হায় মানবতা – রাজনীতির হটকেক, শহীদের নামে মৃতদেহ
সুনন্দ মিত্র
প্রথমেই বলি সোজা কথা সোজা ভাবে বলা আমার স্বভাব আর বাকস্বাধীনতার দাবি মেনে এই লেখা।
রাজনীতির hot cake, মৃতদেহ। কথাটা অর্ধ সত্য বা অসম্পূর্ণ, কারণ শুধু মৃতদেহ হলে চলবেনা, প্রয়োজনে সুদূর ইউক্রেন, প্যালেস্টাইন বা কোন দেশ থেকেও মৃতদেহ আমদানি করা যেতে পারে শুধু খেয়াল রাখতে হবে স্থান কাল পাত্র হিসেবে বৃহত্তরও ক্ষেত্রে যেন তা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তোলা যায় এবং অতি অবশ্যই সেই মৃতদেহ যেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হয় (দেশ ভিত্তিতে ধর্ম পাল্টে গেলেও চোখ একই থাকবে )। ভাবছেন তো মৃতদেহ নিয়েও আমি নোংরা রাজনীতি করছি! নাঃ এক্কেবারেই না, শুধু রাজনীতিটা আপনাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছি।
হুঁ আপনাদের মনে যে প্রশ্নের উদয় হয়েছে অবশ্যই তার উত্তর দেবো, কারণটা খুব সহজ, রাজনৈতিক ক্ষমতা হস্তান্তর বা হারানো জমি পুনরুদ্ধার। ২৫-২৬% ভোট যে সে কথা নয়!আর রাজনীতিতে যেকোনো দলের পক্ষেই সংখ্যাধিক্য একটা বড় কারণ এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ন কারণ। এখন প্রশ্ন কেন সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের কথা বললাম না, তার একটাই কারণ তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মত একত্রিত নয়, ভোটদানের ক্ষেত্রে তারা ভীষণ ভাবেই ছন্নছাড়া, তাদের ওপর চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়না, বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত, জাতপাত বিভিন্ন মতবাবাদে ভীষণভাবে দোদুল্যমান তাই। সেকারণেই এত তোষামোদ এবং এইজন্যেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এত মহার্ঘ্য ভারতবর্ষের সব রাজনৈতিক দলের কাছে। নাহলে ৫০কোটি মানুষের মৃত্যু কামনাকারিকে কেউ সেকুলার তকমা দিতে পারে?
সস্তায় এত ভালো পণ্য রাজনীতিতে আর আছে কিনা সন্দেহ! একটা কথা আছে না, মরা হাতি লাখ টাকা, এই মৃতদেহ নিয়ে সবসময়ই একাট tug of war হয়, আর এই মৃতদেহ টানাটানিতে যেই জিতবে তারই লাভ। একপক্ষ চাইবে দেহ লোপাট করে ঘটনা ধামাচাপা দিতে আর একপক্ষ চাইবে মানুষের আবেগে সুরসুরি দিয়ে তার স্মৃতিকে সজীব রাখতে, (প্রসঙ্গক্রমে এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো যদি সেই মৃতের বিগতদিনে কোন ন্যক্কর জনক ঘটনা বা অপরাধমূলক কাজের সাথেও যোগ থেকে থাকে, তাহলেও দশোচক্রে ভুত ও ভগবান হয়ে শহীদের মর্যাদা পাবে) । যেমন বুরহানওনি কাশ্মীরের, কি পার্লামেন্ট আক্রমণের নেপথ্য নায়ক বা অন্য কেউ এর প্রসঙ্গ আন্তে পারেন, কিন্তু আমি সে কথা বলছিনা বা বিশেষ কোন সম্প্রদায়ের দিকে আঙ্গুলও তুলছিনা ।
বাঃ রে রাজনীতি, বাঃ মরেও শান্তি নেই। রাজনৈতিক পালা বদলের ক্ষেত্রে কিন্তু মরা মানুষের দেহও ক্ষেত্র বিশেষে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরকম অনেক ঘটনার কথাই তো আপনারা জানেন শুধু তিন বাঁদরের মতো চোখ,কান আর মুখ বন্ধ রেখেছেন, রিজওয়ানুর কে মনে আছে নিশ্চয়, আর ৬৬সালের ঘটনাটা বাচ্চাটার নাম বোধহয় নুরুল! এর সাথে সাথে দেহ লোপাট বা ধামচাপা দেওয়ার ঘটনার কোথাও মনে করিয়ে দিচ্ছি, ভিখারী পাসোয়ান, পোর্টের ডিসি বিনোদ মেহতা কিংবা কামদুনি,হাত্রাস বা সিঙ্গুরের তাপসী !! নান্দিগ্রামের শবের মিছিল । কি কিছু মনে পড়ছে? এখন দেখার এবার কি হয়।
আমার একটাই অনুরোধ তদন্ত এবং বিচারটা যেন প্রহসন না হয়। কে গান গাইলো আর কে গাইতে পারলনা সেটাই দেখার।
রং দেখে ঢঙ করতে করতে রাজনৈতিক নেতাদের একঘেয়ে বস্তাপচা সিরিয়াল এর চেনা ছকের মতো চিত্র নাট্য হয়ে যাচ্ছে। দয়া করে মনে রাখবেন শহীদের মর্যাদা দিয়ে সবাই কে শহীদ করলে যেমন শহীদের অপমান তেমনি প্রকৃত শহীদ কে গায়েব করলেও সমান পাপ।
শেষে একটা কথাই বলবো সব খারাপ জিনিসেরই একটা ভালো দিক থাকে, এক্ষেত্রে যেমন মোমবাতি, ফুল, চা তেলেভাজার বিক্রি বাড়ে, বুদ্ধিজীবীরা time passএর বিষয় পায় আর মিডিয়া বা সবাদ সংস্থা তাদের ব্যবসা চালানোর খোরাক পায়।
তাই একটা গান গাইতে ইচ্ছা করছে “ফুলে গন্ধ নেই সে তো ভাবতেই পারিনা”, কোন ফুল এই ঘটনার গতি কোন দিকে নিয়ে যাবে তা ওপরওয়ালা জানেন ।