আমি চুরি করতে ভালোবাসি, না পার্থিব সম্পদ নয়, শিল্প সাহিত্যের মণি মুক্তা যা কিছু আছে আমার প্রিয় বন্ধু, অগ্রজ দেড় ভাণ্ডারে নির্বিচারে চুরি করে প্রকাশ করি। মজার ব্যাপার তিরস্কারের বদলে প্রচ্ছন্ন স্নেহ পাই বার বার। ডাক্তার ধীরেশ চৌধুরী আমাদের সম্পাদক মন্ডলীর অন্যতম সদস্য । তাঁর লেখা অন্যতম কবিতা ১৪২৭ সালে লেখা আজ আমাদের কাগজে প্রকাশ করে দিলাম তাঁর নিজের “বাঁচবো” সুন্দরবনের স্কুলের ৫ দিনের ভ্রমণ নিয়ে অভিজ্ঞাতার দিন টিকা সহ ।
নিজে প্রবীণদের নানা বিধ জটিল রজার বিশেষজ্ঞ ও জেরিয়াটিকে সোসাইটির অন্যতম ফেললো অনেক ব্যাস্ততার মধ্যেও লেখালেখি তাঁর রক্তে। নববর্ষে আমাদের পাঠকদের জন্য তাই আমার এই চুরি , আশা করি শ্রষ্ঠা অফ পাঠক আমায় ক্ষমা করবেন । ~ সুমন মুন্সী , মুখ্য সম্পাদক, আইবিজি নিউজ ।

জন্ম দিও সেই গাঁয় –
ডাক্তার ধীরেশ চৌধুরী,Kolkata
আর কিছু নয়
সামনের জন্মে একটা নিকোনো উঠোন দিও,
দড়ির খাটিয়াতে যেখানে শুয়ে
পূর্ণিমার চাঁদটার সাথে প্রেম করবো একান্তে,
কেউ নয়, ঝিঁ ঝিঁ পোকাগুলো শুধু পারবে তা জানতে।
একটা ছোট্ট পুকুর দিও,
স্বচ্ছ জলে যাতে কাটবো সাঁতার আমি আর
আমার প্রিয় হাঁস জোড়া,
সকালে উঠে যাদের দেখে ভাঙবে আমার আড়মোড়া।
দুপুরে ভাতের পাতে থাকবে
ঘাটের ধারে জন্মানো কলমী শাক,
আর উঠোনের লাউ ও চাল কুমড়া।
খুব বেশি নয়
বিঘা খানেক জমি দিও,
ফলাবো যেখানে মরশুমী ধান,
কিছুটা কলাই খেসারীর ডাল,
ধারেতে তার থাকবে সারি গাছ তাল,
সাথে নারকেল, সুপুরী, খেজুর,
যাদের লালনে আমিই হবো চাষা,
আর বনবো আমিই মজদুর।
পাঠশালাতে পড়ার করে দিও সুযোগ,
যেখানে ছবিতে নয়
ক্লাসের জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে
চিনবো গরু, ছাগল, মুরগী, বক,
শুদ্ধ নিশ্বাস হবে আমার হক।
দেখবো ঐ দূরে সূর্যটা উঠেছে
ধানক্ষেত গুলোর সীমান্ত ছাড়িয়ে।
বাড়ি থেকে একটু দূরে দিও একটা নদী,
যার ফেরী ঘাটে বসে
কখনো বা শুনবো ভোরের আজান,
আবার কখনো বা প্রভাতী গান।
দিও সাথেতে একটা ছোট্ট ডিঙি,
যাতে ভেসে আসবো ঘুরে
দুচোখ যেদিকে যায়,
পরবো নেমে ইতি উতি ঘাটে যখন তখন
মন চায় যদি।
মেকআপ হীন গাঁয়ের
লাজুক মেয়েগুলোর সাথে একটু প্রেম করতে দিও,
চাহিদা বলতে শুধু যাদের
‘মনসা মাঠের মেলায় একটু নিয়ে যেও’,
আর কি চাই বললে পরে
‘এক জোড়া কাঁচের রঙীন চুরি পারো যদি কিনে দিও’।
যাত্রা দেখার ফাঁকে একটু দেখতে দিও তাকে,
লাল টুকটুকে শাড়ির সাজে
যে পাগল করে আমাকে।
আর জোৎস্না রাতে
নিজের ঘরের জানলার পাশে বসে
একটু কবিতা লিখতে দিও,
রেডিওতে তারই মাঝে কিছু ভালো গান শুনিও,
খবরদার দিওনা যেন কোনো মুঠোফোন,
বরং সাঁঝের আড্ডায় জমে ওঠে যেন আমার উঠোন।
দিও ততটুকু বিদ্যা,
যাতে থামতে জানবে আমার চাহিদা।
পারলে করো মাস্টার মশাই গাঁয়ের সেই স্কুলের
যেখানে পড়তে আসাটা বাচ্চাদের হবে শুধুই আনন্দের,
নতুবা বসতে দিও গাঁয়ের সেই ডাক্তার খানায়,
এলেই যেখানে সেরে যাবে রোগ
এমন বিশ্বাস নিয়েই লোকে আমাকে দেখাতে চায়।
সামনের জন্মে আমায় জন্ম দিও সেই গাঁয়,
সাত সকালে ঝাঁপি মাথায় চাষী যেথায়
মাঠের দিকে ধায়,
লুকোচুরির খেলায় শিশুর দল
যেখানে খড়ের গাদায় লুকায়,
পাখির ডাক যেখানে ঘুম ভাঙ্গায়,
তপ্ত দুপুরেও শরীর জুড়ায় হিমেল হাওয়ায়,
সামনের জন্মে আমায় জন্ম দিও সেই গাঁয়…
ডাঃ ধীরেশ।
১৬ই মাঘ, ১৪২৭।
সম্প্রতি ঘুরে এলাম সুন্দরবনে। থেকেছিলাম ‘বাঁচবো’ র স্কুলে। এর আগে বহুবার গিয়েছি কিন্তু এবারই প্রথমবার ছিলাম প্রায় পাঁচ দিন। ঘুরলাম আশপাশের গ্রাম। ভীষণ ভালো লাগলো। মনটা জুড়িয়ে গিয়েছিল। একরাশ শুদ্ধ বাতাস নিয়ে ফিরলাম। আর বহুদিন পর মাস্ক বিহীন স্বাস নিতে পারাটা ছিল সবচেয়ে বড় পাওয়া।
আমরা যারা শহরে থাকি বিত্ত, বৈভব, বিলাসিতা সব আছে কিন্তু কি যেন একটা নেই। চাহিদার বাড়বাড়ন্ত আছে কিন্তু সুখটা যেন কোথায় অধরা। তাই এজন্মে তো হলো না, পরের জন্মে যেন জন্ম নিই কোনো গাঁয়।