অন্য নববর্ষের শপথ
সুমন মুন্সী
বাঙালি আমি জন্ম থেকে, পদবি তাই বলে,
লজ্জা পাই কি বাংলা বলে মানীগুণীর মাঝে?
ছেলেবেলার ব্যাকরণের ঈশ্বরচন্দ্র, কিংবা চারণ কবি,
নাকসীকাঁথার মাঠেই শুয়ে আছেন জসীমউদ্দীন এক কবি।
থাকলেন নাতো বদ্ধ ঘরে, বিদ্রোহী সে নজরুল কবি,
আনন্দমঠে সম্রাট বঙ্কিম একা বসে কেন থাকেন,
বন্দেমাতরমের কবি তিনি, একাকীত্ব কি ভালো সাজে।
পথের দাবি মেনে এসেছি, এক চরিত্রহীনের দেশে,
নেতাজীর মতো কাউকে পাইনা,
নেতা হয়ে হাল ধরবেন যে এসে।
শরৎচন্দ্র অমর হয়ে বেঁচে আছেন, দেবদাস এক লিখে,
পথে ঘটে দেবদাস এখন সবাই, মুফতে মদ্য পেলে!
রবিঠাকুর আমার মনের ঠাকুর, বাংলার নয়ন মণি,
সেই রবিকেও ব্যাঙ্গ করে কালা রোদ্দুর জানি ।
যদি জন্ম তব বঙ্গে, জেনো মাইকেল ছিলেন সঙ্গে,
মেঘনাথ বধ পড়ে দেখো মধুসূধন নাম কেন বঙ্গে?
যে জাতি আজ ঘুমিয়ে গেছে নীল, লাল আর গেরুয়ায়,
সে জাতি কি, ভুলে গেছেন এক বিলে ছিলেন, এই বাংলায়।
রবিশঙ্কর বাজায় সেতার, অন্নপূর্ণার সাথে,
তাঁরই দাদা উদয়শঙ্কর নটরাজ নাচ নাচেন।
আল্লারাখার তবলার বোল, আলী আকবরের সরোদ,
বিসমিলার সানাই জানায়, সব কাজ শুভ হোক।
সেরা শিল্পী রামকিঙ্কর সাথে যামিনী রায়,
রং তুলি দিয়ে কবিতা লেখেন, সমাজদারের কদর পায়।
হুমায়ূনের সাথেই আছেন দেখো,
শঙ্খ, সুনীল,শক্তি আর শামসুর রাহেমান,
বাংলা মায়ের সোনার ছেলে এমনি তাঁদের সম্মান,
বুদ্ধদেব আর সমরেশ প্রবন্ধে বেজায় পন্ডিত,
সুকুমারের ছেলে দেখো ছিলেন সত্যজিৎ,
রায় বংশের কুলপ্রদীপ, অস্কার করে কুর্নিশ।
প্রশান্তচন্দ্র, মেঘনাথ সাহা, সত্যেন বোস, ছাত্র যাঁদের ছিলেন,
প্রফুল্ল আচার্য্য বা জগদীশ স্যার তাঁদের এক নামে সবাই জানে ।
নীলরতন আর বিধান রায় সাথে আরজি কর,
সেরা ডাক্তারদের ঠিকানা ছিল, এই বাংলারই ঘর,
গানের রাজা হেমন্তের সাথে পাল্লা দেন মান্না,
শ্যামল সুধীন, ধনঞ্জয় সেও তো নয় ফেলনা,
সন্ধ্যা তাঁরার আলোয় ভরা সুরের আকাশ যে,
প্রদীপ জ্বেলে আছেন আরতি, পূর্ণিমার রাতে।
গান বেঁধে যায় পুলক দেখো নচিকেতার সাথে,
লক্ষ মুজিব ডাক দিয়ে যায় একা গৌরীপ্রশন্ন এসে,
ছায়াছবির আমার প্রিয় ছবি বিশ্বাস আর সৌমিত্র,
ছায়াদেবী কানন দেবী আজ যেন অমৃত,
এতো করে বলি তবু ভরে না যে ভক্তের মন ,
উত্তম সুচিত্রা অমর জুটি জগৎ মানে যে।
নববর্ষে সর্ষে ইলিশ, চিংড়ি মালাই সাথে থাকুক পোলাও,
গাছপাঁঠার জবাব নেই, মুড়িঘণ্টও চাই সাথে,
কচিপাঁঠার ঝোল খেয়ে সবাই বলে আহা,
শুঁটকিমাছের ভর্তায় মজে বাঙালের বেটা ।
শেষ পাতে চাই আমের চাটনি সঙ্গে দই আর সন্দেশ,
কলকাতার রসোগোল্লায় মজে আছে যে সারা দেশ।
এ সব ফেলে বাঙালি এখন চাইনিজ খায় ডিনারে,
দিনেরবেলা কায়দা করে ধুতি ছেড়ে জিন্স পরে।
নিজের দেশ নিজের বেসভূষা নিয়ে করে লজ্জায় মাথা হেঁট,
জাপানি কি লজ্জা পায়, পরে কিমোনো বেশ?
একবার তো ভেবে দেখো রামকৃষ্ণের দেশ,
মতের লড়াই করে এখন পুড়ছে কি সোনার দেশ?
বীর সুভাষই তোমার নেতা, আর কেউ নেই যেন,
ধান্দাবাজের মাঝে তিনি এক মহাপুরুষ জেনো।
এস আবার শপথ করি নিজের মায়ের নামে,
বাংলা আমার প্রাণের ভাষা, গর্বিত আমি সে সাজে।
একদিন নয় রোজ হোক, বাঙালি তোমার জয়,
আত্মসম্মান বিক্রি করে যে,
তোমার নেতা সে কখনো নয় ।
জয় বাঙালী, ভারত মাতার সেরা এক সন্তান,
তোমার জন্যই ভারত পেলো প্রথম নোবেলের সম্মান।
আবার তুমি জেগে ওঠো এই চৈতের শেষে,
নতুন করে মহাপুরুষ জাগুক, মৃত বাঙালির মাঝে।
আজকে এস শপথ করি, আসমান কে হাতে ধরি,
ভাতৃঘাতী কর্ম নাশে, বিরত সবাই হই।
নতুন বছর সবার কর্ম দিক,
বিদ্যা শিক্ষায় সুদিন দিক,
ভারত গড়ায় নজির গড়ুক, আবার বাংলা সবার আগে চিন্তা করুক,
শুভ নববর্ষ জিন্দাবাদ, হিন্দুস্থান সবার আগে থাক।