অনির্বাণ চক্রবর্তী
“সামনে তাহার খাদ্য ঝোলে যার যে রকম রুচি-
মণ্ডা মিঠাই চপ্ কাট্লেট্ খাজা কিংবা লুচি ।
মন বলে তায় ‘খাব খাব’, মুখ চলে তায় খেতে,
মুখের সঙ্গে খাবার ছোটে পাল্লা দিয়ে মেতে ।” – (সুকুমার রায়)
কি ভাবছেন? হ্যা ঠিকই ভাবছেন।জানি মনে মনে হাসছেন।একটু জোড়েই হাসুন না কেনো, ভয় কি নিজের ঘরেই তো বসে আছেন কেউ শুনতে পাবেনা।আসলে কি জানেন আমরা সবাই চিৎকার করে হাসতে চাই, কথা বলতে চাই,অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও করতে চাই, কিন্ত পারিনা।কেনো জানেন?কারন আমরা সবাই শান্তিতে থাকতে চাই।কি দরকার অহেতুক কোনো ঝামেলায় জড়িয়ে? ওসব সিনেমাতে মানায়।আমরা তো আর ক্রান্তিবীরের নানা পাটেকার নই বা দামিনী র শানি দেওল।
“তারিখ পে তারিখ ” সিন দেখে আমরা হাততালি দেই অথচ বাস্তব জীবনের ফার্স্ট বেঞ্চ,সেকেন্ড বেঞ্চ অথবা ডিভিশন বেঞ্চ দেখে হঠাৎ করেই মনে পরে যায় ঘরের দামী সোফা বেঞ্চের পেছনের কাঠটা লাগানো হয়নি।একটি নাবালিকা ধর্ষণের ঘটনা টিভিতে দেখে আমাদের মন ঘেন্নায় রাগে ভরে ওঠে ঠিক ততক্ষণ ই যতক্ষণ না অফিসে যাওয়ার তাড়া মাথায় আসে অথবা কড়াইয়ে বসানো সব্জীর পোড়ার কথা মাথায় আসে। মানে খুব বেশি হলে ৫ মিনিট!
আমাদের ব্যস্ততায় ভরা দুর্মূল্য জীবনে এই ৫ মিনিট অজানা কোনো সত্ত্বা বিহীন বা অন্ত-সত্ত্বা হীন নাবালিকা কে দেওয়া কি কম কথা? আবার আমাদের মিডিয়াকে দেখুন একটি নিস্পাপ নাবালিকার ওপরে অত্যাচারের ঘটনা শোনানোর পর আমরা কিন্তু মুহূর্তে আপনাদের নিয়ে চলে যাই ত্বক পরিস্কারের কোনো প্রসাধনী সামগ্রীর স্বপ্নীল লাস্যময়ী কোনো এক রুপকথার রাজ্যে।শরীর তো পরিস্কার হয় কিন্তু মনের নোংরা???
ছাড়ুন, এসব ভাষন শোনার বা বলার ইচ্ছে বা সময় আমাদের নেই। আমরা জীবিত কারন আমাদের হাতের নাড়ী চলছে আর আমরা দৌড়চ্ছি, কারন আমাদের আশা-আমাদের স্বপ্ন খুড়োর কলের মতো সামনে ঝুলছে বলে।”আশায় মরে চাষা” – সত্যি কি? কে জানে ধুর এতোসব বুঝিনা বাপু। বাপুজি বুঝতেন।বাপুজি নেই তাই আমাদেরও বুঝে কাজ নেই। কিন্তু মাঝে মাঝে অন্ধকার রাতে ঘুম ভাংলে একটু চিন্তা হয় পাশে ঘুমিয়ে থাকা আমার ১৩ বছরের মেয়েটির জন্যে।হটাৎ ই মনে পরে যায় ৪২ ইঞ্চি দামী টেলিভিশন এর পর্দায় ভেসে ওঠা ঐ আগুনে পুড়িয়ে মারা রক্তাক্ত মেয়েটির মুখটা।
কি জানি এক অজানা আতংকে ঘুমন্ত মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরি,অজানা ভয়ে হঠাৎ করেই চোখের কোনে জল আসে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরি আমার মেয়েটিকে, মনে হয় কোনো অদৃশ্য শ্বাপদ ছুটে আসছে, আমার মেয়েটিকে আমার বুক থেকে ছিনিয়ে নিতে।খুব কষ্ট হয় বুকের ভেতর।আর ঠিক তখনই নরম নিষ্পাপ দুটো হাত ঘুমের মধ্যেই জড়িয়ে ধরে আমার গলা। নিজের অজান্তেই আমার চোখ থেকে দু ফোটা জল ভিজিয়ে দেয় মেয়েটির গাল।জানিনা কার জন্যে এই জল টিভিতে দেখা অজানা মেয়েটির জন্যে, না আমার একমাত্র মেয়েটির ভবিষ্যৎ কোনো অজানা দুশ্চিন্তা র জন্য।
তুম্হি হো মেরে স্বপ্ন কি সওদাগর,
ওর তুম্হি হো মৌত কি ফারিস্তা,
যাব জিন্দেগী নে দি ধোঁকা,
তব ফরিয়াদ কিয়া মৌত কা ।
~ সুমন মুন্সী ~