মিশির আলীর দিওয়ালীর প্রদীপ
সুমন মুন্সী
বাবু এবার প্রদীপ নেবেন না?
পাশ দিয়ে চলে যেতে দেখে,
প্রশ্ন করে বুড়ো মিশির আলী।
না মিশির ভাই, “ব্যবসার অবস্থা ভালো নয়”,
এবার থাক “ভগবান চাইলে” আগামীবার নেবো।
করুন মুখে মিশির আলী চেয়ে থাকলে,আমার যাওয়ার পথে,
দূর থেকে একবার পিছন ফিরে দেখলাম, তাঁকে।
চোখের কোলে কি ছল ছল করছে জল?
বুকের মাঝে মিছে কথা করে খচ খচ ।
আমাদের কালী সেজেছে দিওয়ালীর আলোর মালায়,
আজ তিরিশ বছর ধরে প্রদীপ গড়েছে মিশির আলীর হাত,
সে প্রদীপের আলোয় রং দিয়েছে হয়েছে অশনাই,
সাথে আমাদের মিশির আলীর ভালোবাসার খুশির রোশনাই।
আজ হঠাৎ ওদের হাতের তৈরী মাটির প্রদীপ জ্বালা যাবে না।
বিধর্মীর তৈরী জিনিসে হবে না কোনো দেবতার পূজা,
কাফেরের ছাপাখানায় ছাপা যাবে না, আসমানী কোনো কিতাব,
ফুসলে নিয়ে যেতে হবে ওদের মেয়ে কে,
বদলে দিয়ে ধর্ম, পালন হবে ধর্ম !
একবারও ভেবেছো বাপ্ হয়ে মিশির,
কেন আজ পর হয়ে যায় চেনা বশির?
কার পাপে আজ এতো সন্দেহের বিষ ?
না প্রদীপ নেয়া হবে না , মিশির আলীর থেকে,
সেওতো আরেক বশির, বিধর্মীর রক্ত।
সারা বাজার ঘুরে নিজধর্মের সাওদা করে ফিরলাম বাড়ি,
কিন্তু একী দিওয়ালির রোশনাই কান্নায় মোড়া কেন?
শুনি একমাত্র বংশের প্রদীপ বুঝি নিভে যায়,
শহর থেকে ফেরার পথে, লরির ধাক্কায় মৃত্যুর সাথে লড়ছে পাঞ্জা সে,
ছুঁটে গেলাম গ্রামের হাসপাতালে,
কোনো আশাই নেই, “ও নেগেটিভ রক্ত নেই”,
কি হবে “মা” রক্ষা কারো মোর সন্তান কে,
কাতর স্বরে কেঁদে ওঠে এক বাপের হৃদয়।
হটাৎ ডাক্তার এসে বলে এসে গেছে ডোনার,
প্রাণ বুঝি এইবার রক্ষা পায় ছেলের।
“কে কে সেই দেবদূত?”, কেঁদে বলি ডাক্তার কে।
“মিশির আলী”, হেসে বলে ডাক্তার।
এসেছে আনোয়ার , ওয়াহিদ আর সনাতনের দুই ছেলে,
সকলেই “ও নেগেটিভ” রক্তের দাতা ।
ঘন্টা চারেক চললো যমে মানুষে এক অসম লড়াই,
অবশেষে চোখ খুলে ছেলে ডাকলো, “বাবা”,
একবুক পাথর নেবে গেলো , দূর হলো অন্ধকার,
বুকে জড়িয়ে ধরে মিশির আলী বলে ,
“দিওয়ালি মুবারক ভাই” ।
তোমার রক্তের দানে বাঁচলো আমার বংশ প্রদীপ,
আর আমি কিনা তোমাকে ভেবেছি বিধর্মী মিশির ?
মিশির হাসিয়া কয়, “মনে নাই মিয়া”,
অবাক হয়ে বলি, কি মিশির?
হেসে মিশির কহে,” আপনার বাপ্ রক্ত দেছিলো মোর ব্যাপারে”,
আখেরাতে বাপ্ বলেছিলো, “গৌড় বাবুর রক্তের ঋণের মনে রাখিস মিশির”।
আজ দিওয়ালির দিনে গৌড় বাবুর প্রদীপ রক্ষা পেলো,
তবু কি শোধ হয় কভু এ রক্তের ঋণ ?
কালী তলায় আবার জ্বলছে মিশির আলীর প্রদীপ,
গৌরাঙ্গের দীপাবলির সন্ধ্যায় মানবতা হয় বিজয়ী।
কেন তবে মিছে ঈদ আর দিওয়ালি পালন,
যদি ভাতৃ রক্তে কর তর্পণ,
কেয়ামতে কি দিবে জবাব?
এস গৌরাঙ্গ আর মিশির আলী,
ঈদে আর দিওয়ালিতে হোক,
সবার মুখে হাসি।
এস আমার ভারতের মানবতার সেরা উৎসব,
যেথা মিশির বলে “শুভ দীপাবলি”,
আর গৌরাঙ্গ কহে “ঈদ মুবারক”,
মানবতাই ধর্ম শ্রেষ্ঠ কহে সব আসমানী কিতাব,
কেন তবে বিভেদের বিষে বিষাক্ত থাকে এ সমাজ।