সুমন কি বেঁচে আছে?
দ্বিতীয় ভাগ
(আগে যা হয়েছে জানতে ক্লিক করুন প্রথম ভাগ , দ্বিতীয় ভাগ, তৃতীয় ভাগ, চতুর্থ ভাগ,পঞ্চম ভাগ,ষষ্ঠ ভাগ, সপ্তম ভাগ, অষ্টম ভাগ, নবম ভাগ)
হ্যালো কে বলছেন, কিছুক্ষন নিস্তব্ধতা, ফোন কেটে দিতে যাবে বিল্টু এমন সময় ঘড়ঘড় করে ওপাশ থেকে একটা পুরুষ কণ্ঠ ভেসে এলো ।
হ্যালো কে বিল্টু ,পার্থ বলছিরে ।
কোন পার্থ?
আরে ফিজিক্স অনার্স, এখন স্কুল টিচার চিনলি না?
ও সরি পার্থ, আমি আমার আপিসের আপদ পার্থ ভেবেছিলাম, সারাদিন শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন একটা কাজ নিজে করবে না । বল কেমন আছিস সবাই? পুজো কেমন কাটছে? কোথায় বাড়িতে না, ঘুরতে বেরিয়ে পড়েছিস?
একসাথে একগুচ্ছ প্রশ্ন করে পার্থ কে আর প্রশ্ন করতে দিলোনা বিল্টু ।
শোন সেসব কথা পরে, তোর কাছে সুমনের কোনো লেটেস্ট ছবি আছে ?
সুমনের কেন রে? হঠাৎ ছবি কি হবে? বেশ কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করে বিল্টু ।
দেখ আমরা বন্ধুরা সবাই জানি ও আর নেই কিন্তু..চুপ করে যায় পার্থ ।
কিন্তু কি? শিগগির বল, উৎকণ্ঠা মাখা স্বরে বলে বিল্টু ।
আধাঘন্টা খরচ করে কথা বলার লোক পার্থ নয়, হিসাবি মানুষ কৃপণ নয় ।
ঠিক এমন সময় শতরূপা কী যেন বলতে এলো । হাতের ইশারায় বিল্টু চলে যেতে বললো । এই ইঙ্গিত শতরূপা জানে, অজানা আশংকায় সে দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে গেলো ।
দশ মিনিট ধরে হু আর হাঁ, ওকে এই তিনটি শব্দে কথা হলো ।
সুমন বেঁচে আছে । তিনটে শব্দের অভিঘাত শতরূপা জানে বিল্টুর কাছে কি দারুন এক সংবাদ ।
হাসি মুখে কফি বানাতে চলে গেলো, ও জানে বিল্টু এর শেষ দেখে ছাড়বে, বন্ধুদের জন্য জান কবুল।
প্রথম ফোন পম কে “আপদ মরে নি রে, বেঁচে আছে ।” আনন্দে গলা ধরে এলো বিল্টুর ।
পম বললো আবার বল বেঁচে আছে, কোথায় শালা? চল গিয়ে কেলিয়ে লাশ বানিয়ে দেব । তিন বছর ধরে একটা শূন্যতা, হটাৎ যদি সব পাওয়াতে
বদলে যায়, পমের গলায় সেই সুর ।
এরপর দুজনে কি চুপি চুপি কথা হলো ।
ও পাস্ থেকে শুধু এইটুকু শোনা গেলো চল ইন্ডিয়া তারপর বেটাকে দেখছি ।
এরপর বিল্টু ফোন করলো সীমা কে একই ক্লাসে পড়তো, সুমন কে লাস্ট ওর সাথে দেখা করতে দেখেছে সবাই । চুপি চুপি কথা হলো কি যেন ।
এমন সময় শতরূপা কফি হাতে বললো প্ল্যান কি? কবি কে পাওয়া গেছে? ছবির মালাটা ফেলে দিলাম । হেসে বলে শতরূপা ।
এই প্রথম সুমনের ছবিতে কেউ হাত দেয়াতে বিল্টু খুশিই হলো, শি নোজ মি ওয়েল। আজ সেলেব্রেশনের দিন ।
সিঙ্গেল মল্ট স্কচ লাগবে, রাতে পম আসলে পুরো প্ল্যান হবে ।
এবার বলো কি ঘটনা। শতরূপার প্রশ্নে খেয়াল করলো কফি খাওয়া হয় নি । কফিতে চুমুক দিতে দিতে বললো, আজ মটন শোলে কাবাব আর রেশমি চিকেন বিরিয়ানি বানাও পম আসছে রাতে ।
সে হবে, কিন্তু ব্যাপার কি? সাসপেন্স নয় আর প্লীজ ।
পার্থ সিকিম ঘুরতে গেছে, সেই খানে এক মনাস্ট্রিতে রিন্চেন লামা বলে একজন কে দেখেছে| অবিকল সুমন, সেই চোখ সেই নাক, সেই গলা ।
কিন্তু পার্থ কে চেনেনা , জানে না বলছে । পার্থ খোঁজ করে জেনেছে দু বছর হলো রিন্চেন লামা ওই মোনস্ট্রিতে এসেছেন এর বেশি কেউ কিছু জানে না । তিব্বতি ভাষায় রিন্চেন মানে ট্রেজার । বেটা নাম টাও জমিয়ে রেখেছে ।
একই রকম লোক হতেও তো পারে? প্রশ্ন করলো শতরূপা ।
সেটা ঠিক কিন্তু একই লোকের হাতের ৮০ বছরের পুরোনো ওমেগা গোল্ড, যেটা সুমন প্রাণ থাকতে হাত ছাড়া করতো না, ওর দাদুকে দেয়া নেতাজির ঘড়ি, সেটাও কি লামার হাতে থাকার কথা?
কলেজর মাঠে ফুটবল খেলতে গিয়ে কপালের কাটা দাগ? সেটাও একই জায়গায় থাকে?
তাই আমরা সবাই সিকিম একসাথে যাচ্ছি পম ও যাচ্ছে, এবার হেসে বললো পার্থ হিসাবি লোক বললো ,একসপ্তাহ ছুটি পাবে না| স্কুল শুনবে না ।
যেই বললাম, আরে একটা রিসোর্ট পুরো বুক কর ফ্যামিলি ট্রিপ ও হবে রিইউনিয়ন । পেমেন্ট পম করবে, ফুডস এন্ড ড্রিঙ্কস ওন মি, নো ওরি । বাস বাবু হেসে বললো অরে সুমন তো আমার স্কুল থেকে বন্ধু ওর জন্য স্কুলের সাথে লড়া যাবে ।
শতরূপা হেসে কিচেনে গেলো বাবুর ফরমায়েশ মতো না হলে কাবাব ছুঁয়েও দেখবে না, আর পম দা নিজেই একজন পাকা শেফ । সেও শতরূপা হাতের কাবাব ভালোবসে ।
রান্না করতে করতে ভাবছে সুমন কে সে সামনে সামনি দেখেনি, কিন্তু লোকটা তাদের সাথে তিরিশ বছর জড়িয়ে। দুই বন্ধু পাগলের মতো ভালোবাসে একে অপরকে ।
কথায় কাজে কেমন যেন পাগল লোকটা। কিছুদিন মাস্টারি করলো ঢাকায়, তার আগে জাহাজের কোম্পানিতে, এরপর শুনলাম সিমেন্ট কোম্পানির আইটির বাবু , হটাৎ সব ছেড়ে রিসার্চ ল্যাবে অটোমেশন, তারপর বলে সুইস ব্যাঙ্ক অ্যাডমিন, কিছুদিন ছিল ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার তাও ন্যাট জিও অ্যাওয়ার্ড পাওয়া লোক । ওর মা মারা যাবার পর,কিছুদিন কোনো খোঁজ নেই, জানা গেল ছত্তীসগরে আদিবাসী বাচ্ছাদের পড়াচ্ছে । জলজ্যান্ত চাঁদের পাহাড়ের শঙ্কর বা শ্রীকান্তের ইন্দ্রনাথ ।
এরপর একদিন টিভিতে সাক্ষাৎকার দিচ্ছে সাংবাদিক হয়ে গেছে। একেবারে উন্মাদ না হলে, এমন কেউ করে! এমনসি গুলো লুফে নিতো ,
এইচ1বি ভিসা ফেলে দেশেই রয়ে গেলো । তবে কোনো অহংকার করতো না, গর্বের সাথে বলতো আমি দাদারকীর্তির ফেল দা , সবেতেই ফেল ।
প্রথম প্রথম মনে হতো এটা একটা অহংকার করার নতুন স্টাইল, পরে পরে বুঝলাম, লোকটা সোজা সমাজে বেঁকে যাওয়া বিবেকটাকে এখনো ধরে রেখেছে। আসলে জীবনের যে কথা গুলো ও বলে না, হাসির আড়ালে সরিয়ে রাখে, সেই বেদনা গুলো কাউকে ছুতে দেয় না, কাউকে না।
কিছু বললেই বলে আমি আনন্দের রাজেশ খান্না, জিন্দেগী লাম্বি নাহি বাড়ি হনি চাইয়ে ।
আর এক কাপ কফি, বিল্টু চিৎকারে ঘোর কাটে শতরূপার, নিজের মনেই হেসে বলে, যাক সুমনের বাহানায় হনিমুনের সিকিম, আবার ঘুরে আসা যাবে ।
চিনিটা কম দেয় আজকাল বিল্টুকে, সুগার নেই তবু সাবধানতা ।
,
*** কাল্পনিক গল্প বাস্তবের চরিত্র ***