
নারী দিবসে একটু সহানুভূতির আশায় আর্চারিতে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নের সোনার মেডেল জয়ী আদিবাসী মেয়ে দীপ্তি
অরূপ মিত্র
#একজনসত্যিকারেরনারী
#HelpDiptiTheChampionArcherOfIndia
আসুন আজ শুনি আর এক নারীর অসম লড়াইয়ের কথা আধুনিক ভারত পথিক অরূপ মিত্রের কলমে, যখন দেশের রাষ্ট্রপতি নিজে একজন আদিবাসীর গর্ব, ভারতবাসীর গর্ব তখন আর এক আদিবাসী মেয়ে লড়ছে সামান্য সহযোগিতার আশায় যাতে দেশ কে আবার সোনা এনে দিতে পারে তীরন্দাজিতে।
ঝাড়খণ্ডের হতদরিদ্র আদিবাসী পরিবারের এই কন্যাটির বাবা- মা দুজনেই দিনমজুর। মাত্র চোদ্দ বছর বয়েসে, বাবার বানিয়ে দেয়া বাঁশের ধনুক নিয়েই দীপ্তি স্কুল লেভেলের আর্চারিতে চ্যাম্পিয়ন। বাঁশের ধনুক নিয়েই স্কুল লেভেল থেকে স্টেট লেভেলের যাত্রাপথে তার সংগ্রহ আরো ৬৬টি মেডেল। কিন্তু স্টেট লেভেলে বাঁশের ধনুক চলে না। দিনমজুর মা, দেড় লক্ষ টাকা ধার করে তাকে প্রতিযোগিতার উপযুক্ত একটি আধুনিক ধনুক কিনে দেন। সেই ধনুক দিয়েই স্টেট লেভেল থেকে রেকর্ড সময়ে জাতীয় লেভেলে পৌঁছে যায় দীপ্তি, সংগ্রহ করে আরো প্রায় ৪০টি মেডেল – কোনো ব্যক্তিগত কোচের সাহায্য ছাড়াই !
আরো ভালো প্রশিক্ষণের জন্য দীপ্তি ডাক পায় ঝাড়খণ্ডের বিরসা মুন্ডা আর্চারি অ্যাকাডেমিতে। দীপ্তিকে আর থামানো যায়নি। বাঁশের ধনুক ছেড়ে, আধুনিক ধনুক ধরার মাত্র দু বছরের মধ্যে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের প্রতিযোগিতায় দীপ্তি হারিয়ে দেয় জুনিয়র ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন কামালিকা বারিকে। জিতে নেয় ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নের সোনার মেডেল।
এবার লক্ষ্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা কিন্তু তার জন্য দরকার আন্তর্জাতিক মানের ধনুক। সে ধনুক কেনার ক্ষমতা দীপ্তির নেই। দীপ্তির মা এবার ধার করেন সাড়ে চার লক্ষ টাকা। ঘটি-বাটি বন্ধক দিয়ে এবং ধার করা টাকা দিয়ে দীপ্তি হাতে পায় প্রথম আন্তর্জাতিক মানের ধনুক এবং জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হবার দরুন আমন্ত্রিত হয় আমেরিকার একটি তীরন্দাজি প্রতিযোগিতায়। কিন্তু বিধি বাম। সেই প্রতিযোগিতার মাঝপথে দীপ্তির নতুন ধনুকটি ভেঙে যায়। ধনুকহীন দীপ্তিকে বাকি প্রতিযোগিতাটির সাইডলাইনেই বসে থাকতে হয়।
আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে এসে দীপ্তি দেখে মা কঠিন অসুখে হাসপাতালে ভর্তি। মাথার উপর আগেই অনেক ধার। তার উপর মায়ের চিকিৎসার জন্য চড়া সুদে আরো টাকা ধার করতে হয়। বাবার সামান্য রোজগার। দাদা রিক্সাচালক। মাত্র ৬ মাসে পুরো পরিবারটি ঋণের জালে জড়িয়ে পরে। ধনুর্ধরের হাতে ধনুক নেই, সামনে আগ্রাসী ঋণের চক্রব্যূহ। কুরুক্ষেত্রে অভিমন্যু কি করেছিলেন ? হাতের ধনুক কাটা যাবার পরেও তিনি যুদ্ধ ছাড়েননি। শুধু তলোয়ার নিয়ে রথ থেকে মাটিতে নেমে পড়েছিলেন। সারথি সুমিত্র তাকে বাধা দিতে গেলে অভিমন্যু বলেছিলেন “দেবরাজ ইন্দ্র স্বয়ং বজ্র হাতে এলেও আমি শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করবো !”
তীরন্দাজ হিসেবে সেই শেষ যুদ্ধটাই করছেন দীপ্তি। বাঁচার লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য ৬০ হাজার টাকা ধার করে একটি চায়ের দোকান খুলেছেন। একজন অঙ্কের প্রফেসর ওই রাস্তা দিয়ে গাড়ি করে আসার সময় ওকে দেখতে পায় আর সেই দোকানে চা খেতে এসে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন দীপ্তিকে আবিষ্কার করে অবাক হয়ে যান। দীপ্তি তার পা জড়িয়ে ধরে বলেন “স্যার, সহানুভূতি চাই না। শুধু একটা প্রতিযোগিতার উপযুক্ত ধনুক জোগাড় করে দিন। কথা দিচ্ছি জান-প্রাণ লড়িয়ে দেব। জাতীয় চ্যাম্পিয়নের মেডেলটা আবার জিতবই ! তারপর ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ, অলিম্পিক – দেশকে মেডেল এনে দেবই ! চাই শুধু একটা ধনুক। একটু দেখুন না, স্যার। যদি কিছু করা যায়।” প্রফেসর ভদ্রলোক তার সাধ্যমতো সরকারি, বেসরকারি আর্থিক সাহায্যের জন্য চেষ্টা করেছিলেন। তিনি জানেন না তিনি কতটা করতে পারবেন।
চরম আর্থিক দুরবস্থায়, সামান্য একটি চায়ের দোকানকে সম্বল করে, ঋণের চক্রব্যূহে দাঁড়িয়ে, ধনুকহীন একা এক ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন আদিবাসী কন্যার এই লড়াইটাও হয়তো ভারতীয় তীরন্দাজির ইতিহাসে সেভাবেই লেখা থাকবে !
স্যালুট বোন।তোমার নাম আমাদের সমাজের প্রত্যেকটা নারী জানুক ,জানুক প্রত্যেকটা পুরুষ।কারণ তোমার যুদ্ধ সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে
স্যালুট জানাই আদিবাসী কৃতি মেয়ে দীপ্তি আপনাকে ।

আইবিজি নিউজ স্যালুট জানায় আপনাকে আর এই লেখার লেখক অধ্যাপক অরূপ মিত্র কে, দেশের পথে ঘটে ছড়িয়ে থাকা মনি মুক্ত কে খুঁজে বের করার জন্য ।
অরূপ মিত্র পেশায় অধ্যাপক অংকের , পড়াশুনা বিলেতের কাউভেনট্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে । নেশা মানুষ খুঁজে বেড়ান , সমাজ কল্যাণ করা। আসুন অরূপের পাশে দাঁড়িয়ে এই সমাজে কিছু ছাপ রেখেও যাই ।