ওম্নিকর্ন ও কোভিড ভাইরাসের মিউটেশন নিয়ে কিছু কথা
ড: পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায়
কোভিড ভাইরাসের মিউটেশন এবং তার ফলশ্রুতি নিয়ে এখন উত্তপ্ত আলোচনা চারিদিকে। আলোচনার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই, এই বুঝি মানব সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেল, এরকম একটা রব উঠেছে সমাজে। আমরা বেশির ভাগ মানুষ এ সম্বন্ধে সাধারণ তত্ত্ব এবং তথ্যগুলো না জেনে যা ছড়াচ্ছি তার কিছুটা সত্যি, কিছুটা গুজব কিছুটা ভিত্তিহীন। মানুষ তলিয়ে না দেখে আরও ভয় পাচ্ছেন, আরও গুটিয়ে যাচ্ছেন সমাজজীবন থেকে, পেশা থেকে। শুধু অর্থনীতি নয়, এর ফলে শরীরও খারাপ হচ্ছে আমাদের। বাড়ছে উৎকণ্ঠা, বিষাদ ও হৃদরোগের প্রকোপ।
মোদ্দা কথা হল কোনও জীবাণুর, তা সে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া যা’ই হোক না কেন,বংশবিস্তারে মিউটেশন অথবা জেনেটিক মিউটেশন একটি অতি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। খুব সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করতে গেলে , অন্যন্য প্রাণী ও উদ্ভিদদের মত ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসেরও চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যের পিছনেও সেই জিনের হাত। এক একটা সজীব গোষ্ঠীর জেনেটিক স্ট্রাকচার এক এক রকম। সেজন্যই প্রাণীকুল এবং উদ্ভিদকুলে এত প্রজাতি, এত ধরণ।
সজীব বস্তুর বংশবিস্তার মানে নিজের কপি বানানো। মূল এবং কপি জেনেটিক গঠন ও বৈশিষ্ট্যে একই রকম হয় স্বাভাবিক ক্ষেত্রে। কিন্তু কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে, যেমন বংশবিস্তারের প্রতিকূল পরিস্থিতি বা ওষুধ প্রয়োগের কারণে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া জিন সজ্জায় নিজেকে পাল্টে ফেলে, ফলত কপি অরিজিনালের মতো থাকে না, অর্থাৎ তাদের এন্টিজেন পরিবর্তিত হয়ে যায় । টার্গেট অর্গান তখন তাকে আর সে পুরোনো বন্ধু বা শত্রু বলে চিনতে পারে না ।
মনে করে নতুন কেও এল বোধহয়। ফলত যাদের শরীরে এই জীবাণু ঘাঁটি গাড়ে তারা তার বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ গড়েছিল (এন্টিবডি) তা আর কাজে দেয়না। এর অর্থ কিন্তু এই নয় যে তাতে টার্গেট শরীরের প্ৰতি সে জীবাণু সঙ্ঘাতিক ক্ষতিকর বা আক্রমণাত্মক হয়ে গেল। মিউটেশনে জিনের গঠনগত পরিবর্তন হয়ে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া এমন কি রোগসৃষ্টির ক্ষেত্রে কম শক্তির অথবা গুরুত্বহীনও হয়ে যায় অনেকক্ষেত্রে। এতে করে জীবাণুদের একটা যে সুনিশ্চিত সুবিধে, তা হলো তাদের অন্তত কিছুদিনের জন্য বাধাহীন ভাবে এবং তুলনায় দ্রুতগতিতে টার্গেটের শরীরে বংশবৃদ্ধি করতে পারা। এটা যেমন সত্যি যে মিউটেশনে জীবাণু কিছুক্ষেত্রে শক্তি বাড়ায়, আবার তার ফলে তার নির্বিষ হয়ে যাওয়াও বিচিত্র নয়। জানুন। বুঝুন। আপনি আমি সভ্যতার পক্ষে লাভদায়ী যা করতে পারি তা হল স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও বিশেষজ্ঞদের প্রটোকল মেনে সবকিছু করা। এ বিষয়ে নাগরিক, চিকিৎসক, মিডিয়া, প্রশাসক, সবার যৌথ ও সম্মিলিত দায়িত্ব। রোগ আছে, থাকবে। কতদিন আর ঘরে লুকিয়ে থাকবেন?
Dr. Palash Bandopadhyay popular pediatrics expert with Post Graduate of Pediatric Nutrition,(Boston University). Doctor, Author, Poet, and a beautiful mind. He, always a great content provider for the readers with value to the core of the subject.