রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও যাও গো এবার যাবার আগে,রাঙিয়ে দিয়ো আমারে হে নন্দলাল
ড:রঘুপতি ষরেঙ্গী
যখন ” রাঙা ময়ূর নাচে গাছে
রাঙা কোকিল গায়
রাঙা ফুলে বসে ভ্রমর
রাঙা মধু খায়।”……..
ঠিক তখনই রবীন্দ্রনাথ এই বাংলার গৃহবাসী দের ডাক পেড়ে বলেন ………” খোল দ্বার খোল। “
বসন্ত এসে গেছে কি না ! আর সাথে করে এনেছে তার রঙবাহারী দোল-উৎসব কে। একে বাংলার “বারো মাসে তেরো পার্বন” এর শেষ পার্বন বলা ই যায়। নারদ পুরাণ, ভবিষ্য পুরাণ হয়ে হরিবংশ পুরাণে ও এই উৎসবের উল্লেখ পাওয়া যায়। এখানে এটা ‘মদন-উৎসব’।
তবে, একথা স্পষ্ট করেই বলা যায়, হোলি বা দোল কোনো বৈদিক পরম্পরার অংশ বিশেষ নয়। এর সাথে নব্য কিছু পুরাণ এবং বৈষ্ণবীয় ভাবধারার নিবিড় যোগাযোগ চোখে পড়ে………… ” ব্রজগোপী খেলে হোলি।”
অবশ্য, এমন উল্লেখ ও পাওয়া যায়, প্রাচীনকালে এ দেশেও পরিবারের মঙ্গল কামনায়, বিবাহিতা নারীরা পরিবারের সদস্যদের সাথে রঙের অনুষ্ঠানে মেতে উঠতেন। এর পোশাকি নাম ছিল “রাকা-উৎসব”। হিন্দু বাদেও জৈন, বৌদ্ধ ও শিখ সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে ও এই অনুষ্ঠান আজও জনপ্রিয়। শোনা যায়, গুরু গোবিন্দ সিং সবার সাথে তিন দিন ধরে আনন্দ ও উল্লাসের সাথে “হোলা মহল্লা ” উৎসব পালন করতেন। প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃত সাহিত্যে বিশেষতঃ ভবভুতি’র লেখা তে এবং মহাকবি কালিদাস এর ‘ঋতু সংহার’ কাব্যে ফুলের নির্যাস, চন্দন-কুমকুম আবির হাতে যুবতী নারীদের উন্মাদনার ছবি চোখে পড়ে। সম্রাট হর্ষবর্ধন এর ‘রত্নাবলী’ নাটকেও দোল এর উদ্দাম উপস্থিতি স্পষ্ট।
কিন্তু এ কথা ঠিক নৈসর্গিক প্রেমের উৎসব তার মানবিক মুখ পেল বৈষ্ণবীয় ভাবধারার কল্যাণে এসে। শ্রীল রূপ গোস্বামীর “উজ্জ্বল নীলমনি গ্রন্থ” নামক যে রস-শাস্ত্র আছে সেটা পড়লেই বোঝা যায়। আর কবি জয়দেবের প্রসাদ গুণে ভরপুর সেই সুমিষ্ট পদ….”ললিত লবঙ্গ লতা” যখন “পরিশীলন কোমল মলয় সমীরে…..” ঠিক তখন “হরিরিহ বিহরতি সরস বসন্তে ” অর্থাৎ মঞ্চে শ্রীকৃষ্ণের আগমন।
আগমনের মুহূর্তে কী ঘটলো ? উত্তরে জানা যাচ্ছে, “স্বয়ং গ্রাহক গৃহীত শৃঙ্গক জল প্রহার নৃত্য নাগর।”
অর্থাৎ কিনা হল্লিশক্ নৃত্য ভঙ্গিতে গোপীরা তাঁকে ঘিরে ধরে আনন্দে শৃঙ্গক (পিচকারী) দিয়ে তাঁর দিকে রঙীন জল ছুঁড়ে হৈ-হুল্লোড় করছে।
এ তো গেল বৈষ্ণবীয় ভাবধারার কিছু কথা। কিন্তু যে কথা না বললেই নয় তা হোল আজকের এই দিনটিকে অন্য এক মাত্রা দিতে ১৪৮৬ খৃঃ এর এমন ই এক পূর্ণিমাতে ধরাধামে অবতীর্ণ হয়ে ছিলেন শ্রী চৈতন্য দেব। যে কারনে, দোল-পূর্ণিমা “গৌর পূর্ণিমা” নামেও ভক্ত সমাজে সমধিক পরিচিত।
আর, অবতীর্ণ হয়ে তিনি কী শোনালেন আমাদের ?
গৌরচন্দ্রিকা জানাচ্ছে… “
ফাগুয়া খেলাবে বলি
কান্দিয়া আকুলি
নিজ স্থানে কিছু কয়।”
এবার তাহলে গোরাচাঁদ কী কইলেন?
রাধা-কৃষ্ণ বিরহে ব্যকুলিত অন্তর কেবলই বলতে থাকে
” ঐ এলো না গোরারাজ
মদন-মোহন সাজ
বাজে বাঁশি ডম্ফ ঘনঘোর।”
অবতার পুরুষ গোপনে যাকে যা বলেন বলুন, ক্ষতি নেই। আসুন, আমরা আজকের এই পবিত্র দিনে ভগবান বিষ্ণুর চরণ-কমলে হৃদয় নিংড়ানো আবির দিয়ে বলি…
” নারায়ণং মহাদেব বৈকুণ্ঠং পুরুষোত্তমম্
লীলয়া খেলয়া দেব গোপীভিঃ পরিবারিত।
গোপীভির্বেষ্ঠিতো নাথঃ খেলয়েৎ পরমেশ্বরঃ।
লোকযাত্রা হিতার্থায় ফল্গু দানং করোম্যহম্।”
হে বৈকুণ্ঠপতি প্রভু নারায়ন ! প্রার্থনা করি, আমার উৎসর্গ করা আবিরে নিজেকে রাঙিয়ে আপনি গোপ-গোপী দের সাথে আনন্দে খেলা করুন এবং আমাদের চলার পথে মঙ্গল বিধান করুন।

Dr. Raghupati Sharangi, is better known as a people’s doctor around Coochbehar. His followers believe him like doctors with “Midas Touch”.
He is originally from a remote village in the erstwhile Midnapore district. He loved homeopathy from his childhood and took his passion in order to the profession. He got a degree in Homeopathic Medicine from the University of Calcutta with the highest marks in the exam. After service with a homeopathy college in Kolkata, he took the government service in North Bengal and started his crusade against the pain and agony of disease through Homeopathy.
At present, he is associated with a health center under Coochbehar District with West Bengal Government Health Unit.