অনেক জীবন বাকি
পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায়
২৮.০৪.২০২৩
(সুব্রত গোস্বামী। আমাদের সহজীবন।
আমাদের সঞ্জীবন মন্ত্র।
আমরা আবার আড্ডায় ফিরব।)
“আবার আমরা এক হব বুঝলি?
মিলিত হব আড্ডায়।
বরাবরের মত।
কিছুদিন পর পর।
হবই।
কেউ রুখতে পারবে না।
কিছু হতে পারবে না বাধা।
অমিত,
তোর সঙ্গে বেঞ্চে বসে
চা খাব। ওই একই জায়গায়।
ফুলবাগানের ফুটপাথের
প্রায় পঞ্চাশ বছরের পুরনো ওই দোকানটা থেকে।
তারপরেই পাশের দোকান থেকে সেই ঘন রাবড়িটা।
মনে আছে তো?
আমি চলে আসব
নার্সিং হোম থেকে কাজ সেরে।
তুই তোর আইসিএমার থেকে।
দিনের শেষে।
বাড়ি ফেরার পথে।
ওখান থেকে তাপসকে ভিডিও কল করব লন্ডনে।
বলব, এই দ্যাখ। ভাঁড়ের চা।
রাবড়ি।
পাওয়া যায় তোদের দেশে?
ও অশ্রাব্য গালাগাল দেবে হাসতে হাসতে।
যেমন কলেজ লাইফে দিত।
আমরা আরও ক্লোজ করব চায়ের ভাঁড়।
রাবড়ির খুড়ি।
প্রশান্ত,
আমাদের শেয়ালদার সরকারি পেন ইনস্টিটিউটে
সাত দিনের মধ্যে আবার রাখব কনফারেন্স।
কমিউনিটি হেল্থ। আর গৃহবধূদের ব্যাক পেন নিয়ে।
তুই মুখ্য স্পিকার।
আগের বার সাউন্ড সিস্টেম বড় জ্বালিয়েছিল।
এবার তা হবে না।
প্রণব,
তোর বর্ধমান থেকে স্বাস্থ্যের বড়কর্তা হিসেবে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে চলে আসার আগে
আবার আমরা যাচ্ছি তোর ফলগাছ, ফুলগাছ ঢাকা ,পাখির গান গাওয়া বাংলোয়।
সবাই মিলে গান হবে, আড্ডা আর মজলিস হবে একটা গোটা দিন, গোটা রাত।
ভোরবেলা রওনা দেব যে যার বাড়ি। আগেকার মত।
নীলু,
তুই কি জানিস, পলাশ সেবার যে বিশেষ বন্ধু খেতে চেয়েছিল
বলে বহরমপুরের মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত তোকে দিয়ে ছানাবড়া অনিয়েছিল, তা আসলে আমি খেতে চেয়েছিলাম?
তারপর অমিতের অফিসে বসেছিল আসর।
এক ঘন্টা আড্ডার শেষে
আমরা ফিরে গেছিলাম নিজেদের ঠিকানায়।
বাকি ছানাবড়া সব উঠেছিল আমার গাড়িতে।
আবার যাব আশীষ হীরার কর্মজগৎ বনগাঁয়ে।
সেখানে সে বিশাল বড় বড় অপারেশন করে প্রতিদিন মানুষ বাঁচায়।
অসম্ভবকে সম্ভব করে।
একটা গাড়িতে।
কেউ না গেলে একাই।
রাস্তার দুধারে দেখব মানুষ, ফুলগাছ, ফলগাছ, উড়ে যাওয়া পাখির দল।
যাবই।
আবার বন্ধুরা ফোন করে
অন্য বন্ধুদের ফোন নম্বর চাইলে দু একবার ভুলে যাওয়া,মনে করানো পর্বের শেষে তা পাঠিয়ে দেব খোঁজকারী বন্ধুর ওয়াটস আপে।
কলেজ রিইউনিয়নে যাব।
ব্যাচ রিইউনিয়নে যাব।
মেন হোস্টেল রিইউনিয়নে গিয়ে গণসঙ্গীত গাইব আবার।
গুপ্তিপাড়ায় মায়ের কাছে ফিরে ফিরে যাব ইচ্ছা মত।
বাজার থেকে কিনে এনে
নিজের হাতে আবার কাটব তাজা ইলিশ মাছ।
যাতে গন্ধ না চলে যায় বেশি ধুয়ে।
আবার নরম সন্দেশকিনে আনব নকুড় থেকে।
যা মুখে দেওয়ার আগেই মিলিয়ে যায়।
নাটক করব।
সাঁতার কাটতে যাব কলেজ স্কয়ারে।
যেখানে লালজামা ও বারমুডা পরা সেই দাদু সেই ভোরেও অকারণে সানগ্লাস পরে কোয়ালিটির আইসক্রিম খায় সাঁতার দেখতে দেখতে।
তারপর সাঁতার শেষে পুঁটিরামের গরম গরম কচুরি ও জিলিপি খাব। নিয়ে যাব মৌ আর বৃষ্টির জন্য।
আবার ঘুরে বেড়াব মেডিক্যাল কলেজের চারপাশ দিয়ে।
মনে করব, কি ভাবে কলেজ বেলায় হাওয়াই চটি ফটাস ফটাস করতে করতে যাওয়া মাঝ বয়সী লোকগুলোর চটি ছিঁড়ে দিতাম তার পিছনের অংশে পা দিয়ে।
তারপর হাসতাম পাগলের মত।
মনে মনে।
আর সে তাকালেই গম্ভীর ভাল মানুষ হয়ে যেতাম নিমেষে।
সম্রাট, রাহুল, অনিন্দনদের সঙ্গে আবার চা খাব কুমার্সে বসে। যে চা বয়স হয়ে খাইনি বিশেষ। আর আপ্যায়নের পরোটা।
লাল্টুদা , রঞ্জন, অরুণাভ, সুনীপ, কাঞ্চন,
কোনও রকম বাধা না মেনে
অনায়াসে আমি আবার ফিরে যাব অতীত আমিতে। দেখ সেটা।
আমি নই, আমরা।
কেউ, কোনও শক্তি রুখতে পারবে না।
অনেক জীবন চলা, অনেক স্মৃতিচারণ, অনেক অনেক আড্ডা যে বাকি এখনও।”

Dr. Palash Bandopadhyay popular pediatrics expert with Post Graduate of Pediatric Nutrition,(Boston University). Doctor, Author, Poet, and a beautiful mind. He is always a great content provider for the readers with value to the core of the subject.