ভারতে ১ লক্ষের বেশি গ্রাম খোলা উন্মুক্ত স্থানে শৌচমুক্ত
আমাদের দেশ পরিবর্তনের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের সামনে গ্রামীণ ভারতে পরিবর্তন আনার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা অবশ্যই সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে সঠিক দিশায় এগোচ্ছি। বর্তমানে ভারত সরকারের স্বচ্ছ ভারত মিশন গ্রামীণ কর্মসূচির আরও একটি নতুন মাইল ফলক স্পর্শ করেছে। দেশের ১ লক্ষ ১ হাজার ৪৬২টি গ্রাম উন্মুক্ত স্থানে শৌচমুক্ত-ওডিএফ।
এই গ্রামগুলি তাদের ওডিএফ তকমা ধরে রেখেছে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ও স্বচ্ছতার কাজে বিশেষ ভূমিকা পালনের মধ্যে দিয়ে নিজেদের গ্রামগুলিকে স্বচ্ছ, সবুজ এবং স্বাস্থ্যকর করে তুলেছে।
প্রায় ৮ বছর আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মহাত্মা গান্ধীর সার্ধ শত জন্মবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশকে উন্মুক্ত স্থানে শৌচমুক্ত করার লক্ষ নিয়ে লালকেল্লার প্রাকার থেকে স্বচ্ছ ভারত মিশনের সূচনা করেছিলেন। তার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বে দেশ একযোগে বিশ্বের বৃহত্তম আচরণ পরিবর্তনমূলক এই প্রচারাভিযানে সামিল হয় ও রাষ্ট্রসংঘের স্থির করা নির্দিষ্ট সময়ের ১১ বছর আগেই ২০১৯ সালের দোসরা অক্টোবর লক্ষ্য পূরণ করে। যদিও এর মধ্যে দিয়েই এই মিশন শেষ হয়নি, এটি আরও চ্যালেঞ্জিং ও অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার ভিত্তি স্থাপন করেছিল। দেশের গ্রামগুলিকে উন্মুক্ত স্থানে শৌচমুক্ত করতে ও সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কাজ শুরু হয়।
১ লক্ষ গ্রাম উন্মুক্ত স্থানে শৌচমুক্ত হওয়া কোনো ছোট সাফল্য নয়। গ্রামীণ ভারতের জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও ছিল এক নতুন কর্মসূচি। জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনের পাশাপাশি প্যাকেটজাত খাদ্য সামগ্রী থেকে সৃষ্ট বর্জ্য গ্রামীণ এলাকার নোংরা ছবি ফুটিয়ে তোলে যা কার্যকরভাবে পরিবর্তন করা জরুরি।
স্বচ্ছ ভারত মিশন গ্রামীণের এটি হল দ্বিতীয় ধাপ যা সঠিকভাবে সব ধরণের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করবে ও আমাদের গ্রামগুলিকে স্বচ্ছ করবে। এছাড়াও গ্রামীণ এলাকায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি জীবনযাত্রার নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে। সরকার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ও নাগরিকদের জীবনযাত্রার গুণগত মান বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
একটি গ্রামকে উন্মুক্ত স্থানে শৌচমুক্ত ঘোষণা করার অর্থ এই নয় যে ওই গ্রামটি বায়ো ডিগ্রেডেবল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং ধূসর জল ব্যবস্থাপনার সব মান সঠিকভাবে পূর্ণ করেছে। বর্তমানে ৫৪ হাজার ৭৩৪টি গ্রামে প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার রয়েছে। ২৯ হাজার ৬০৭টি গ্রামকে উন্মুক্ত স্থানে শৌচমুক্ত প্লাস মডেল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
দেশে বর্তমানে ৯৯ হাজার ৬৪০ টি গ্রামে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও ৭৮ হাজার ৯৩৭টি গ্রামে তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা রয়েছে। ৫৭ হাজার ৩১২টি গ্রামে এই দুই ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনারই সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো ফল করা প্রথম ৫টি রাজ্য হচ্ছে তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ এবং হিমাচলপ্রদেশ। এই ৫ রাজ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রামে উন্মুক্ত স্থানে শৌচমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজ্যগুলিকে অর্থনৈতিক কারিগরি ও ক্ষমতা বাড়ানোর মতো সম্ভাব্য সব রকম সাহায্য দেওয়া হচ্ছে।
পর্যাপ্ত তহবিল পাওয়ার সুবিধা : ভারত সরকার ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে স্বচ্ছ ভারত মিশন গ্রামীণ-এর দ্বিতীয় পর্যায় মঞ্জুর করে। এর জন্য মোট ব্যয় ধার্য করা হয় ১ লক্ষ ৪০ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা। পঞ্চদশ অর্থ কমিশন এবং এমজিএনআরইজিএ-র মাধ্যমেও এই কাজের জন্য তহবিল পাওয়া যাচ্ছে।
কারিগরি সহায়তা : রাজ্য, জেলা, ব্লক ও পঞ্চায়েত স্তরে যথাযথভাবে ও দ্রুততার সঙ্গে প্রকল্প রূপায়ণ নিশ্চিত করতে ক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এই লক্ষ্যে দেওয়া হচ্ছে নানা রকম কারিগরি সহায়তা, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি। রাজ্যগুলিকে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা কারিগরি সহায়তা পুস্তিকাও দেওয়া হচ্ছে।
ক্ষমতা বৃদ্ধি : কঠিন ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কারিগরি পরিকাঠামো প্রয়োজন। এক্ষেত্রে প্রচুর সংখ্যক দক্ষ প্রশিক্ষক প্রয়োজন। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে স্বচ্ছ ভারত মিশন গ্রামীণ প্রকল্প যথাযথ রূপায়ণের জন্য রাজ্যগুলিতে ৫ দিনের বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা হচ্ছে। এর সহযোগিতায় রয়েছে ইউনিসেফ। এখান থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্তরা গ্রামের সরপঞ্চ বা প্রধানদের উন্মুক্ত স্থানে শৌচমুক্ত করার বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন।
স্বচ্ছ ভারত মিশন গ্রামীণ-ও জন-আন্দোলনে পরিণত হচ্ছে। মানুষের মধ্যে স্বচ্ছতার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস গড়ে তুলতে এবং কঠিন ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সব রকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এই লক্ষ্য পূরণের জন্য দেশের গ্রামগুলির পুরুষ ও মহিলা উভয়ের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। স্বচ্ছগ্রাহী মিস্ত্রী বা সবুজ অ্যাম্বাসেডারের চালক হিসেবে তারা কাজ করতে পারেন।
পাঞ্জাবের লুধিয়ানা জেলার রাজকোট ব্লকের শাহবাজপুর গ্রামের এক কৃষক আজমের সিং খড় পোড়ানো বন্ধ করে দেন। তিনি সফলভাবে এই শস্য ব্যবহার করে একটি বায়ো গ্যাস কারখানা স্থাপন করেছেন। তার বাড়িতে এখন বিনামূল্যে স্বচ্ছ জ্বালানীতে রান্না হয় এবং গরুর গোবর সার ব্যবহার করে জমির জন্য জৈব সারও তৈরি করেন তিনি।
অন্যদিকে শ্রীমতী রিচাবতী একজন সক্রিয় জননেত্রী। তাদের গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য তিনি ২০২১-২২ সালে ২ হাজার ৫০০ বর্গফুট জমি দান করে একটি বায়ো গ্যাস কারখানা চালু করেছেন। উত্তরাখন্ডের উধমসিং নগর জেলার সীতারগঞ্জ ব্লকের সালমাত্তা গ্রাম পঞ্চায়েতে গোবর্ধন কারখানাটি স্থাপন করা হয়েছে।
আমি স্বচ্ছগ্রাহীদেরকেও কুর্নিশ জানাই যারা সামনে থেকে কাজ করছেন। বিভিন্ন রাজ্যে তাদের নাম বিভিন্ন রকম। কিন্তু জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জনগণকে যুক্ত করতে তাদের ভূমিকা অতুলনীয়।
আগামী তিন বছরে আরও অনেক কিছু করতে হবে। কিন্তু আমি নিশ্চিত ও আত্মবিশ্বাসী যে আমার দেশের জনগণ বাস্তব অর্থে স্বচ্ছ ভারত গড়ে তোলার জন্য হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করবেন।
লেখকঃ ভিনি মহাজন, ভারত সরকারের পানীয় জল ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা বিভাগের সচিব