শতরূপা তোমাকে কিছু বলার ছিল সুমনের (পঞ্চম ভাগ) – সামরাঙ্গম সূত্রম ও তিব্বতি তন্ত্র
সুমন মুন্সী, কলকাতা
(আগে যা হয়েছে জানতে ক্লিক করুন প্রথম ভাগ , দ্বিতীয় ভাগ, তৃতীয় ভাগ, চতুর্থ ভাগ,পঞ্চম ভাগ,ষষ্ঠ ভাগ, সপ্তম ভাগ, অষ্টম ভাগ, নবম ভাগ)
“হ্যালো কে উত্তরা”, চন্দ্রা প্রশ্ন করলো ফোনে ।
“হ্যাঁ, কে বলছেন”, উত্তরা ফোনে জবাব দিলো ।
“আমি চন্দ্রা বলছি, মতিঝিল কলেজ , ফিজিক্স। ..” চন্দ্রা বললো ।
“ওরে বাবা আমার নম্বর কি করে পেলি? এতদিন পর, কোথায় আছিস, কি করছিস? একবার বাড়ি আয়”। খুশিতে এক সাথে এক গুচ্ছ প্রশ্ন করলো উত্তরা ।
“শোন্ সব বলবো, একটা জরুরি কাজে তোকে ফোনে করেছি, আমাদের ব্যাচের সবার নম্বর আছে ?”, চন্দ্রা প্রশ্ন করলো।
“আমাদের ব্যাচের মধ্যে, সুজয় , দীপ , মিকি , অর্পিতা আর উদিত এদের নম্বর আছে”। উত্তরা একটু ভেবে বললো ।
“গুড কন্টাক্ট অল কাল বিজয়া সম্মিলনীতে অনলাইন মিট করবো।ইমেইল দে আমি মিটিং ডিটেলস দেব। খুব আর্জেন্ট সবাই কে দরকার”। বললো চন্দ্রা ।
“কেন ঠিক আছিস তো? অন্য্ ইসু”, উত্তরার গলা চিন্তিত শোনায় ।
“হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি । পম ফোনে বললো কাল যত জন কে পারবি, এই মিটিং এ ডাক, সুমনের খোঁজ পাওয়া যেতে পারে,” চন্দ্রা বললো ।
“সুমন সে কি করে হবে, তিন চার বছর আগে একসিডেন্টে ও…”, উত্তর গলায় বিস্ময় আর কান্না মিলিয়ে একটা দমবন্ধ ভাব ।
“ইয়েস, শয়তান বেঁচে আছে বলে শোনা যাচ্ছে। হাতে পেলে এক ঘুষিতে লেপচা করে দেব”, গলা চন্দ্রাও ধরে এলো ।
ইমেইল বলে দিয়ে বললো, “এর থেকে ভালো খবর বিজয়ের দিনে আর কি হতে পারতো, গড ব্লেস হিম,” উত্তরার গলায় নিশ্চিত খুশির ছোঁয়া ।
চন্দ্রা ফোন ছাড়তেই সবাইকে কল করলো আর কালকের মিটিং এর জন্য চন্দ্রা কে ইমেইল পাঠাতে বলে দিলো। সকলে অবাক আর খুশিও । সুমন আস্ত একটা কমেডিয়ান ওদের জন্য, সারাক্ষন সবার সাথে দুস্টুমি করতো, কিন্তু অসভ্যতা কোনো দিনই করেনি । জলি বয় যাকে বলে ।
ফোনটা রাখতেই হাজব্যান্ড প্রশ্ন করলো, “কি হয়েছে, এতো খুশি দেখাচ্ছে? এনি গুড নিউজ?”।
“সুমনের খোঁজ পাওয়া গেছে,” উত্তরা হেসে বললো ।
মি:রায় লাফিয়ে উঠে বললেন “এতো ব্রেকিং নিউজ, আর একটা ভাওয়াল সন্ন্যাসীর কেস”।
মি: অঞ্জন রায় নামি একটা চ্যানেলের ভাইস প্রেসিডেন্ট, খবরের ফেস ভ্যালু তাঁর জানা ।
“সিওর নই, তবে ডেফিনিট কুলু আছে,” বললো উত্তরা ।
এবার উত্তরার ফোনে ইউএসের নম্বর ভেসে উঠলো “কে”, উত্তরা প্রশ্ন করলো ।
“আমি বিল্টু বলছি উত্তরা, চন্দ্রা তোর নম্বর দিলো”
“শুনেছিস বদমাইশ বেঁচে আছে”, বিল্টুর গলা ভারী হয়ে এসেছে ।
“আমিও আছি রে” , এবার পম বলে উঠলো ।
“কে ?”।
“আমি অংশুমান”, পম বলে উঠলো।
“ও মাই গড দুজনে একসাথে কি মজা রে”, পুরোন বন্ধু আর পুরোনো মদ যত পুরোন হয় তত নেশার টান বাড়ে ।
বিল্টু বললো “বাকি কথা কাল, আজ তোর একটা হেল্প লাগবে” ।
“কি করতে হবে বল”।
“তুই ডিজি অফিসে কাজ করিসতো, পুলিশের হেল্প চাই”, বিল্টু বললো ।
“কি হেল্প বল”, উত্তরা বললো ।
“আমরা সবাই পেলিং যাবো, মে বি গোটা সিকিম। ওখানকার ডিজির সাপোর্ট চাই, কেন বুঝতে পারছিস”।
“ঠিক আছে কোনো অসুবিধা হবে না, আমি তো বলবোই, অঞ্জন দিল্লিতে হোম সেক্রেটারি কে বলে দেবে”। দূর থেকে অঞ্জন হেসে মাথা নাড়ায় ।
অঞ্জন মিত্র, উত্তরার হাসব্যান্ড ।
ফোন রাখতেই অঞ্জন বললো, “আমি কিন্তু ওদের সাথে থাকবো, আধুনিক ভাওয়াল সন্ন্যাসীর প্রত্যেক মিনিটের ডিটেলস লাগবে, একটা স্কুপ নিউজ। ইনফ্যাক্ট তুমিও ছুটি নাও। অনেক দিন একসাথে বেরোনো হয়নি।”
হেসে সম্মতি দিয়ে রান্না ঘরে গেলো উত্তরা।
আজ চালে ডালে খিচুড়ি বসিয়ে দেবে। পেশায় সাইবার ক্রাইম এক্সপার্ট উত্তরা। বিষয় কে নিয়ে গভীরে ভাবা তার কাজ ।
ভাবতে ভাবতে মনে পড়লো, অফিসে মোস্ট সিক্রেট ফাইল ম্যানেজ করে প্রভাষদা, প্রভাষ সরকার ।
“হ্যালো, প্রভাষদা”
“বোলো সাইবার রানী কি মনে করে”, ওদিক থেকে প্রভাষদা বললো ।
“দাদা সুমন সান্যাল নামে কোনো কেস বা রেকর্ড আছে? ১৯৯১ মতিঝিল ফিজিক্স ব্যাচ”, সোজা কাজের কথায় চলে এলো ।
“দাড়াও দেখে বলতে হবে, আমি কল ব্যাক করছি”।
১৫ মিনিট পর এবার প্রভাষদা কল করলেন ।
“উত্তরা , বাবার নাম গুরু সাধন, পুলিশ ক্লেয়ারেন্স ফর বেলজিয়াম,ব্রিটেন , অস্ট্রেলিয়া ইউএস ইত্যাদি । দুই বার পিএমও সেপেশাল সিকিউরিটি ক্লেয়ারেন্স হয়েছে ১৯৯৬ আর ২০০৩। অন্য ডিটেল লক অনলি সেন্ট্রাল এজেন্সী এক্সেস আছে, আমাদের নেই ,” বললো ।
“পিএমও, সে তো হাই প্রোফাইল সিক্রেট সার্ভিস এ যুক্ত কেউ হলে লাগে, এছাড়া কি লাগে”, উত্তরা জিজ্ঞাসা করলো ।
প্রভাষদা দুমাস পরে রিটায়ার করবেন, কাজের মানুষ তাই এক্সটেনশন পাবেন বলে সকলে জানে । বললেন , “সাধারণত ন্যাশনাল সিকিউরিটি বা ঐ জাতীয় কোনো কাজে কেউ পিএম অফিস রিপোর্ট করার আগে করা হয় । স্টেটাস ওকে দেখাচ্ছে নিশ্চয় গুড ব্যাক গ্রাউন্ড”।
“ঠিক আছে দাদা,পরে কথা হবে”, ফোন ছেড়ে দেয় উত্তরা ।
১৯৯১ কি ১৯৯২ হবে সুমন বললো নাইটে কম্পিউটার সাইন্স পড়ছে, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়ার কোনো একটা পিজি কোর্স , যা গ্রাডুয়েশনের সাথেই করা যায়। ১৯৯৭ এ ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে দেখা কথায় কথায় বলেছিলো এপিজে আব্দুল কালাম ওর কাছে ভগবান। রাজাবাজারের ড. ব্যানার্জী ওর গুরু ছিল ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ার্স এ ইত্যাদি কথা। সেই শেষ দেখা বোধ হয়। না, আর একবার দেখা হলো ২০০৬ এ বেঙ্গালুরু তে সাইবার ক্রাইম ট্রেনিং এ । ওই অফিসে কি যেন একটা কাজে এসেছিলো ও । তাড়া থাকায় সৌজন্য বিনিময় ছাড়া আর কোনো কথা হয়নি । এখন মনে হচ্ছে সেই সময় বোধ হয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে গেছিলো । আজ আর সঠিক মনে নেই ।
আদ্যপ্রান্ত দেশ ভক্ত লোক সুতরাং ক্রাইমের সাথে ও নেই । কিন্তু কি কাজ করতো, উদিত কি জানে?
“হ্যালো, উদিত সুমনের বিষয়ে কিছু জানিস”, উত্তরা উদিত কে ফোন করে ।
“হটাৎ, সুমন কেন, ওর বিষয়ে কোনো নিউজ আছে,” , উদিত প্রশ্ন করে।
“সেটা কাল জানবি, বিল্টু ভিডিও মিটিং ডাকছে” , জবাব দিলো উত্তরা ।
“তুই যা জানিস বল”
“আমার যদ্দুর মনে হচ্ছে , ছাত্র রাজনীতি নেতাদের সাথে গোলমাল করে টেস্টের পর ফাইনালে পাশ পরীক্ষায় ঝুলে গেছিলো ভিতরের কারসাজিতে। ভাগ্যিস সেন্ট্রালের একটা পিজি করছিলো, তাই সুইচ করে যায় ফিজিক্স থেকে কম্পিউটারে। দিল্লি থেকেই পিজি পরে এমবিএ টপার ওর কলেজ । ঢাকা চলে যায় ১৯৯৮। তার আগে সিডিএস এ ১৮ রাঙ্ক করলো রিটেনে, ইন্টার্ভিউতেও টপে, চশমার জন্য মেডিকেল এ আউট হয়ে যায়,(একটু থেমে বলে) সম্ভবত ১৯৯৬ না ১৯৯৭ মনে নেই । আর্মি হলোনা বলে দুঃখে এরপর ঢাকায় চলে যাবার পর আর যোগাযোগ নেই। ২০১০ এ বোধহয় ওর পাড়ার মোড়ে কলেজের সামনে দেখা হয়েছিল জাস্ট দেখা । ” এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বললো উদিত ভাস্কর রায় চৌধুরী । উদিতের মেমরি ও এনালাইসিস তারিফ করার মতো চিরকাল । ফার্মা কোম্পানির বড় সায়েব।
“থ্যাংক ইউ উদিত, তোর মেমরি ছবির মতো । আজও ভুলিসনি, কোনো ডিটেল “, উত্তরা বললো।
“আমরা সিকিম যাচ্ছি ওর খোঁজ পাওয়ার একটা সম্ভবনা আছে,তুই যাবি ,” বললো উত্তরা ।
“দেখি ছুটি ম্যানেজ হলে যাবো”, একটু বিষন্ন মনে উদিত বললো । সুমন আর ওকে মানিক জোড় বলতো কেউ কেউ কলেজ । কিন্তু কি করা যাবে মান্থ এন্ড টার্গেট এখনো পুরো হয়নি, পান্ডেমিক সেরে সবে মার্কেট ফিরছে, এখনই ছুটি পাওয়া যাবে না মনে হয় ।
“আরে খিচুড়ি তো মনে হচ্ছে তান্দুরি হয়ে গেলো,” অঞ্জন চিৎকার করে রান্না ঘর থেকে ।
উত্তরা দৌড়ে গিয়ে দেখে সত্যি তাই ।
অঞ্জন খুব রসিক মানুষ এন্ড এডজাস্ট করার অদ্ভুত ক্ষমতা, সব সময় পাশে পাওয়া যায় ।
“হায়রে কবে আমার কথা ভেবে খিচুড়ি পুড়বে সখী”, কপট মান দেখিয়ে হাসতে থাকে।
“শোনো আজ আর কিছু নয় অর্ডার করে দাও । বাচ্ছারা সব বন্ধুদের বাড়ি আমরা আধ বুড়োরা সেলিব্রেট করি।”, অঞ্জন বললো ।
চান্স পেলেই অর্ডার করে খাবার আনে, কারণ জানে উত্তরাকে অফিসে কি স্ট্রেস নিতে হয়। যত না খাওয়ার লোভে তার থেকে বেশি উত্তরা কে বিশ্রাম দিতে । তবে খিচুড়ি পেলে আর কিছু চাইনা অঞ্জনের ।
বিকালে ডলুবিইউটি অফিস থেকে ড. ব্যানার্জীর নম্বর জোগাড় করে ফোন করলো, “নমস্কার ড. ব্যানার্জী শুভ বিজয়া, উত্তরা মিত্র ডিসি সাইবার ক্রাইম বলছি । একটা ইনফরমেশন লাগবে স্যার। বললো উত্তরা ।
“শুভ বিজয়া, বলুন কি জানতে চান ” বললেন ড. ব্যানার্জী ।
“সুমন সান্যাল কে মনে আছে, আপনার স্টুডেন্ট “, উত্তরা প্রশ্ন করলো ।
“কোন সুমন সান্যাল, ডোয়েক কম্পিউটার সাইন্স না রাজাবাজার কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং । এই দুজনের কথাই মনে আছে, অন্য কারো কথা মনে নেই”, বললেন প্রফেসর এমিরেটাস ড. ব্যানার্জী ।
“কারেক্ট কম্পিউটার সাইন্স, সেই সুমন ১৯৯৪ ব্যাচ”, আসার আলো দেখে উত্তরা ।
“দুঃখিত ভালো স্টুডেন্ট ছিল এর বেশি কিছু মনে নেই, আমার একটা মিটিং আছে আজ রাখছি,”। বলে ফোন ছেড়ে দিলেন ড. ব্যানার্জী ।
উত্তর অবাক হটাৎ যেন ড. ব্যানার্জী বিব্রত হয়ে ফোনে রেখে দিলেন । কিন্তু কেন । ভালো স্টুডেন্ট হলে মাস্টার তো খুশি হয়ে জবাব দেবেন। অথচ সুমনের ওপর বিরক্ত নয়, কিন্তু কথা বাড়াতে চাইছে না ।
দুপুরে চিলি চিকেন আর মিক্সড রাইস দিয়ে খেয়ে , অঞ্জন কে বললো “এইযে আমার প্রাইভেট ড্রাইভার চলুন একবার মানিকতলা যাবো ব্লাড ব্যাংক এর কাছে” ।
“সেকি ব্লাড ব্যাঙ্ক কার রক্ত খাবে,” ইয়ার্কি করে অঞ্জন ।
“তোমার ছাড়া আর কার রক্ত খাবো, ড. ব্যানার্জীর বাড়ি যাবো। বুড়ো কিছু চেপে গেলো মনে হচ্ছে “।
“ওকে চলুন” অঞ্জন উঠে গেলো ড্রেস করতে । সেমীফর্মাল চলবে আজ। নতুন টিশার্ট আর জিন্স ।
ঘন্টা খানেক খুঁজে, পাওয়া গেলো ড. ব্যানার্জী কে প্রায় ১০০ বছরের সাবেক বাড়ি কিন্তু চকচকে ওয়েল মেইনটেন করা ।
বেল বাজাতে , এক বৃদ্ধ চাকর দরজা খুললেন ।
“স্যার আছেন”, উত্তরা বললো ।
এস বলে বুড়ো ভিতরে চললো । নির্ঘাত পুরোনো স্টুডেন্ট ভেবেছে । ভালোই হলো । অঞ্জন ও পিছন পিছন চললো ।
নিচের বনেদী আসবাব ঠাসা বসারঘর হয়ে, স্টাডিতে নিয়ে গেলো বুড়ো চাকর।
“বাবু আপনার স্টুডেন্ট এসেছেন”
প্রকান্ড সেগুন কাঠের সেক্রেটারি টেবিলের ওপ্রান্তে মোটা কাঁচের চশমা পরে সৌম্য কান্তি এক মানুষ বসে ।
“কে তুমি মা, কোন ব্যাচ”, জিজ্ঞাসা করলেন প্রফেসর ।
নমস্কার করে বললো, “আমি উত্তরা মিত্র ডিসি সাইবার ক্রাইম”।
একটু বিরক্তি প্রকাশ করে বললেন “ফোনেই তো বললাম আর কিছু মনে নেই।
চোখ নামিয়ে বইয়ে মুখ দেয় প্রফেসর ।
“সুমন বেঁচে আছে স্যার “, উত্তরা বললো এটাই শেষ অস্ত্র প্রিয় ছাত্রের মৃত্যুর বদলে জীবিত খবর ৮০ উর্দ্ধ প্রফেসর কে নাড়াবেই । ইন্টারোগেশনের এই ট্রেনিং কাজে লাগলো উত্তরার ।
“কি? বেঁচে আছে” , স্পষ্ট খুশি গলায় বৃদ্ধের ।
“হ্যাঁ, আমাদের প্রাথমিক সূত্র তাই বলছে, আপনার সাহায্য প্রয়োজন,” উত্তরা ঠান্ডা গলায় বললো ।
“দেখো মা বলার মতো তথ্য হলে বলবো। না হলে পারবোনা”, প্রাথমিক আবেগ কাটিয়ে উঠেছেন প্রফেসর ।
“সুমন আপনার সাথে কাজ করতো, আপনি ওর কোম্পানির চিফ কনসালটেন্ট ছিলেন ২০১০ পর্যন্ত ।বিষয়টি নিয়ে আমাদের ডিটেলস নেয়া আছে ।বাকিটা আপনি বলুন ১৯৯৫ থেকে ২০১০ ওর সাথে আপনি কোনো না কোনো ভাবে কাজের সূত্রে জড়িত ছিলেন। এবার বলুন”, স্বাভাবিক পুলিশের গলার দৃঢ়তা শোনা গেলো উত্তরার কণ্ঠে ।
অসহায় ভাবে প্রফেসর ইশারায় অঞ্জন কে দেখিয়ে উত্তরার কাছে আইডি চাইলো । উত্তরা তৈরী হয়ে এসেছে । আসার আগে ডিজির ভার্বাল গো অ্যাহেড ও অর্ডার নিয়ে নিয়েছে ইমেলে ।
কপি চোখের সামনে ধরতে, প্রফেসর বললো,”আমি শুধু আপনার সাথে কথা বলবো” ।
উত্তরা ইশারায় অঞ্জন কে বসার ঘরে গিয়ে বসতে বললো ।
“সুমন আমার দেখা সেরা সল্যুশন এক্সপার্ট উইথ ইনস্ট্যান্ট প্রব্লেম সলভিং ক্যাপাসিটি ছিল। তখনও যুক্ত ফ্রন্ট সরকার হয়নি, নারসিম্মা রাও পিএম । ১৯৯৫ ইন্ডিয়া নিউক্লিয়ার টেস্ট প্ল্যান করে । আমি আর কালাম সাহেব যুক্ত । প্রজেক্ট ডিটেলস বলতে পারবোনা অফিসিয়াল এক্ট এ বাধা আছে । সুমন তখন ফাইনাল ইয়ার “এ” লেভেল পড়ছে কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে ডিপার্টমেন্ট অফ ইলেকট্রনিক্স গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়ার আন্ডার এ । তখন এতো ব্যাঙের ছাতার মতো ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হয়নি ।” এই পর্যন্ত বলে একটু জল খেলেন আর ভেবে নিলেন আর কি বলা যায় ।
“১৯৯৬ আমার হাত ভেঙেছিল সিঁড়ি থেকে পরে, কম্পাউন্ড ফ্র্যাকচার, সে দিনই দিল্লি থেকে কল এসেছিলো যেতে হবে । দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন, কি করি। সেই দিন সুমন আমার কাছে এসেছিলো একটা চাকরি লাগবে বলে, বাবার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে কাজ চাই। ছেলেটি ভদ্র আমার প্রিয় ও আস্থাভাজন ছাত্র। আমার গোপন কাজে দেশের অনেক কাজ করেছে, বিনা কোনো লাভের আশায়, শুধু দেশের কাজ বলে । কিছু বললে বলতো ঠাকুরদা আজাদ হিন্দ গড়েছিলেন নেতাজির সাথে আর আমি কয়েক লাইন কোড করতে পারবো না দেশের জন্য ? অসম্ভব ভালো সি আর অ্যাসেম্বলি ল্যাঙ্গুয়েজের কাজ জানতো , সে সময় সেটাই ছিল টপ স্কিল । গোপনে ওর ক্লেয়ারেন্স করে নিয়ে গেলাম। বলেছিলাম মরে গেলেও এ কথা প্রকাশ করা যাবে না কোনোদিন ।
১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ পোখরানের সাফল্যের পিছনে শুধু ডিআরডিও বা আর্মি নয় অনেক অজানা সেপাই রক্ত দিয়েছে। ও সেরকমই একজন যে এনক্রিপশনের কাজ দেখতো । বাকি ডিটেল বলা যাবে না। এমনকি কালাম স্যার এই সব ছেলেদের নিয়ে অ্যাডভান্স টীম করতে প্রপোসাল দিয়েছিলো। এতটাই ইম্প্রেসেড হয়েছিলেন সুমন , স্বামীনাতন আর চতুর্বেদী বলে একটি ছেলের কাজে। কিন্তু পোস্ট পোখরান সরকারি লালফিতে আর মার্কিন স্যাংশন সব ভেস্তে দিলো। সেই সময় আমি আমার এক বন্ধুকে বলে , ওকে ঢাকাতে প্রথম ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রজেক্টে একাডেমিক হেড করে পাঠিয়ে দিলাম , শেখ হাসিনা সেবার প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলেন । ড. জামুনুল রেজা সাহেব ওভার অল আইটি প্ল্যানের দায়িত্বে । ” আবার একটু জল খেলেন প্রফেসর ।
“১৯৯৮-২০০০ ও ঢাকাতেই ছিল আর তুমুল জনপ্রিয় টিচার ও মানুষ হিসাবে সবাই মাথায় করে নিলো । যেদিন ঢাকা থেকে ফেরে, সেদিন ঢাকা এয়ারপোর্টে কম করে ৫০০-১০০০ ছাত্র অভিবাবক বিদায় দিতে এসেছিলো । ভিডিও কল করে আমার সাথে ওর ছাত্রদের পরিচয় করিয়ে দিতো । আমাকে ওর গুরু বলে পরিচয় দিতো । সায়েম, অভিজিৎ, ফারহানা, অংশুমান ,উদয়,কাউসার ,কনক,মেহেরুন আরো কত নাম। হি কেপ্ট মাই নেম হাই দেয়ার এস মাই স্টুডেন্ট। ওর সবাই কে নিয়ে চলার ক্ষমতা বাংলাদেশ কে অবাক করেছিল । ছাত্রলীগ আর ছাত্রদল বন্দুক নিয়ে ক্যাম্পাসে লড়লেও, সুমন স্যার এর এক কথায় মারপিট বন্ধ । এমনি ছিল ওর আবেদন। “
“এরপর কালাম স্যার প্রেসিডেন্ট হলে ২০০৩ এ ওকে নিয়ে একবার দেখা করেতে গেছিলাম । উই হ্যাড ডিনার উইথ প্রেসিডেন্ট ব্যাট এ সিক্রেট মিট নো রেকর্ড ইন বুকস। কিছু অসাধারণ প্ল্যান বলে ছিল, তখন, যা আজ টেরর প্রতিরক্ষায় অনবদ্য কাজ দিচ্ছে। আমেরিকার ভিসা হয়ে গেছে বললো স্যার বাবার পয়সা ছিলোনা তাই আর পড়তে যেতে পারিনি, এবার আমেরিকা গিয়ে কিছু অ্যাডভান্স কোর্স করে নেবো। কিছু লেখা পড়া করা দরকার । কালাম স্যার অনুমতি দিয়েছিলেন জানতেন ,ছোকরা এক্সেলেন্স কে পিছে ভাগতা হায় । আজ মনে হয় আমেরিকা না গেলেই ভালো ছিল ।” , আবার একটু থেমে গেলেন বৃদ্ধ ।
“কেন এ কথা বলছেন ।” , উত্তরা প্রশ্ন করলো ।
“নিয়তি মা আজ ভাবি, কেন সেদিন ওকে বলেছিলাম, প্রাচীন পুঁথির ব্রম্হাস্ত্র, বরুণাস্ত্র পশুপাত ইত্যাদি দিব্যস্ত্রর এপ্লিকেশন নিয়ে একটা পুঁথি ছিল বিক্রমশীলায় , যা শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর বহিঃশত্রুর হাত থেকে বাঁচিয়ে তিব্বত নিয়ে যান । পরে আর খোঁজ পাওয়া যায়নি । আমেরিকা আর ব্রিটেন সোভিয়েত ইউনিয়নের থেকে বাঁচতে মানহাটেন প্রজেক্টের মতো এক গোপন প্রজেক্ট এ হাত দেয় । মিত্রোখিনের কেজিবি ফাইল লিক হওয়ার পর, অনেক কথাই জানা যায় ।
ইজরায়েল, চীন,উত্তর কোরিয়া সহ অনেকেই সেই পুঁথি খুঁজছে , যে পাবে অন্যদের থেকে কয়েক যোজন এগিয়ে যাবে। ২০০৪ এরপর সরকারের কাজে কেমন শিথিলতা এলো যেন। অ্যাডভান্স কাজ গুলোর ফান্ড সাবসিডিতে খরচ হতে লাগলো।”
“সুমন কি করলো “, উত্তরা বুড়ো কে অতীতের গল্প ট্র্যাক এর বাইরে যাতে না যায়, তাই প্রশ্ন করলো ।
“সুমন ল্যাবরেটরি ইনফরমেশন এক্সপার্ট হয়ে সারা পৃথিবী ঘুরতে লাগলো আর কাজই হলো একেকটা রিসার্চ ল্যাবের অটোমেশন করা আর তাদের ডিজিটাল লাইব্রেরি থেকে পুঁথির কপি পড়া। লন্ডন থেকে একদিন বললো স্যার সুশ্রুতের অরিজিনাল প্লাস্টিক সার্জারি পুঁথি মনে হচ্ছে ব্রিটিশ নিয়ে গেছে। এইভাবে পাগলের মতো ৭ বছরে উন্নত বিশ্বের প্রায় সব প্রথম সারির ল্যাবে ওর বন্ধু তৈরী হয়ে গেলো ।টিবেটিয়ান , জার্মান, ইতালিয়ান ও সংস্কৃত শিখে নিলো, শুধু রেফারেন্স খুঁজে বের করবে বলে বলে।
জার্মান আর ইটালিয়ান শেখার কারণ, নাজী জার্মানি আর মুসলনির ইতালিতে সে সময় অনেক গোপন কাজ হয়েছিলো, যদি কিছু পাওয়া যায়। ২০১২ পরে ও বেপাত্তা। ২০১৬ তে এসে বললো ছত্তীসগরে ওয়াইল্ডলাইফ ও আদিবাসী নিয়ে কাজ করছে । ওয়াইল্ড লাইফ ফোটোগ্রাফিতে ক্যানন ন্যাশনাল জিওগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড পেলো।। ২০০৬ -২০১২ সরকার কোনো কথাই শুনলো না। মনের দুঃখে দেশ গড়তে গরিবদের পড়াতে লাগলো আদিবাসী অঞ্চলে মাওবাদী অঞ্চলের শিশুদের।
এদিকে সেই ২০০৬ থেকেই বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামিজীর ভক্ত, একটা স্পিরিচুয়াল শিফট এলো । বিশেষ করে দুই মেয়ে আসার পর। বিজ্ঞানের সাথেই শুরু হলো আগমতন্ত্রের পড়াশুনা, তিব্বতি বজ্রযান বৌদ্ধদের নিয়ে কাজ শুরু করলো। শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্করের ওপর রিসার্চ করছিলো। নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী সহ আরো অনেকের সাথে যোগাযোগ করতো ।
আমেরিকার ভিসা ছেড়ে দিয়ে ,একটা নিউস চ্যানেল খুলে বসলো, কোনো লোক ছাড়া অটোমেশন আর নিজের নেটওর্ক কে কাজে লাগিয়ে । বলতো আমি ড. অসীম ব্যানার্জীর চেলা কোনো কিছুই পরোয়া করিনা স্যার।
অচিরেই ফল পেলো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এলো বস্তা ভরে, সাথে এলো শত্রু। পয়সা খেয়ে মিথ্যা কথা সে লিখবে না , রাজনৈতিক পা চাটা কাজ করবে না। সমাজপতিদের দল কেন মানবে? ওই ২০১৬ তেই শেষ দেখা ।
বললো স্যার একটা গোপন বিষয়ের খোঁজে যাচ্ছি । যদি বেঁচে ফিরি দেশের ইতিহাস বদলে যাবে। আশীর্বাদ করুন ।”।
“হি নেভার লেট্ ডাউন হিস্ মদারল্যান্ড এন্ড টিচার্স । গড ব্লেস ওর আকসিডেন্টের খবরটা আমি বিশ্বাস করিনি। এভাবে একটা জ্বলন্ত অঙ্গার শেষ হতে পারেনা এতো সহজে ।”, বলে বৃদ্ধ চোখ মুছলেন ।
“কাঁদবেন না স্যার , মনে হচ্ছে ওকে খুঁজে পাওয়া যাবে”। উত্তরা বললো ।
“রিমেম্বার ওয়ান থিং হি ইজ ডাইহার্ড ফ্যান অফ সুভাষ চন্দ্র বোস, দিস কুড বি হিস্ প্ল্যান লাইক বোস টু । এক্সিডেন্ট এন্ড ফলস ডেথ ক্লেম । কীপ ইউর আই ওন চাইনিজ এঞ্জেল টু, বলে, ইঙ্গিত পূর্ণ হাসি হাসলেন প্রফেসর ।”
“হাত জোর করে বললেন, আজ আর নয় আমি ডাক্তার দেখাতে যাবো”।
উত্তরা বললো, “নমস্কার”।
গাড়িতে উঠে অঞ্জন বললো,”কি বুঝলে”।
উত্তরা গম্ভীর ভাবে বললো, “গুমনামী বাবা থেকে গুমনামী চেলা হয়ে যাচ্ছে কেসটা” ।
“প্রভাষ দা কোনো মেসেজ দিলো দিল্লি”, উত্তরা জিজ্ঞাসা করে ফোন এ ।
“ম্যাটার ইস হইলি ক্লাসিফাইড নট ফর এক্সেস লিখেছেন নর্থ ব্লক”, ওপাশ থেকে উত্তর আসে ।
“যাক বাঁচা গেলো, তার মানে দেশের নিরাপত্তার সাথে যুক্ত কোনো বিষয়, নট এগেইনস্ট দা স্টেট”, বন্ধু হলেও আগে সুনিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন ও দেশের বিরুদ্ধে নয়তো ।
একটা ছবি পরিষ্কার হচ্ছে ধীরে ধীরে ২০১৭ এর শেষে এক্সিডেন্ট বা নকল এক্সিডেন্ট তার আগে পর্যন্ত একটা প্যাটার্ন পাওয়া গেলো ।
কাল কল এ সবাইকে বিশেষ করে পম কে বলতে হবে ও মেশিন লার্নিং আর এআই এক্সপার্ট , যদি ডাটা মডেল কিছু করতে পারে । হাডুপ , বিগ ডাটা সব জলের মতো ওর কাছে । ডাটা মাইনিং করে কিছুনা কিছু রিলেটেড ডাটা পাওয়া যাবে ।
গাড়ি ছুটছে কলকাতার বাইপাস হয়ে ট্যাংরা। আজ রাতেও অঞ্জন চাইনিজ প্যাক করবে মনে হচ্ছে ।
গাড়ির এফএম গান শুরু হলো “গুমনাম হয় কোই”। চোখ বন্ধ করে গান শুনতে থাকে উত্তরা ।
*** কাল্পনিক গল্প বাস্তবের চরিত্র ***