কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সী এবং ভূতের ভবিষ্যৎ
পাভেল চ্যাটার্জী
বহুজাতিক সংস্থার আধিকারিক ও তথ্য প্রযুক্তিবিদ

একটি বহুবর্ষজীবী প্রশ্ন বা বলা যায় মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন, ভূতের অস্তিত্ব কি আছে ? ভূত বা অশরীরি সম্পর্কে বছরের পর বছর ধরে মানুষের আগ্রহ চিরন্তন । ভূতের প্রতি আগ্রহ বা ভূতের প্রতি আকাঙ্ক্ষা শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে কি ?
বছরের পর বছর, দশক, শতাব্দী ধরে ভূত নিয়ে মানুষ তার নিজস্ব কল্পনা তৈরি করেছে, তাই ভূত সম্পর্কিত গল্প এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা মিশে তৈরি হয়েছে একটি বিশাল ভৌতিক সাহিত্য জগৎ.. আজ আমরা সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে অনেক ভূতের গল্প কথক/লেখকদের বিস্তৃতি দেখতে পেয়েছি এবং ভূত সন্ধানী সমিতি বিশ্ব জুড়ে আজ ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে । ভূতের অস্তিত্ব আছে কি নেই সেই চিরন্তন প্রশ্নের উত্তর দিতে অতীত থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত অনেক গবেষণা হয়েছে।
ই-ঘোস্ট ইমেজিং এবং ঘোস্ট ভিশনের মতো নতুন গবেষণার ক্ষেত্রে অ্যাডভান্স আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং-এর মতো আধুনিক প্রযুক্তির আবির্ভাবের ফলে, মানুষের জৈবি ক দৃষ্টির বা ভিশনের বদল হচ্ছে এবং মানুষ ভবিষ্যতে অদৃশ্যকে দেখতে সক্ষম হবে যা স্বাভাবিক মানুষের চোখে আগে দেখা যেত না। এইভাবে আগামীদিনে ভূত বা অশরীরি সন্ধানের অনুসন্ধিৎসা হয়তো শেষ হতে চলেছে শীঘ্রই ।
ঘোস্ট ইমেজিং একটি তথ্য প্রযুক্তিযুক্ত গণনামূলক আধুনিক ইমেজিং কৌশল যা মানুষের দৃষ্টির সাথে মিলিত হলে, এমন অনেক বস্তুকে চিত্রিত করতে পারে যা মানুষ সাধারণ দৃষ্টি শক্তি দিয়ে দেখতে পায় না। মানুষের দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে এটি একটি নতুন উন্নয়ন বা সংযোজন।
যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্যানিয়েল ফ্যাসিও অপটিকা, ইমেজিং এবং ফলিত অপটিক্স কংগ্রেসে “নন-লাইন-অফ-সাইট (এনএলওএস) ইমেজিং এবং স্ক্যাটারিং মিডিয়ার মাধ্যমে ইমেজিং” শিরোনামে নতুন গবেষণা ও তার ফলাফল উপস্থাপন করেছেন।
উপরোক্ত গবেষণা অনুযায়ী প্রক্ষিপ্ত আলোর প্যাটার্ন যা বস্তুর সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করে এবং একটি রেফারেন্স প্যাটার্ন যা করে না তার সাথে এই দুটির সম্পর্কযুক্ত করা এই ঘোস্ট ইমেজিং দ্বারা সম্ভব। এই প্রথম গবেষকরা একটি মানব ভিজ্যুয়াল সিস্টেম ব্যবহার করেছেন যেখানে একজন ব্যক্তি ক্যামেরার পরিবর্তে মানুষের নিজস্ব দৃষ্টিশক্তির সাহায্যে আলোর নিদর্শন গুলি দেখবেন। এই ইমেজং দ্বারা মস্তিষ্কের চাক্ষুষ প্রতিক্রিয়া রেকর্ড করা হয় এবং একটি কম্পিউটার অ্যালগরিদমের দ্বারা এই প্রতিক্রিয়াকে ব্যবহার করে নির্ধারণ করা হয় যে কিভাবে প্রক্ষিপ্ত আলোর নিদর্শনগুলিকে পুনর্নির্মাণ করা যায় এবং এই ভাবেই তথ্য প্রযুক্তির দ্বারা চূড়ান্ত চিত্রটি মানুষের মস্তিষ্কে পুনর্গঠন করা হয় ।
এই ঘোস্ট ইমেজিং এ — তথ্য প্রযুক্তিযুক্ত ইইজি কৌশলটি বস্তুর দ্বারা প্রেরিত আলোর তীব্রতা অনুমান করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এই প্রযুক্তির একটি সাদা প্রাচীর থেকে আলো বিচ্ছুরিত করে যা তথ্যটির চিত্র পুনর্গঠনের জন্য ব্যবহৃত নিউরো ফিডব্যাক লুপে দেওয়া হয়। যখন ইইজি সংকেত একটি নির্দিষ্ট
থ্রেশহোল্ডের বা মানের নীচে নেমে যায়, তখন বোঝা যায় যে আলোর প্যাটার্নটি বস্তুর সাথে ওভারল্যাপ করে না এবং তথ্য প্রযুক্তির দ্বারা রিয়েল টাইমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা মিলিয়ে দেওয়া হয়।
এই কৌশলটির মাধ্যমে, গবেষকরা সফলভাবে 16×16 পিক্সেলের সাধারণ বস্তুর ছবি পুনর্গঠন করতে পারে যা আগে কখনও দেখা যায়নি।
অ্যাডভান্স এআই দিয়ে সজ্জিত এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাথে হয়তো ভূতের সন্ধান একটি অতিরিক্ত মাইলেজ বা মাত্রা পাবে এবং ভূতের অস্তিত্ব সম্পর্কিত বহুবর্ষজীবী বিতর্কের অবসান ঘটবে।
হয়তো কল্প বিজ্ঞানের ডানায় ভর দিয়ে আমরা আশা করতেই পারি অ্যাডভান্স কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে এনহেন্সড ভিসনের মাধ্যমে ভৌতিক জগতের কার্যকলাপ দেখতে পাবো ।
তাই ফাইনাল উত্তর আসলে বোঝা যাবে এআই ও ভূতের ভবিষ্যৎ।