিন (শরৎ) এবং চৈত্র (বসন্তর) শুরুতে খুব পুজাপাঠ এবং আনন্দের সঙ্গে পালিত হয়। এই সময়টি আত্মসমীক্ষা ও নিজকেন্দ্রে প্রত‍্যাবর্তনের সময়। এটি একটি রূপান্তরিত হবার সময় যখন প্রকৃতি পুরাতন কে বর্জন করে পুনর্জীবিত হয়, জীবজন্তু শীতযাপন করে এবং বসন্তে নতুন জীবনের সূত্রপাত হয়।

‘রাত্রি’ পুনরুজ্জীবিত করে। বৈদিক শাস্ত্র অনুযায়ী বস্তু তার মূল আকারে ফিরে যায়, এবং নিজেকে বারে বারে পুনঃনির্মাণ করে। সৃষ্টি চক্রাকারে আবর্তিত, রৈখিক নয়: এখানে প্রতিটি জিনিস পুনব‍্যবর্হিত হয় এবং ক্রমাগত পুনর্জীবিত হয়। মানুষের মন, কিন্তু সৃষ্টির এই চক্র থেকে পিছিয়ে থাকে।

নবরাত্রি মনকে নিজের কেন্দ্রে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার উৎসব। অন্বেষকরা উপবাস, পূজাপাঠ, নীরবতা এবং ধ‍্যানের দ্বারা তার নিজ কেন্দ্রের কাছে ফিরে যায়। এর দ্বারা আমাদের অস্তিত্বের তিনটি স্তরে স্বস্তি পাওয়া যায়, যথা দৈহিক, সূক্ষ্ম এবং নৈমিত্তিক‌। উপবাস শরীরকে কলুষমুক্ত করে, নীরবতা বাণীকে শুদ্ধ করে ও অহেতুক কথাবার্তাকে স্তব্ধ করে, এবং ধ‍্যান মনের গভীরে তার নিজস্ব সত্ত্বার কাছে পৌঁছে দেয়। অন্তর্মুখী যাত্রা আমাদের কুকর্মের ফলকেও মিটিয়ে দেয়। নবরাত্রি আত্মা বা প্রাণের উদযাপন, এবং একমাত্র উজ্জীবীত প্রাণই অসুরকে বধ করতে পারে।
 মহিষাসুর (জড়তা), শুম্ভ-নিশুম্ভ (অহংকার ও গ্লানি), এবং মধু-কৈটভ (তীব্র বাসনা ও ঘৃণা)। এইগুলি সম্পূর্ণ বিপরীত, কিন্তু একে অপরের পরিপূরক। জড়তা, নেতিবাচক মনোভাব এবং আচ্ছন্নতা (রক্তবীজাসুরা),
অযৌক্তিকতা (চন্ড-মুন্ডা), এবং অস্বচ্ছ দৃষ্টি (ধূম্রলোচন) কে অতিক্রম করা সম্ভব একমাত্র  প্রাণ বা জীবনীশক্তিকে উজ্জীবিত করে।

নবরাত্রির নটি দিন আবার তিনটি আদি গুণ, যা এই ব্রম্হ্মান্ডকে সৃষ্টি করেছে, তাদের উদযাপিত করবারও একটা সময়। যদিও আমাদের জীবন এই তিনটি গুণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, আমরা সচরাচর তাদের কথা মনে রাখি না। নবরাত্রির প্রথম তিনটি দিনে তমঃগুণের আধিক্য থাকে,  যা মনখারাপ, ভয় এবং আবেগের তারতম্যের দিকে নির্দেশ করে। পরের তিনদিন রজঃগুণ, যা ক্রোধ এবং উত্তেজনা বৃদ্ধিদায়ক, এবং শেষ তিনদিনে  সত্ত্বগুণের আধিক্য হয়। যখন সত্ত্ব প্রাধান্য পায় তখন আমরা স্বচ্ছ, একাগ্র, শান্ত এবং উজ্জীবীত থাকি। আমাদের চেতনা তমঃ এবং রজঃগুণ থেকে অগ্রসর হয়ে সত্ত্বগুণের মধ্যে বিকশিত হয় নবরাত্রির শেষ তিনদিনে। এই তিনটি আদিম গুণকে এই মহান ব্রম্হ্মান্ডের মহিলাশক্তি বলে মনে করা হয়। নবরাত্রিতে দেবীমাতার পুজো করে, আমরা তিনটি গুণকে একত্রিত করে বায়ু মন্ডলে ছড়িয়ে দিই। জীবনে সত্ত্বের আধিক্য ঘটলে জয় আসে। জ্ঞানের এই মূলকথাটি বিজয়াদশমী উদযাপনের মধ্য দিয়ে মান‍্যতা দেওয়া হয়।

নবরাত্রি সাধারণ ভাবে অশুভ-শক্তির ওপর শুভ-শক্তির জয় হিসেবে পালিত হয়, কিন্তু আসল যুদ্ধ শুভ অশুভের মধ্যে নয়। বৈদিক মতানুসারে এই জয় হচ্ছে আপাত দ্বৈতবাদের  ওপর পরম সত‍্য বা অদ্বৈত বাদের জয়। মহাঋষি অষ্টবক্রের মতে, সমুদ্রের ছোট তরঙ্গগুলি নিজেকে সমুদ্র থেকে আলাদা মনে করে, কিন্তু তা কখনও সফল হয় না।

দেবী মাতা শুধু যে বুদ্ধিরূপে স্বীকৃত তা নয়, তিনি ভ্রান্তিরূপেও পূজিত। তিনি শুধুমাত্র লক্ষ্মী বা প্রাচুর্যের প্রতীক তাই নয়, তিনিই ক্ষুধা এবং তৃষ্ণা। সমগ্র সৃষ্টিতে দেবী মাতার  সকল রূপের ব‍্যপকতা বুঝতে পেরে ভক্ত  সমাধির গভীর স্তরে পৌঁছে যায়। এটা পাশ্চাত্যের চিরকালীন আধ‍্যাত্মিক সংঘর্ষের একটি জবাব। জ্ঞান, ভক্তি এবং নিষ্কাম কর্ম দ্বারা একজন  অদ্বৈত-সিদ্ধি লাভ করতে পারে। প্রকৃতির সবথেকে ভয়ঙ্কর রূপ হচ্ছেন মা কালী। প্রকৃতি সুন্দরের প্রতীক, কিন্তু তার একটি ভয়াবহ রূপও আছে। এই দুটি রূপকে স্বীকার করলে মন শান্ত হয়ে যায়।
যদিও মনুষ্য বিশ্ব-ব্রম্হ্মান্ডের অন্তর্ভুক্ত,  এর ধারণাকৃত বিভাজন দ্বন্দ্বের কারণ। একজন জ্ঞানী ব‍্যক্তির কাছে সমস্ত সৃষ্টি জীবন্ত এবং তিনি সব কিছুর মধ্যে প্রাণ খুঁজে পান; ঠিক একজন শিশুর মতোই। দেবী মাতা অর্থাৎ শুদ্ধ চেতনা নিজেই সকল রূপের ভিতর পরিব‍্যাপ্ত বিভিন্ন নামে। একই দেবত্বকে সকল রূপ এবং সকল নামের মধ্যে দেখাই নবরাত্রির মূলকথা। সুতরাং নবরাত্রির শেষ তিনদিনে জীবন এবং প্রকৃতির সকল বিষয় কে সম্মান জানিয়ে বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

Photo By Suman Munshi

About Post Author

Editor Desk

Antara Tripathy M.Sc., B.Ed. by qualification and bring 15 years of media reporting experience.. Coverred many illustarted events like, G20, ICC,MCCI,British High Commission, Bangladesh etc. She took over from the founder Editor of IBG NEWS Suman Munshi (15/Mar/2012- 09/Aug/2018 and October 2020 to 13 June 2023).
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Advertisements

USD





LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here