ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাঙ্ক ব্যবস্থায় সাম্প্রতিক সঙ্কটের আবহে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সজাগ ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী
ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষগুলির সঙ্গে আজ এক পর্যালোচনা বৈঠকে মিলিত হয়ে যে কোনও ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রস্তুতির কাজ সেরে ফেলার নির্দেশ দিলেন তিনি
By PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২৫ মার্চ,২০২৩
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির উচিত বাণিজ্যিক মডেলকে যথাযথভাবে অনুসরণের মাধ্যমে ঝুঁকির বিষয়গুলি চিহ্নিত করা। যে সমস্ত ক্ষেত্রে ঝুঁকির বিশেষ সম্ভাবনা রয়েছে তা চিহ্নিত করার পাশাপাশি সম্ভাব্য প্রতিকূল পরিস্থিতি সম্পর্কে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে ব্যাঙ্কগুলিকে। শুধু তাই নয়, সম্ভাব্য ঝুঁকির মোকাবিলায় ব্যাঙ্কের পরিচালন ব্যবস্থাকে আরও ঢেলে সাজানোরও প্রয়োজন। একইসঙ্গে প্রয়োজন একটি যোগাযোগ কৌশল স্থির করে ফেলা।
আজ দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির পরিচালন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এক পর্যালোচনা বৈঠকে মিলিত হয়ে এই পরামর্শ দেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী শ্রীমতী নির্মলা সীতারমন। বিশ্বজুড়ে বর্তমানে আর্থিক ক্ষেত্রে তথা ব্যাঙ্ক ব্যবস্থায় যে সঙ্কটের আবহ তৈরি হয়েছে তার মোকাবিলায় সরকারি ব্যাঙ্কগুলিকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন তিনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের কয়েকটি নামী ব্যাঙ্কের কাজকর্মকে ঘিরে গভীর সঙ্কট তৈরি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর আজকের এই পর্যালোচনা বৈঠক। আলাপ-আলোচনাকালে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী ডঃ ভগবৎ কিষাণরাও কারাড, আর্থিক পরিষেবা দপ্তরের সচিব ডঃ বিবেক যোশী এবং দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির এমডি ও সিইও-রা।
পর্যালোচনা বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির পরিচালন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি ও খোলাখুলি আলোচনা করেন অর্থমন্ত্রী। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ‘সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক’ এবং ‘সিগনেচার ব্যাঙ্ক’-এর ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়ে যে গভীর আর্থিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে তার প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির কাজকর্মকে শৃঙ্খলার মধ্যে বেঁধে ফেলার পরামর্শ দেন অর্থমন্ত্রী। ক্রেডিট স্যুইস-এর ক্ষেত্রেও যে সঙ্কটজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, প্রসঙ্গত তারও অবতারণা করেন তিনি। স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রেক্ষিত ও পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এই ধরনের সঙ্কটজনক পরিস্থিতি যাতে এ দেশের ব্যাঙ্কগুলির কাজকর্মে প্রতিফলিত না হয়, সে সম্পর্কে সজাগ ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন অর্থমন্ত্রী।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির এমডি ও সিইও-রা অর্থমন্ত্রীকে জানান যে কর্পোরেট ক্ষেত্রের সেরা পরিচালন ব্যবস্থাকে অনুসরণ করেন তাঁরা এবং একইসঙ্গে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা ও রীতি-নীতিকেও যথাযথভাবে মেনে চলা হয়। নগদ অর্থের লেনদেন সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ক্ষেত্রে যাতে কোনরকম ত্রুটি বা গলদ না থাকে, সে বিষয়টিও তাঁরা বিচক্ষণতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করেন। সম্ভাব্য ঝুঁকির মোকাবিলা তথা সম্পদের ক্ষেত্রে দায়বদ্ধতা যাতে কোনভাবেই প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি না করে, সে সম্পর্কেও তাঁরা সজাগ ও সতর্ক থাকেন।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয় যে বিশ্ব ব্যাঙ্ক ব্যবস্থায় সাম্প্রতিককালে যে ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে তার ওপর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি বিশেষ নজর রাখছে এবং যে কোনও ধরনের সম্ভাব্য ঝুঁকি থেকে আত্মরক্ষার জন্য সমস্ত ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপই গ্রহণ করা হচ্ছে। এ সমস্ত কিছু থেকে যে সার্বিক চিত্রটি ফুটে উঠেছে তা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির নিরলস প্রচেষ্টার ফলে তাদের আর্থিক পরিস্থিতি এখন যথেষ্ট বলিষ্ঠ ও মজবুত।
সুদের হারের ক্ষেত্রে কোনরকম ঝুঁকির সম্ভাবনা দেখা দিলে সে সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পর্যালোচনা বৈঠকে সুপারিশ করেন অর্থমন্ত্রী। গুজরাটে আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিষেবা কেন্দ্র হিসেবে যে সমস্ত শাখা চালু হয়েছে তার পূর্ণ সম্ভাবনাকে সদ্ব্যবহার করার জন্যও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে পরামর্শ দেন তিনি।
দেশের ব্যাঙ্ক ব্যবস্থায় বর্তমান পরিস্থিতির পর্যালোচনার শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে যে কয়েক দফা পরামর্শ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তার মধ্যে রয়েছে –
(১) ডেট মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলি সম্পর্কে সরকার যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির আমানত প্রকল্পগুলিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা।
(২) দেশের অর্থনীতির সার্বিক বিকাশ ও উন্নয়ন প্রচেষ্টায় ঋণ সহায়তাদানের জন্য ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক পরিস্থিতিকে আরও মজবুত করে তোলা।
(৩) যে সমস্ত রাজ্যে ব্যাঙ্ক ঋণ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে অনাগ্রহ রয়েছে অথবা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে জাতীয় গড়ের মাপকাঠিতে উত্তর-পূর্ব ভারত এবং দেশের পূর্বাঞ্চলের যে রাজ্যগুলি এখনও পিছিয়ে রয়েছে, সেখানে ঋণদানের পরিসর বৃদ্ধির চেষ্টা করা।
(৪) ‘এক জেলা, এক উৎপাদন’, ই-ন্যাম এবং ড্রোন সম্পর্কিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচিগুলির ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের বাণিজ্যিক ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারিত করা।
(৫) দেশের সীমান্ত তথা উপকূল অঞ্চলগুলিতে ব্যাঙ্কের উপস্থিতিকে অনলাইন ব্যবস্থায় আরও প্রসারিত করা এবং
(৬) ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেটে ঘোষিত ‘মহিলা সম্মান সঞ্চয়পত্র’ সম্পর্কে বিশেষ প্রচার ও অভিযান চালানো।