এক কুমারীর হৃদয়ভেদী প্রেমের বেদনাদায়ক গল্প ও শিবের আশীর্বাদে তাঁর মা নর্মদা হয়ে ওঠার গল্প
সুমন মুন্সী
ভারতের অন্যতম পবিত্র কুমারী নদী হলো নর্মদা, যার পরিক্রমা না করলে সাধক জীবন অসম্পূর্ণ, তপোভূমি নর্মদা বইটি সংগ্রহ করে পড়ুন। নিজের পবিত্র দেশের আত্মা কে চিনুন।
আসুন আগে ভৌগোলিক অবস্থান জানা যাক ।

নর্মদা মধ্যপ্রদেশের লাইফলাইন
নর্মদাকে মধ্যপ্রদেশের লাইফলাইন বলা হয়। মহাকাল পর্বতের অমরকন্টক চূড়া, যা মধ্যপ্রদেশের অন্যতম তীর্থক্ষেত্র থেকে নর্মদার উৎপত্তি। এটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে খাম্বাত উপসাগরে পড়েছে। নর্মদা ভারতের অভ্যন্তরে প্রবাহিত তৃতীয় দীর্ঘতম নদী।
নর্মদাই একমাত্র যার প্রদক্ষিণ করা মহান সাধকদের অবশ্য কর্তব্য
নর্মদা নদীর উৎপত্তি ও গুরুত্ব গ্রন্থে বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। এই গল্পগুলি অনুসারে, নর্মদা নদীর নিছক দর্শন থেকে উৎপন্ন ফল সম্পর্কেও তথ্য পাওয়া যায়। নর্মদাই একমাত্র নদী যা প্রদক্ষিণ করা হয়। পুরাণে উল্লেখ আছে যে গঙ্গায় স্নান করেও যে ফল পাওয়া যায় না তা কেবল নর্মদার দর্শনেই পাওয়া যায়।
প্রাচীন ধর্মীয় গ্রন্থে যে রেওয়া নদীটির উল্লেখ আছে তা ভারতের একটি পবিত্র নদী যার নাম নর্মদা। কথিত আছে যে গঙ্গা স্নান করলে যে পুণ্য হয় তা নর্মদা নদীর শুধুমাত্র দর্শনেই অর্জিত হয়। এই নদীর প্রতিটি নুড়ি দেবাদিদেব শঙ্করের মতো, যাকে নর্মদেশ্বর মহাদেব রূপে পূজা করা হয়। নর্মদার জন্মের গল্পটি খুবই মজার এবং তার চেয়েও মজার তার নদী হয়ে ওঠার গল্প। এটি একটি কিংবদন্তি যে তিনি ভগবান শিবের ঘাম থেকে 12 বছর বয়সী মেয়ে রূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাই শিবের মানসপুত্রীও বটে। তারপর জীবন তাঁর এমন প্রতারণার শিকার হয়, এমন মোড় নেয় যে তিনি প্রেমে প্রতারিত হন এবং তাঁর বান্ধবী ও প্রেমিক তাঁকে প্রতারণা করেন এবং ফলে তিনি তাদের মতের বিপরীতে প্রবাহিত হয়ে আরব সাগরে যান ।
তাই নর্মদা অবিনশ্বর
কথিত আছে নর্মদা কয়েক হাজার বছর তপস্যা করেছিলেন। ভগবান শিব এতে সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে দেখা দিলেন। এরপর নর্মদা তাঁর কাছ থেকে অনেক বর পেয়েছিলেন। এতে তিনি বিপর্যয়ের মধ্যেও অবিনশ্বর হওয়ার বর পেয়েছিলেন, পৃথিবীর একমাত্র যদি যা বিনাশের সময়ে ও ঠিক থাকবে ।সব পাপ, ধুয়ে যাবে শিবের বরে আর নর্মদাতে পাওয়া পাথরের শিবলিঙ্গ সেই আদি মহাদেব। এই কারণেই নর্মদাতে প্রাপ্ত শিবলিঙ্গের কোনো প্রতিকৃতি ছাড়াই পূজা করা হয়। এছাড়াও নর্মদা তার তীরে নিষ্পাপ পার্বতীর সাথে সমস্ত দেবতার বাসস্থানের বরও পেয়েছিলেন। তাই নর্মদা পরিক্রমা এতো পবিত্র মনে করা হয় ।
অন্যমত তিনি রাজা মাইখালের কন্যা নর্মদা
নর্মদা নদী সম্পর্কে কথিত আছে তিনি ছিলেন রাজা মাইখালের কন্যা। নর্মদা বিয়ের যোগ্য হলে মাইখাল তার বিয়ের দেবার ঘোষণা করেন। এটাও বলা হয়েছিল যে, যে ব্যক্তি গুলাবকাবলির ফুল (বিশেষ হলুদ রঙের গাঁদা জাতীয়ফুল) আনবে, তার সাথে রাজকন্যার বিয়ে হবে। এরপর অনেক রাজপুত্র এলেন কিন্তু রাজাদের কেউই মাইখালের শর্ত পূরণ করতে পারেননি। তখন যুবরাজ সোনভদ্র এসে রাজার গুলবাকাবলি ফুলের শর্ত পূরণ করলেন। এরপর নর্মদা ও সোনভদ্রের বিয়ে ঠিক হয়।
কেন নর্মদা তাঁর জীবন কুমারী থাকার ব্রত নিলেন
রাজা মাইখাল যখন রাজকুমারী নর্মদা এবং যুবরাজ সোনভদ্রের বিয়ে ঠিক করেন, তখন রাজকুমারী হবু বরকে একবার দেখতে চেয়েছিলেন। এ জন্য সে তার বন্ধু “জুহিলা”কে তার প্রেমেরবার্তা দিয়ে যুবরাজের কাছে পাঠায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও জুহিলা আর ফেরেনি। এরপর রাজকন্যা চিন্তিত হতে লাগল এবং সে তার খোঁজে বেরিয়ে পড়লেন খোঁজে। তারপর তিনি সোনভদ্রে পৌঁছে সেখানে জুহিলাকে রাজকুমারের আলিঙ্গনরতা দেখতে পান। এটা দেখে তার স্বাভাবিক ভাবেই খুব রাগ হলো দুজনের ওপর। তখনই তিনি আজীবন কুমারী থাকার শপথ নেন এবং উল্টো পথে হাঁটা শুরু করেন। কথিত আছে, তখন থেকেই আরব সাগরে মিশেছে নর্মদা। অন্যান্য নদীর কথা বলতে গেলে সব নদীই মূলত পূর্ববাহিনী হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়।
আরেকটি গল্প নর্মদার
নর্মদার প্রেমের আরেকটি গল্প হল সোনভদ্র ও নর্মদা অমরকন্টকের পাহাড়ে একসঙ্গে বেড়ে উঠেছিলেন। কৈশোরে দুজনের মধ্যে প্রেমের বীজ জন্মেছিল। তারপর সোনভদ্রের জীবনে অন্য নারী জুহিলা আসেন এবং তারা দুজনেই একে অপরকে ভালবাসতে শুরু করেন।
এরপর নর্মদা যখন এই কথা জানতে পারলেন, তিনি সোনভদ্রকে অনেক বুঝিয়ে শান্ত করতে পারলেন না। এর পর নর্মদা ক্রূদ্ধ হয়ে উল্টো পথে হাঁটলেন এবং আজীবন কুমারী থাকার প্রতিজ্ঞা করলেন।