সব্জিওয়ালা প্রমান করলেন সৎ ও সততা কাকে বলে
অরূপ মিত্র ,কলকাতা
অরূপ মিত্র পেশায় শিক্ষক নেশায় পরিব্রাজক । সমাজের নানা স্তরের মানুষের মতো মানুষ খুঁজে বেড়ানো তাঁর নেশা । আর এই কাজের কারণেই বেলদা থেকে বনগাঁ, শিলিগুড়ি থেকে হলদিয়া খুঁজে বেড়ান সমাজের হীরে মণিমুক্তো গুলিকে । ভেঙে পরা ন্যুজ্ব সমাজের মেরুদন্ড সোজা করা মানুষদের তুলে আনেন সবার সামনে।
এমনি এক মানুষের কথা শুনুন আজ। যে দেশের মানুষের প্রতারিত হওয়াটাই জীবন সেখানে এক গরিব বাবা খুঁজে পেলেন তাঁর মেয়ের বিয়ের শেষ সম্বল এক সব্জিওলার থেকে।
শুনুন সে কথা অরূপের নিজের বয়ানে:
“বর্তমান সংকটজনক পরিস্থিতিতে চারিদিকে যখন লোভ আর বাসনার ভীড়ে আমরা নিজেদের হারিয়ে চলেছি ঠিক তখনই সততার এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল বারুইপুরের সুকুমার দাস।
পেশায় সব্জি বিক্রেতা। শিক্ষাগত যোগ্যতা তেমন কিছু নয়। প্রতিদিন খুব ভোরে উঠে বারুইপুর থেকে ও ভ্যানে কিছু সব্জি এনে এখানে বিক্রি করে সেই সামান্য আয়ে তার সংসার প্রতিপালন করেন।
রোজের মত আজও সে সব্জি বিক্রিতে ব্যাস্ত ছিল, প্রায় দুপুরের দিকে নজর পড়ে ওর ভ্যানরিক্সায় সব্জির এক পাশে একটা পুরোনো প্লাস্টিকের বাক্স রাখা রয়েছে,ও ভেবে নেয় নিশ্চয়ই কেউ রেখে নিতে ভুলে গেছে,অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলে তার কোনো দাবিদার না আসায় আগ্রহী হয়ে বাক্সটি খুলে দেখে ও চমকে ওঠে, সঙ্গে সঙ্গে মার্কেটে এসে দুই ব্যবসায়ী বন্ধুকে ঘটনাটির কথা জানায়।
সেই দুই ব্যবসায়ী বন্ধু গিয়ে দেখে আনুমানিক দেড়,দু’ভরি সোনার গহনা বাক্সটিতে রয়েছে, এরপর দাবিদারের আসার জন্য ওকে আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলা হয়।
বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যার সময় এক ভদ্রলোক এসে বাক্সটির খোঁজ করে ও বাক্সটির ভিতরে থাকা যাবতীয় গহনার বিবরণ দেন।
এরপর কিছু ব্যবসায়ী বন্ধুকে সাক্ষী রেখে সুকুমার বাক্সটি তার প্রকৃত মালিকের হাতে ফিরিয়ে দেন।
ভদ্রলোক তার যাবতীয় গহনা ফেরত পেয়ে ভীষণ খুশি হয়ে ওকে কিছু টাকা দিতে চাইলে ও টাকা নিতে অস্বীকার করায় নিরুপায় হয়ে শেষে কিছু মিষ্টি কিনে দিয়ে যান। আসলে গহনাগুলো তার মেয়ের বিয়ের জন্য সে জোগাড় করেছিলো।
সত্যিই ভাই সুকুমার, তোমরা রয়েছো বলেই পৃথিবীটা আজও সুন্দর মনে হয়।পৃথিবীতে যতগুলি খারাপ মানুষ থাকুক না কেনো ভালো মানুষ আজও আছে ,চিরদিন থাকবে তবেই এই দেশ এই সমাজ এগোবে।”
সাবাশ ভাই আপনাদের দুজনকেই একজন সততা কি নতুন করে শেখালেন আর একজন সেই কথা আমাদের জানালেন শিক্ষক হিসাবে।