উদার আকাশ প্রকাশনের গ্রন্থ উদ্বোধন করলেন আবুল বাশার ও সহ উপাচার্য অধ্যাপক গৌতম পাল
প্রেসিডেন্সি কলেজ ও হুগলী মহসিন কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. সা’আদুল ইসলামের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হল সোনারপুরে প্রখ্যাত সাহিত্যিক আবুল বাশারের বাসভবনে। গল্পগ্রন্থ ‘গ্রাস গান অশ্রু’। বইটির প্রকাশক উদার আকাশ।
শনিবারের এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত উপস্থিত ছিলেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য গৌতম পাল, আবুল বাশার, সুন্দরবন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুব্রত মজুমদার, অধ্যাপক ড. মুঈদুল ইসলাম এবং কবি ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লিটন রাকিব।
আবুল বাশার বলেন, অধ্যাপক এবং সাহিত্যিক এরকম কোন নাম সামনে এলেই নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা বেশি করে মনে পড়ে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের মানুষ ছিলেন তিনি। উপনিবেশ যার উপন্যাস, টোপ যার গল্প। অধ্যাপক ও সাহিত্যিক হিসেবে তিনি সমানভাবে সার্থকতা লাভ করেন।আসলে সাহিত্য বিচিত্রগামী। নানান রকম তার প্রকরণ হতে পারে নকশাতে জীবন চিত্র এবং সমাজ চিত্র ধরা পড়ে। একজন ব্যক্তি তার সময় এর ইতিহাস ফুটিয়ে তোলেন এ ক্ষেত্রে সেটাই সেটাই হয়েছে সা’আদুল ইসলামের কলমে। সাহিত্যিক আবুল বাশার উদার আকাশ প্রকাশনের প্রশংসায় ভরিয়ে দেন দীর্ঘদিন ধরে ফারুক আহমেদের নিরলস প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ জানান।
গৌতম পাল বলেন, অধ্যাপক সা’আদুল ইসলাম অপূর্ব গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। মানবমনের বিচ্ছুরণের সংগৃহীত মৌলিক উপাদান রোমন্থন করেছেন তার এই ‘গ্রাস গান অশ্রু’ গল্পগ্রন্থে। অজস্র শুভকামনা এবং আগামী দিনে পাঠকসমাজের মনে রোমন্থক স্মৃতি গ্রন্থ হিসাবে পাঠক মনে দাগ কাটুক।
প্রখ্যাত সাহিত্যিক আবুল বাশার ও কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য ড. গৌতম পাল মহাশয়কে সংবর্ধনা জানানোর পর লেখকের কথা দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। তাঁর কথায় জীবনের বুক-চিনচিন স্মৃতির ইজেলে কেমন করে যাকিছু বিমল শোভন সুন্দর চলে আসে, তারই গল্পরূপ “গ্রাস গান অশ্রু”। কেমন করে স্যারের বুক পকেট থেকে ছাত্রীর নাছোড় নির্দেশে মোবাইল নেমে যায় বা যাপনে খাট্টা মিট্ঠা থাকলেও ঝালধরা মির্চি থাকেনা, সেকথাও। আবুল বাশার তুলে ধরেন, সাহিত্যের সদাচলমান ও বিকাশমান পর্যায়। স্মৃতি যে গল্প হয়ে ওঠে না, তাও বা কে হলফ করে বলবে? সকল সাহিত্য শিল্পের গোড়ায় থাকে আসলে স্মৃতি। নীরস কাজের কথার চেয়ে বাজে কথায় তো আসল মুনশিয়ানা। গৌতম বাবুর কথায় উঠে আসে লেখকমনের স্মৃতির গ্রাস ও জীবনের গান, এমনকি অশ্রুও।
এক অনবদ্য সাহিত্য-আড্ডাও এই বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানের বড়ো পাওনা, শেষপর্যন্ত যাতে বাশারপত্নী শাহানাও অংশগ্রহণ করেন।
উদার আকাশ পত্রিকা ও প্রকাশনের ভুয়সী প্রশংসায় শোনা গেলো প্রকাশনার মান ও বিষয়। এই প্রসঙ্গে উঠে এলো আবুল বাশারকে নিয়ে সী-গাল প্রকাশিত Abul Bashar : The Winged Scorpio র কথা এবং উঠে এলো রুমির এক অসাধারণ প্রেমকবিতার পাঠ।
উদার আকাশ পত্রিকা ও প্রকাশনের সম্পাদক ফারুক আহমেদ বলেন, জীবনসত্যের সঙ্গে সাহিত্যের সত্যের আশ্চর্য মণিকাঞ্চনে এক অনাস্বাদিত অনুভব প্রত্যক্ষ হয় ‘গ্রাস গান অশ্রু’ গ্রন্থটিতে। লেখকের সংবেদনশীল মননে একদিকে ধরা পড়েছে অবরুদ্ধ আবেগ আর যন্ত্রণা, অন্যদিকে স্মৃতিমেদুরতার অনাস্বাদিত মাধুর্য। হ্যাঁ, নির্ভেজাল বাস্তব অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ এক অনুভবি গদ্য কীভাবে গল্প হয়ে উঠেছে, তারই কতিপয় নির্মেদ আখ্যান ‘গ্রাস গান অশ্রু’। গ্রামকে দিয়ে শহর ঘেরার আকাঁড়া অভিজ্ঞতার এ সাতকাহন সত্যিই কি গল্প হয়ে উঠতে পেরেছে? সে বিচার পাঠকের।
বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক ও সংস্কৃতি-ইতিহাসের ছাত্র ড. সা’আদুল ইসলামের জন্ম ১২ জানুয়ারি ১৯৫১ সালে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার জয়নগর থানার অন্তর্গত প্রত্যন্ত গ্রাম তিলপিতে। সুন্দরবন সংলগ্ন এই প্রান্তিক অঞ্চলে তাঁর বেড়ে ওঠা। পরে বঙ্কিম সরদার কলেজ, ফকিরচাঁদ কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর পড়াশোনা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ‘মুনিরুদ্দিন পদক’, কর্মজীবনে সুন্দরবন আম্বেদকর সোসাইটি প্রদত্ত ‘চিন্তানায়ক শক্তিকুমার সরকার স্মৃতি পুরস্কারে’ এবং ২০১৯ সালে তাঁর ‘নজরুল সাহিত্যে দেশকাল’ উদার আকাশ থেকে প্রকাশিত গ্রন্থের জন্য ‘নতুন গতি’র ‘নজরুল পুরস্কার’-এ ভূষিত। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষাবিভাগের অধীন বিভিন্ন কলেজে (আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল কলেজ, মৌলানা আজাদ কলেজ, চন্দননগর কলেজ, টাকি সরকারি কলেজ ও প্রেসিডেন্সি কলেজ)-এ বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করার পর হুগলি মহসিন কলেজে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসাবে কর্মরত অবস্থায় অবসর নিয়েছেন। এককথায় ইসলামি সুফি ও উদার ভারতীয়তাবোধের (যার মধ্যে ধর্ম ভাষা বাঙালিত্ব নির্দ্বিধায় খাপ খেয়ে যায়) ভাবনায় বেড়ে ওঠা এই প্রবীণ অধ্যাপক আজীবন সম্প্রীতি ও সংস্কৃতি-সমন্বয়ের পক্ষেই কলম চালিয়েছেন। প্রান্তিক সুন্দরবন সংলগ্ন অঞ্চলে বসবাস এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সরকারি কলেজে শিক্ষকতার সূত্রেই এক ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ তিনি। গ্রামকে দিয়ে শহর ঘেরার এই অ্যালবাম – ‘গ্রাস গান অশ্রু’ — তাই সত্যিই বাস্তবতার নির্যাস।