হস্তশিল্পজাত বস্ত্রের অভাবনীয় সৌন্দর্য্য ও বৈচিত্র্য; ভারতের বিশেষ ঐতিহ্য

0
807
Textile Industry by Wikipedia
Textile Industry by Wikipedia
0 0
Azadi Ka Amrit Mahoutsav

InterServer Web Hosting and VPS
Read Time:8 Minute, 2 Second

হস্তশিল্পজাত বস্ত্রের অভাবনীয় সৌন্দর্য্য ও বৈচিত্র্য; ভারতের বিশেষ ঐতিহ্য

By PIB Kolkata

• ডঃ বি কে বেহরা

হস্তশিল্পের তৈরি বস্ত্রের বিশেষ সৌন্দর্য্য রয়েছে। বয়ন শিল্পীদের দক্ষতা ও নৈপুণ্য মিলেমিশে তৈরি করে হস্তজাত বস্ত্র। এ ধরনের পেশাদারী কাজকর্ম ছাড়াও, এটা মনে করা হয় যে, বয়ন শিল্পীদের মন ও মানসিকতা চূড়ান্তভাবে ফুটে ওঠে তাঁদের তৈরি কাপড়ের। তাই, প্রতিটি কাপড়ই হয় আলাদা রকম সুন্দর। যদি খুব সূক্ষ্মভাবে বিচার করা হয়, তা হলে দেখা যাবে হাতে তৈরি করা হয় বলে, এ ধরনের কাপড়ে নানারকম সুতোর সংমিশ্রণ ঘটানো সম্ভব। পাশাপাশি, যে ধরনের নক্শা বয়ন শিল্পীরা ফুটিয়ে তোলেন তাঁদের হাতের কারুকার্যের মাধ্যমে, তা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে করা সম্ভব নয়। সুতো, নক্শা, বিশেষ ধরনের কাপড়ের ব্যবহার এবং কাপড় যতটা টেকসই হয় – সব মিলেমিশে এ ধরনের বয়স শিল্পীদের তৈরি কাপড়ের মান সবসময়েই বিশেষ উচ্চতায় পৌঁছয়। হস্তশিল্পীদের তৈরি কাপড় নরম এবং পরিধানে আরামদায়ক হয়। এমনকি, নষ্টও হয় কম। এর প্রধান কারণ হ’ল – একজন ব্যক্তি নিজে এটি তৈরি করেন। তাই, এ ধরনের কাপড়ের তৈরি পোশাক গরমকালে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে ও শীতকালে শরীর গরম রাখতে সহায়ক হয়। হস্তশিল্পীদের তৈরি করা কাপড়ের নানা রঙ ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ – কাশ্মীরের কানিজামাওয়ার শালের কথা বলা যায়। এ ধরনের শালে প্রায় ১০০ রকমের রঙ ব্যবহার করা হয়।

ভারতের যে নানা ধরনের কাপড় তৈরি করা হয়, তা আপনাকে আশ্চর্য করবে। ভারতীয় ঐতিহ্য, উৎসব-অনুষ্ঠান, রীতি-নীতি সবকিছুই ফুটে ওঠে পোশাকের মাধ্যমে। বিভিন্ন রাজ্যের নিজস্ব সাংস্কৃতি ঐতিহ্য রয়েছে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন রকম পোশাক পরিধান করেন সেই এলাকার মানুষেরা। আপনি জানলে অবাক হবেন যে, শুধুমাত্র নানারকমের পোশাক নয়, রাজ্যভেদে কাপড়েরও গুণগত মান পরিবর্তন হয়। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব বয়নশৈলী রয়েছে। অরুণাচল প্রদেশের আপাটানি, অসমের মুগা সিল্কের মেখলা চাদর, বিহারের ভাগলপুরী সিল্কের শাড়ি, ছত্তিশগড়ের কোশা সিল্কের শাড়ি, গোয়ার পুনবি, গুজরাটের বাঁধনি, হরিয়ানা পাঞ্জাদুরির, হিমাচল প্রদেশের কুলুশাল, ঝাড়খন্ডের কুচাই সিল্ক, কর্ণাটকের মাইশোর সিল্ক, কেরলের কাসাভু, মধ্যপ্রদেশের চান্দেরি, মহারাষ্ট্রের পীঠানি, মণিপুরের পোশাক ফানেক, মেঘালয়ের এরি সিল্ক, মুজোরামের কুয়ান, নাগাল্যান্ডের নাগা শাল, ওডিশার ইক্কত শাড়ি, পাঞ্জাবের ফুলকারি, রাজস্থানের শিশা, সিকিমের লেপচা, তামিলনাডুর কাঞ্জিভরম সিল্ক শাড়ি, তেলেঙ্গার পোচমপল্লী ইক্কত এবভং ত্রিপুরার পাছরা ইত্যাদি তাদের রঙ, ডিজাইন, মূল উপাদান এবং বয়নশৈলীতে আলাদা।

আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে সম্পদ রয়েছে, তা হ’ল প্রায় সব রাজ্যেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বয়ন শিল্পী রয়েছেন। তবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা, অপর্যাপ্ত গবেষণা, পণ্যের মান ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যথাযথ তথ্যের অভাব ও রপ্তানী বাজারের অপ্রতুলতা এই শিল্পকে অনেকটাই পেছনে ফেলে রাখে। বয়ন শিল্পীদের দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন দরকার। তাঁদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, গুণগতমানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহের জন্য প্রযুক্তিগত জ্ঞানও বাড়াতে হবে।

হস্তশিল্পীদের তৈরি পণ্যের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হ’ল – পণ্যটির ব্র্যান্ডিং। জাতীয় স্তরে কি ধরনের নক্শা বা কাপড়ের চাহিদা রয়েছে, তা বোঝার জন্য একটি হস্তশিল্প গবেষণা কেন্দ্র চালু করা উচিৎ। এই পদক্ষেপগুলি যদি সঠিকভাবে মেনে চলা হয়, তবে অবশ্যই এই শিল্প উপকৃত হবে। পরিবর্তন মেনে নিলে ও সঠিকভাবে সুসংগঠিত হলে ভারতীয় হস্তশিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। ঐতিহ্যপূর্ণ হস্তশিল্প সামগ্রী রপ্তানীর পাশাপাশি, এই ক্ষেত্রে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাও বাড়বে। আধুনিক চিন্তাভাবনার পাশাপাশি, দেশের দরিদ্র ও গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে এবং আমাদের ঐতিহ্য রক্ষার জন্য তাগিদ থাকলে এই শিল্প আরও উন্নত হবে। গুণগতমান পরীক্ষা কেন্দ্র, হস্তশিল্পের উদ্ভাবনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। এটি প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের সঙ্গেও বিশেষভাবে জড়িত।

লেখক বিশ্বাস করেন যে, হস্তশিল্পের মানোন্নয়নের জন্য এটি যথার্থ সময়। কারিগরি ও দক্ষতার মানোন্নয়নের মাধ্যমে ঐতিহ্যপূর্ণ এই ক্ষেত্রটির পুনরুজ্জীবন সম্ভব। কেন্দ্রের উচিৎ বর্তমানে সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়া হস্তশিল্পের পুনরুজ্জীবনের জন্য ঐতিহ্যপূর্ণ নক্শাগুলিকে ব্যাপকভাবে প্রচার করা। এটি এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে ব্যাপক জ্ঞান ও দক্ষতার প্রয়োজন, আমাদের তা রয়েছেও। ভারতীয় বয়ন শিল্পীদের রক্তে প্রবাহিত হয় হস্তশিল্প। পুরনো নক্শার সঙ্গে নতুন প্রযুক্তি মিশিয়ে পণ্য তৈরির সময় এসেছে এখন।

হস্তশিল্প হ’ল এমন একটি কলা, যেখানে অসম্ভব দক্ষতা ও পরিশ্রমের পাশাপাশি, কল্পনারও প্রয়োজন। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এ ধরনের বিশেষ দক্ষ বয়ন শিল্পী রয়েছেন অনেক। তাঁদের সামনে আনতে হবে।

লেখক:  ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনলজি দিল্লির বস্ত্র ও তন্তু শিল্প বিভাগের অধ্যাপক

About Post Author

Editor Desk

Antara Tripathy M.Sc., B.Ed. by qualification and bring 15 years of media reporting experience.. Coverred many illustarted events like, G20, ICC,MCCI,British High Commission, Bangladesh etc. She took over from the founder Editor of IBG NEWS Suman Munshi (15/Mar/2012- 09/Aug/2018 and October 2020 to 13 June 2023).
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Advertisements

USD





LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here