যশোধরা – এক অনাম্নী অঙ্গনা
ডাঃ ধীরেশ চৌধুরী
ত্রিস্মৃতি বিজড়িত
আজ বৈশাখী পূর্ণিমা
আশ্চর্যের কি
জগত জুড়ে চর্চিত হবে তোমারই মহিমা।
জন্মদিনটা আমারও যে আজ
সেটা জানেন কতজনা?
যশোধরা ছিল নাম
সেই অনাম্নী অঙ্গনা।
জানিনা সেই তেরোটি বসন্তও
পেরেছিলাম কিনা হতে তোমার প্রিয় জন,
সে রাত স্মরণে এলে আজও কুঁকড়ে ওঠে মন
চেয়েছিলাম রাখতে তোমায় বাহুতে বন্ধন,
স্পর্ধা কত বড় আজও ভাবি প্রতিক্ষণ,
রাখব ধরে তাকে আমি!
যে কিনা সবার তরে জ্ঞানী মহাজন।
কোল আলো করে এল যেদিন পুত্র রাহুল,
ত্যাগ করলে আমায় তুমি সাথে সব বিলাস বহুল।
সন্তর্পণে করেছি পালন পুত্রের দায়িত্ব ভার,
সক্ষম হয় সেও যাতে তোমার পথে চলার।
অত্তদীপে প্রজ্জ্বলিত হয়েছিলে তুমি,
নিঃস্ব আমি কত সে জানেন অন্তর্যামী,
আমার কাঁধেতে দিয়ে তোমার পুত্রের ভার,
পথ তুমি বেছে ছিলে মুক্তি কে খোঁজবার।
দৃপ্ত সেই সাধনার ফল তোমার বোধিজ্ঞান,
কিয়ৎ যে আমারও ছিল তাতে অবদান।
লোকে নাই বা জানুক এত গূঢ় কথা,
জানো তো প্রভু তুমি
প্রশমিত তাতেই মোর ছিল যত ব্যথা।
রক্ত মাংসে গড়া আমি নারী যশোধরা,
বিনিদ্র কত রাতে ফেলেছি কত অশ্রুধারা।
প্রলোভন কত ছিল হতে বিপথগামী,
কত রাজাই চেয়ে ছিল তাদের হই রানী আমি।
বলতে পারো কিসে কম আমার সে সাধনা,
রিপুর জ্বালা দমন করে যখন এক পূর্ণ যৌবনা।
সংকল্প নিয়েছিলাম তোমার পথকেই করব গ্রহণ,
বিনা আভরণ কাষায় বস্ত্র তাই মোর হল বসন।
যে দিন খুলে দিয়েছিলে আমায় তুমি সংঘের দ্বার,
মোচন হয়েছিল সেদিন সব দুঃখ তোমায় হারাবার।
তোমাতেই মুক্তি মোর সে তোমাতেই স্থিতি,
ভিক্ষুণীর আছেই বা কি দেবার তরে?
কৃতজ্ঞ করো নিয়ে আমার শতকোটি প্রণতি।
জানি ইতিহাসে যশোধরা আজ পুরো বিস্মৃতি,
আক্ষেপ নয় বরং জেনো মনে জাগবে প্রীতি,
তোমার অহিংস বানীতে যদি ফেরে সুমতি
বন্ধ হয়ে হিংসা দ্বেষ শান্ত হয় অদিতি।
ডাঃ ধীরেশ চৌধুরী জানালেন, তাঁর এই কবিতার প্রেখ্যাপট যা এক করুন কিন্তু শিক্ষণীয় জীবনচর্চার উপাখ্যান। ভগবান তথাগত বুদ্ধের স্ত্রী যশোধরা ও সন্তান রাহুলের ত্যাগের আদর্শে উদ্ভাসিত ।
বুদ্ধ পূর্ণিমা ও এক মহিয়সী নারীর ত্যাগের ইতিহাস আজকের আলোচ্য ।
বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় পবিত্র বুদ্ধ পূর্ণিমা। তথাগত বুদ্ধের আবির্ভাব, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহা পরিনির্বাণ এই ত্রিস্মৃতি বিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা। কিন্তু আজ যে একই সাথে বুদ্ধের সন্ন্যাস পূর্ববর্তী পত্নী যশোধরার ও জন্মদিন সেটা কত জনই বা জানেন? যশোধরা ছিলেন বুদ্ধের পিসতুত বোনও।
পুত্র রাহুল এর জন্মের দিনই সিদ্ধার্থ গৌতম সংসার পরিত্যাগ করেন দুঃখ মুক্তির উপায় খুঁজতে। তাঁদের বিবাহের তেরো বছর পরে, সিদ্ধার্থর বয়স যখন উনত্রিশ বছর।
পুত্রের পুরো দায়িত্বভার স্ত্রীর উপর ছেড়ে দিয়ে সংসার পরিত্যাগ আক্ষরিক অর্থে কতটা নৈতিক সেটা বিতর্কিত। কিন্তু যশোধরা যেভাবে নানান রকম প্রলোভন ত্যাগ করে পুত্র রাহুলকে একা হাতে মানুষ করে তোলেন সেটা আজকের “সিঙ্গল মাদার” ধারণার একটি প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে। এত কষ্ট করে মানুষ করে তোলার পরেও পুত্রের এককথায় সংঘে প্রবেশকেও মেনে নিয়েছিলেন। পরবর্তী কালে নিজেও বুদ্ধের সংঘতে ভিক্ষুণী হয়েছিলেন। বুদ্ধের মহিমার কথা তো সর্বজন বিদিত।
কিন্তু যশোধরার এই একক সংগ্রাম, সংযম, কর্তব্য পরায়ণতাও কিন্তু সত্যিকার অর্থেই দৃষ্টান্তস্বরূপ। প্রতিটি পুরুষের সাফল্যের পিছনে থাকেন একজন নারী। ঠিক যেমনটা বুদ্ধের ক্ষেত্রেও যশোধরা। আজ তাই তাঁরই জন্মদিনে যশোধরা কে জানাই কুর্নিশ ও শ্রদ্ধা। যতই ইতিহাসে উনি বিস্মৃত হন। বুদ্ধকে স্মরণ করতে হলে যশোধরা কে মনে করতেই হবে।
Geriatrician by profession, has been involved in treating the elderly for more than a decades. Founder and President of established government registered NGO “Banchbo”, Life Member of Geriatric Society of India, Executive Member of Geriatric Society of India, Eastern Zonal, Assistant Secretary, Geriatric Society of India, West Bengal Branch, Advisor, Protect The Warriors, Advisor, Parkinson’s Disease Patients Welfare Society Kolkata has been involved in various social activities for more than two decades.
Regular writer in newspapers and magazines on elders and social issues.