শতরূপা তোমাকে কিছু বলার ছিল সুমনের (একাদশ ভাগ) – রিনচেনের কর্ণপিশাচী দেবীর সাধনা ও অজানা শত্রু
সুমন মুন্সী,কলকাতা
(আগে যা হয়েছে জানতে ক্লিক করুন প্রথম ভাগ , দ্বিতীয় ভাগ, তৃতীয় ভাগ, চতুর্থ ভাগ,পঞ্চম ভাগ,ষষ্ঠ ভাগ, সপ্তম ভাগ, অষ্টম ভাগ, নবম ভাগ, দশম ভাগ , একাদশ ভাগ, দ্বাদশ ভাগ)
এদিকে সুদূর লন্ডন শহরে এক পাব হ্যামিলটন ওইন্স,ব্রেন্টফোর্ট এর গ্ল্যাক্সও ফার্মার অফিসের পাশের রাস্তা ধরে গেলে ব্রিটিশ রেল এর ব্রেন্টফোর্ড স্টেশন পরে হান্সলো শহরের লুপ লাইনে ওপর। সেই রাস্তায়েই এই পাব। ছিমছাম কিন্তু নিরালা আর ব্রিটিশ রেল ধরে ইউকের যে কোনো জায়গায় পৌঁছনো যায় ভিক্টোরিয়া টার্মিনাস হয়ে। মুম্বাইয়ের ভিটির মতো মাইন্ স্টেশন লন্ডনের।
দুই চাইনিজ ও এক টাক মাথা ইন্ডিয়ানকে নিয়ে বসেছে। মিস্টার অরিজিৎ ধর, এক সময় লজিস্টিকস নিয়ে এক এমএনসি তে মিডল মানাজেমেন্টে কাজ করতো। চিনে কাজ করার সময় কমিউনিস্ট পার্টি তাকে কমুনিস্ট ভাব ধারায় প্রভাবিত করে এবং আজ সে একজন চীনের এজেন্ট। এক সময় কেসিসি সিমেন্টের অফিসে সুমনের নিচে ক্লার্ক ছিল। ধুরন্ধর কুটিল বুদ্ধির মানুষ এবং কোন দেবতা কি ফুলে তুষ্ট ভালো জানতো। তাই বেশির ভাগ সময় অফিস হতো গঙ্গার ধরে রায়চকে বড় কর্তাদের নিয়ে। ধর কে চোখে হারাত ম্যানেজমেন্টের কর্তারা ।
আজ সে একজন ট্রেন্ড ইন্টেলিজেন্স এজেন্ট অফ ফরেন ল্যান্ডস। কিন্তু ডাবল এজেন্ট বলে কোনো দেশই চোখ বুঝে ভরসা করতে পারে না। স্ত্রী মেয়ে দেশেই থাকে তবে সব দেশেই তাঁর সংসার পাতা। পরকীয়া আর উশৃঙ্খল জীবনের এক নেশায় সে মগ্ন। টাকার জন্য নিজের স্ত্রীকেও অন্যের ঘরে পাঠিয়েছে বহুবার এমনই কথা শোনা যায় । এসবই অনেক পরে জেনেছিল সুমন।
আর এই লোকের থেকেই সুমন সান্যালের বিপদ হলো। সালটা ২০১৭ কলকাতায় এলো অরিজিৎ বহুবছর বাদে দেখা দুজনের, এয়ারপোর্ট বিরাটি যশোর রোডের ধরে শেরে পাঞ্জাব হোটেলে নিতান্তই সামাজিক সাক্ষাৎকার। কিন্তু পিছনের ছবিটা অন্য সাজানো ছিল।
বোকার মতো পুরোনো বন্ধুকে সে এখন কি করছে বলেছিলো ফোনে। কম্পিউটার ফরেন্সিক নিয়ে কিছু সরকারি প্রজেক্টে কাজ করছে বলে ফেলেছিলো ফোনে।সুমন বুঝতেও পারেনি সে একজন এজেন্টের সাথে কথা বলছে । চীনের বেড়ানোর ছবি দিয়েছিলো মোবাইলে, কিছু ভিডিও সেই সাথেই ছিল স্পাই সফটওয়্যার। একটা অসাধারণ পার্কার গোল্ড পেন গিফট করে সুমন কে। পেনের ভিতর জিপিএস সেন্সর লাগান ছিল আর সেটাই ওর মুভমেন্ট ট্র্যাক করতো ।
এই ভাবেই নর্থ বেঙ্গল আর সিকিম ট্যুর প্ল্যান কপ্রমিসেড হয়, এবং ওদের জীপের চাকার নাট ঢিলে করে দেয়া হয়। সেই থেকেই এক্সিডেন্ট আর সুমন নিখোঁজ। জীপটা তিস্তায় পরে খানিকটা ভেসে যাওয়াতে বিপত্তি হয়। না হলে শুধু রাস্তার ধরে এক্সিডেন্ট হলে মিস্টার ধর আর ম্যাক সেই ডকুমেন্টস গুলো হাতে পেয়ে যেতো। পুরো ২০০ মিলিয়ন ইউএসডি, ১০ মিলিয়ন টীম কে দিয়ে বাকি ১৯০ মিলিয়ন নিজের কাছে থাকতো। ড্রাইভার আর দুটো সাধারণ যাত্রী কে পাওয়া গেলো কিন্তু সুমনের আর ওর জিনিসের কোনো খোঁজ নেই শুধু প্রেস আইডি আর মানিব্যাগ ৯০০০ টাকা, ড্রাইভিং লাইসেন্স আর কিছু ভিসিটিং কার্ড ছিল।

আজ লী বললো,”ইউর টাইম ইজ রানিং আউট, মিস্টার ধর। উই নিড রেজাল্ট। ২ মিলিয়ন ডলার ইউ হ্যাভ জাস্ট ডাইজেস্টেড এন্ড দা মানুস্ক্রিপ্ট ইজ ষ্টীল নট ইন আওয়ার হ্যান্ড। ইওর ফ্রেন্ড মে বি ওয়েটিং ফর ইউ ইন ড্যা হ্যাভেন।”
অরিজিতের চোয়াল শক্ত হলো, পাইপে তামাক ঠুসে নিয়ে জিপ্পোর লাইটার দিয়ে ধরাতে ধরাতে এক মিনিট ভেবে নিলো কি বলবে।
চ্যাং অবজ্ঞায় মাথা নাড়লো । এই দুই জনকেই দেখা গিয়েছিলো চন্দ্রার রেস্তোরাঁতে।
“গিভ মি টু উইক এন্ড ডিস্ ইজ ফাইনাল, মাই বয়েজ আর ভেরি ক্লোজ স্যার”, বললো ধর ।
“এন্ড ইউ আর ভেরি ক্লোজ টু লিলি, দা নিউ বার্ড। স্টপ ফাকিং এন্ড গেট টি রেজাল্ট”, রাগাত ভাবে বিল দিয়ে লী আর চ্যাং বেরিয়ে গেলো ।
ভাবতে বসলো ধর, আর একটা সিঙ্গেল মল্ট গিলেফেন্ডিস লার্জ নিয়ে বসলো সাথে সসেজ রোস্টেড। কি করা যায় মাল দুটোকে ঠান্ডা না করতে পারলে সুমনের মতো তার গাড়িও হাইওয়ে তে উল্টে যাবে ।
“কোথায় এখন সেই লামাটা খুঁজে বের করো ম্যাক”, ফোনে এক এংলো ইন্ডিয়ানকে নির্দেশ দিলো অরিজিৎ । ওপাশ থেকে কিছু কথা এলো তার পর “ওকে”, বলে ফোন রেখে দিলো অরিজিৎ। দিন দিন ম্যাকের খাই বেড়ে যাচ্ছে । আবার টাকা চাইলো এই নিয়ে ৫০হাজার এই মাসে ।
(২)
কুলুর এই হোটেলের ঘরে বসে বিপাশার রূপ কোজাগরী রাতে যেন অন্য এক মায়াবী জগৎ। গত দুই দিন ধ্যানে বসা হয়নি, এই একটা কাজ না করলে রিনচেনর মন বিচলিত লাগে, এই এক ঘন্টা সময় সে গুরু প্রাপ্ত বিশেষ কিছু বিদ্যাকে প্রতিনিয়ত পরিচর্চ্চা করে আরো সমৃদ্ধ করেছেন।
তিব্বতি তন্ত্রের বিষয়ে ধর্মশালার কয়েকজন ছাড়া সেই একমাত্র জীবিত যে বৃহৎ তন্ত্রসারের ৬৪ তন্ত্র ছাড়াও শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্করের সকল, পাণ্ডুলিপি সহ সেই শেষ পাণ্ডুলিপির মর্ম উদ্ধারে সক্ষম।
কে ছিলেন এই অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান? রিনচেনের লাইব্রেরি, বাংলাপিডিয়া ও উইকিপেডিয়া থেকে যে সব তথ্য জোগাড় করেছেন, তা চমকে দেবার মতো । কেন রিনচেনের মতো জ্ঞানী লামা এই শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্করকে নিয়ে মেতে উঠেছে তা বুঝতে হলে শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর সম্পর্কে কিছু কথা জানা প্রয়োজন, উপমহাদেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি ও ইতিহাস বিকৃত করে বিদেশী প্রভুদের শেখানো বুলি আউড়ে আজ উপমহাদেশ তাঁর গরিমা হারাচ্ছে ।
অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান (৯৮০-১০৫৩) বৌদ্ধ পন্ডিত, ধর্মগুরু ও দার্শনিক। দশম-একাদশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি পন্ডিত দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী গ্রামে এক রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা কল্যাণশ্রী এবং মাতা প্রভাবতী দেবী। তাঁর বাল্যনাম ছিল চন্দ্রগর্ভ। মায়ের নিকট এবং স্থানীয় বজ্রাসন বিহারে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি বিখ্যাত বৌদ্ধ গুরু জেতারির নিকট বৌদ্ধধর্ম ও শাস্ত্রে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। এ সময় তিনি সংসারের প্রতি বিরাগবশত গার্হস্থ্যজীবন ত্যাগ করে ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের সঙ্কল্প করেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি পশ্চিম ভারতের কৃষ্ণগিরি বিহারে গিয়ে রাহুল গুপ্তের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন এবং বৌদ্ধশাস্ত্রের আধ্যাত্মিক গুহ্যবিদ্যায় শিক্ষালাভ করে ‘গুহ্যজ্ঞানবজ্র’ উপাধিতে ভূষিত হন। মগধের ওদন্তপুরী বিহারে মহাসাংঘিক আচার্য শীলরক্ষিতের নিকট দীক্ষা গ্রহণের পর তাঁর নতুন নামকরণ হয় ‘দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান’। একত্রিশ বছর বয়সে তিনি আচার্য ধর্মরক্ষিত কর্তৃক সর্বশ্রেষ্ঠ ভিক্ষুদের শ্রেণিভুক্ত হন। পরে দীপঙ্কর মগধের তৎকালীন শ্রেষ্ঠ আচার্যদের নিকট কিছুকাল শিক্ষালাভ করে শূন্য থেকে জগতের উৎপত্তি এ তত্ত্ব (শূন্যবাদ) প্রচার করেন।

১০১১ খ্রিস্টাব্দে শতাধিক শিষ্যসহ দীপঙ্কর মালয়দেশের সুবর্ণদ্বীপে গিয়ে আচার্য চন্দ্রকীর্তির নিকট ১২ বছর বৌদ্ধশাস্ত্রের যাবতীয় বিষয় অধ্যয়ন করেন এবং ৪৩ বছর বয়সে মগধে ফিরে আসেন। মগধের তখনকার প্রধান প্রধান পন্ডিতদের সঙ্গে তাঁর বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় ও বিতর্ক হয়। বিতর্কে তাঁর বাগ্মিতা, যুক্তি ও পান্ডিত্যের কাছে তাঁরা পরাজিত হন। এভাবে ক্রমশ তিনি একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী পন্ডিতের স্বীকৃতি লাভ করেন। এ সময় পালরাজ প্রথম মহীপাল সসম্মানে তাঁকে বিক্রমশিলা (ভাগলপুর, বিহার) মহাবিহারের আচার্যপদে নিযুক্ত করেন। বিক্রমশিলাসহ ওদন্তপুরী ও সোমপুর বিহারে দীপঙ্কর ১৫ বছর অধ্যাপক ও আচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। সোমপুর বিহারে অবস্থানকালেই তিনি মধ্যমকরত্নপ্রদীপ গ্রন্থের অনুবাদ করেন বলে কথিত হয়।এ সময় মহীপালের পুত্র নয়পালের সঙ্গে কলচুরীরাজ লক্ষমীকর্ণের যে যুদ্ধ হয়, দীপঙ্করের মধ্যস্থতায় তার অবসান ঘটে এবং দুই রাষ্ট্রের মধ্যে শান্তি স্থাপিত হয়। শরদিন্দু বন্দোপাধ্যের “তুমি সন্ধ্যার মেঘ” উপন্যাসে সুন্দর ঐতিহাসিক পটভূমিকায় একথা লেখা আছে।
এ সময় তিববতের বৌদ্ধ রাজা লাঃ লামা ইয়োসি হোড্ (লাহ্লামা-যে-শেস্) তিববতে বৌদ্ধধর্মের উন্নতি কামনায় দীপঙ্করকে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্বর্ণোপহার ও পত্রসহ বিক্রমশীলায় দূত প্রেরণ করেন। দূত জানান যে, দীপঙ্কর তিববতে গেলে তাঁকে সর্বোচ্চ সম্মান জানানো হবে। কিন্তু নির্লোভ নিরহঙ্কার দীপঙ্কর এ আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন।
রাজা লাঃ লামার মৃত্যুর পর তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র চ্যাং চুব (চ্যান-চাব) জ্ঞানপ্রভ তিববতের রাজা হন এবং তাঁর একান্ত অনুরোধে ১০৪০ খ্রিস্টাব্দে কয়েকজন বিশিষ্ট পন্ডিতসহ দীপঙ্কর মিত্র বিহারের পথে তিববত যাত্রা করেন। মিত্র বিহারের অধ্যক্ষ ও অধ্যাপকগণ এ দলকে অভ্যর্থনা জানান; পথেও বহু স্থানে তাঁরা অভ্যর্থিত হন। নেপালের রাজা অনন্তকীর্তি দীপঙ্করকে বিশেষভাবে সংবর্ধিত করেন। তিনি সেখানে ‘খান-বিহার’ নামে একটি বিহার স্থাপন করেন এবং নেপালের রাজপুত্র পদ্মপ্রভকে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত করেন।

তিববতরাজ চ্যাং চুব দীপঙ্করের শুভাগমন উপলক্ষে এক রাজকীয় সংবর্ধনার আয়োজন করেন, যার দৃশ্য সেখানকার একটি মঠের প্রাচীরে আজও অাঁকা আছে। সংবর্ধনা উপলক্ষে শুধু দীপঙ্করের উদ্দেশেই ‘রাগদুন’ নামক এক বিশেষ ধরনের বাদ্যযন্ত্র নির্মিত হয়েছিল। এ সময় রাজা চ্যাং চুব প্রজাদের উদ্দেশে ঘোষণা করেন যে, দীপঙ্করকে তিববতের মহাচার্য ও ধর্মগুরু হিসেবে মান্য করা হবে; বাস্তবে দীপঙ্কর এ সম্মান পেয়েছেনও।
তিববতে থো-লিং বিহার ছিল দীপঙ্করের মূল কর্মকেন্দ্র। এ বিহারে তিনি দেবতার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। এখান থেকেই তিনি তিববতের সর্বত্র ঘুরে ঘুরে বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেন। তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় তিববতে বৌদ্ধধর্মের ব্যভিচার দূর হয় এবং বিশুদ্ধ বৌদ্ধধর্মাচার প্রতিষ্ঠিত হয়। তিববতে তিনি মহাযানীয় প্রথায় বৌদ্ধধর্মের সংস্কার সাধন করেন এবং বৌদ্ধ ক-দম্ (গে-লুক) সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেন। তিববতবাসীরা তাঁকে বুদ্ধের পরেই শ্রেষ্ঠ গুরু হিসেবে সম্মান ও পূজা করে এবং মহাপ্রভু (জোবো ছেনপো) হিসেবে মান্য করে। তিববতের রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় ক্ষমতার অধিকারী লামারা নিজেদের দীপঙ্করের শিষ্য এবং উত্তরাধিকারী বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। তিববতের ধর্ম ও সংস্কৃতিতে দীপঙ্করের প্রভাব অদ্যাপি বিদ্যমান। তিববতে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে তিনি তিববতের একটি নদীতে বাঁধ দিয়ে বন্যা প্রতিরোধের মাধ্যমে জনহিতকর কাজেও অংশগ্রহণ করেন।
দীপঙ্কর তিববতের ধর্ম, রাজনীতি, জীবনীগ্রন্থ, স্তোত্রনামাসহ ত্যঞ্জুর নামে এক বিশাল শাস্ত্রগ্রন্থ সঙ্কলন করে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন। তাই অতীত তিববতের যেকোনো বিষয়ের আলোচনা দীপঙ্করকে ছাড়া সম্ভব নয়। তিনি দুই শতাধিক গ্রন্থ রচনা, অনুবাদ ও সম্পাদনা করেন। এসব গ্রন্থ তিববতে ধর্ম প্রচারে সহায়ক হয়েছিল। তিববতে তিনি অনেক সংস্কৃত পুথি আবিষ্কার করেন এবং নিজহাতে সেগুলির প্রতিলিপি তৈরি করে বঙ্গদেশে পাঠান। অনেক সংস্কৃত গ্রন্থ তিনি ভোট (তিববতি) ভাষায় অনুবাদও করেন। তিববতি ভাষায় তিনি বৌদ্ধশাস্ত্র, চিকিৎসাবিদ্যা এবং কারিগরি বিদ্যা সম্পর্কে অনেক গ্রন্থ রচনা করেন বলে তিববতিরা তাঁকে ‘অতীশ’ উপাধিতে ভূষিত করে।
তাঁর মূল সংস্কৃত ও বাংলা রচনার প্রায় সবগুলিই কালক্রমে বিলুপ্ত হয়েছে, কিন্তু তিববতি ভাষায় সেগুলির অনুবাদ সংরক্ষিত আছে। তিববতি মহাগ্রন্থ ত্যঞ্জুরে তাঁর ৭৯টি গ্রন্থের তিববতি অনুবাদ সংরক্ষিত আছে। তাঁর রচিত প্রধান কয়েকটি গ্রন্থ হলো: বোধিপথপ্রদীপ, চর্যাসংগ্রহপ্রদীপ, সত্যদ্বয়াবতার, বোধিসত্ত্বমান্যাবলি, মধ্যমকরত্নপ্রদীপ, মহাযানপথসাধনসংগ্রহ, শিক্ষাসমুচ্চয় অভিসাম্য, প্রজ্ঞাপারমিতাপিন্ডার্থপ্রদীপ, একবীরসাধন, বিমলরত্নলেখ প্রভৃতি। বিমলরত্নলেখ মূলত মগধরাজ নয়পালের উদ্দেশে লেখা দীপঙ্করের একটি সংস্কৃত চিঠি। চর্যাসংগ্রহপ্রদীপ নামক গ্রন্থে দীপঙ্কর রচিত অনেকগুলি সংকীর্তনের পদ পাওয়া যায়।
কানাইলাল রায় মহাশয়ের লেখায় জানা যায় সুদীর্ঘ ১৩ বছর তিববতে অবস্থানের পর দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান ৭৩ বছর বয়সে তিববতের লাসা নগরের নিকটস্থ লেথান পল্লীতে ১০৫৩ খ্রিস্টাব্দে দেহত্যাগ করেন। তাঁর সমাধিস্থল লেথান তিববতিদের তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ১৯৭৮ সালের ২৮ জুন দীপঙ্করের পবিত্র চিতাভস্ম চীন থেকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ঢাকায় আনা হয় এবং তা বর্তমানে ঢাকার ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহারে সংরক্ষিত আছে।
শোনা যায় এইসব সংকৃত পুঁথির ভিতরেই ছিল লিবো জাগানোর সেই মহাবিদ্যা। “লিবো” যে রাষ্ট্রের হাতে যাবে সেই পেয়ে যাবে ব্রহ্মাস্ত্রের ক্ষমতা আর তাই সব দেশ এই “লিবো” খুঁজে বেড়াচ্ছে। আর সেই লিবো কোথায় আছে ,কি কি করতে পারে সব ওই অর্ধেক পুঁথিতে আছে। কিন্তু কিছু এমন তথ্য বাকি অর্ধেকে আছে, যে সেটা ছাড়া, যে অর্ধেক আছে তার কোনো মূল্যই থাকছে না ।
শত্রু দেশের হাতে লিবো যাতে না যায় তাই ভারত আর তিব্বতী লামারা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। এই রকম কোনো দিব্য অস্ত্রের কথাই শরদিন্দুর “তুমি সন্ধ্যার মেঘ” উপন্যাসে বলেছেন এবং শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর তিব্বত এই অস্ত্রবিদ্যার খোঁজে যান বলে গল্পে বলেছেন, তিনি উপন্যাসে তাকে “অগ্নিকন্দক” নাম দিয়েছিলেন।
এই সব তথ্যই রিনচেনের দেশ বিদেশে প্রাচীন পুঁথি বিচার লব্ধ নির্যাস। পুরোনো দিনের কথা ভেবে রিনচেনের মন যেন আজ বেশি বিচলিত হয়ে উঠেছে । ডাইরী লেখা বন্ধ করে রিনচেন আজ বিশেষ তন্ত্র সাধনা শুরু করলেন ।কর্ণপিশাচী সাধনা এক কঠিন তন্ত্রের পথ।
মহাজ্ঞানী শিবশঙ্কর ভারতী তাঁর লেখায় বিশদে বলেছেন কি কেন কিভাবে এই সাধনা হয় । সংক্ষেপে তার লেখা যা পড়েছিলো রিনচেন,তাই আজ তুলে ধরলো এখানে ; কর্ণপিশাচী সাধনা কি? এ সাধনায় সিদ্ধিলাভ করলে সাধক কি ফল পেয়ে থাকেন, আসা যাক সেই প্রসঙ্গে।মহাজ্ঞানী শিবশঙ্কর ভারতী প্রামাণ্য লেখার অংশ বিশেষ কি বলছে এই বিষয়ে দেখা যাক ।
কর্ণপিশাচীর আকার কেমন? তন্ত্রশাস্ত্রে দেবীর বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘দেবীর দেহ কৃষ্ণবর্ণ, লোচনত্রয় রক্তাভ, আকার খর্ব্ব, উদর বৃহৎ এবং জিহ্বা বন্ধুকপুষ্পের ন্যায় অরুণবর্ণ। দেবীর চারি হস্ত, এক হস্তে বরমুদ্রা, দ্বিতীয় হস্তে অভয়মুদ্রা এবং অপর হস্তদ্বয়ে দুইটি নরকপাল আছে। শরীর হইতে ধুম্রবর্ণ জ্বালা বহির্গত হইতেছে। ইনি উর্দ্ধবদনা, জটাভারমন্ডিতা ও চঞ্চলপ্রকৃতি। কর্ণপিশাচীদেবী সর্ব্ববিষয়ে অভিজ্ঞা ও শবহৃদয়ে বাস করিতেছেন। এইরূপ আকৃতি বিশিষ্ট দেবীকে নমস্কার করি’।
কর্ণপিশাচীদেবীর সাধনায় সিদ্ধিলাভ হলে সাধক যখন মনে মনে কোনও প্রশ্ন করে, তৎক্ষণাৎ দেবী সাক্ষাৎ এসে প্রশ্নের সঠিক ও যথার্থ উত্তর দিয়ে থাকেন। দেবীসাধনায় সিদ্ধসাধক তাঁর পিঠে আরোহণ করে দর্শন করতে পারে ভূত ভবিষ্যৎ বিষয় সকল, বর্তমানও। এই দেবীর সাধনায় সিদ্ধিলাভ করে অচিরকালে সর্বজ্ঞতা লাভ করেছিলেন মহামতি বিশালবুদ্ধি লক্ষশ্লোক মহাভারত রচয়িতা বেদব্যাস।

গুপ্তযুগের কর্তৃপুর-ই আজকের কাংড়া অঞ্চল। হিমাচল প্রদেশের এই অঞ্চলে আছে জ্বালামুখী, চিন্তাপুর্ণী ও নয়নাদেবী প্রভৃতি সাতটি দেবীস্থান। তার মধ্যে অন্যতম জ্বালামুখীতে পড়েছিল সতীর দেহাংশ জিহ্বা। দেবীর ভৈরব এখানে উন্মত্ত ভৈরব নামে স্থিত আছেন, মতান্তরে অম্বিকেশ্বর মহাদেব।
এই বিষয় আরো বিশদ জানতে পড়তে হবে মহাপন্ডিত শিবশঙ্কর ভারতীর লেখা ।
আজ রিনচেন কর্ণপিশাচীদেবীর আহ্বান করবে বলে স্থির করলেন । কিছু সময় পর চিত্ত যখন প্রশান্ত হয়ে এলো ধীরে ধীরে সে অনুভব করল, সে ছাড়াও আরো একজন সেই ঘরে রয়েছে যে দেহী নয় বিদেহী ।
যথা পূর্বক ভক্তি ভাবে সে কিছু কথা জানতে চাইলো দেবীর কাছে। গুপ্ত কথা দেবী রিনচেনের কানে কানে জানিয়ে দিলেন এবং বিদায় নিলেন ।
রিনচেন নিজের প্রয়োজনে এই শক্তি কখনো ব্যবহার করেনি। আজ দেশের সংকট কালে নিজের শক্তি ক্ষয় নিশ্চিত জেনেও এই বিদ্যার প্রয়োগ করতে হয়েছে তাঁকে।
অতি প্রাকৃত ক্ষমতার প্রদর্শন সাধনমার্গের নিন্দিত বিষয়। নিম্নমার্গের কিছু সিদ্ধি লাভের পর এই ভেলকি দেখিয়ে রোজগার এক জটিল ভণ্ডামির অংশ । অথচ প্রকৃত যোগী মাত্রই ইষ্টের আশীর্বাদ লাভ ভিন্ন আর কোনো উদ্দেশ্য থাকেনা।
আজ রিনচেন গুরুর কাছে মার্জনা চেয়ে নিলেন মনে মনে। কাল যেতে হবে হিড়িম্বা মন্দির মানালী ।
(ক্রমশ)
কাল্পনিক গল্প বাস্তবের চরিত্র
Some sources are: Nilkantha
তথ্যসূত্র
- ↑ “Portrait of Atiśa [Tibet (a Kadampa monastery)] (1993.479)”। Timeline of Art History। New York: The Metropolitan Museum of Art, 2000–। অক্টোবর ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০০৮।
- ↑ ঝাঁপ দাও:ক খ “চন্দ্রগর্ভ থেকে শ্রীজ্ঞান” – ত্রৈমাসিক ঢাকা, ১ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা, পৃষ্ঠা ১২
- ↑ ঝাঁপ দাও:ক খ অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের খোঁজে ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ জুন ২০১৮ তারিখে,অদিতি ফাল্গুনী, দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ২৬-০৯-২০১১ খ্রিস্টাব্দ।
- ↑ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান অতীশ, বাংলা বিশ্বকোষ। দ্বিতীয় খণ্ড। নওরোজ কিতাবিস্তান। ডিসেম্বর ১৯৭৫, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। প্রথম খণ্ড। জানুয়ারি ২০০২।
- ↑ ঝাঁপ দাও:ক খ তিব্বতে সওয়া বছর – রাহুল সাংকৃত্যায়ন, অনুবাদ – মলয় চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক – চিরায়ত প্রকাশন প্রাইভেট লিমিটেড, ১২ বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০৭৩, ISBN 81-85696-27-6
- ↑ ঝাঁপ দাও:ক খ মুন্সিগঞ্জের বজ্রযোগিনী গ্রামে শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্করের বাস্ত ভিটা,মো: রুবেল, বাংলাদেশ বার্তা ডট কম। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ৮ মার্চ, ২০১২ খ্রিস্টাব্দ।
- ↑ স্বামী অভেদানন্দের কাশ্মীর ও তিব্বত ভ্রমণ – প্রকাশক- শ্রীরামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ, কলকাতা ৭০০০০৬, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৮৮৪৪৬-৮৩-৪
- Wikipedia and Banglapedia