
আল্লাহ্ মেঘ দে, পানি দে ছায়া দে রে তুই
ডাঃ রঘুপতি সারেঙ্গী
” অগ্নিমীলে পুরোহিতং যজ্ঞস্য দেবমৃত্বিজম্। হোতারম রত্নধাতমম্।।” ঋক্-বেদ এর ১ম মণ্ডলের ১ম মন্ত্রে ঋষি প্রার্থনা করছেন, ” হে অগ্নি ! আপনি মানুষের হিতকারী, সৎ-কর্মের ফল দাতা, দৈবী-ভাব সমুহের আহ্বানকারী, ধর্ম-অর্থ-কাম ও মোক্ষ প্রদায়ী, তেজোদীপ্ত ও চৈতন্য স্বরূপ। কৃপা করে, আপনি আমাদের জ্ঞান-রত্ন প্রদান করুন। আবার সেই বেদ এর শেষ মণ্ডল (১০ম) এর শেষ মন্ত্রে ঋষি বলছেনঃ ” সমানী ব আকুতিঃ সমানা হৃদয়ানি ব। সমানমস্তু বো মনো যথা বঃ সুসহাসতি।।
” আমাদের সবার মন ও অন্তঃকরণ এক হোক। জাতি-ধর্ম-বর্ণের বিভেদ ভুলে, একই লক্ষে আমরা যেন সহমত পোষণ করি।” এটাই আমাদের বৈদিক সাম্যের প্রার্থনা। “ঋগিভঃ স্তুবন্তি।” ভাবতে আশ্চর্য্য লাগে, ১০,৪০২ এরও কিছু বেশি মন্ত্র নিয়ে সারাটি ঋগ্বেদের ছত্রে ছত্রে শুধুই প্রার্থনা…….. আর প্রার্থনা। একটিও কামনা নেই। প্রার্থনাই যে আমাদের শক্তি, আর এটাই আমাদের সাধনা। ল্যাটিন ‘Precari’ থেকে ফরাসী ‘Preier’ হয়ে ইংরেজি ‘Prayer’ শব্দের সৃষ্টি, যা’র বাংলা রূপ প্রার্থনা। ক্যাথলিকদের কাছে এর অর্থ “জীশু’র অনুগ্রহ”। ইসলাম ধর্মের মানুষজন যে ‘নমাজ’ করেন তার মানেও সেই ‘দোয়া’ বা ‘আল্লাহ্ এর রহমত’। আসলে, জীবের অধিকারের সীমাও যে এই পর্যন্ত ই ।
দেখুন, বহু আত্মীয়-স্বজনের প্রার্থনা তেই আমাদের জন্ম। বেড়ে ওঠার পিছনেও থাকে অগনিত শুভাকাঙ্ক্ষীর প্রার্থনা। আবার, মৃত্যুর পরও, বিদেহীর আত্মা যেন সর্বশক্তিমান এর শ্রীচরণে স্থান পায়, এই প্রার্থনা। অথচ, সেই প্রার্থনা কে ভুলে, রোজ দিন আমরা মানত (কামনা) করেই চলেছি, ছেলে হোলে ওর দেহের ওজনে গোবিন্দ কে বাতাসা-লুট দিব, গনেশজী কে লাড্ডু চড়াবো। এদিকে, পরপর গোটা তিন-চার কন্যা-সন্তান জন্মানোয়, স্বামী-স্ত্রী তে বেশ কিছুদিন মুখ দেখাদেখি বন্ধ থাকার পরে, শেষমেস ডিভোর্স। আবার, চরম অবজ্ঞা ও অবহেলার মাঝেও সেই চারটি মেয়ের মধ্যে একটি যখন কোনোভাবে IAS crack করে তখন ডেকে ডেকে পিতৃ-পরিচয় দিতে আবারও কী আগ্রহ.. ….সে কী নাড়ির গভীর টান ! আসলে, প্রার্থনা আর কামনার মাঝে বিস্তর ফারাক টা ঠিক এইখানে !
আচ্ছা, প্রার্থনাতে কী আদৌ কাজ হয় ? হয় বৈ কি ! নৈলে সেই নাস্তিকদের দেশ, আমেরিকাতে ‘অ্যাপেলো’ উৎক্ষেপন এর পরে মহাকাশে চরম সমস্যা দেখা দিলে মধ্যরাতেই কোর্ট-কাচারি, অপিস-আদালত, মল, সিনেমা হল সব বন্ধ রাখার ফরমান জারি করে কেবল প্রার্থনার (Pray) আবেদন কেন রাখা হয়েছিল সেদিন, সমস্ত আমেরিকা বাসীর উদ্দেশ্যে ? তারপর তো নভঃচরদের জীবনের পরবর্তী পর্যায়ের সাক্ষী হয়ে আছে আজের ইতিহাস।
প্রশ্ন ওঠে, মানুষের প্রার্থনা কী সবসময় ফল-দায়ী হয় ? দেখুন, দেশের লক্ষ লক্ষ সাধারণ নাগরিক এর একজন হিসাবে আপনিও আপনার রাষ্ট্রপতি কে যে কোনো আবেদন জানিয়ে চিঠি লিখতেই পারেন। রাষ্ট্রপতি এবার স্থির করেন, কোন চিঠির উত্তর তিনি এখুনি দিবেন, কোনটার উত্তর পরে দিবেন, কোনটার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন আপাততঃ মনে করছেন না। তাই বলে, আপনি রাষ্ট্রপতি মহোদয়কে উত্তর দিতে বাধ্য করতে পারেন কী ? এও অনেকটা সেরকমই।
একবার এক ভক্ত শারীরিক যন্ত্রণাতে খুব কষ্ট পেয়ে ভগবানের কাছে কাতর প্রার্থনা জানাতে লাগলো। একসময়ে ভগবান এসে বললেন, “বল্ কী বলবি।” ভক্ত টি বললো, “এতক্ষণ ধরে ডাকছি !” ভগবান বললেন,” হ্যাঁ এলাম, কথা শুরু করবো বলেই।” তাই প্রার্থনা কখনো থামাতে নেই। কথিত আছে, ব্যস্ত ‘বাপুজী’ নাকি একদিন রাতে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছিলেন। সবাই ছুটে এলে, তিনি জানিয়েছিলেন, ” না, তেমন কিছু নয়। আসলে, আজ আমার জীবনের এমন এক দিন যেদিন আমি প্রার্থনা করতেই ভুলে গেছি।” তবেই না ২য় বিশ্বযুদ্ধ জিতে Col. Smart, Joseph Stalin, Franklin Roosevelt এদের সাথে গোপন বৈঠকে Churchill বলেছিলেন, ” I never afraid of Hitler but really afraid of half-naked Fakir of India.” মনে রাখতে হবে, এই “half-naked Fakir” টি প্রার্থনার বলে এতোটা ই বলীয়ান ছিলেন যা’কে Winston Churchill পর্যন্ত ভয় করছেন !
তাহলে, আমাদের প্রার্থনা কেমন হওয়া উচিত ?
শিষ্যদের এই প্রশ্নের ই সম্মুখীন হয়েছিলেন একদিন এক মহারাজ। উত্তরটা ও তবে, তাঁরই মুখে শুনুন। মহারাজ তার কয়েক শ’ভক্তকে ডেকে বললেন, “তোমাদের হাতে আমি একে একে একটি করে সুতোয় বাঁধা, বেলুন দিচ্ছি। তোমরা এর উপরদিকে যে যা’র নিজের নাম স্পষ্ট করে লিখে এনে আমার হাতে ধরিয়ে দাও। ভক্তরা, গুরুদেবের নির্দেশ মতো, তাই ই করলো। গুরুদের এবার সব হাইড্রোজেন ভরা বেলুন গুলি একসাথে নিয়ে, বিশাল তাঁর সাধনা হল এর সিলিং এর নীচে ছেড়ে দিলেন। এবার গুরুজী বললেন,” যাও, যে যা’র নাম লেখা বেলুনটি এনে আমার হাতে দাও “। এতোগুলো বেলুন! এলোমেলো ভাবে যে যেখানে খুশি আটকে আছে ! নাম রয়েছে ওপরদিকে। সে দেখাও যাচ্ছে না। এর থেকে সঠিক টি বেছে আনা এতো সহজ কথা নাকি ! তবু, লাফালাফি, ঝাঁপাঝাঁপি, হুলুস্থুল পড়ে গেল। কেউ ই সহজে আনতে পারলো না। এবার গুরুজী হেসে বললেন, ” এ তো একটা অতি সহজ ব্যাপার, তাও পারলি না, বাবা ! যে যে’টা ধরেছিস তার উপরে যা’র নাম লেখা আছে, তাকেই দিয়ে দে। তোর নাম লেখা বেলুনটি যে পাবে, সে এনে তোকে দিয়ে দিবে। এই ভাবেই তো সবাইকে যে যার বেলুন গুলো ফিরে পেতে হবে, তাই না ! শুধু নিজের🎈টি খুঁজলে তো পাগল হয়ে যেতে হবে! তাই প্রার্থনা কর্ পরের জন্য। দেখবি, কেউ না কেউ তোর জন্যও প্রার্থনা করবেই করবে। আর এতেই আসল মঙ্গল। সর্বশক্তিমান এমন প্রার্থনাই সহজে মঞ্জুর করেন।

Dr. Raghupati Sharangi, a renowned homeopath and humanitarian who lives for the people’s cause. He is also a member of the Editor panel of IBG NEWS. His multi-sector study and knowledge have shown lights on many fronts.