স্কুল শুরু হচ্ছে অভিভাবকেরা রাখুন
ড:পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায়
অবশেষে প্রায় দু’বছর পরে রাজ্যের প্রায় সব স্কুল খুলে যাচ্ছে। বিকল্প অন লাইন শিক্ষা ব্যবস্থা আবার পরিণত হচ্ছে শিক্ষক ছাত্রের মুখোমুখি শিক্ষণ ব্যবস্থা অফ লাইনে। ভালো খবর। স্বস্তির খবর। সঙ্গে কিছু কিছু সমস্যাও হতে পারে, হবেও দীর্ঘদিনের অনভ্যাসকে আবার অভ্যাসে পরিণত করার পথে। দু’বছরে শিশুর শরীর ও মন অনেক কিছু ভুলে গেছে। অনেক কিছু বদলে গিয়ে কিছু অভ্যাস হয়েছে অনভ্যাস। কিছু অনভ্যাস হয়েছে অভ্যাস। এসব কিছু মাথায় রেখে পুরোনো ব্যবস্থায় ফিরতে সামনে কয়েক মাস কাটাতে হবে যৌথ লড়াই ও চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে। ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক ও প্রশাসনের সামগ্রিক লড়াই এ লড়াই। ফিরে আসার পথ নেই। আত্মসমর্পণের পথ নেই। জেতা ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প নেই এ লড়াইয়ে। এ পোস্ট একজন সচেতন নাগরিক ও চিকিৎসক হিসেবে সব গোষ্ঠীর যোদ্ধাদের প্রতি। সঙ্গে আগামীতে জয়লাভের জন্য তাঁদের আগাম অভিনন্দন।
●ছাত্রেরা প্রায় প্রত্যেকেই বাড়িতে বসে বসে ওজন বাড়িয়েছে। একাধিক তার কারণ। বেলা করে ঘুম থেকে ওঠা। রাত করে ঘুমাতে যাওয়া। প্রতিদিনের হাত পা চালানো ও খেলাধুলোর অভ্যাস চলে যাওয়া। খাওয়াকে জীবনের অন্যতম রিক্রিয়েশন হিসেবে ধরে নিয়ে স্ন্যাকিং করা, অর্থাৎ দুটো খাবারের মাঝে লাগাতার মুখ চালানো, ফার্স্ট ফুডের প্রতি আসক্তি, ইত্যাদি। এবার ঘুম থেকে সকাল সকাল ওঠার অভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে শুরু করতে হবে শরীর চর্চা, খেলাধুলা। খেতে হবে সুষম খাদ্য। ব্যাপার অত সহজ নয়। এতে অভিভাবকদের ঠান্ডা অথচ দৃঢ় ভাবে লেগে থাকতে হবে তাঁদের সন্তানদের সঙ্গে।
●এতদিনের অনভ্যাসে মনটাও হয়ে গেছে নড়বড়ে। আত্মবিশ্বাস তলানিতে এসে ঠেকেছে অনেক ছাত্রের। কিন্তু সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়তে হলে সিস্টেমের মধ্যে থেকেই লড়তে হয়। তাতে ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে নিজের কাজে শেষ পর্যন্ত নিখুঁত ও সঠিক করা যায়। তার সাথে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য অভিভাবকদের সবসময় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তাঁদের সন্তানদের পাশে দাঁড়াতে হবে। মনকে শান্ত করতে, তা বশে আনতে যোগাভ্যাস ও মেডিটেশন করতে হবে, যে বয়সে যা সহজ ও উপযুক্ত। মেডিটেশন মনকে শান্ত করে, এটা বৈজ্ঞানিক ও পরীক্ষিত সত্য।
●নতুন করে সবকিছু শুরু হওয়ার পর ছাত্রেরা নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে অতি দ্রুত মানিয়ে নিয়ে আগের মতো স্থিতাবস্থায় চলে আসবে এমন অবাস্তব চাহিদা ছাত্র সমাজের প্রতি পরিস্থিতির চাপ বাড়ায়। তাতে লাভের থেকে ক্ষতি বেশি হয়। অভিভাবদের সহনশীল হয়ে অপেক্ষা করতে হবে সে দিনটির জন্য, যে দিনটি থেকে তাঁদের বাচ্চারা শেষ বারের মতো স্কুল গেছিল এবং যা স্মৃতির আড়ালে চলে গেছে।
●এতদিন পর্যন্ত অভিভাবকেরা অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের বাচ্চার চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে অন লাইন কনসাল্টেশন করেছেন। তাদের বহু টিকা করা হয়নি। স্কুল শুরু করার আগে সেই টিকাকরণ অন্তত শুরু করতে হবে আবার, যাতে দ্রুত আপ টু ডেট হয়ে যায় বয়স অনুসারে টিকাকরণ স্ট্যাটাস। কোভিড ভ্যাক্সিন নিয়ে নিতে হবে প্রথম সুযোগেই। একবার অন্তত মুখোমুখি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে শারীরিক ও মানসিক ভাবে ছাত্র পিছিয়ে পড়েছে কিনা যাচাই করার জন্য।
●যে সব ছাত্রেরা বয়ঃসন্ধিতে পড়েছে এর মধ্যে, তাদের বিপরীত লিঙ্গেরা পরস্পরের মুখোমুখি হবে আবার ছোট থেকে বড় হয়ে যাওয়ার পর। একে অপরকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি দীর্ঘদিন দেখা না হওয়ার ফলে নিশ্চিতভাবেই পাল্টে যাবে। এই ব্যাপারে, তাদের বিপরীত লিঙ্গের প্রতি যৌন আকর্ষণের বিপন্নতা যাতে তাদের সমস্যায় না ফেলে তার জন্য সে সংক্রান্ত কাউন্সেলিং ও যৌন শিক্ষার দায়িত্ব বাড়িতে অভিভাবকদের ও স্কুলে শিক্ষকদের নিতে হবে তাদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশে। কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হবে ধরে নিয়েই। সেগুলো মিটেও যাবে এভাবে।
●দীর্ঘদিন মানুষের পদচিহ্ন না পড়ায় অনেক স্কুল হয়ে উঠেছে ধুলোমলিন, আগাছা সরীসৃপে ভর্তি। অসামাজিক কাজকর্মের আখড়া। স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকেও কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে সে সব বিপত্তি দূর করতে হবে নতুন করে স্কুল শুরু হওয়ার আগে। যদি তা এতদিনেও তাঁরা না করে থাকেন।
●স্কুলবাস বা কারপুল যাতেই বাচ্চারা স্কুল যাক না কেন, নতুন করে আবার তাদের শিখতে হবে বাচ্চাদের প্রতি কেয়ারিং হওয়া, সেফ ড্রাইভিং, যা এতদিনে তাদের অনেকেই ভুলে গেছেন।
●কোভিড স্বাস্থ্যবিধি উঠে গেছে ভালো কথা, কোভিড ভাইরাস মিউটেশন হতে হতে আরও শক্তিহীন হয়েছে তা আরও ভালো( মিউটেশন হলো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার জেনেটিক কনফিগারেশনের পরিবর্তন যাতে তারা প্রতিকূল পরিবেশে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে, সাধারণ ধারণা হিসেবে এমন নয় যে তাতে তারা আরও শক্তিশালী হয়, বিজ্ঞানীদের এটাই অভিমত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে) কিন্তু নিজেদের ভালো ও নিরাপদ থাকার দায়িত্ব সবথেকে বেশি নিজেদের। সুতরাং এখনও কিছুদিন কোভিড স্বাস্থ্যবিধি পালন কাম্য। এ ব্যাপারে বাড়ি ও স্কুল কারও উদাসীন হওয়ার কোনও জায়গা নেই।
লড়াই কঠিন। সামগ্রিক। কিন্তু সবাই মিলে অংশগ্রহণে এ কঠিন লড়াইয়েও জয়লাভ অবশ্যম্ভাবী। আবার বলছি। এত বছরের মানব সভ্যতা এক ভাইরাসের চোখরাঙানিতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে, এ কি করে হয়? আমরা কি এত শক্তিহীন?