হুমায়ুন আহমেদ, হিমু ও আমি
সুমন মুন্সী,কলকাতা
বাংলাভাষা নিয়ে একটা সোশ্যাল মিডিয়ায় অনুষ্ঠান করবো প্রতিমাসে, আর যে চিন্তা ভাবনা থেকে এই প্ল্যান সেটা বোধহয় আমার শৈশবের প্রিয় এক লেখক হুমায়ুন আহমেদ কে ঘিরে । হুমায়ুন আহমেদ, সুনীল গাঙ্গুলী, সত্যজিৎ রায় সৈয়দ মুজতবা সিরাজ,শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ে এনাদের নিয়েই কেটেছে শৈশব। এরপর এলেন গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, শরৎচন্দ্র , মুজতবা আলী, শরদিন্দু , তারাশঙ্কর আর বিভূতিভূষণ । আরো একটু গভীরে এলেন করবেট, বুদ্ধদেব গুহ এমন বহু নাম যা মন ছুঁয়ে গেলেন, সারা জীবনের এক অমোঘ আকর্ষণ সৃষ্টি করে গেলেন সকলে।
হুমায়ুন আহমেদ সাহেবের প্রয়ানের পর ফেসবুকে একটা লেখা লিখেছিলাম ২০১২ সালের ২১সে জুলাই, সেটার অংশ বিশেষ তুলে দিলাম , এই অনুষ্ঠানের প্রাক কথন হিসাবে ।
একটা অসম্ভভ দোটানা নিয়ে এই লেখা টা শুরু করছি |English না বাংলা কোনটা লেখা উচিত| প্রানের ভাষা, কাজের ভাষা কে হারিয়ে দিলো |
হুমায়ুন আহমেদ একজন জনপ্রিয় বাংলা ভাষার সাহিতিক| অনেকে আপত্তি করতে পারেন “ছিলেন” কথাটা লেখা উচিত, এক জন প্রয়াত মানুষ সম্পর্কে|
তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাশীল হয়েও বলি দয়া করে একবার হুমায়ুন আহমেদের নন্দিত নরকে বা হিমু সমগ্রটা বার্ করুন, হুমায়ুন আহমেদ সাহেব কে দেখতে পাবেন, জীবন্ত আপনার পাশে। আর তা যদি না পান, সুধী হুমায়ুন আহমেদ কোনো দিনও আপনার কাছে জীবিত ছিলেনা, শুধু একটা কাগজের বই ছিলেন|
আমি ক্ষমা প্রার্থী কিন্তু এটাই সত্যি | হুমায়ুন আহমেদকে আমি চিনতাম না, ভারতের কলকাতা শহরে তখন দূরদর্শন ও বাংলাদেশ টিভি আসতো | একটি বিচিত্র বস্তু বুস্টার লাগাতে হতো এবং মাঝে মাঝে জাহাজের নাবিকের মতো এন্টেনাটাকে ঢাকা তাক করে ঘোরাতে হতো। এন্টেনা, ছাদের থেকে আমি ঘোরাতাম আর ৬ বছরের বোন চিত্কার করে বলতো, “এখনো ঝির ঝির করছে রে দাদা “ডায়নি খালা” আসছে না” | ডাইনি খালা বাড়ির কাজের মাসির নাম ছিল “বহুব্রীহি” নাটকের। বন্ধু যারা “বহুব্রীহি” দেখেছেন তারা জানেন যে বাসার কাজের বুয়াকে বাচ্ছাগুলো ডাইনি খালা বলতো | সেই শৈশবের, কৈশোরের দিনগুলো কেটে যেত “ঢাকায় থাকি”, “এইসব দিন রাত্রি” নিয়ে |
গোলমালটা বাধতো উত্তমকুমার আর সুচিত্রা ও হুমায়ুন একই সময় এসে গেলে | তবে হুমায়ুন আপনি ভাববেন না যে এপার বাংলা সে সময় আপনাকে বাক সিটে পাঠিয়ে দিত, আপনার বহুব্রীহি ভিসিআরই রেকর্ড থাকতো| হয়তো উত্তমকুমার হেরে গেলে, আপনিও দুঃখিত হতেন, তাই আপনার নাটক রেকর্ডেড চলতো পরে |
কোনো দিন বিদ্যুত না থাকলে, সেই দিন পশ্চিমবাংলার মূখ্যমন্ত্রীর গুষ্টির তুষ্টি হতো | এই করে কোন সময় একদিন শিশু দুটো কিশোর, তার থেকে যুবক হয়ে গেল | হিমু কিন্তু রয়ে গেল, চেতনে অবচেতনে |
আমি নিজের জীবনে একজন হিমু হতে চেয়ে ছিলাম, পারলাম কিনা জানি না। হয়তো আমার ঢাকার ছাত্র ছাত্রীরা বলতে পারবে, আর পারবেন মাহবুব ভাই, নাজ আপা, নিউটন,সিদ্দিক,মশায়দুল | আমার কর্মসুত্রে ঢাকা যাওয়া, কিন্তু হিমু Effect | ইচ্ছা ছিল একটা অটোগ্রাফ নেবো সুযোগও এলো ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর যাচ্ছি, আপনি, বুলবুল আহামেদ ও আরো অনেকে কলকাতা থেকে ফিরছেন, আমিও একই বিমানে তিনবার বিমানের ভিতরে চেষ্টা করলাম, কিন্তু হলনা|৪৬ মিনিটের যাত্রা, ভাবলাম নেমে ঠিক নিয়ে নেবো,আপনিও কথা দিয়ে ছিলেন, কিন্তু আপনাকে আর ধরা গেলনা, অথচ আপনি বিমানের ভিতর কথা দিয়েছিলেন নেমে অটোগ্রাফ দেবেন, আমার খাতাটা আজো খালি আছে |
আশা করি ওপরে যখন দেখা হবে, আপনার এই অনুরাগীকে বঞ্চিত করবেন না| আশায় থাকলাম অগ্রিম বুকিংটা সোশাল নেটে দিয়ে রাখলাম| ভালো থাকবেন আর রোজরাতে কথা হবে, হিমুসমগ্রটা যখন হাতে থাকবে |
আর যদি কথা না বলি, জানবেন নন্দিত নরক বাসি কোনো এক মিশির আলী বা নীল মানুষের সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত আর এক হিমালয় আপনার হিমু ।
ইতি
আপনার আর এক হিমু (সুমন মুন্সী) —
Kolkata, West Bengal, India.
