নেতাজীর ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে ছায়ানট (কলকাতা) – এর বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য
ভারতের স্বাধীনতা-সংগ্রামের অগ্নিপুরুষ নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী ও সাম্যবাদী কবি কাজী নজরুল ইসলামের অবিস্মরণীয় সৃষ্টি ‘বিদ্রোহী’ কবিতা-প্রকাশের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সম্প্রতি প্রকাশিত হলো ছায়ানট (কলকাতা)-র বিনম্র শ্রদ্ধার্ঘ্য ‘নেতাজী, নজরুল ও একটি আজাদ ভারতের স্বপ্ন’ শীর্ষক একটি মূল্যবান ডেস্ক ক্যালেন্ডার, প্রকাশে কোয়েস্ট ওয়ার্ল্ড, ভাবনা ও তথ্য-সংগ্রহে সোমঋতা মল্লিক ও সৃজনে স্বাগত গঙ্গোপাধ্যায় ও সার্বিক সহযোগিতায় ‘নজরুল.ইন’ ওয়েবসাইট। এই ক্যালেন্ডারের প্রতিটি পাতায় রয়েছে নজরুল-প্রেমী নেতাজী-বিষয়ক বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক তথ্য ও বিশিষ্টজনদের উক্তি, সাথে ওঁদের বিভিন্ন বয়সের নানা ছবি।
১৯২৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর কলকাতার এলবার্ট হলে দুপুর দুটোয় মহা সমারোহে নজরুলকে কলকাতার বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকে জাতীয় সংবর্ধনা জানানো হয়। উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিলেন ‘কল্লোল’ ও ‘সওগাত’-এর দুই সম্পাদক দীনেশরঞ্জন দাশ ও মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন। এঁরা দুজনে ছিলেন সংবর্ধনা-সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক। এছাড়া ছিলেন আবুল কালাম শামসুদ্দীন, আবুল মনসুর আহমদ, হবীবুল্লাহ বাহার প্রমুখ। অভ্যর্থনা-সমিতির সভাপতি ছিলেন এস ওয়াজেদ আলী। অনুষ্ঠানে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় সভাপতি ও নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু প্রধান অতিথি ছিলেন। দুপুর দুটোয় ফুল-শোভিত মোটর গাড়িতে করে কবিকে সভাস্থলে আনা হয়। কবি সভাকক্ষে প্রবেশ করলে সকলে জয়ধ্বনি দিয়ে তাঁকে সাদর অভ্যর্থনা ও সম্মান জ্ঞাপন করেন। শিল্পী উমাপদ ভট্টাচার্য ‘চল্ চল্ চল্’ গানটি উদ্বোধনী সংগীত হিসেবে পরিবেশন করেন। নজরুল সংবর্ধনা-সমিতির সদস্যবৃন্দের পক্ষে প্রদত্ত অভিনন্দনপত্র পাঠ করেন এস ওয়াজেদ আলী। পরে অভিনন্দনপত্রটি একটি রূপোর কাসকেটে ভরে সোনার দোয়াত ও কলমসহ কবির হাতে তুলে দেওয়া হয়। সভায় অভিনন্দন জানিয়ে বক্তৃতা করেন রায়বাহাদুর জলধর সেন। সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর বক্তৃতায় বলেন: “যুদ্ধক্ষেত্রে নজরুলের গান গাওয়া হবে, কারাগারেও আমরা তাঁর গান গাইব।” সংবর্ধনা সভায় নজরুল সকলের অনুরোধে ‘টলমল টলমল পদভরে / বীরদল চলে সমরে’ এবং সুভাষচন্দ্র বসুর অনুরোধে ‘দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু’ গান গেয়ে শোনান। নজরুলের অনন্য প্রতিভাষণ সকলকে মুগ্ধ করে।
বিশ্বনাথ দে সম্পাদিত ‘নজরুল স্মৃতি’ গ্রন্থ থেকে জানা যায় নেতাজী ও নজরুলের পারস্পরিক সম্পর্কের কথা, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বলেছেন-
“কারাগারে আমরা অনেকে যাই, কিন্তু সাহিত্যের মধ্যে সেই জেল-জীবনের প্রভাব কম দেখতে পাই। তার কারণ অনুভূতি কম। কিন্তু নজরুল যে জেলে গিয়েছিলেন, তার প্রমাণ তাঁর লেখার মধ্যে অনেক স্থানে পাওয়া যায়। এতেও বুঝা যায় যে, তিনি একটি জ্যান্ত মানুষ।…নজরুলকে ‘বিদ্রোহী’ কবি বলা হয় এটা সত্য কথা। তাঁর অন্তরটা যে বিদ্রোহী, তা স্পষ্টই বুঝা যায়। আমরা যখন যুদ্ধে যাবো, তখন সেখানে নজরুলের যুদ্ধের গান গাওয়া হবে। আমরা যখন কারাগারে যাবো, তখনও তাঁর গান গাইবো।”
নজরুলের সৃষ্টি ও কর্মজীবন নিয়ে ছায়ানট (কলকাতা) – এর এই ধরণের মননশীল উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।