বাংলায় কি বিজেপি বার বার দ্বিতীয় হয়েই থেকে যাবে ?- উত্তর খুঁজলেন সুনন্দ মিত্র
সুনন্দ মিত্র
আবার বাংলায় পুরভোটের দামামা বেজে উঠেছে, বিধানসভার ছিটেফোঁটাও উৎসাহ বিরোধীদের শিবিরে নেই। মাঠে নেমে খাটার মতো ছেলেরা যেন হঠাৎ উবে গেছে বিগত নির্বাচন পরবর্তীতে দরদী নেতাদের সহযোগীতা দেখে। অপর দিকে জোড়া পাতা, জোড়া বলদ বা জোড়া ছাতা নিয়ে মাঠে হাজির বিক্ষুব্ধ অনুগত সৈন্যেরা । সরকার বিরোধী দুই শিবিরই বিব্রত আশাহত জঙ্গী মেজাজের বিদ্রোহী কর্মীদের নিয়ে ।
এমন এক পরিস্থিতিতে প্রশ্ন করলাম আমাদের রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুনন্দ মিত্র কে, “সুনন্দদা বাংলায় কি গণতন্ত্র যোগ্য শাসক বিরোধী তরজা দেখতে পাবে না? মানুষ কি অপশনের অভাবে ভুগবে চিরকাল? বাংলার ময়দানে মামাটাই কি শেষ পাবলিক লিডার ?
উত্তরে গম্ভীর ভাবে জবাব দিলেন মিত্র মশাই।
“একজন যোগ্য অধিনায়ক বা সেনাপতির ওপরই কোন দলের জয়/পরাজয় অনেকটাই নির্ভর করে, সে রাজনীতিই হোক, খেলার মাঠ বা যুদ্ধের ময়দান হোক। এর প্রমাণ অতীতে আমরা বহু দেখেছি। যেকোন দলেই সবাই যোগ্য বা যোগ্যতম হয়না, তবে একটা যোগ্য অধিনায়ক পারে তার দলের অযোগ্যতম ব্যক্তিকে দিয়েও তার সেরাটা বার করে নিতে। যেটার বড় বেশি অভাব আজকের এই বঙ্গ বিজেপি দলটার। মানে গোড়াতেই গলদ, বলোদ’তো প্রচুর আছে, কিন্তু তাদের দিয়ে জমিতে হাল টানিয়ে জমির উৎকর্ষতা বাড়ানোর যোগ্য লোক নেই।
যাইহোক একটা সময় ভারতবর্ষ পাকিস্তানের সামনে পড়লেই একটা গেলো গেলো রব পড়ে যেত, তারপর এলো ইট কা জওয়াব পাত্থর সে দেনে ওয়ালা বাঙালি, পরের ইতিহাস সবাই জানেন, রাজনীতিতে কংগ্রেস থেকে বাম জমানা হয়ে বর্তমান সরকারের ইতিহাসও কারো অজানা নয়। কোন খারাপ বা ভালোর তর্কে যাবনা। একজন যোগ্য অধিনায়ক যে কি করতে পারে তার উদাহরণ তো চোখের সামনে। মার খেয়ে হাজারো লাঞ্ছনা সয়ে সমস্ত ঝড়ের সামনে দাড়িয়ে যোগ্য অধিনায়ক হিসাবে দলকে আগলে রেখে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে, দলকে হীনমন্যতায় ভুগতে দেননি। দামাল, বিদ্রোহী, বেয়াড়া অনুগামী/সদস্যদেরও করা হাতে বুঝিয়ে দিতে সক্ষম বাড়াবাড়ি করোনা, আস্তাকুড়ে ফেলে দেবো। করা হাতে দমন করে অতি বেয়াড়া সদস্যকেও অনুগত অনুগামিতে পরিণত করেছেন। শূন্য হয়ে যাওয়া একটা দল ৩৪/২৩৪ খেলায় তাদের হেলায় বাপি বাড়ি যা করে আজ তাদেরই শুন্য করে দিয়েছে।
আর উল্টো দিকে সবাই রাজা! কিন্তু কোন রাজা নাই! বিরোধীরা ছত্রাখান। আপনারা তো অনেক ভালো জায়গায় আছেন কিন্তু আপনাদের সেই kiling instinct নেই। বিরোধী হিসেবে সত্যিই বলছি আপনাদের প্রতি সেই সম্ভ্রম জাগছে না। এক্ষেত্রে বঙ্গ বিজেপির কিছু করার নেই, কারণ তারা পরিচালিত হয় তাদের কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বারা, আর কেন্দ্রীয় কমিটি দায়িত্ব দিয়েছে বঙ্গ জয়ের জন্য। গোমাতার গো-সন্তানদের হাতে যাদের কেউ লালুভুলু, তো কেউ গোবর গণেশ, তারপর আবার ভেতো বাঙালি যারা সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ডরায়। অবাঙালিদের ভয় পায়, অবশ্য তার কারণও আছে, বিজেপির ব্যক্তি চয়ন, এবং বিগত বিধানসভা ভোটে তাদের দপদপানি, যা দেখে কিছু বীর বাঙালি যে ভয় পায়নি একথা জোর দিয়ে বলা যায় না। কেন বঙ্গে কি বাঙালি নেতা ছিলনা? তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া যায় ছিলনা, তা আপনারা কি করছিলেন? একটা যোগ্য নেতাও তৈরি করতে পারলেন না! এখান থেকে সেখান থেকে পচা অযোগ্য কিছু লোক ধরে নিয়ে এলেন বঙ্গ জয় করতে! আরে বেড়ালের গায়ে ডোরা কেটে দিলেই কি সে বাঘ হয়ে যায়?
সবই ছিল কিন্তু ছিলনা যেটা সেটা যোগ্য অধিনায়ক, স্বর্গীয় এবং শ্রদ্ধেয় প্রদীপ ব্যানার্জি(PK) একবার বলেছিলেন পুঁইশাকের মশলা দিয়ে কি আর বিরিয়ানি রান্না করা যায়? তাই TMC পিকে কে এনে গোল দিয়ে গেলো আর আপনারা এত বড় বুদ্ধিমান যে কৈলাস থেকে বঙ্গ বিজয়ের জন্য, এক বর্গিকে নিয়ে এলেন? শুভেন্দু এক লড়ছেন কিন্তু আয়নার বিরুদ্ধেই লড়তে হচ্ছে বেশি, ছায়াকেও বিশ্বাস করতে পারবেন না, কখন “এক ফুল দো মালির লড়াইয়ে ফুলটাই ছিঁড়ে না পরে। পাঁকে পদ্ম ফোঁটে ঠিকই, কিন্তু পাঁক জড়ো করে পদ্ম ফোটানো কি যায়? উত্তর জানা নেই কেন্দ্রীয় মালীদের। তাই আজ অভিষেকের অভিষেক শুধু সময়ের অপেক্ষা বলেই ওয়াকিবহাল মহল ভাবছে।
কিন্তু, যদি সত্যিই বঙ্গ জয় করতে চান তাহলে সবার আগে এমন এক অধিনায়ক খুঁজুন যে বাংলা তথা বাঙালীর সেন্টিমেন্ট বোঝে, যে প্রয়োজনে কড়া হতে পারবে, দরকারে বুকে আগলে রাখতে পারবে। যে গোবর থেকে ঘুঁটে হয়ে যাওয়া ঘুঁটে জ্বালিয়ে তাতে সুস্বাদু ব্যঞ্জন রান্না করতে পারবে।
“ভাবুন ভাবুন, ভাবা প্র্যাক্টিস করুন” , নিত্য প্রয়োজনীয় প্রচুর ইস্যু আছে, কয়েকটার উদাহরণও দিয়ে দিলাম, উত্তরোত্তর ইলেকট্রিক বিলের বৃদ্ধি, বেরোজগারি, শিক্ষার অবনতি, অস্বাভাবিক মুদ্রাস্ফীতি, বাঁচতে চাইলে চিকিৎসা করতে বাংলার বাইরে যাও, চাইলে আরো দিতে পারি, কিন্তু আজ এই পর্যন্ত্য থাক। “
মধ্য মেধার আধিক্যে রাজনৈতিক দীনতা আজ বাংলাকে গ্রাস করছে ক্রমশ। শেষের সেদিন ভয়ঙ্কর উত্তর বিজেপি বা টিএমসি কে নয় উত্তর সমাজকে খুঁজে নিতে হবে যোগ্য ক্যাপ্টেন কে হবে, যাঁর নেতৃত্বে সরকার বিরোধী নতুন প্রাণ পাবে।