“যোগঃ কর্ম সুকৌশলম্”
ডাঃ রঘুপতি সারেঙ্গী।
আজ আন্তর্জাতিক যোগ দিবস। ভারতবর্ষ সহ সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মহার্ঘ্য এই দিন তার নিজস্ব মহিমায় পালিত হচ্ছে।
তাই প্রথমেই মনে হয়, ‘যোগ’ এই বিষয় টি কী তবে? আপনার শিশু ও বলে দিবে এর উত্তর। “২ এর সাথে ২ এর যা করলে ৪ হয়, সেটাই যোগ।” একদমই ঠিক। আমরা যারা একটু বড়ো হয়েছি, তাদের কাছেও ‘যোগ’ বলতে এটুকুই, না কি আর একটু কিছু ? আসলে, যোগ শব্দটি √যুজ থেকে নিষ্পন্ন হয়েছে যা’র মানে যুক্ত হওয়া। To unify our Lower self to the Higher self of our existence through a specified process. পাশাপাশি, এটা মনে রাখা ভীষণ ই জরুরী, যোগ এর সাথে ধর্মের কোনোভাবেই কোনো সম্পর্ক নেই কিন্তু Spirituality র সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে।
গীতা’র মতো Internationally recognised Scripture
যোগ এর সংঙা দিচ্ছেঃ ” যোগঃ কর্মসু কৌশলম্ “। যোগ মানে এক অনুশাসন, যোগ এক আত্ম-অনুসন্ধান, সুস্থ দেহ-মন নিয়ে দীর্ঘ্যায়ূ হয়ে বেঁচে থাকার এক উন্নততর জীবন-দর্শন।
যোগ এর পটভূমি যেহেতু আর্যাবর্ত (বর্তমানে ভারতবর্ষ)
তাই বেদ-উপনিষদ হয়ে শ্রীমৎ ভগবৎ গীতার ছত্রে ছত্রে
যোগ অনুধ্যান এর নিদান। যর্জু বেদ এ পাওয়া যায়,
” যোগে যোগে তবস্তরম্ বাজে বাজে হবামহে। শখায় ইন্দ্রম্ উতয়ে।।”
ঋষি নিরবচ্ছিন্ন যোগ অভ্যাস করার জন্য, দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে প্রার্থনা জানাচ্ছেন।
স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ সখা, অর্জুন কে যোগ এর শৈলী শোনাচ্ছেন ঠিক এই ভাষা তে …….
” যোগস্থ কুরু কর্মাণী সঙ্গং ত্ব্যক্ত্বা ধনঞ্জয়।
সিদ্ধি অসিদ্ধিয়োঃ সম ভূত্বা সমত্বং যোগ উচ্যতে।। “
Be steadfast in the performance of your duties,O Arjuna, abandoning attachment to success and failure, such equanimity is called YOGA.
মহাভারতে কপিল মুনি’র সাংখ্য-দর্শনের স্পষ্ট উল্লেখ আছে। এই যোগ এর একটি বিভাগের নাম ‘হঠযোগ ‘ মৎস্যেন্দ্রনাথ, গোরক্ষনাথ, চৌরঙ্গিনাথ প্রভৃতি “নাথ-সম্রদায়” এই দেহ-ভিত্তিক যোগ এর উদ্গাতা। কিন্তু যাঁর নাম আজ উচ্চারণ না করলে এই আলোচনা অসমাপ্ত থেকে যাবে তিনি মহামুনি পাতঞ্জল ওরফে পতঞ্জলী।
ইনিই Founder-Composer of Systemic Yog-Philosophy । ১৯৫ টি সূত্রের মাধ্যমে ৪ টি পৃথক পাদ ( পরিচ্ছেদ) এ ইনি আমাদের দিয়ে গেছেন সামগ্রিক যোগদর্শণ…. “যোগ সূত্র “।
মহর্ষি পতঞ্জলী লিখে গেছেন ” মহা-ভাষ্য ” যা আজও সংস্কৃত ব্যাকরণ এর এক অনন্য সম্পদ। দিয়ে গেছেন, ” চরক বার্তিকা “…. চরক সংহিতার উপর আধারিত মূল্যবান টিকা যা আয়ূর্বেদ জগতের এক রত্নভান্ডার।
পতঞ্জলী মুনি তাঁর যোগ-সূত্র এর ১ ম সূত্রে লিখছেনঃ
” অথঃ যোগ অনুশাসনম্ । ” কেন, প্রথমেই অনুশাসন এর প্রয়োজন পড়লো ? প্রয়োজন পড়লো কারন, আমাদের মন অবিদ্যা- অস্মিতা-রাগ-দ্বেষ-অভিনিবেশ
এই পঞ্চ-ক্লেশে জর্জরিত। ক্ষিপ্ত (সদা চঞ্চল), মূঢ (নির্বোধ), বিক্ষিপ্ত ( বহির্মুখী) মনে যোগ অভ্যাস আপাত অসম্ভব। একে প্রথমে ‘একাগ্র’ এবং সবশেষে ‘নিরূদ্ধ’
বানাতে হবে।
তাহলেই হবে, ” যোগঃ চিত্ত বৃত্তি নিরোধঃ।” (২য় সূত্র)।
সত্য-রজঃ-তম এই তিন এর প্রভাব থেকে মন মুক্ত হবে।
লাভ কী, এসব করে ? মহামুনি এর সদুত্তর দিচ্ছেন তাঁর ৩ য় সূত্রে…” ত্বদা দ্রষ্টু স্বরূপে অবস্থানম্”। তা হলেই হাজারো বৈপরীত্য ও প্রতিকূলতার মাঝেও একজন মানুষ দৈহিক ও মানসিক চাঞ্চল্যে নিজেকে প্রভাব-মুক্ত রেখে সে তার স্বরূপ এ থাকতে পারবে। এটাই মুনি’র রচনার শেষ-পাদ (কৈবল্যপাদ)… অর্থাৎ ‘মোক্ষপ্রাপ্তি’।
আর ‘মোক্ষ’ মানে ই ” আত্যন্তিক দুঃখ নিবৃত্তি পরমানন্দ প্রাপ্তিশ্চ”…. Permanent cessation of all miseries and attainment of all desires, all glories.”
তামিলনাড়ুর ব্রহ্মপুরীশ্বর মন্দিরে যোগ-অনল এর মাঝে যোগ-সমাধি তে বসে, মহামুনি পতঞ্জলী আজ ও হয়তো আমাদের সে কথাই বোঝাতে চাইছেন।